ঢাকা: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ফাঁদে ফেলার জন্য অপূর্ব রাদকে অপূর্ব পাল বলে প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি প্রধান সংবাদপত্রিকাগুলোও রাদকে পাল বানিয়ে লিখছে!

তবে যিনি কোরান অবমাননা করেছেন, তিনি হিন্দু নন, তিনি মুসলমান।

হিন্দু থেকে কনভার্ট হয়ে মুসলিম হয়েছে তারপর জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে এমন লোকের সংখ্যা কম না।

এর দায় হিন্দু ধর্মের নয়।

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, অপূর্ব পাল নয়, সে অপূর্ব আহমেদ। সে হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছে। লোকেরা খুব বলছে।

অপূর্ব পালরা যে ইসলামের সমালোচনা করে না, তা-ই বোঝাতে চাইছে কিছু লোক। আমি বোঝাতে চাইছি, যে কোনও মানুষেরই, সে যে ধর্ম বা দর্শনই বিশ্বাস করুক না কেন, অধিকার আছে ইসলাম সহ যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার।

সমালোচনা বা অবমাননা অপূর্ব পাল করুক, অপূর্ব আহমেদ করুক, জঙ্গিরা একই ছুরিতে একই ভঙ্গিতে তাদের কোপায়। অভিজিৎ রায়কে যেভাবে কুপিয়েছিল, ওয়াশিকুর বাবুকে সেভাবেই কুপিয়েছিল।

নিলয়কে যেভাবে কুপিয়েছিল, দীপনকে সেভাবেই কুপিয়েছিল। সুতরাং পাল আর আহমেদ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ হোক।

এর আগেও তসলিমা নাসরিন প্রতিবাদ করেছেন ঘটনাটিতে!

তিনি লিখেছিলেন, কোরআন অবমাননার দায়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অপূর্ব পালকে বিশ্ববিদ্যালয় বহিস্কার করেছে।

শুনেছি অপূর্ব দু’বছর আগে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। তার নাম এখন অপূর্ব আহমেদ। সে হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, খ্রিস্টান হোক, নাস্তিক হোক কিছু যায় আসে না।। সে কোরআন অবমাননা করেছে বলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

থানায় নেওয়ার সময় তাকে বর্বর মুসলমানরা হামলা করেছে।

তার জীবনটা নষ্ট করে দিল এক পাল উন্মত্ত মুসলমান।

অথচ, কোরআন, আর সব ধর্মগ্রন্থের মতো মানুষের লেখা গ্রন্থ।

আর সব ধর্মগ্রন্থের মতো কোরআনের সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে।

কোরআনে সমালোচনা করার হাজারো উপাদান আছে।

কেউ সমালোচনা করলে তাকে গ্রেফতার করা, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা অসভ্যতা, বর্বরতা, হিংস্রতা, মূর্খতা।

অপূর্ব পাল বা অপূর্ব আহমেদকে মুক্তি দেওয়া হোক। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে দেওয়া হোক।

যারা তাকে আক্রমণ করেছে, তাদের বিচার করা হোক। সমাজকে ধর্মান্ধতা মুক্ত করা হোক। মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করার ব্যবস্থা হোক।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগাকে স্বাভাবিক বলে মানা হোক। বাকস্বাধীনতা আর মত প্রকাশের অধিকারকে লঙ্ঘন করাকে অন্যায় বলে ঘোষণা করা হোক।বাকস্বাধীনতাবিরোধী আইনকে বিলুপ্ত করা হোক”।

উল্লেখযোগ্য যে, ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে। পুলিশ সূত্রে খবর, অপূর্ব রাদ নামে ঢাকার এক পড়ুয়া ফেসবুকে কোরান অবমাননামূলক পোস্ট করেন।

তাঁর সেই পোস্টের বিরোধিতায় বেশ কিছু ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। তা নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। অপূর্বকে গ্রেপ্তারির দাবি ওঠে।

এর মধ্যে রাত ১টা নাগাদ অপূর্বর বাসার সামনে জড়ো হতে থাকেন ক্ষুব্ধ জনতা। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করে ভাটারা থানার পুলিশ। প্রথমে তাকে আটক করতে জনতার সহায়তা চায় পুলিশ। জনতা সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়।

এরপর পুলিশ অপূর্বকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তেজিত জনতা অপূর্বকে পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরে বাড়তি পুলিশ ডেকে আনা হয়।

রাত প্রায় পৌনে তিনটে নাগাদ অপূর্বকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *