ঠাকুরগাঁও: আসলে পৃথিবীটা পাগলের জন্যেই বেঁচে আছে। পাগলের ঝোঁক আছে বলেই জীবন বেঁচে আছে। হিসেবি-কে দিয়ে কোনো লাভজনক কাজ হয় না, পাগল দিয়েই দুনিয়া চলে।
ঠাকুরগাঁওয়ে এক দশকের বেশি সময় ধরে তালগাছ লাগিয়ে আসছেন খোরশেদ আলী। খোরশেদ আলী পাগলের মতোই ভালোবাসেন তালগাছ।
গাছের বীজ থেকে শুরু করে পরিচর্যার খরচ বহনের জন্য এরই মধ্যে নিজের জমি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। নিজের জমি বিক্রি করেও তালগাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন মানুষটি! তবে এইসব মানুষের স্বীকৃতি জোটে না। সরকার তাঁদের দেখে না।
এমন মানুষ কী আর পাওয়া যাবে? তাঁদের থেকেই প্রকৃত শিক্ষা পাওয়া যায়।যারা প্রকৃতির মাঝে থাকেন।
শীতের তীব্রতায় যখন মানুষ ঘরে বসে উষ্ণতা নেন তখন রাস্তার পাশে তাল গাছের পরিচর্যা করতে দেখা যায় ৭১/৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধ খোরশেদ আলীকে।
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনোকিছুই তাঁকে কাবু করতে পারে না।
প্রায় ২০১৩ সাল থেকে এভাবেই প্রতিদিন খুব ভোরে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ ভাঙাচোরা একটি মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তারপর গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন খোরশেদ আলী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলী। পেশায় পল্লী চিকিৎসক।
তাঁর তালগাছ রোপণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ দশ হাজারের উপরে। নিজের জমি বিক্রি করে সে টাকায় রাস্তার ধারে লাগিয়েছেন এ সব গাছ।
তার এ কর্মকাণ্ড দেখে এলাকাবাসী এক সময় মানুষটিকে পাগল ভাবলেও এখন তাঁকে নিয়ে গর্ব করেন।
শুধু তালগাছই নয়, ফলজ বনজ ও ঔষধি গাছ গাছের চারাও রোপণ করেছেন।
এত গাছ থাকতে তালগাছ লাগানো কেন শুরু করলেন, জানতে চাইলে খোরশেদ আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে তিনি তাল গাছ রোপণের কাজটি করছেন। তিনি মনে করেন, তালগাছগুলো একদিকে পরিবেশ বাঁচাবে এবং বজ্রপাত ঠেকাতে সহায়তা করবে।
সত্তরোর্ধ্ব খোরশেদ জানান, তালগাছ ছিল না বলে এত বছর ধরে এলাকায় বাবুই পাখির খুব একটা দেখা মিলত না। এখন সেই পাখিরা আবার ফিরছে। তা দেখে মন ভরে যায়।
