চট্টগ্রাম: চব্বিশের পাঁচ আগষ্টের পর থেকে পাকিস্তানের সাথে যে দহরম মহরম চলছে বাংলাদেশের তাতে নানা সময়েই গোপনে কন্টেইনারে করে অস্ত্র গোলাবারুদসহ আনার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এবার সেই পেয়ারে পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে কন্টেইনারভর্তি নিষিদ্ধ ঘোষিত মাদকদ্রব্য পপি সীড বা পপি বীজ আনা হলো।
যদিও কয়েকমাস আগে পাকিস্তান থেকে আসা কন্টেইনারবাহী পণ্যের কোন কায়িক পরীক্ষা ছাড়াই বন্দর থেকে দ্রুত খালাস দেয়ার নির্দেশনা ছিল।
কিন্তু এ যাত্রায় কেন যে তা মানেননি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের বেরসিক কর্মকর্তারা তা ঠিক বোঝা গেলো না।
পাকিস্তান থেকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এবার দুই কন্টেইনারে করে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এলো মাদক দ্রব্য পপি বীজ।
তবে খালাস হওয়ার আগেই আমদানি নিষিদ্ধ দুই কনটেইনার ভর্তি ২৪ হাজার ৯৪০ কেজি পপি বীজ আটক করেছে কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পপি বীজ ‘ক’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে আমদানি নিষিদ্ধ। কাস্টমস সূত্র জানায়, ঘোষিত পণ্যের মূল্য ছিল ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় পাওয়া পণ্যের মূল্য প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
তবে বিপুল পরিমাণ এই পপি বীজের গন্তব্য কি শুধুই বাংলাদেশ নাকি তৃতীয় কোন দেশে পাচারের জন্য চট্টগ্রামে আনা হয়েছিল তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
যদি সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা হয় তাহলে বের হয়ে আসবে কারা এই অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা এই অভিযান পরিচালনা করে।
পাকিস্তান থেকে আমদানি করা দুটি কন্টেইনারে ঘোষণায় ৩২ হাজার ১০ কেজি পাখির খাদ্য উল্লেখ থাকলেও কায়িক পরীক্ষায় ২৪ হাজার ৯৬০ কেজি পপি বীজ এবং ৭ হাজার ২০০ কেজি বার্ড ফুড পাওয়া যায়।
এসব পণ্য আমদানি করে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানাধীন ৭নং কোরবানিগঞ্জে অবস্থিত মেসার্স আদিব ট্রেডিং।
তাদের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এম এইচ ট্রেডিং কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিমিটেড।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবির জানান, পাকিস্তান থেকে গত ২৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি কনটেইনার ভর্তি পণ্য আমদানি করা হয়।
তা খালাসের জন্য ছাবের আহমেদ টিম্বার কোম্পানি লিমিটেডের অফডকে আনা হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চালান দুটির খালাস স্থগিত করে এবং পরবর্তী সময়ে কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করে।
এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোপ্রযুক্তি সেন্টার, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং উদ্ভিদ সংগনিরোধ দফতরের পরীক্ষায় ওই পণ্যকে পপি বীজ হিসেবে নিশ্চিত করা হয়।
বাংলাদেশের আমদানি নীতি অনুযায়ী পপি বীজ ‘ক’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে আমদানি নিষিদ্ধ। মিথ্যা ঘোষণায় নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করায় কাস্টমস আইন ২০২৩ অনুসারে চালানটি আটক করা হয়েছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ঘোষিত পণ্যের মূল্য ছিল ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় পাওয়া পণ্যের মূল্য প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে আমদানী নিষিদ্ধ এই পপি বীজ আমদানীর পেছনে একটি অসাধূ মাদক ব্যবসায়ী চক্র জড়িত রয়েছে।
এই বীজগুলো বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য না বাংলাদেশ হয়ে অন্য কোন তৃতীয় দেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করা হয়েছিল তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এলাকায় পাহাড়ি নদী ও ছড়া (ঝর্ণা) তীরবর্তী অঞ্চলে এই পপি চাষের সন্ধান পাওয়া যায় মাঝে মধ্যে।
লোক দেখানো অভিযানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী সেগুলো ধ্বংসও করে। আবার এই ধ্বংস করার সময় একশ্রেণীর তাবেদার সাংবাদিকদের হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে।
কিন্তু চট্টগ্রামে যে বিপুল পরিমাণ পপি বীজ আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চয়ই বাংলাদেশে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আনা হয়নি বলেই আশংকা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
তৃতীয় কোন দেশে যদি এই পপি বীজে পাচারের জন্য গোপণে অর্থাৎ মিথ্যে ঘোষণায় আনা হয়ে থাকে বাংলাদেশে তাহলে নিশ্চয়ই এর পেছনে সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারি দল রয়েছে বলেই আশংকা করছেন কাস্টমস ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাগণ।
