পত্রিকা পড়তে গিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো একটি ছবি ও নিউজে। হঠাৎ মনে হলো, ভুল দেখছিনাতো ! কিন্তু নাহ্ ভুল দেখিনি। সত্যিই দেখছি। নিউজটির শিরোনাম ছিল –“বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ডাকসুর শিবির প্যানেলের নির্বাচিত নেতাদের দোয়া-মোনাজাত” ।

প্রথম আলো পত্রিকায় গত ১১ সেপ্টেম্বর ছাপা এ নিউজ ও ছবিটি দেখে ভাবছি-সত্যিই কত বিচিত্র এই দেশ ! কত বিচিত্র এখানকার মানুষ ! আর একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রেতাত্মারা আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যায় !

অথচ সেখানে তাদের মূল রাজনৈতিক দল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারি-খুনী- ঘাতকের দল জামায়াতে ইসলামী যায়নি কখনো। আলবদর ক্যাডারদের হাতে একাত্তরে নিষ্ঠুর ও বিভৎসভাবে খুন হওয়া এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গণকবরে যায়নি কখনো তারা।

আর সেখানে ইসলামী ছাত্র শিবিরের গিরিগিটি নেতারা বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিতে নির্মিত স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা দেখানোর নামে ‘দোয়া-মোনাজাত’ করে আসে। আসলে সবই ক্যামোফ্লেজ। সবই লোকদেখানো।

এসব করেই তারা এ বাঙ্গালী জাতিকে ধোঁকা দিয়েছে, চরমভাবে প্রতারণা করে আসছে তাদের জন্মলগ্ন থেকে। তবে প্রতারণার এখনো অনেক বাকী।

নাকি তারা দেখতে গিয়েছিল যে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এখনো কিভাবে টিকে আছে তা দেখতে ! একাত্তরের সব স্মৃতিচিহ্ন-ইতিহাসতো ভেঙ্গে-পুড়িয়ে-বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে গত চব্বিশের ৫ আগষ্টের পরে। আর এই রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তো জামায়াত-শিবির ও একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির কাছে বড় ধরনের বিষফোঁড়ার মতো।

কারণ এখানে এলেইতো আবার নতুন প্রজন্মের কাছে নানা প্রশ্ন জাগবে মনে ! কারা হত্যা করেছিল আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের? কারা আমাদের জাতিকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়?

জানতে পারবে ঘাতক জামায়াতে ইসলামী-আলবদর-আলশামসদের ঘৃণ্য অপরাধ সম্পর্কে। আর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে অন্যতম মূল ভূমিকা পালন করেছিল ‘আলবদর বাহিনী’ । এই আলবদর বাহিনী ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের পূর্বসূরী ‘ ইসলামী ছাত্র সংঘ’ এর ক্যাডারদের দ্বারা গঠিত। তাই ছাত্রশিবির নেতারা কি এই স্মৃতিসৌধ ভাঙ্গার জন্য প্রাথমিক সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সে সন্দেহই দেখা দেয় জনমনে।

উনিশশো একাত্তর থেকে দুই হাজার পঁচিশ সাল। ৫৪ টি বছর পার হয়ে যাচ্ছে। এতবছরে এ বাংলাদেশে কেউ কখনো দেখেছে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এই খুনী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির কখনো শ্রদ্ধা জানাতে গেছে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে?

সেই একাত্তরে জামাতের ছাত্র সংগঠনের নাম ছিল – ইসলামীর ছাত্র সংঘ। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৭ সালে সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ইসলামী ছাত্র শিবির নাম দিয়ে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ নতুন বোতলে পুরাতন মদ।

একাত্তরে এই ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-ক্যাডাররাই “আলবদর” বাহিনী গঠন করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। সে ইতিহাস নিশ্চয় এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি।

ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায়- উনিশশো একাত্তরে ৪ ডিসেম্বর থেকে হানাদার পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার- আলবদর- আলশামসদের সহায়তায় অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঢাকায় নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়।

ডিসেম্বরের ১০ তারিখ হতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সব প্রস্তুতি নেওয়া হতে থাকে। মূলত ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পনার মূল অংশ বাস্তবায়ন হয়। অধ্যাপক, সাংবাদিক, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখক-সহ চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর মূলত আলবদর ( ইসলামী ছাত্র সংঘের ক্যাডাররা) অপহরণ করে নিয়ে যায়।

সেদিন প্রায় ২০০ জনের মতো বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাসা হতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ অন্যান্য আরও অনেক স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের উপর বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাদের নৃশংসভাবে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়।

এমনকি, আত্মসমর্পণ ও যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পরেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তার সহযোগীদের গোলাগুলির অভিযোগ পাওয়া যায়। এমনই একটি ঘটনায়, ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখ স্বনামধন্য চলচ্চিত্র-নির্মাতা জহির রায়হান প্রাণ হারান। এর পেছনে সশস্ত্র বিহারীদের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।

নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস” হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু এই স্বাধীন বাংলাদেশে ২০২৫ এর ১১ সেপ্টেম্বরের আগে জামায়াতে ইসলামী, তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কাউকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গনকবরে বা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখেনি। অন্তত আমার জানা নেই।

**বাঙ্গালী আর কত বোকা থাকবে !

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও চব্বিশের জুলাইয়ে ‘জঙ্গী-সামরিক ক্যু’ এ প্রাণহারানোদের স্মরণে দোয়া-মোনাজাত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জয়ী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের নেতারা।

প্রথম আলোর সংবাদে যেটি জানা গেলো- গত ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে এই নেতারা প্রথমে রাজধানীর রায়েরবাজারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের কবরস্থানে গিয়ে দোয়া-মোনাজাত করেন। এরপর তারা রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

এ সময় ডাকসুর নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মুহা. মহিউদ্দীন খানসহ এই প্যানেলের অন্য জয়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

তার মানে ডাকসুতে শিবিরের নির্বাচিত সুচতুর গিরগিটি নেতারা প্রথমে গিয়েছেন চব্বিশের কথিত গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের কবরস্থানে। তারপরে একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। তার মানে তাদের কাছে কখনোই একাত্তর বড় নয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা মুখ্য নন। তাদের কাছে মুখ্য হলো গত চব্বিশে তাদের ( জামাত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত) সৃষ্ট অরাজকতার সময় নিহতরা।

তবে তারা যে অসংখ্য পুলিশ হত্যা করেছে তাদেরকে কি তারা শহীদী মর্যাদা দেবে ? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো কোনদিনই তারা দেবেনা।

আসলে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে তারা কিন্তু এ জাতির সাথে, মুক্তিযুদ্ধের সাথে আবারো চরম প্রতারণা করলো। সেটি কি বুঝতে পেরেছে বাঙ্গালী ? অনেকেই বলবেন- মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জামায়াতে ইসলামী নেতা বা শিবিরের সদস্যরাতো একাত্তরে হত্যা করেনি, তাহলে এক্ষেত্রে তাদের দোষ কোথায় ? খুব সাদামাটা ও সরলীকরনের অপচেষ্টা চলছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বুদ্ধিজীবী, শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে জড়িতদের পরিচয় ও বিচার প্রসঙ্গ নিয়ে।

দেশের মুক্তিকামী ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অনেক কষ্টে পাওয়া এ স্বাধীনতা কারো দয়া দাক্ষিণ্যে পাইনি আমরা। সুতরাং আগে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার সম্পন্ন হতে হবে। আর জামায়াত-শিবিরতো কখনোই ক্ষমা চায়নি তাদের কৃত ঘৃণ্য অপরাধের জন্য। আর ক্ষমা চাইলেই কি বাঙ্গালী তাদের ক্ষমা করে দেবে ?

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা কি কখনো ক্ষমা করেছেন ? করেননি। সুতরাং আর যাই হোক একাত্তরের ঘৃণ্য-খুনী জামায়াত ও তার উত্তরসূরিদের কোন ক্ষমা নেই এ বাংলায়। তা তারা যত যুক্তি দেখিয়ে বাঙ্গালীকে ভোলানোর অপচেষ্টা করুক না কেন।

এই যে শিবিরের নেতারা একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়েছে তা নিতান্তই একটি হীন রাজনৈতিক কুটচাল মাত্র। এরা নানাভাবেই জাতির সাথে চরমভাবে প্রতারণা করতে জানে। এসব কাজে তারা চরম ওস্তাদ। যেভাবে এরা ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকে নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রেখেছিল এতদিন। আওয়ামীলীগসহ দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও এরা অত্যন্ত সুকৌশলে লুকিয়ে ছিল।

অতি সম্প্রতি হয়তো তারা কিছু প্রকাশ্যে এসেছে। আরো অনেকেই রয়ে গেছে আত্মগোপনে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক- সামাজিক- সাংস্কৃতিক – ছাত্র-যুব-শিশুসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন- বাংলাদেশের অতি প্রাচীন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ( ন্যাপ), সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাঘরসহ এ ধরনের অসংখ্য সংগঠনকে অত্যন্ত কৌশলে ভেঙ্গেছে।

জামায়াত-শিবির অত্যন্ত কৌশলে ভোল পাল্টিয়ে এসব দল-সংগঠনের মধ্যে লুকিয়ে থেকে সেইসব সংগঠনের বিরুদ্ধে কাজ করে সেগুলোকে ভাঙ্গার কাজটি অত্যন্ত সফলভাবে করতে পেরেছে ও করছে।

প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী -জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের কবরস্থানে দোয়া ও মোনাজাত শেষে আবু সাদিক কায়েম বলেন, “ শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণ করাই তাদের মূল কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা সেটি শুরু করতে চান। এখানেই জুলাই বিপ্লব শুরু হয়। আর সফলতার সঙ্গে তারা তা শেষ করেন। শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় তাদের প্রশ্ন করতে পারবেন।

ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি এই গিরিগিটি শিবির নেতা বলেন, ‘শহীদরা আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। তারা আমাদের রাস্তা দেখিয়েছে। শহীদদের আমানত—বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। সেই স্পিরিট পুনর্জাগরণে আমরা শহীদদের কবর জিয়ারত করতে এসেছি। আমরা সব শহীদ পরিবারে যাওয়ার চেষ্টা করব। ফোনেও কথা বলার চেষ্টা করেছি। জুলাইয়ে শহীদদের পরিবারই আমাদের পরিবার।”

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন ডাকসু ভিপি শিবির নেতা সাদিক কিন্তু ভুলেও একাত্তরে শহীদ, শহীদদের পরিবারের কথা একটিবারের জন্যও উচ্চারণ করেনি। এটিইতো স্বাভাবিক একাত্তরে বাঙ্গালী-মুক্তিযোদ্ধা-বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত মূল দল জামায়াতের ছাত্রসংগঠনের নেতা হিসেবে।

** কিছু প্রশ্ন রয়েই যায়।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরতো সবসময়েই দাবি করে করে এসেছে- শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যুদ্ধই করেননি, তারা ছিলেন ভারতের দালাল। আবার ওনারা এটাও বলেন যে বুদ্ধিজীবীদেরকে জামায়াত মারেনি, মেরেছে র’। তো এখন নেতাদের কর্মকান্ড দেখে প্রশ্ন জাগাটাইতো স্বাভাবিক যে- র’ এর হাতে নিহত ভারতীয় দালালদের জন্য এখন এত বছর পরে শিবিরের এত দরদ উথলে উঠলো কেন ?

মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সেই একাত্তর সালে। এরপর থেকে কেউ কখনো জামায়াতে ইসলামী বা তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে এজন্য কোন দুঃখপ্রকাশ করতে দেখেছেন ? আজ হঠাৎ করে একেবারে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে চলে গেলো শিবির একাত্তর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য দোয়া পড়তে ?!

*এতো দেখি ভূতের মুখে রাম নাম !

এতদিন এসব জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশেষ করে তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, ছাত্রদলের ভেতর লুকিয়ে ছিল।

সেখানে গিরগিটির মতো লুকিয়ে থেকে নানা খুন-সন্ত্রাস-নারীর-শিশুর চরম আবমাননাসহ নানা অপরাধ করে সেসব দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে জনগণের কাছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনের কাছে। এর ফলে সেসব দলের গ্রহণযোগ্যতা কমেছে দেশবাসীর কাছে, সাধারণ মানুষের কাছে। বিভিন্ন মিডিয়াতে ফলাও করে এসব অপকর্মের নিউজ-ছবি প্রচার হয়েছে। টিভি টকশোতে তুলোধুনা করে ফেলেছেন আমাদের টকশোজীবীরা ।

দেশে-বিদেশে নানাভাবেই আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-সদস্যদের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে তাতে। যেসব নাগরিক রাজনীতি নিরপেক্ষ মানে কোন সরাসরি রাজনৈতিক দল করতেন না তারাও তখন সেসব দেখে শুনে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী সংশ্লিষ্টদেরকে দোষ দিয়েছে। চরমভাবে সমালোচনায় মুখর ছিল।

তবে তার মানে এই নয় যে আওয়ামী নেতাকর্মীরাও একেবারে মক্কার জমজম কুয়ার পবিত্র পানির মত । দোষ তাদেরও ছিল, আছে। কিন্তু কেন এসব অপরাধ হচ্ছে, কারা , কোনভাবে এসব অপরাধ করছে তা কেউ খতিয়ে দেখেনি।

আর ঠিক এই বিষয়গুলোকেই পুঁজি করে চরম কৌশলে কাজে লাগিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের বিভিন্ন গণসংগঠনগুলো। আর সাইবার আক্রমণ বা প্রচারতো আছেই। এসব কাজে তাদের এত এক্সপার্ট রয়েছে যে এদের এই সাইবার যুদ্ধের সাথে আওয়ামীলীগের মাথামোটা ( এ শব্দ ব্যবহার করার জন্য খানিকটা দুঃখিত) নেতা বা পরিকল্পকরা কোনভাবেই টেক্কা দিতে চেষ্টাই করেনি।

কারণ আওয়ামীলীগের পর পর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে এই দলের নেতাকর্মীদের গায়ে চর্বি জমে গেছিল যে তাদের সেই চর্বি কমেনি এখনো। অহংকার-দম্ভ এত বেশি বেড়ে গিয়েছিল যে তাদের পা মাটিতেই পড়তো না। ফলে ওই যে এখন বলাবলি হচ্ছে ছাত্রলীগের লুঙ্গির নীচে ছাত্রশিবির ছিল তা এতদিন-এতবছর কেন বোঝেনি প্রায় আট দশকের একটি পুরনো দল?

প্রশ্ন জাগে জামায়াত-শিবিরের মধুর কথায় বাঙ্গালী আবারো কি প্রতারণার ফাঁদে পা দেবে?

# ইশরাত জাহান, লেখিকা, প্রাবন্ধিক ও নারী সংগঠক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *