ঢাকা: দেশ তো আফগানিস্তানের পথে, তালিবানি শাসন কায়েমের পথে, তাহলে এই বাংলায় আর সুর শোনা যাবে কী করে বলুন? এই বাংলায় আর শিল্পীদের কদর কীভাবে হবে বলুন?
আফসোসের কথা, বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার সুর আর নেই। সব মরুভূমি হয়ে গেছে।
মূলত তালিবানি আফগানিস্তানে গান বাজনা করা যায় না। তেমনি বাংলাদেশেও হচ্ছে। গান বাজনার উপকরণ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশেও। উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী কাউকে শান্তিতে থাকতে দেয় না।
আফগানিস্তানেও এইভাবে দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রিয় বাদ্যযন্ত্রকে।
একেবারে তালিবানি পদক্ষেপ। দমন পীড়নের একেবারে চূড়ান্ত। ওখানে হিজাব ছাড়া মহিলাদের বের হওয়াটাও নিষেধ। এমনকী স্কুলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে নারীরা যেতে না পারে তার ব্যবস্থাও আছে। তারা পার্কে, খেলার মাঠে, জিমেও যেতে পারেন না।
প্রচুর বিউটি পার্লার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ এসব করা নাকি উচিত নয়। আসলে এসবই হল তালিবানি নমুনা। নারীদের কার্যত খাঁচায় বন্দি রাখার কৌশল তালিবানিদের।
বাংলাদেশে হচ্ছে একে একে। সবাই গান বাজনা ছেড়ে দিচ্ছেন। কাউকে জোর করে ছাড়ানো হচ্ছে।
সাবিনা ইয়াসমিন দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে এই দেশে শিল্পীদের কোনো মর্যাদা দেয়া হয় না।
দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে অবদান রেখেছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। অথচ সেই গুণী শিল্পীর কণ্ঠেই শোনা গেল শিল্পীদের প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীনতার আক্ষেপ।
ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশে কখনোই শিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি, এখনো হচ্ছে না।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে একটি স্টুডিওতে নতুন একটি গানের রেকর্ডিংয়ের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বাংলাদেশে শিল্পীদের কদর কোনোদিনই ছিল না, এখনও নেই। যারা রাষ্ট্র চালান, যদি তারা গানবাজনা বোঝেন না, তার কদর না করেন তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না। জোর করে কারও মাথায় সংস্কৃতি ঢোকানো যায় না।”
এই প্রসঙ্গে তিনি ভারতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “লতা মঙ্গেশকরের পা ধরে প্রণাম করেন নরেন্দ্র মোদী। ওরা জানে শিল্পীদের সম্মান কোথায় দিতে হয়। অথচ আমাদের দেশে সরকারিভাবে শিল্পীদের এমন কদর কখনও পাইনি।”
তিনি বলেন, এই দেশে একসময় এন্ড্রু কিশোর, সুবীর নন্দীর মতো অসাধারণ সব কণ্ঠ ছিল। তাদের গানগুলোকে আর্কাইভ করা যেত, সংরক্ষণ করা যেত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিন্তু সেটা হয়নি। সবশেষ ফরিদা পারভীন চলে গেলেন। তার মতো শিল্পী কি আর আসবে? কোনো আলোচনাও হয় না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য”।
তবে ব্যক্তিগতভাবে কোনো আক্ষেপ নেই জানিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “আমার কোনো দুঃখ নেই, কারণ চলচ্চিত্রের মানুষরা আমাকে সম্মান দিয়েছেন, ভালোবেসেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।”
তিনি আরো বলেন, “অন্যান্য দেশে গান থেকে রয়্যালটি আসে, শিল্পীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। কিন্তু আমাদের এখানে সেই ব্যবস্থা নেই। সরকার চাইলে এটা করতে পারে। আবদুল আলীম, রহমান বয়াতির মতো শিল্পীদের পরিবারও অনেক ভালো থাকতে পারতো, যদি রয়্যালটির ব্যবস্থা থাকত।”