বিএনপি ভার্সেস এনসিপি, নির্বাচনে দিলো ছিপি! বিষয়টি কি এমনই দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ?

সরকার চালায় কে ? ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার ? নাকি জঙ্গী টোকাইদের রাজনৈতিক সংগঠন এনসিপি ?

মঙ্গলবার ১২ আগষ্ট রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে জাতীয় যুব সম্মেলনে বক্তৃতায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সরাসরি বললেন- “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না”।

এই অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের উপস্থিত ছিলেন। তারা বক্তৃতাও দিয়েছেন। জামায়াতও দ্রুত নির্বাচন চায়না তা বিভিন্ন সময়েই বলে আসছে।

কিন্তু লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির মূল নেতা তারেক রহমান এনসিপি নেতা নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীর এমন হুমকির পর এখন কি বলেন সেটিই দেখার অপেক্ষা।

নোবেল লরিয়েট ড. ইউনুসের ইন্টেরিম সরকার তো আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ এ রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। নির্বাচন কমিশনও ফেব্রুয়ারিতে ভোট করতে এর দুই মাস আগে সূচি ঘোষণার কথা বলেছে।

দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসা বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে: জে: জাহাঙ্গীর সাহেবও নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বলেছেন- নির্বাচনে ৮০ হাজার সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। তাহলে এখন কি হবে ? ইউনুস সরকার কি করবেন এখন ?

এরমধ্যে গত ৫ আগষ্ট ‘ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ এর দিনে ঢাকায় বর্ষপুতির রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ফেলে এই নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারিসহ এনসিপি’র ৫ নেতা কক্সবাজারে সমুদ্র বিহারে কেন গিয়েছিলেন সে প্রশ্ন থেকেই গেলো।

নানাভাবে খবর বের হয়েছিল সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এর সঙ্গে মিটিং করেছেন এনসিপি নেতারা। কিন্তু তা তারা অস্বীকার করেছেন।

তবে কক্সবাজারে যে হোটেলটিতে এনসিপি নেতারা অবস্থান করছিলেন তা কক্সবাজারের বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘেরাও করে বেশ কিছুক্ষন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে- এমন সংবাদ আর অস্বীকার করতে পারেনি কেউ। কারণ মাঠপর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীরা কিন্তু এই এনসিপিকে মোটেই সহ্য করতে পারছেন না।

কিন্তু বিএনপি’র ওপর তলার নেতারা কি ফন্দি আঁটছেন মার্কিনী আর এনসিপি নেতাদের সঙ্গে তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা।

এদিকে ১২ আগষ্ট ঢাকা ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে- ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নেতারা।

গত সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এনসিপির ৪ নেতা অংশ নেন। তাঁরা হলেন- দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ।

ওই বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় এনসিপি।

এতে বলা হয়, এই বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কারের রূপরেখা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে মতবিনিময় হয়।

এনসিপির জুলাই পদযাত্রায় দেশের প্রায় সব কটি জেলায় সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানানো হয়েছে।

এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কিছুদিন আগেই কিন্তু এই জ্যাকবসন লন্ডনে উড়ে গিয়েছিলেন বিএনপি’র হর্তা-কর্তা-বিধাতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে।

সে খবরও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের বরাত দিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবরটি ছিল এমন- “ লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। চলতি বছরের গত জুলাই মাসের ২য় সপ্তাহে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর ও মার্কিন দূতাবাস। জানা গেছে, একান্ত এই বৈঠকে আগামী নির্বাচন ও সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আগামী নির্বাচনে জয় পেলে কেমন দেশ গড়তে চায় বিএনপি কিংবা নির্বাচনী রূপরেখা নিয়েইবা দলটির ভাবনা কী? এমন সব মৌলিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন তারা।”

প্রথমে লন্ডনে গিয়ে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূত জ্যাকবসন বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক, এর মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক।

এসব বৈঠক নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ও নানা প্রশ্ন, নানা সন্দেহ দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।

কারন বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত ইতিহাস বলে যখনই মার্কিন কূটনীতিকরা আলোচনার নামে বেশি মাত্রায় ‘ কূট-চাল’ চালতে থাকেন তখনই কোন অশনি সংকেত দেখা দেয়।

মার্কিন কূটনীতিক জাকবসনের এই ‘কূট-চাল’ এর আগে এ বছর জুন মাসে বাংলাদেশ সরকারের অবৈধ-অসাংবিধানিক-অনির্বাচিত অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপেদেষ্টাও কিন্তু লন্ডনে উড়ে গিয়েছিলেন মূলত: তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য।

সেখানে বৈঠকের পর ১৩ জুন একটি যুক্ত বিবৃতি দেয়া হয়। যদিও বিবৃতিটি ছিল সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া। তাতে অবশ্য বিএনপির কর্নধার তারেক রহমানের সায় ছিল।

তখন বিবিসি’র সংবাদে বলা হয়েছিল- “ ২০২৬ সালের রমজানের আগেই বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শেষে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য ওই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।”

বিবিসি’র সেই খবরে বলা হয়েছিল- লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা দুইটা) লন্ডনের পার্ক লেনের হোটেল ডোরচেস্টারে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তার সঙ্গে ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।

লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল নয়টা ১০ মিনিটে বৈঠকটি শুরু হয়। শুরুতে পরিচিতি পর্বে অংশ নেন দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা। পরে রূদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অন্য প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন না।”

তাহলে বিষয়টি কি দাড়াচ্ছে ? সেই জুন মাস থেকে ইউনুস সরকার বলছেন আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বা হতে পারে সবকিছু অনুকুলে থাকলে।

বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাতে মোটামুটি স্বস্তি পেয়েছিল, তারা স্বাগতও জানিয়েছির।

শুধু এনসিপি ও জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রশ্নে দ্বিমত করেছিল। কারণ জামায়াত চিন্তা করছে তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে আরো ভালোভাবে তাদেও লোক-ক্যাডার ঠিকভাবে বসিয়ে তারপর তাদের সুবিধেমত সময়ে নির্বাচনে যাবে।

যে নির্বাচনে তারা মোটামুটি একটি ভালো অবস্থানে যেতে পারে, এমনকি সরকারের ক্ষমতার ভালো অংশীদারিত্বও নিশ্চিত করতে চায় তারা।

অপরদিকে এনসিপিও তাদের কিশোর গ্যাং এর জঙ্গী রাজনৈতিক দলটিকে একটু গুছিয়ে নিয়ে তারপরে কোন এক সময়ে নির্বাচনে যেতে চায়।

কারণ তাদের নানামুখী চাঁদাবাজি, হুমকি-ধামকি-মব সন্ত্রাস ইতাদিতে ইতিমধ্যেই দেশবাসী চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তার ওপর এনসিপির নিজেদের দলের মধ্যেই নানা কোন্দল, বিবৃত-পাল্টা বিবৃতি, পদত্যাগ, কোন কোন নেতার বিচার চেয়ে পর্যন্ত দাবি উঠছে। ফলে বেসামাল হয়ে পড়েছে দলটি।

এরই মধ্যে এই টোকাই জঙ্গী দল এনসিপি’র নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের উপস্থিতিতে ঘোষনা দিয়ে বলেন , “নির্বাচনের ডেট ঘোষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে; কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।”

কেন হবেনা এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল সংস্কারের জন্য, তাহলে কবরে গিয়ে তার লাশটা ফেরত দিতে হবে এই সরকারকে।

“আমার যে ভাইয়ের হাতটা চলে গিয়েছিল, যদি সংস্কার কাজ শেষ না করে নির্বাচন হয়, তাহলে এই সরকারকে আমার ভাইয়ের হাতটা ফিরিয়ে দিতে হবে৷ যে মায়ের বুক খালি হয়েছিল, ওই মায়ের বুকের সন্তানকে ফেরত দিতে হবে।”

মঙ্গলবারের ওই যুব সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব জাহেদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

এ সমাবেশে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ডিজিএফআই এর তীব্র সমালোচনা করেন। এই টোকাই জঙ্গী নেতা পাটওয়ারি হুমকি দিয়ে বলেন- “তাদের একটাই কাজ, মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে- –কিছু হলেই আয়নাঘরে তুলে নিয়ে আসব।

আয়নাঘর আমরা ভেঙ্গে দিয়েছি। “সামনে যদি একই ধরনের প্রচেষ্টা করা হয়, আমরা আয়নাঘর কেন, ডিজিএফআইয়ের হেডকোয়ার্টার আমরা ভেঙ্গে দেব। যথেষ্ট সহ্য করেছি।

বাংলাদেশ যদি ডিজিএফআই থাকতে হয় , অবশ্যই এটার সংস্কার করতে হবে।”

এমনটাই যদি চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠানও ছিপি দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার মতো হবে।

কারণ মার্কিনী ও জঙ্গী দেশি-বিদেশী অপশক্তি দেশটিকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে তাদের আজ্ঞাবহ একটি ঠুঁটো জগন্নাথ সরকারকেই রাখতে চায় তাদের সবধরনের স্বার্থসিদ্ধির জন্য।

টোকাই জঙ্গী দল এনসিপি’র নেতাদের কর্থাবার্তা ও হুমকিতে বোঝা যাচ্ছে যে, তাদের পেছনে বড় কোন শক্তি রয়েছে।

আর সে শক্তি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ও তুরস্ক-পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র তা অনেকটা স্পষ্ট। কারণ তা না হলে এভাবে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে সাহস পেতোনা তারা।

আগে যেমন ডিজিএফআইকে ‘ গভর্নমেন্ট উইথইন দ্যা গভর্নমেন্ট’ বলা হতো তেমনি এখন বাংলাদেশের রাজনীতি ঝুলছে বিশ্বমোড়ল ও ইসলামী জঙ্গীদের ইশারায়।

পুতুলনাচে যেমন অদৃশ্যে সুতো থাকে, যেই সুতো সাধারণ দর্শক দেখতে পায়না। তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতিও সেই পুতুলনাচের মতোই নাচছে।

সুতোটা কোথায় তা ধারণা করতে ও বুঝতে পারছেন অনেকেই কিন্তু তা সরাসরি দৃশ্যমান নয়। এই যা পার্থক্য।

# রাকিব হুসেইন, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *