ঢাকা: বাংলাদেশে এখন মানবতাবাদী জুটেছে। ধরে পাকড়াও করে চুল দাড়ি কেটে দেয়া হচ্ছে বয়স্কদের।
যে বৃদ্ধের চুল ধরে কেটে দেয়া হয়েছে
তাঁর নাম বাউল হালিম উদ্দিন আকন্দ। আর তাঁর সাথে যে ঘটনাটা ঘটেছে তা চার মাস আগের। কিন্তু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি।
এই ঘটনার পর গত চার মাস ধরে তিনি প্রচণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে আছেন। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। অথচ বিগত ৩৭ বছর ধরে তিনি যথেষ্ট সুখে ছিলেন এই বেশে।
তিনি হযরত শাহজালাল রহ: বাবার দরবার শরীফে যাওয়ার পর থেকে নকশাবন্দীয়া তরিকার একজন সাধক।
আর তিনি এতটাই বিনয়ী যে, “তিনি বলেন, তাদের ভালো লেগেছে তারা করেছে। আমি কী করবো?”
অবিনশ্বরের প্রেমে ডুবে এতটাই সরল হয়ে গেছেন তিনি।
কারোর জীবন বিপর্যস্ত করে তোলা কোরান হাদিসের কোন আয়াত, কোন বাণীতে আছে?
এই দৃশ্য দেখে ঘৃণায় গা কেঁপে উঠছে জনগণের। এ কোন মানবতা?
মানুষের ইচ্ছাকে পদদলিত করে, ধর্মের নামে বলপূর্বক কারো চুল-দাড়ি কেটে দেওয়া কোনো সেবা নয় — এটা নির্লজ্জ আগ্রাসন! এক বৃদ্ধ মানুষকে চারদিক থেকে চেপে ধরে মাথার চুল কেটে দেওয়া মানবতা নয়, এটা জুলুম।
জেহাদিরা উৎরে উঠেছে দেশে।মানবিক সেবা কখনো জোর করে হয় না। এটা এই লেবাসধারী জামাতিদের বোধ নেই।
বাউল ফকিরের মতো দেখতে এক ব্যক্তিকে ধরে তিনজন লোক জোর করে চুল কেটে দিচ্ছেন। বয়স্ক মানুষটি অনেকক্ষণ চেষ্টা করেন নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে। না পেরে শেষ পর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণ করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ, তুই দেহিস।’
জানা গেছে, হেনস্তার শিকার ব্যক্তির নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০)। তিনি ময়মনিসংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হালিম উদ্দিন পাগল বা মানসিক বিকারগ্রস্ত নন। সংসারজীবনে তিনি পুত্র ও কন্যাসন্তানের জনক। দীর্ঘ ৩৭ বছর যাবৎ জট ছিল তাঁর মাথায়। এভাবেই থাকেন তিনি, কারো ক্ষতি করেন না।
বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন বলছেন, ‘সেদিন (ঘটনার দিন) সকালে বাজারে একটি দোকানে বইছিলাম। কোদালিয়ার একটা লোক আমারে হুইজ (জিজ্ঞাসা) করে, কই যাইবাম। তহন কই, লালমা (গ্রাম) যাইবাম।
কয়, অতো আগ্গয়া (দূরে)! তহন আমি হাঁইট্টা যাওনের লাইগ্যা পথ দেই। হিও এইবায় আয়া মোবাইল করছে হেরারে। পরে হেরা বাইর অইছে, আমারে আটকাইছে। আমি ঘরে বইয়া আছিলাম। আমারে ছেছরাইয়া বাইর কইরা এই কাম করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার তো শক্তি কোলাই না। ৮-১০ জনে ধইরাললে কী করণ। আমারে ফালায়া দিয়া হুতাইয়া চুল কাটছে। হেইবালা আমি বেহুঁশ হয়া গেছিলাম।’