ঢাকা: একদিকে বাংলাদেশের সেনা, অন্য দিকে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার— আলোচনা, সমালোচনার শীর্ষে।
গোপালগঞ্জে বুধবারের হিংসাত্মক ঘটনা, গণহত্যার ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারকে বেআব্রু করেছে, এবং সাথে সাথে সেনার উর্দিতে কালির ছোপ লাগিয়ে দিয়েছে।
সেনাবাহিনী নিজের হাতে রক্তের রং লাগিয়ে কালিমালিপ্ত করেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে যে বর্বরতা, পৈশাচিকতা, অমানবিকতা গোপালগঞ্জে মোতায়েন সেনারা দেখিয়েছে, তা একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।
গোপালগঞ্জে বুধবার গুলিতে নিহত চারজন তরুণের দেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করে দেয়া হয়েছে । এত তাড়াহুড়া কেন?
গোপালগঞ্জে নিহত হলেন রমজান কাজী (১৯), সোহেল রানা (৩৫), দীপ্ত সাহা (৩০) এবং ইমন তালুকদার (২৪)। এঁরা মারা গিয়েছেন সেনা ও পুলিশের গুলিতে। সাঈদের মৃত্যুর পরে ময়নাতদন্ত করা হলেও গোপালগঞ্জে নিহতদের কারও দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি।
ন্যায়বিচার কোথায়?
গোপালগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নিহত চারজনের মরদেহ সুরতহাল বা ময়নাতদন্ত ছাড়াই সৎকার করা হয়েছে।
কোনো মামলা হয়নি, কোনো তদন্তও হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বলছেন, এই ময়নাতদন্তহীন দাফন “ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনকে প্রায় অসম্ভব” করে তোলে।
কিংস পার্টি, জঙ্গী বাহিনী তো তাই চেয়েছে?
মৃতদেহ গায়েব করে দিলে সত্যটা কীভাবে বের হবে? আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী বলেই হয়নি?
টোকাই সরকার বাধ্য করেছে গোপালগঞ্জে খুন হওয়া মানুষগুলোর কোনরকম ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন বা সৎকার করতে ।
খুব তাড়াতাড়ি যাতে সব সম্পন্ন হয় সেটাও চাপ দিয়ে নিশ্চিত করেছে ।
যেকোনো অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্যেই সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত অপরিহার্য বিষয়।
কোন কোন সময় আত্মহত্যা,সড়ক দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবারের অনুরোধক্রমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে ময়নাতদন্ত এবং সুরতহাল রিপোর্ট ছাড়া কোনভাবেই দাফন করার নিয়ম নেই। তবে ইউনূসের যুগে নিয়মের কে ধার ধারে?
ফৌজদারি কার্যবিধির (Code of Criminal Procedure) ১৭৪ ধারায় ময়নাতদন্তের (autopsy) বিধান রয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়েছে যে, “কোনো ব্যক্তি অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনকভাবে মৃত্যুবরণ করলে, সেই মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য ময়নাতদন্ত করা আবশ্যক।”
ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ, আঘাতের চিহ্ন, বিষক্রিয়ার প্রমাণ ইত্যাদি বিষয়গুলি নিশ্চিত করা হয়, যা বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আইনকে অমান্য করে গোপালগঞ্জে চারজন গুলিবিদ্ধ নিহতের দাফন করার অর্থ হলো মৃত্যুর কারণকে আড়াঁল করা।
কারণ ময়নাতদন্ত করলেই তাদের শরীরে যে গুলি বিদ্ধ হয়েছে সেটা কোন ধরণের অস্ত্র থেকে ছোড়া হয়েছে সেটি বের হয়ে আসবে। আর সেটা চায় না এই রাজাকার বাহিনী।
হত্যাকারীকে যাতে আইনের আওতায় না আনতে হয় তার জন্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই ব্যবস্থা করা হয়েছে।