চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে দিন দিন ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মশক নিধনে অতীতের ন্যায় সিটি করপোরেশন বার বারই তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে।
সিটি মেয়র শুধু ফটোসেশন আর বক্তৃতাবাজিতেই সীমাবদ্ধ। ফলে নাগরিক সমাজ থেকে অভিযোগ উঠেছে সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে চরমভাবে ব্যর্থ।
যদিও চসিক মেয়র শাহাদাত তা মানতে রাজী নন। তার বক্তব্য হলো, আমরা চেষ্টা করছি, সেক্ষেত্রে নাগরিকদেরও যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে।
নাগরিকরা যদি নিজেদের আশে-পাশে পানি জমিয়ে রেখে মশা বংশ বিস্তারে সাহায্য করেন তাহলে সিটি করপোরেশন শত চেষ্টা করেও তা দমাতে পারবেনা।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী দেখা গেছে গত জানুয়ারি’২৫ থেকে অদ্যাবধি গত বৃহস্পতিবার(৩১ জুলাই) হিসেব অনুযায়ী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৪৪ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন।
ডেঙ্গুতে একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬৫জন, মারা গেছেন ৮ জন। বিশেষ প্রতিবেদনে এস তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ তেমন নেই। তবে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের তুলনামূলক বেশি।
এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তও হচ্ছেন অনেকে। এগুলো যেহেতু সংখ্যা মশাবাহিত রোগ, তাই নগরবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন হতে হবে।
‘ চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও নগরজুড়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই ‘ —এমন অভিযোগ তুলে অবিলম্বে সমন্বিত নজরদারি ও জোরালো মশকনিধন অভিযানের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে লার্ভার ঘনত্ব যেখানে ছিল ৩৬ শতাংশ, চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫.২৯ শতাংশে—যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমা (২০ শতাংশ)-এর চেয়ে চারগুণের বেশি।
বিবৃতিতে তারা জানান, বাসাবাড়িতে লার্ভার উপস্থিতিও ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৮ শতাংশ হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন নেতারা।
ক্যাব নেতারা অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
মেয়র ডা. শাহাদত হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুটা গতি আনার চেষ্টা করলেও প্রশাসনিক দুর্বলতা ও কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে তা ব্যাহত হয়েছে।
বরং পূর্বের মতোই অনিয়ম, অব্যবস্থা ও ঢিলেঢালা তৎপরতায় কার্যক্রমগুলো কার্যকর হচ্ছে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন সিটি’ স্লোগান এখন কেবল বিলবোর্ডে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই।
তারা আরও বলেন, মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে মূল কৌশল হলো এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা।
কিন্তু নগরের নালা-নর্দমা, খাল, কিংবা ঘরের চারপাশে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি এখনো পরিষ্কার না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মাঠে কার্যকর উপস্থিতিও প্রশ্নবিদ্ধ।
ক্যাব নেতারা মনে করেন, শুধু সিটি করপোরেশনের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়; স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, এমনকি সাধারণ নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে একটি সমন্বিত ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ চালু করতে হবে।
চিকুনগুনিয়ার বিষয়ে ক্যাবের অভিযোগ, সরকারি পর্যায়ে এখনো চট্টগ্রামে এই রোগ শনাক্তের কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবগুলোর ওপর নির্ভর করছেন, যেখান থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠছে।
করোনাকালেও ল্যাব, ওষুধ ও এমনকি ডাব নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মানুষের পকেট কাটার যে প্রবণতা ছিল, তাতে প্রশাসনের কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
পরিস্থিতি বিবেচনায়, ক্যাব নেতারা অবিলম্বে বিনামূল্যে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে নজরদারি জোরদারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, প্রমুখ।