ঢাকা: সঙ্গীত থেরাপির কাজ করে। মানসিক স্থিতিশীলতা, শান্তির কাজ করে, সংস্কৃতি রক্ষার কাজ করে।

সঙ্গীত, শিল্পকলা ও সৃজনশীল চর্চা কোনো বিলাসিতা নয়, এগুলো শিশুদের মানসিক বিকাশ, কল্পনাশক্তি ও মানবিক গুণাবলির বিকাশের অপরিহার্য উপাদান। এ কারণেই বিশ্বের উন্নত ও অগ্রসর দেশগুলো বহু আগে থেকেই প্রাথমিক স্তরেই সঙ্গীত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে।

কিন্তু এইগুলো বোঝার ক্ষমতা তো মৌলবাদীদের নেই।

সামাজিক রক্ষণশীলতার পরও তো সৌদি আরব বুঝেছে, শিশুর মানসিক বিকাশ ও সাংস্কৃতিক দিগন্ত প্রসারের জন্য সঙ্গীত অপরিহার্য।

উন্নত বিশ্বের বহু দেশ যেমন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, আইসল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ব্রাজিল সবাই প্রাথমিক শিক্ষায় সঙ্গীতকে মৌলিক বিষয় হিসেবে রেখেছে।

এসব দেশে শুধু সঙ্গীত নয়, শিল্পকলা, ছবি আঁকা, নৃত্য, নাটক, প্রোগ্রামিং ও আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা ও শিশুশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।

এগুলোর উদ্দেশ্য একটাই—শিশুকে শুধু বইয়ের ভেতর বন্দি না রেখে, জীবনের নানা ক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করে তোলা।

অথচ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই সুযোগগুলোর একটিও নেই। শিশুরা সেখানে সম্পূর্ণরূপে শিল্প-সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।

সঙ্গীত মৌলবাদীরা সহ্য করবে না। ধর্মীয় গোষ্ঠী অযথা বিতর্ক তৈরি করে একে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানাচ্ছে।

এই মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশের উন্নতি কীভাবে হবে? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোনো চিন্তা এদের নেই।

এই ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্টি করা সংগীত ও শরীরচর্চা সহকারী শিক্ষক পদ বাতিল করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ পদগুলো বাতিলের পাশাপাশি ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫’-এ কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান জানান, “আগে বিধিমালায় ৪টি ক্যাটাগরির পদ থাকলেও সংশোধনের পর নতুন বিধিমালায় দুটি ক্যাটাগরি রাখা হয়েছে।

সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের পদ আর নেই। তবে সমালোচনার সঙ্গে পদ বাতিলের যোগসূত্র নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।”

তিনি আরও জানান, পূর্বের বিধিমালায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২০ শতাংশ পদ বিজ্ঞান বিষয়ের স্নাতক এবং ৮০ শতাংশ পদ অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য বরাদ্দ ছিল।

এতে শব্দগত বিভ্রান্তি থাকায় ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দবন্ধকে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে’ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *