মুন্সিগঞ্জ: বিভুরঞ্জন সরকারের জন্য কান্না করছে বাংলাদেশের সাধারণ সৎ মানুষগুলো। যারা তাঁকে দেখেছেন অথবা দেখেননি তাঁরাও।

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মতো পরিণতি যেন আর কারও না হয়, সেই প্রার্থনা করেছেন তাঁর ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাতে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করার পর এই কথা বলেন তিনি।

বিভুরঞ্জন সরকার এমন মানুষ ছিলেন যে তাঁর সাথে কারো শত্রুতা ছিলো না।

পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো মনোমালিন্য ছিল না জানিয়ে চিররঞ্জন সরকার বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে কিছু ছিল কি না আমরা জানি না। এটি আত্মহত্যা, না খুন, না পরিকল্পিত কোনো ঘটনা, আমরা জানি না। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

তিনি কীভাবে মারা গেলেন, সেটি আমরা জানি না। আমি শুধু এই টুকুই বলব, এমন পরিণতি যেন আর কারও না হয়।’

৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন সরকার দৈনিক আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক ছিলেন।

২১ আগস্ট থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরিবারের লোকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সকাল ১০টার দিকে কর্মস্থলে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বের হন তিনি। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

শুক্রবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে একজনের মরদেহ ভাসতে দেখে ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশকে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা।

নৌ পুলিশের সদস্যরা গিয়ে বিকেল পৌনে চারটার দিকে লাশটি উদ্ধার করেন।

তবে এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা যাচ্ছে না। কারণ ইউনূস সরকার সাংবাদিকদের টুঁটি যেভাবে টিপে ধরেছেন আর তার উপর সরকার বাবু ছিলেন হিন্দু। সবমিলিয়ে ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছে।

বিভুরঞ্জনবাবুর ছেলে ঋত সরকার বলেন, ‘বাবার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল, কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটি আসলে কী কারণে হচ্ছে, আমরা বুঝতে চাই। যাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাঁদের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হতে চাই।’

তাঁর বাবা কোনো কারণে চিন্তিত বা হতাশাগ্রস্ত ছিলেন কি না, সে প্রশ্নের জবাবে ঋত সরকার বলেন, ‘আমার বাবা স্বাভাবিকভাবে সব সময় শান্ত থাকতেন। তাঁর মধ্যে ব্যতিক্রম কোনো কিছু লক্ষ করিনি। হতাশাগ্রস্ত ছিলেন কি না, সেটি আমরা ঠিক বলতে পারছি না।

তিনি প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার সকালে খেয়ে, ইনসুলিন নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে মাকে বলে গিয়েছিলেন বিকেল পাঁচটা, সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়িতে ফিরে আসবেন।

বিকেল পাঁচটার পরে যখন বাবা ফিরে আসেননি, তখন আমরা তাঁর মুঠোফোনে ফোন করি। ফোনটা বন্ধ পাই। পরবর্তীতে আমরা রমনা থানায় জিডি করি।’

বিভুরঞ্জনের সাথে যা হয়েছে তা মোটেও ভালো হয়নি। বড় অস্থির সময়।

দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকার ঘাতকের শিকার হলেন!

বিভুরঞ্জন সরকার হয়তো মরে বাঁচলেন, কিন্তু মিডিয়ায় এখনো ‘বেঁচে’ থাকা ‘বিভুদা’র মতো অগণিত সাংবাদিকদের বাঁচাবে কে?

এ লাশ বিভুরঞ্জন দার? নাকি দেশ বরেণ্য সাংবাদিকের, নাকি সৎ সাংবাদিকতার?

জীবনের শেষ লেখায় সাংবাদিক বিভূরঞ্জন সরকার লিখেছিলেন— “সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়”।

তবে এই ঘটনায় অতি দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছে গোটা দেশ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *