ঢাকা: আজ বিশ্ব বাঘ দিবস! সুন্দরবনের বাঘ সারা বিশ্বে বিখ্যাত, পরিচিত।
বাংলাদেশ ছোট হলেও তার ভূপ্রকৃতি বিস্ময়করভাবে বৈচিত্র্যময়। ভীষণ সুন্দর ।
পাহাড়ের বুক চিরে গড়ে ওঠা এক ভিন্ন জীবন দেখি আমরা।
আরো দেখি হাওড় অঞ্চলে পানির রাজত্বে মানুষের টিকে থাকার লড়াই আর জলাভূমির জনপদে জল আর জীবনের যুদ্ধ।
তবে এই সব জনপদের বাইরেও আছে এক রহস্যময় জনপদ—সুন্দরবন।
নিঃসঙ্গ রাজ্যের মতো দাঁড়িয়ে থাকা এই বন বাংলাদেশের ফুসফুস।
এই বন প্রতিনিয়ত লড়াই করছে—মানুষের লোভ, প্রকৃতির রোষ আর অবহেলার সাথে।
এবং লড়তে লড়তে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এর প্রাণশক্তি। সুন্দরবনের প্রাণীগুলো বিলুপ্তির পথে।
সন্তানের মতো বনবিবি আগলে রাখেন তাঁর জনপদকে। বাংলা সাহিত্য নিয়ে যারা পড়াশোনা করেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন বনবিবির কথা।
ঝড়-জলে বুক পেতে দাঁড়ান, প্রাচীর হয়ে রক্ষা করেন। অথচ আজ সেই সুন্দরবন বিপদের মুখে শুধু লোভের কারণে।
বাঘের নখ, হরিণের চামড়া কালোবাজারের পণ্য হয়েছে।
সুন্দরবনের অমূল্য সম্পদ বাংলাদেশের গর্ব এবং জাতীয় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার আজ বিলুপ্তির প্রান্তে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রতিবেদনের বরাতে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বন্যপ্রাণীদের একটি বড় উৎস হচ্ছে সুন্দরবন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা।
অর্থের লোভে সুন্দরবনের বাঘ পাচার হচ্ছে বিভিন্ন উপায়ে।
পাচার হওয়া বন্যপ্রাণীদের তালিকায় রয়েছে বাঘ, কুমির, হরিণ, সাপ, তক্ষক, কচ্ছপ ও হাঙ্গর।
চোরাচালানকারীদের দমন করতে পারে না সরকার।
সুন্দরবন থেকে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বন্যপ্রাণী পাচার চোরাচালানকারীদের লক্ষ্য। সুন্দরবনের বাঘ শিকার চলছেই।
তাছাড়াও বাঘের সংখ্যা আরো কমছে খাদ্য সংকটের কারণে। বাঘ নদী-খাল পেরিয়ে লোকালয়ে চলে আসে। গ্রামবাসী তখন পিটিয়ে বাঘ হত্যা করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবীতে বাঘের মোট নয়টি উপপ্রজাতি ছিল। গত শতাব্দীতে তিনটি উপপ্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বাকিগুলোর মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। দুই হাজার ৬০০ বছর ধরে এই বাঘ সুন্দরবনসহ বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় এলাকায় টিকে আছে।
বিভিন্ন উপায়ে ভাগ মেরে মৃত বাঘের শরীর থেকে চোরা শিকারিরা চামড়া, মাংস, চর্বি, মাথার খুলি, দাঁত, পুরুষাঙ্গ, হাড়সহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে চোরাচালানকারীরা।
এরপর আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিদের কাছে এসব চড়া দামে বিক্রি করে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কালোবাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর জানান,২০২৪ সালের সর্বশেষ বাঘ জরিপে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৯.৬৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালের তুলনায় ১৭.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০০৪ সালে দেশে বাঘের সংখ্যা ছিলে ৪৪০টি। যার মধ্যে ১২১টি পুরুষ, ২৯৮টি স্ত্রী এবং ২১টি বাচ্চা।
২০০৯ সালে ৩০০-৫০০টির বাঘের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।