চট্টগ্রাম: নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা করতে পারলো না নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন করে হবে সে তারিখও জানেনা কেউ।

কিন্তু বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হতে না হতেই বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ( চট্টগ্রাম-৮আসন) , শিল্পপতি এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

এ সময় তাঁর নির্বাচনী জনসংযোগে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) গুলিতে নিহত হয়েছে। বুধবার ( ৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

তার পেটে ছররা গুলি লেগেছে । ঘটনার খবর শুনে বিএনপির নেতাকর্মীরা এভারকেয়ার হাসপাতালে ভীড় করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলও বের করেছেন বিক্ষুব্ধরা।

এটি কি নির্বাচন যাতে না হতে পারে সেজন্য কোন বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্রেরই অংশ কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। এটিও যে সেই “ মেটিকুলাস ডিজাইন” এর অংশ নয় তাই বা কে হলফ করে বলবে ?

তবে সন্ত্রাসী সরোয়ার সম্পর্কে বিএনপি দাবি করছে, সরোয়ার তাদের কেউ নয়। জনসংযোগে শত শত লোক অংশ নেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে গুলি করা হয়।

বিকেলে নগরের চালিতাতলী এলাকায় চট্টগ্রাম–৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন সরোয়ার।

এতে এরশাদ উল্লাহ, সরোয়ার ও শান্ত নামের তিনজন গুলিতে আহত হন। তাদের মধ্যে সরোয়ারের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, সরোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

জানা গেছে, সরোয়ার এক মাস আগে বিয়ে করেছে এবং তার বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

গত চব্বিশের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গেছে সরোয়ারকে। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় গুলিতে আহত সরোয়ার মারা গেছেন।

প্রসঙ্গত এ বছরের ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া একসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান।

সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সরোয়ার। পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে ও পুলিশকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে সরোয়ারকে গুলি করা হয়।

ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। একসময় সরোয়ার হোসেনও তার অনুসারী ছিলেন।

২০১৫ সালের পর থেকে সরোয়ার তাদের কাছ থেকে সটকে পড়ে নিজেই সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরী করে।

২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটজন নিহত হন। যা চট্টগ্রামসহ সারাদেশে “ বহদ্দারহাট এইট মার্ডার” হিসেবে পরিচিতি পায়।

সে ঘটনায় করা মামলায় সাজ্জাদ আলী (বড় সাজ্জাদ) সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান। এরপর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামাননি।

বিদেশ থেকে তার বাহিনীর মাধ্যমে বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে অপরাধ পরিচালনা করে আসছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন সাজ্জাদ হোসেন (ছোট সাজ্জাদ)।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সঙ্গেতো বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

বিএনপির প্রার্থী জনসংযোগ করার সময় সেখানে শত শত লোক অংশ নেন। সরোয়ার সেখানে অংশ নিলে সন্ত্রাসী দুটি দলের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে তাকে গুলি করা হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল বলেন, ‘নগরীর তিন নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে নির্বাচনী সভা করেছেন এরশাদ উল্লাহ ভাই।

সভা শেষ করে তিনি সেখানে একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তিনি হেঁটে যাবার সময় সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে গুলি করে।’

নির্বাচনের এখনো অনেক দেরি, কিন্তু এরই মধ্যে নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকের ওপর ওপর হামলা-গুলি’র ঘটনা নিঃসন্দেহে আতংকজনক ও নিন্দনীয়।

এ ঘটনা সম্পর্কে সিএমপি’র কমিশনার হাসিব আজিজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় নগর বিএনপি’র আহ্বায়কসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

তবে পুলিশ ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করেছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *