ক্ষমতার মোহ এমনই এক বিষয় যে, এর জন্য নিজের মান-সম্মান বিসর্জন দিতেও কার্পণ্য করেন না কেউ কেউ। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের বাংলাদেশের অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক-অনির্বাচিত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুস।

তিনি অর্থনীতিবিদ হলেও শান্তিতে নোবেল বাগিয়ে নিতে পেরেছেন নিজের কূটকৌশলের জোরে এমনটাই বলেন সমালোচকরা ।

একজন নোবেল বিজয়ী যেকোন দেশের জন্য সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁকে সবাই সম্মান করবেন সেটিই স্বাভাবিক।

কিন্তু সেই নোবেল লরিয়েট যখন অতিরিক্ত লোভ-লালসা-ক্ষমতার মোহে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন তখন স্বভাবতই তিনি আস্থা-সম্মান সবই হারাবেন।

পাশাপাশি তিনি যদি নিজ দেশের মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে বিসর্জন দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকেই প্রকারান্তরালে অস্বীকার করে বসেন তখনতো আর সেই লোক নোবেল পুরস্কার পেলো না আর কিছু পেলো তা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ তাকে আর বিশ্বাস করবেনা। আস্থায় নেবেনা।

বিশেষ করে যেই জামায়াতে ইসলামী একাত্তরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকবাহিনীর সহযোগী ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল তাদেরকেই বেশি প্রশ্রয় দিচ্ছেন তিনি।

শুধু প্রশ্রয় নয় বাংলাদেশকে কার্যত: আবার পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তরের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। দুর্জনেরা বলছেন- ক্ষমতার মোহে ষড়যন্ত্রের জালে ড.ইউনুস অন্ধ হয়ে গেছেন।

বাংলাদেশের সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত-হিযবুতসহ উগ্র ইসলামী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মনোভাবাপন্ন লোকদের নিয়োগ দিয়ে ড. ইউনুস মূলত: বাংলাদেশকে একটি উগ্র ইসলামী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশনে নেমেছেন।

দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের এমনটাই অভিমত। আর তিনি এসব করছেন তার সেই ‘ মেটিকুলাস ডিজাইন’ এর অংশ হিসেবে।

বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের মোড়লের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তিনি বেশ আঁটঘাট বেঁধেই রাজনীতির ষড়যন্ত্রে মেতেছেন।

সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে ক্রমাগতভাবে নানা উপায়ে বিরোধীতা ও মনস্তাত্ত্বিক আঘাত করে যাচ্ছেন।

গত বছরের ৮ আগষ্ট অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই নানা কর্মকান্ডে তার আসল চরিত্র প্রকাশ পেয়ে গেছে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর যদিও তিনি বলেছিলেন, তিনি এই দায়িত্ব নিতে চাননি, আন্দোলনরত ছাত্রদের আবদারের কারণে এ দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছেন। একটি নির্বাচন দিয়েই তিনি তার কাজ শেষ করে চলে যাবেন।

কিন্তু যতই দিন গড়াচ্ছে ততই তিনি নানা কূটকৌশল অবলম্বন করছেন তার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য।

চব্বিশের আগষ্টে যে ক্যূ হয়েছিল আওয়ামীলীগ সরকারকে হটাতে তাতে যে জামায়াতে ইসলামী, হিযবুত তাহরীরসহ অন্যান্য উগ্র ইসলামী দলগুলো অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকায় ছিল তাও অনেকদিন আগেই দেশবাসীর কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে।

কথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা মূল নেতৃত্ব ছিলেন তারাও যে এই ইসলামী দলগুলোর বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে কাজ করেছে সেটিও দেশবাসী বুঝেছে। যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এই ‘ক্যূ’ এর পক্ষে অর্থায়ন করেছে তাও স্পষ্ট।

কিন্তু এই হতভাগা দেশের অধিকাংশ মানুষ বিষয়টি বুঝতে দেরি করেছে। ফলে আগামীতে নির্বাচন নিয়ে প্রচন্ড সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে ক্রমশ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কবে- এই প্রশ্নে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা ও মতবিভেদ। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাতে আস্থা রাখতে পারছে না।

আদৌ আগামী কয়েক বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আর সেটি অত্যন্ত কৌশলে নাগরিকদেরকে ধোঁকা দিচ্ছেন ড. ইউনুস।

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি স্পষ্টভাবে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করে আসছে। দলটির হাইকমান্ড থেকেও বলা হয়েছে, এটি এখন আর কৌশলগত নয়, বরং স্পষ্ট অবস্থান।

বিএনপির সঙ্গে একই দাবিতে রয়েছে আরও ৫২টি দল। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ, সিপিপি, বাসদ, এনডিএমসহ বেশকিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।

কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, সব দল নয়, শুধু একটি রাজনৈতিক দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়- যা সরাসরি বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, আমরা মনে করি ডিসেম্বরে ভোট করা যায়। সরকার চাইলে নির্বাচন করতে পারে।

সেটা যুক্তিসংগতও হবে। আর সংস্কার নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি যে প্রত্যাশা ছিল- তা ৯ মাসের পারফরম্যান্সে নেই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ডিসেম্বর তো বটেই তার আগেও নির্বাচন করা সম্ভব। সরকার অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণের ধারণা তৈরি করছে।

নির্বাচন শুধু বিএনপির দাবি নয়, বরং জনগণের দাবি। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, একটি দল নয়, প্রায় সব দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।

এলডিপিও চায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। এ নিয়ে টালবাহানার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আমরা মনে করি, এখন দেশের যে পরিস্থিতি সবকিছু মিলিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়াটাই জাতির জন্য মঙ্গলজনক। আরও আগে যদি সম্ভব হয় আরও ভালো। ডিসেম্বর হচ্ছে ডেডলাইন।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, আমরা চাই যত শিগগিরই সম্ভব জাতীয় নির্বাচন। ডিসেম্বর তো পরের কথা।

যদি অক্টোবরে দিতে পারে তাহলে তা দিক। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে আমরা কোনো সমস্যা দেখি না।

যদিও ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থা নিয়ে কমফোর্টেবল না বলে জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় তিনি বলেছেন- ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে গেলে তাড়াহুড়ো হবে।

ছাত্ররা একটা দল করেছে, সংগঠিত হতে তাদের একটু সুযোগ দেয়া উচিত। তার এসব মন্তব্যের অনেক সমালোচনা হচ্ছে দেশে-বিদেশে। কিন্তু তিনি এসবের কোন তোয়াক্কাই করছেন না।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শুধু একটি দল শুধু ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় এ কথাটি সঠিক নয়। এখন বলাই যায়, নতুন একটি দল তৈরি হওয়ার জন্য তারা নির্বাচন পেছাতে চায়।

যারা সরকারের সুবিধা পাচ্ছেন তারা ছাড়া বাকিরা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ আরও বেশ কয়েকটি দলও বিবৃতি দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করছে।

তারা ডিসেম্বরের ‘তাড়াহুড়ো’ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রোজার আগে ফেব্রুয়ারি অথবা পরে এপ্রিলের কথা বলছে।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, আগে তিন মাসের মধ্যে সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান হোক, তারপর নির্বাচন হোক মার্চ বা এপ্রিলের দিকে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনকে বিচার ও সংস্কারনির্ভর প্রক্রিয়া হিসেবে দেখতে চায়। তারা একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ দাবি করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও জামায়াতসহ নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৬৪টি রাজনৈতিক দল।

এই নির্বাচনের পরে বিএনপি এপ্রিল মাস থেকে ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে অন্তত ৬০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে। তাদের অধিকাংশই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত দেয়। এদের মধ্যে প্রায় ৩০টি দল নিবন্ধিত।

এদিকে রাজধানীতে বড় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে একাত্তরে মুক্তিযদ্ধেও পরাজিত অপশক্তি জামায়াতে ইসলামী।

আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর আগামী ২১ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করেছে জামায়াত।

শনিবার (৩১ মে) জামায়াতের কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আগামী ২১ জুন বেলা ২টায় রাজধানীতে আমরা জনসভা করবো। প্রাথমিকভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য ডিএমপির কাছে আবেদন করা হয়েছে।

সমাবেশে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’

গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারকে উৎখাতের পর রাজধানীতে একাধিক সমাবেশ করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে রাজধানীতে বড় কোন সমাবেশ করতে দেখা যায়নি।

সম্প্রতি আপিল বিভাগের রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাজা থেকে খালাস পেয়ে মুক্তি পান দলটির সিনিয়র নেতা নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তাৎক্ষণিকভাবে শাহবাগ মোড়ে সমাবেশ করে এ নেতাকে সংবর্ধনা দেয় জামায়াত।

#রাকীব হুসেইন,লেখক, গবেষক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *