ঢাকা: পীর–আউলিয়া, গাউস–কুতুব, ওলীদের মাজার শুধু ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, বরং সামাজিক মিলনস্থল‌ এগুলো। এখন এগুলোর ওপর আঘাত আসছে।

অথচ এখন দেশজুড়ে যে বর্বর তাণ্ডব চালানো হচ্ছে, তা বাংলার সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ইতিহাসকে ধ্বংস করার এক নৃশংস অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

গোয়ালন্দের ঘটনা বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে কতটা ঘৃণায় পরিণত করেছে তা হয়তো জানেন না ইউনূস।

গোয়ালন্দের ঘটনা চরম উন্মত্ততার দৃষ্টান্ত।

জামাত, বিএনপির সাফাই খুব দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে এই ঘটনায়। এরা লেবাসধারী চরম মিথ্যাবাদী।

গোয়ালন্দ উপজেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি ও থানা জামায়াতের সভাপতি মৌলানা জালাল প্রায় ১৫–২০ দিন আগে ‘ঈমান ও আকিদা রক্ষা কমিটি’ নামের একটি সংগঠন গঠন করেন।

প্রথম দেখায় সংগঠনের নামটি ধর্মীয় আবেগ জাগ্রত করার মতো হলেও বাস্তবে এটি ছিল চরমপন্থী গোষ্ঠীকে সংঘবদ্ধ করার একটি হাতিয়ার। বাংলাদেশে চরমপন্থী গোষ্ঠীর চরম খেলা শুরু হয়েছে।

এবং পৌর বিএনপি’র সভাপতি আবুল কাশেম এবং গোয়ালন্দ থানা বিএনপি’র জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি আয়ুব আলী খানের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে গতকাল সংঘটিত হয় এক ভয়াবহ নৃশংসতা।

তারা অনুসারীদের নিয়ে পবিত্র মাজার ভেঙে ফেলে, কবর থেকে লাশ তুলে উন্মত্ত উল্লাসে লাশ পোড়ানোর মতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা প্রদর্শন করে।

বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, যখনই জামায়াত–বিএনপি, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠী রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে তখনই ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠান, আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং মাজারের ওপর নৃশংস আঘাত নেমে এসেছে ঠিক এইভাবে।

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার–আলবদর বাহিনী মাজার ও দরগাহে হামলা চালায়, কারণ এগুলো ছিল মুক্তিকামী মানুষের মিলনস্থল। অনেক পীর–মাশায়েখ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাদের হত্যা করা হয়।

ইউনূস গদিতে বসার পর ফের সেই চিত্র ফিরে এসেছে।

রাসেল ছোটবেলা থেকেই নুরাল পাগলার ভক্ত ছিলেন। তাই তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে।

‘আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি। সে কেবল নুরুল হকের ভক্ত ছিল। দরবারে থাকায় ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলল। দরবার থেকে মারতে মারতে আনার পরে ওরা আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিতে দেয়নি।

হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তোলা হলে গাড়ি থেকে নামিয়ে আবার পিটিয়েছে।’—বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন গোয়ালন্দের দরবার শরিফে হামলায় নিহত রাসেল মোল্লার মা আমেনা বেগম।

নিহত রাসেল মোল্লা (৩০) পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন। নুরাল পাগলার ভক্ত হিসেবে তাঁকে সবাই চিনত। পাঁচ বছর আগে হাসি আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের চার বছরের এক মেয়ে ও দুই বছরের এক ছেলে রয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার বাজানকে (ছেলে) যারা মেরে ফেলেছে, তাদের বিচার আমি আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছি। আল্লাহ তাদের বিচার করবে।’

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *