ঢাকা: বাংলাদেশে সাংবাদিক স্বাধীনতা বলে আর কোনো জায়গা নেই। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বার বার সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলাদেশে। ঢালাও মামলা করা হচ্ছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিকদের উপর যখন তখন চড়াও হচ্ছে একদল। সাংবাদিকদের কাজ স্বাধীনভাবে ঘটনার প্রশ্ন করা, সেটা করা যাবে না। স্বয়ং উপদেষ্টা ফারুকীই টিপে ধরেছেন সাংবাদিকদের স্বাধীনতার গলা!
একের পর এক সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অফ সাউথ এশিয়া-সহ সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন।
উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের কাছে একটি আবেদনপত্রও পাঠিয়েছিলো তারা।
পঞ্চাশের উপর সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন আরও বহু। একাধিক সংবাদমাধ্যমের দপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নানাভাবে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।
এখন তো সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন না, তাই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা নেই, তবে আগের মামলাগুলোর সমাধানও হয়নি। কারাগারে থাকা সাংবাদিকরা জামিনও পাচ্ছেন না।
দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এক অজানা ভয় পেয়ে বসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের মনে৷ অনেকে চাকরি হারাচ্ছেন বা আগে হারিয়েছেন। কারণ দৃশ্যমান নয়। এজেন্সির দাপট নেই, অন্যদের খবরদারি আছে অতি কৌশলে। আর মব সন্ত্রাসের ভয়ে অনেক কিছুই লেখা যাচ্ছে না, বলা যাচ্ছে না।
এই হচ্ছে পরিবর্তনের অবস্থা। তবে এই মুহূর্তে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা হচ্ছে না। শুরুতে অনেক মামলা হয়েছে, অনেকে কারাগারেও আছেন।”
তবে এখন আর কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হচ্ছে না। হবে কী করে? সেই স্বাধীনতা থাকলে তো? টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে।
সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আরও বেশি খর্ব হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে এক ধরনের ভীতি ছিল। এখন সরকারের কোন ভীতি নেই। সরকার কিন্তু বলছে না, এই লেখো, কেন লিখলে?
কোন এজেন্সিও মিডিয়ার উপর খবরদারি করছে না। কিন্তু মিডিয়া নিজেই সেন্সরশিপ আরোপ করছে। তার কারণও আছে। এখানে মব ভায়লেন্সের কারণে সংবাদমাধ্যমের উপর এক ধরনের কর্তৃত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এরা সরকারেরই সমর্থন একটা গোষ্ঠী। তারা উগ্র ডানপন্থি। এরা প্রতিটি সেক্টরে স্বৈরাচারের দোসর খুঁজছে।
যারা সরকারকে প্রশ্ন করছে, তাদেরকে স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ দিয়ে চাকরিচ্যুতির হুমকি দিচ্ছে, তাদের চাকরিও যাচ্ছে। উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করার কারণে ৩-৪ জন সাংবাদিকের চাকরিও গেছে।
মব এর আগে বিভিন্ন হাউজের সামনে গিয়ে গরু জবাই করেছে। তারা জিয়াফত করে প্রেশার তৈরি করছে। ফলে প্রকৃত সাংবাদিকতা হচ্ছে না। যেটা হচ্ছে সেটা দৈনন্দিন রিপোর্ট হচ্ছে। বড় ধরনের কোন ইনভেস্টিগেশন (অনুসন্ধান) হচ্ছে না।
গোপালগঞ্জে ৫ জন মারা গেল, তাদের নিয়ে মিডিয়া কোন মানবিক রিপোর্ট করল না। পোস্টমর্টেম ছাড়া তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে, পরে তোলা হল। কয়েকদিন কারফিউ রাখা হলো মিডিয়া তো প্রশ্ন করল না?”
উল্লেখযোগ্য যে, গত এপ্রিলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকীকে প্রশ্ন করার পর তিন সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে খুন ও খুনের চেষ্টার মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬৬ জন সাংবাদিককে। তাদের মধ্যে ১৩ জন কারাগারে।
গণমাধ্যমের জন্যে এটি অসম্মানের।