একটা চরম চপেটাঘাত করে গেলেন বিভুরঞ্জন সরকার। হ্যাঁ তিনি নিতান্তই একজন ছাপোষা সাংবাদিক ছিলেন আমাদের সমাজে। আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে। নদীর পানিতে সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের মরদেহ ভাসেনি শুধু, সারাদেশের সাংবাদিকের মরদেহ ভেসে উঠেছে।
বিবেকের লাশ ভেসে উঠেছে। সৎ মানুষের লাশ ভেসে উঠেছে। বাংলাদেশের লাশ ভেসে উঠেছে এই সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের মরদেহ ভেসে ওঠার মধ্য দিয়ে। এই হচ্ছে আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ। কে বা কারা দায়ী এমন একজন সৎ কলমজীবীর করুণ মৃত্যুর জন্য? এমন প্রশ্নের জবাব হয়তো নানাজন নানাভাবেই দেবেন।
আমার কাছে মনে হয়েছে আমি-আপনি-সরকার-সমাজব্যবস্থা সবাই দায়ী। সবাই আজ কাঠগড়ায়। একটু নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলেই এর সহজ উত্তরটি পেয়ে যাবো আমরা সবাই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা পোস্ট, মন্তব্য, শোক, দোষারোপ অনেককিছুই চোখে পড়েছে এই কলামিষ্ট বিভুরঞ্জনের নিখোঁজ-তাঁর মরদেহ উদ্ধারসহ নানা বিষয় নিয়ে। আবার অনেক কিছুই চোখে পড়েনি।
তাঁর লেখা পড়তাম সেই ছাত্রজীবন থেকে- নানা সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায়। তবে সাবেক সামরিক স্বৈরাচার লে: জে: হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তাঁর রাজনৈতিক লেখাগুলো প্রচণ্ড জনপ্রিয় ছিল পাঠকসমাজে। তারিখ ইব্রাহিম ছদ্মনামে লিখতেন।
সেই আশির দশকে সাপ্তাহিক যায় যায় দিন পত্রিকাতে তিনি সঙ্গত কারণেই নিজ নামে লিখতেন না। তবে সেই জনপ্রিয়তা সস্তা ছিলনা। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত-যুক্তিযুক্ত লেখার কারণেই এই পাঠকপ্রিয়তা-জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।নানা সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন।
সত্য প্রকাশ সরাসরি করতে না পারলেও নানাভাবে করেছেন। শুধু সাপ্তাহিক-দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। কিন্তু তিনি কৌশলী ছিলেন না পত্রিকা চালানোর ক্ষেত্রে এমনটি জেনেছি তাঁর সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সাথে বিভিন্ন সময়ের আলাপচারিতায়।
কৌশলী ছিলেন না এজন্য বলছি যে, তিনি তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায় টাকা-পয়সা বিনিয়োগকারিদের মন জুগিয়ে চলতে পারেননি। পারেননি তাঁদের তোষামোদি করতে। নিজের নীতি-আদর্শের সাথে ( সৎ-একরোখা স্বভাব ও বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে না পারা) কিছুটা কম্প্রোমাইজ করতে পারেননি। পারেননি বলেই তিনি সম্পাদক হয়েও প্রথম আলোর সম্পাদক কাম শেয়ারহোল্ডার (অভাজনেরা বলেন) মতিউর রহমান এর মত সফল সম্পাদক হতে পারেননি।
যদিও তাঁর পক্ষে সে সুযোগটি ছিল। অথচ মতিউর রহমান এবং বিভুরঞ্জন উভয়েই ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন, কমিউনিষ্ট পার্টি করেছেন। সাম্যবাদে বিশ্বাস করতেন উভয়েই। অবশ্য মতিউর রহমানের সাম্যবাদে বিশ্বাস- সৎ সাংবাদিকতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে যা তাঁর ঘনিষ্ঠজন, রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ পাঠক ও নাগরিকদের কাছে আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা।
**বিভুরঞ্জন সরকার যেদিন তাঁর বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সেদিন যে লেখাটি তিনি মেইল করেছিলেন বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম নামে পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে সেখানে তিনি লিখেছিলেন-“ .. গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর গণমাধ্যমের অবস্থা আরও কাহিল হয়েছে। মন খুলে সমালোচনা করার কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন।
কিন্তু তাঁর প্রেস বিভাগ তো মনখোলা নয়। মিডিয়ার যারা নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন, তারা সবাই আতঙ্কে থাকেন সব সময়। কখন না কোন খবর বা লেখার জন্য ফোন আসে। তুলে নিতে হয় লেখা বা খবর!
এর মধ্যে আমার একটি লেখার জন্য ‘আজকের পত্রিকা’র অনলাইন বিভাগকে লালচোখ দেখানো হয়েছে।মাজহারুল ইসলাম বাবলার একটি লেখার জন্যও চোটপাট করা হয়েছে। আপত্তিকর কী লিখেছেন বাবলা?
লিখেছেন, সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সামরিক হেলিকপ্টারে দিল্লি পাঠিয়েছে। আর শুধু পুলিশের গুলিতে নয়, মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে জঙ্গিরাও মানুষ হত্যা করেছে। এখানে অসত্য তথ্য কোথায়? শেখ হাসিনা কি হেলিকপ্টার ভাড়া করে গোপনে পালিয়েছেন?
সব মিলিয়ে পত্রিকায় আমার অবস্থা তাই খুবই নাজুক। সজ্জন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চাপ সইতে না পেরে আমার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করেছেন। আমি এখন কী করি? কোন পথে হাঁটি? ”
★★ হুমকির পরেই মেঘনায় লাশ: অভিযোগের তীর প্রেস সেক্রেটারি শফিকের দিকে। সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ মুন্সিগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধারের ঘটনায় সাংবাদিক সমাজসহ সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি হয়েছে।
তাঁর এই রহস্যজনক মৃত্যুর পেছনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলমের হুমকি ও অব্যাহত চাপকে দায়ী করা হচ্ছে। মৃত্যুর আগে তাঁকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো এবং ক্রমাগত হুমকির মুখে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, যা তাঁর লেখা একটি খোলা চিঠিতেও তিনি উল্লেখ করে গেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৪ আগস্ট। দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় নিবন্ধ লেখক মযহারুল ইসলাম বাবলার ‘ইতিহাসের ঘটনাবহুল আগস্ট’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যার দায়িত্বে ছিলেন বিভুরঞ্জন সরকার।
অভিযোগ উঠেছে, উক্ত নিবন্ধে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত থাকায় ক্ষুব্ধ হন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম। অভিযোগ রয়েছে– শফিকুল আলম এরপর আজকের পত্রিকার সম্পাদককে ফোন করে পত্রিকার লাইসেন্স বাতিল ও গোয়েন্দা সংস্থা লেলিয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর হুমকি দেন। একইসঙ্গে তিনি আটজন সাংবাদিকের একটি তালিকা দিয়ে তাদের ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
এই চাপের মুখেই পত্রিকা কর্তৃপক্ষ বর্ষীয়ান সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠায় এবং অনলাইন সংস্করণ থেকে নিবন্ধটি সরিয়ে ফেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভুরঞ্জন সরকারের একজন সহকর্মী বলেন, “বিভু দা (বিভুরঞ্জন সরকার) ছিলেন একজন আপাদমস্তক পেশাদার সাংবাদিক।
শেষ দিনগুলোতে তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। তাঁকে যেভাবে অপমান করে ছুটিতে পাঠানো হলো এবং হুমকি দেওয়া হলো, সেটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। এটা শুধু একটা মৃত্যু নয়, এটা একটা ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড।”
প্রয়াত সাংবাদিকের লেখা খোলা চিঠি থেকে জানা যায়, ছুটিতে পাঠানোর পরও তাঁকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে করণীয় জানতে চেয়ে তিনি সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এর কিছুদিন পরই মেঘনা নদী থেকে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার করা হলো।
যদি একটি নিবন্ধ ছাপানোর জন্য একজন বর্ষীয়ান সাংবাদিককে এভাবে জীবন দিতে হয়, তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। আজ বিভুরঞ্জন গেছেন, কাল অন্যদের ওপর এমন চাপ আসবে। যখন গণমাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়, তখন পুরো সমাজই অনিরাপদ হয়ে পড়ে। এই মৃত্যু রাষ্ট্রের বিচারহীনতার সংস্কৃতিরই প্রতিফলন।
প্রয়াত বিভুরঞ্জন সরকারের ছেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবা কোনো অন্যায় করেননি। তিনি শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যারা ফোনে হুমকি দিয়েছে, যারা বাবাকে চাকরি থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছে, তারাই আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমরা আর কিছু চাই না, শুধু এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”
★★ প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনুসারি ইমতিয়াজ মাহমুদ তার ফেইসবুকে লিখেছেন, যে পরিস্থিতিতে বিভুদার মৃত্যু হলো সেটাকে তো আমি কোন অবস্থাতেই আত্মহত্যা বলতে পারছি না। এটা একটা হত্যাকাণ্ড। আমি জানি বিভুদার দেহ ওরা কাটাছেঁড়া করবে, একটা ময়নাতদন্ত হবে- এগুলি ঠিকঠাক মতো হবে কিনা জানিনা, যদি ঠিকঠাক মতো হয়ও, সেটা তো নিতান্ত শারীরিক ময়নাতদন্ত হবে আরকি।
কিন্তু একজন মানুষকে তো শারীরিকভাবে হত্যা করা ছাড়াও হত্যা করা যায়। সেটার জন্যে যে সমাজবৈজ্ঞানিক ময়নাতদন্ত প্রয়োজন সেই ময়না তদন্ত তো আপনারা কোনদিনই করবেন না। সেই তদন্তটা যদি কোনদিন করতে পারেন তাইলে বুঝতেন একজন বিভুরঞ্জন সরকার কেন নিহত হয়েছেন বা কিভাবে নিহত হয়েছেন।
তিনি আরো লেখেন- কেবল বিভুরঞ্জন সরকারই তো নয়, বাংলাদেশের অসংখ্য সাংবাদিক শারীরিকভাবে নিহত বা আহত না হলেও গুরুতর আহত বা নিহত হওয়ার মতোই অবস্থায় বাস করছেন এই দেশে এই মুহূর্তে। কেউ কারাগারে, কেউ একটু ভাগ্যবান এখনো জেলে যাননি। ওদের উপর এইসব হয়রানী হচ্ছে শুদ্ধ সাংবাদিক হিসাবে ওদের মতামত প্রকাশের কারণেই। কোন কোন সিনিয়ার সাংবাদিক আছেন, যারা প্রতিদিনের সংসার খরচ চালানোর মতো অর্থ যোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছেন। আপনারা কি দাঁড়াবেন না আপনাদের বিপন্ন বন্ধুদের পাশে ওদের অধিকার রক্ষায়?
★★পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিবৃতি।
বিশিষ্ট সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বিভুরঞ্জন সরকারের নির্মম অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শনিবার (২৩ আগস্ট) এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা বলেছেন, একটি নিরপেক্ষ, যথাযথ ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করছি। আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান নিশ্চিত করে বিশ্ববাসীর কাছে সত্য উদঘাটিত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষকরা আরো বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, দেশের সকল স্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন।
তারা ক্রমাগত হুমকি, নির্যাতন, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য বিশ্ব অঙ্গনে চরম উদ্বেগজনক ও লজ্জাজনক পরিস্থিতির বার্তা দেয়। বিভুরঞ্জন সরকার-এর জীবন ও কর্ম ছিল মানবিকতা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক। তিনি নির্ভীকভাবে সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন।
তাঁর এই নির্মম অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির জীবনসংহার নয়, বরং এটি স্বাধীন গণমাধ্যম, মুক্ত চিন্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক সংগ্রাম, সত্য ও ন্যায়ের কণ্ঠকে স্তব্ধ করার ষড়যন্ত্র।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন-অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. সিতেশ চন্দ্র বাছার, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. জামাল উদ্দিন,অধ্যাপক ড.কাজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রফেসর ড.হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ শতাধিক শিক্ষক।
★★ বিবিসি বাংলা তাদের অনলাইনে সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তাদের এক বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধে নানা বিষয়েই আলোকপাত করেছে।
সেখানে নিবন্ধকার লিখেছেন– ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী আমলে সরকার থেকে কোনো সুবিধা না নেওয়া সত্ত্বেও তাকে “আজও ‘আওয়ামী ট্যাগ’ দেওয়া হয়”–– বলেও লেখাটিতে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মি. সরকার। তিনি লিখে গেছেন, “গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর গণমাধ্যমের অবস্থা আরও কাহিল হয়েছে।
মন খুলে সমালোচনা করার কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। কিন্তু তার প্রেস বিভাগ তো মনখোলা নয়। মিডিয়ার যারা নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন তারা সবাই আতঙ্কে থাকেন সব সময়। কখন না কোন খবর বা লেখার জন্য ফোন আসে।”
সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার তার একাধিক লেখার কারণে সরকারের চাপের কথাও বলেছেন তিনি। আজকের পত্রিকার একাধিক সূত্র শনিবার ২২ আগষ্ট বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনার পালানো, পুলিশের গুলি ও মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে জঙ্গিরাও মানুষ হত্যা করেছে’, এমন একটি লেখা সম্প্রতি নিজেদের পত্রিকার পাতা থেকে প্রত্যাহার করেছে তারা।
এদিকে, প্রেস বিভাগ নিয়ে করা মি. সরকারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর সাথে যোগাযোগ করলে বিবিসি বাংলাকে তাদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিভুরঞ্জন সরকার ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না।” বাংলাদেশের অনির্বাচিত-অগণতান্ত্রিক- অসাংবিধানিক ড. ইউনুসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম যেখানে- সেখানে যে কোন বিষয়ে রাজনীতিবিদদের মত আচরণ করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন।
সেখানে এই ভদ্রলোক বা তাদের প্রেস ডিপার্টমেন্ট বিভুরঞ্জন সরকারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ব্যাপারে শনিবার পর্যন্ত কোন দুঃখ প্রকাশতো দূরের কথা এ মৃত্যু নিয়ে সরকারের কেউ কোন কথাই বলতে রাজি হননি। এই যে দায় দায়িত্ব এড়িয়ে চলার নীতি তাদের তাতে বরং ইউনুসীয় সরকারের কর্মকর্তাদের প্রতিই বিশেষ করে ডাস্টবিন শফিক ( এ নামেই সমধিক পরিচিত গত ফেব্রুয়ারি মাসের বইমেলা থেকে) এর দিকেই ক্ষোভ ও সন্দেহের তীর ছুঁড়ছেন অনেকে। তা সেই সন্দেহ করার মত যথেষ্ট উপাদান সরকার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব করে দিয়েছেন।
চিকিৎসকগণ যে ময়নাতদন্ত করেছেন তাতে সম্ভবত তেমন কিছুই প্রকাশ পাবেনা। কিন্তু যে তীব্র অসহনীয় মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে পার করেছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার তা একমাত্র তিনিই জানতেন।
আমরা পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে হয়তো কিছুটা অনুমান করতে পারছি, যদিও পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। তাই বলতেই হয়, এটি শুধুমাত্র আত্মহত্যা নয়। মানসিক চরম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে একজন সৎ নিষ্ঠাবান সাংবাদিককে স্পষ্টতই খুন করা হয়েছে। স্রেফ খুন করা হয়েছে।
স্বাভাবিক বিচারালয়ে এই খুনের কোন বিচার হবেনা সে জানি। কিন্তু তারপরও এ অপমৃত্যুতে জাতির কোন শিক্ষা যদি হয়! সাংবাদিকদের যদি বোধোদয় হয়, বিবেক যদি জাগে তাতে হয়তো আরো কিছু প্রাণ রক্ষা পেতে পারে।
# ইশরাত জাহান, লেখক, নারী অধিকার কর্মী, প্রাবন্ধিক।