গত এক সপ্তাহ ধরে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি জেলা আবার অশান্ত ও আগ্নেয়গিরি হয়ে উঠেছে। আদিবাসী কিশোরীর ধর্ষণকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙ্গালী সেটেলারদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রচন্ড রকমের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এ পাহাড়ি জনপদ।

সেখানে দায়িত্বরত সেনাবাহিনী এই বিরোধ না থামিয়ে উল্টো সেটেলার মুসলিম বাংলাদেশীদেরকে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে উষ্কানি দিয়েছে-দিচ্ছে-দেবে বলে অভিযোগ উঠেছে, (অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে)।

যারা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে বেঘোরে প্রাণ দিয়েছেন তারা সবাই আদিবাসী ও তারা সবাই তরুণ। খাগড়াছড়ির এই অমানবিক-নৃশংস ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে কিংস পার্টি এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে: জে: ( অব) জাহাঙ্গীর ভারতীয় ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

খাগড়াছড়ির গুইমারায় মারমা স্কুল ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহত তিনজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। তবে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ জন এবং আহতও কমপক্ষে ৬০ জনের মত। নিহতরা সবাই আদিবাসী।

আহতদদের মধ্যে অল্প কয়েকজন বাঙ্গালী ছাড়া ৯০ শতাংশই আদিবাসী। নিহত ৩ জন ছাড়া বাকিদেরকে মুসলিম সেটেলাররা ইতিমধ্যেই গায়েব করে দিয়েছে সেনাবাহিনীর সহায়তায়। যে তিনজনের মরদেহ খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে তাদের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল বলে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে।

তবে যতদূর জানা গেছে ময়নাতদন্তের আগে নিহতদের মরদেহ তাদের আত্মীয়স্বজনদেরকে দেখতে দেয়া হয়নি।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রোববার গুলিতে নিহত তিন জনই গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনজনের বয়সই ২০ বছর থেকে ২২ বছরের মধ্যে। নিহতরা হলেন রামসু বাজার এলাকার অলাকাই মারমার ছেলে তৈইচিং মারমা(২০), আমতলী পাড়ার থুহলাঅং মারমার ছেলে আথুইপ্রু মারমা(২১) এবং চেংগুলি পাড়ার হাসু মারমার ছেলে আখ্রাউ মারমা(২২)। শ্লীলতাহানির ঘটনা শুধু পাহাড়ে নয়, সমতলেও অহরহ ঘটছে।

সমতলেও সেসব ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ, সড়ক অবরোধের মত ঘটনাসহ নানা সহিংসতা ঘটে, কিন্তু গুলি করতে শুনেছেন কখনো?শোনেননি।

তাহলে পাহাড়ে কেন এ ধরনের ঘটনাসহ ছুতোনাতায় উর্দিপড়া সরকারি বাহিনী গুলি চালাবে? সে প্রশ্ন করেছেন কেউ কখনো? মানবাধিকার নিয়ে যারা গলা ফাটান রাজধানীর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সভাকক্ষে বা রাজপথে তারা কি কখনো এ ব্যাপারে কথা বলতে পেরেছেন?

কখনো স্পষ্ট করে বলেছেন—বাংলাদেশের তিন পাহাড়ি জেলায় সেনাবাহিনী সেখানকার আদিবাসী বা জুম্ম জাতিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বছরের পর বছর। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে যাওয়া দাগী আসামী-সন্ত্রাসী-চোর-ছ্যাঁচোর-ডাকাত-খুনীদেরকে এই তিন পাহাড়ি জেলায় স্থায়ী আবাস গড়ে দেয়া হয়েছে। তাও সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে।

তাদেরকে এখনো বিনামূল্যে বা অত্যন্ত কমমূল্যে রেশন দেয়া হয়। জুম্ম জাতিদের জমিজমা বেদখল করে সেখানে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে দেয়া হলো এসব মুসলিম সেটেলারদেরকে।

যা শুরু হয়েছিল সাবেক সিএমএলএ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসন-শোষণ আমল থেকেই। মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারদের অন্যতম এই জিয়া কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে গোয়েন্দা শাখার অফিসার ছিলেন।

তাহলে বুঝুন যখন পাকিস্তানের বিভিন্ন সরকারি চাকরিতেই বাঙ্গালীদের প্রতি চরম বৈষম্যভাব পোষণ করতো পাকিস্তানীরা তখন জিয়াকে কেন তাদের গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন পাকি সিনিয়র অফিসাররা। নিশ্চয়ই তিনি পাকিদের কাছে অনেক বেশি বিশ্বস্ত-অনুগত ছিলেন।

এই জিয়াই কিন্তু বাংলাদেশে পাহাড়ি তিন জেলায় বাঙ্গালী সেটেলারদেরকে স্থায়ী আবাস গড়ে তুলে দিয়েছিলেন, চাষাবাদের জন্য পাহাড়িদের জমি। এমনকি বিনামূল্যে রেশনসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। আর এ কাজে ব্যবহার করেছিলেন সেনাবাহিনী ও বিডিআর, এপিবিএনসহ আনসার বাহিনীকে।

আর ভেতরে ভেতরে গোয়েন্দা অপকর্মের জন্যতো ডিজিএফআই, এনএসআই ছিলই। সেই সাথে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রশাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ব্যবহার করেছে ও করছে। এই সেটেলারদেরকে তিন পাহাড়ি জেলায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো সেখানকার আদিবাসীদেরকে দ্রুতলয়ে সেখান থেকে বিতারিত করে এইসব সমাজবিরোধী বাঙ্গালী সেটেলারদের আধিক্য বাড়িয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের সংখ্যা বাড়ানো।

যাতে করে এই তিন পাহাড়ি জেলার জনপদ আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীশূন্য হয়ে পড়ে বা সংখ্যায় দ্রুত কমে যেতে থাকে।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো- সেই যে পথ দেখিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক গোয়েন্দা অফিসার পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেই পথে এখনো চলছে বাংলাদেশ। তার পরবর্তীতে আরেক সিএমএলএ ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এলেন, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম জিয়া মানে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন।

তারপরে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এই তিন পাহাড়ি জেলা-জনপদ সম্পর্কে কিন্তু তাদের চিন্তাভাবনার তেমন কোন হেরফের হয়নি।

তবে হ্যাঁ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বাংলাদেশ সরকার ও জেএসএস এর মধ্যে। সে বছর ২ ডিসেম্বর এই খাগড়াছড়িতেই জেএসএস এর সামরিক শাখার সদস্যরা মানে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ স্যারেন্ডারবা জমা দেন।

জেএসএস এর প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই যে শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ী জনপদে অনেকটা শান্তি ফিরে এসেছিল। রক্ত আর অস্ত্রের ঝনঝনানি অনেকটা বন্ধ হয়েছিল। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পগুলি ধীরে ধীরে প্রত্যাহারের কথা থাকলেও সেটি কিন্তু হয়নি। অর্থাৎ তিন পাহাড়ি জেলায় সেনাশাসনেই চলেছে শান্তিচুক্তির পরেও।

কখনো তা শিথিল ছিল কখনো তা অতিমাত্রায় কঠোর প্রয়োগ হয়েছে, হচ্ছে। বেসরকারি প্রশাসন পাহাড়ে মূলত ঠুঁটো জগন্নাথ। কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিলনা। পাহাড়ে যত অবকাঠামোগত স্থাপনা হচ্ছে, বিলাসবহুল কটেজ, হোটেল, মোটেল হচেআছ তার সবকিছুই সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন ও তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রনে।

পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী কখনোই তাদের আধিপত্য খাটো করেনি তা সে ‘শান্তিচুক্তি’র যত ধারাই থাকুকনা কেন।

কিন্তু শান্তিচুক্তির সময় (১৯৯৭ সালে) তৎকালীন সরকার ও জেএসএস উভয় পক্ষ থেকেই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তখন এই সেনাবাহিনীর ভেতরে থাকা পাকি আইএসআই এর বন্ধুপ্রতিম গোয়েন্দা সংগঠন ডিজিএফআই এর একটি অংশ কৌশলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণ একটি অংশকে শান্তিচুক্তিবিরোধী শক্তি হেসেবে দাঁড় করায়।

যেটি পরবর্তীতে ইউপিডিএফ ( ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) নামে আত্মপ্রকাশ করে। তাদেরকে পরবর্তীতে এই ডিজিএফআই নানাভাবে ব্যবহার করেছে তাদের স্বার্থে। জেএসএস ( জনসংহতি সমিতি) এর প্রধান সন্তু লারমা ও তার দলের বিরোধীতা করাই হলো এই ইউপিডিএফ এর মূল কাজ।

শুধু কি তাই ? তখন মানে শান্তিচুক্তির আগে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন- আওয়ামীলীগকে ভোট দিলে বাংলাদেশের মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে, আর তিন পাহাড়ি জেলা এমনকি ফেনী অবধি ভারতের অংশ হয়ে যাবে। তাঁর এই কথা নিশ্চয়ই দেশবাসী ভুলে যাননি।

কিন্তু এরপরওতো ফেনীও তিন পাহাড়ি জেলা বাংলাদেশেরই অংশ আছে। আর কোন মসজিদে কোন উলুধ্বনি শোনা যায়নি। কোন চরম সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতা সম্পন্ন মানুষ না হলে এমন মন্তব্য কেউ করতোনা। এজন্য অবশ্য তিনি কখনো ক্ষমাও চাননি।

কারণ সে বিনয়তো তার মধ্যে ছিলনা কখনো। কারণ বিএনপি’র ভাষায় বেগম খালেদা জিয়াতো “ আপোষহীন নেত্রী ” ।

মূলত খাগড়াছড়ির ও পাহাড় নিয়ে কত দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে তা একটু মনে করিয়ে দেয়ার জন্যই এসব বিষয়য়ের অবতারণা করা। পাঠক নিশ্চয়ই জানেন এসব বিষয়ে।

এখনো ১৪৪ ধারা চলছে খাগড়াছড়িতে। অন্য দুটি পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানেও আগুন জ্বালানোর অপচেষ্ট চলছে। সাদামাটাভাবে খাগড়াছড়ির বিষয়টিকে শুধু রেপ কেইস পরবর্তী সহিংসতা ভেবে নিলে চরম ভুল হবে।

খাড়ড়াছড়ির গুইমারায় সংঘটিত (পরিকল্পিতভাবে ঘটানো) এই সহিংসতা শুধু যে খাগড়াছড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকছে বা রাখা হবে তা কিন্তু নয়। এর সব কিছুই করা হয়েছে সেই ‘মার্কিন ডিপষ্টেট’ ও ‘ইউনুসীয় মেটিকুলাস ডিজাইন’ এর অংশ হিসেবে।

গত কয়েকদিন ধরে ঘটনাগুলো নানা সংবাদমাধ্যম, পাহাড়ে অবস্থানরত পরিচিতজনদের সাথে সীমিত আকারে কথাবার্তা বলে যা বুঝতে পারলাম তা কোনভাবেই সুখকর নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাগড়াছড়ি ও পাহাড়ি তিন জেলা নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য চোখে পড়েছে।

এর মধ্যে সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক , মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক লিখেছেন খাগড়াছড়িতে যা ঘটেছে তা নিছক এক মামরা কিশোরীকে ধর্ষণ, পরবর্তীতে প্রতিবাদী ৩ জন পাহাড়িকে গুলি করে হত্যা নয়। এসব একটি সুপরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্রের অংশ।

গত বছর ২৫ মে শেখ হাসিনা বলেছিলেন―” বাংলাদেশের একটা অংশ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর চক্রান্ত চলছে। মার্কিন যু*ক্ত*রা*ষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনের মতো বাংলাদেশের একটা অংশ চট্টগ্রাম, মিয়ানমার নিয়ে খ্রিস্টান স্টেট (রাষ্ট্র) বানাবে।”

মনজুরুল হকের মতে -শেখ হাসিনা বলার আগেই সম্ভবত ২০২২/২৩ সালেই ডিপস্টেট এই বিষয়ে ‘হোমওয়ার্ক’ শুরু করে দিয়েছিল।

অনেকেই বিষয়টাকে ‘আষাঢ়ে গল্প’ বা ‘কল্পিত জুজুর ভয় দেখানো’ বলে উড়িয়ে দেন। বিষয়টা যে আদৌ কল্পিত জুজুর ভয় নয় তার প্রমাণ জাতি দুমাস পরেই হাতে-নাতে পেয়েছে। একটা সাধারণ কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কীভাবে মেটিক্যুলাসলি করা ডিজাইনে সরকার পতন ঘটিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিল এবং মীর জাফরের বোবা সৈনিকদের মত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল জাতি।

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ওপর শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলি, ৩ জনের মৃত্যু, আহত অসংখ্য। এই খবরটির প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়।

দেশের অধিকাংশ মানুষ (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) ধর্ষণ নামক অমানবিক ঘটনাকে সামাজিকভাবে ‘ইউজ-টু’ করে ফেলেছে। তা না হলে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারত। এমন নয় যে দেশে মৃত্যুদণ্ড রোহিত।

এর সঙ্গে কথিত Zoland-এর যোগসূত্র কোথায়? এবার সংক্ষেপে সেটা বলার চেষ্টা করি, দেখুন ডটগুলো মিলিত হয়ে কোনও স্ট্রেইটলাইন তৈরি করে কিনা।

পাহাড়ে একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে থাকলে এবং তার যথাযথ প্রতিকার না হলে (প্রতিকার হবে না কারণ, বাঙালি সিভিল-মিলিটারি কর্মকর্তারা, সমতলের সংখ্যাগুরুত্বের গরিমায় ভোগা বাঙালিরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে থার্ডক্লাস সিটিজেন ভাবে। তাই কখনও ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’, ‘উপজাতি’, ‘বার্মিজ শরণার্থী’ কিংবা ‘আরাকানি উদ্বাস্তু’ মনে করে এবং পাহাড়িদের সঙ্গে ঔপনিবেশিক আচরণ করে) বিক্ষুব্ধ পাহাড়িরা পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল―’জেএসএস’, ‘ইউপিডিএফ’ ও জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা গ্রুপ) এর মাধ্যমে আশির দশকের অবস্থানে ব্যাক করার সম্ভবনাও তৈরি হতে পারে।

তখন বাংলাদেশ তার ভূখণ্ড অটুট রাখার জন্য বল প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ সরাসরি সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে। আর তখনই সর্বপ্রকার লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে হাজির হবে মর্কিন মেরিন, পাকিস্তানি আইএসআই, তুরস্ক।

ফলে দ্রুতই KNA (Kuki National Army) PDF (People’s Defence Force) আরাকান আর্মি, চিন স্টেট এই অঞ্চলকে অস্থির করতে জড়িয়ে পড়বে। যে হুমকিটা ইউনূস সেই প্রথম দিন থেকেই ভারতকে দিয়ে আসছেন―” ভারত বাংলাদেশকে অস্থির করতে চাইলে তাদের ‘সেভেন সিস্টার্স’ও অস্থির হবে।“ বলে।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক মনে করছে শুধুমাত্র মিয়ানমারভিত্তিক জোল্যান্ড টিকবে না। তাই তারা চিন স্টেটের লাগোয়া ভারতের মিজোরামে বসবাসরত খ্রিস্টান ও হাতে গোণা কিছু ইহুদীদের নিয়ে বাংলাদেশের কুকি-চিন জনগোষ্ঠীকে এক ছাতার নিচে এনে বৃহত্তর ‘জো-ল্যাণ্ড’ গঠনের জন্য পুরোদমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

যার প্রাথমিক পদক্ষেপ-বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাখাইনে লজিস্টিক পৌঁছানোর জন্য রাখাইন করিডোর, যৌথমহড়ার নামে ঘন ঘন মার্কিন সেনার আগমন, এন্ট্রি-রেজিস্টেশন ছাড়াই সৈন্যদের অবাধ চলাচল, মহড়া শেষেও বাংলাদেশ ত্যাগ না করা ইত্যাদি।

দেশে যখন পাহাড় জ্বলছে, সেসময় ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে বসে কয়েকটি দেশের প্রাক্তন সরকারপ্রধানের সমর্থন নিয়ে গলাবাজী করছেন। যারা একসময় শেখ হাসিনার কাছে ধরনা দিয়েছিল তার (ইউনূসের) বিচার বন্ধ করার জন্য। কেননা পাহাড় অস্থির হোক এটা ডিপস্টেটের ‘প্ল্যান-বি’।

আর ‘পাপেট’ হওয়ায় তাকে নিয়োগকর্তার সকল প্ল্যানেই সাড়া দিতে হবে। সমতলের বাঙালিরা কি তিনটি পার্বত্য জেলা পৃথক হতে চাইলে বা স্বায়ত্বশাসন চাইলে কিংবা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে মার্জ করতে চাইলে মেনে নিতে পারবেন? এর উত্তর হচ্ছে―না, পারবেন না কারণ, আমাদের পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটাই বাস্তবতা।”

এদিকে কিন্তু এ ঘটনার প্রতিবাদে এনসিপি নেতা অলীক মৃ তার রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। অলীক খুব পরিচিত কেউ নন। তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল)।

অলীক তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণ, আদিবাসীদের ওপর হামলা, আদিবাসীদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও তিনজন আদিবাসীকে হত্যার ঘটনা নিয়ে এনসিপির নীরবতা এবং ধর্ষণ নিয়ে এনসিপির নেতা হান্নান মাসউদের মিথ্যাচারের (আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণ কে ভূয়া বলেছেন) প্রতিবাদে পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এনসিপির জন্য শুভকামনা।’

এ ঘটনার পর অলীকের সঙ্গে সাংবাদিকরা আলাপকালে তিনি হতাশার কথা বললেন এনসিপিকে নিয়ে। তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। সমতলের এই আদিবাসী অলীক ইন্টেরিম সরকারের কোনো গুরুদায়িত্বে নেই। অলীক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নন, সমতলের মধুপুরের গারো জাতির মানুষ। কিন্তু দেশের একটি অঞ্চলে একটি সংখ্যালঘু জাতির প্রতি অব্যাহত নিপীড়ন মেনে নিতে পারেননি।

পার্বত্য চুক্তির পর পাহাড়ে সহিংসতা কম হয়নি। কিন্তু গেল এক বছরে যা হলো, তা কোনোভাবেই মানা যায় না।

এনসিপি’র চরম সাম্প্রদায়িক জঙ্গী নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। ভারত আমাদের পার্বত্য অঞ্চল কেড়ে নিতে চায়। আমরা আমাদের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছেড়ে দেব না। ১৯৭১ সালে যেমন পাকিস্তানের মোকাবিলা করেছি, তেমনি ২০২৫ সালে ভারতের মোকাবিলা করব।’

হান্নান মাসউদের বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আবারও বলছি, একটি ধর্ষণের ঘটনাকে সামনে এনে পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। ধর্ষণ ভয়াবহ অপরাধ, এর জন্য অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকে দিচ্ছেন, পাহাড়কে অশান্ত করার মতো ঘৃণ্য কাজে ফুয়েল দিচ্ছেন, তারা সুশীল না, তারা দেশদ্রোহী।’

#নুরুল ইসলাম আনসারি, লেখক, প্রাবন্ধিক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *