পাক সেনাদের মত নির্মম- নিষ্ঠুর- পাশবিক অত্যাচারে মেতেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী!

চমকে যাওয়ার কিছু নেই। এমনটাই দেখেছে বাংলাদেশের মানুসসহ সারা বিশ্বের মানুষ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল জামায়াত- এনসিপি- হিজবুত জঙ্গীরা।

কিন্তু যে মাটির বুকে শুয়ে আছেন জনক সেই মাটির পুত্র- কন্যারা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে তা রক্ষা করেছে ১৬ জুলাই।

দিনভর দাঙ্গা- হাঙ্গামায় সেনাবাহিনী- পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত হওয়ার ভাষ্য পাওয়া গেলেও অসমর্থিত সূত্র বলছে নিহতের সংখ্যা ১৫ জনের বেশি। গোপালগঞ্জে বেধড়ক পিটুনির পর আবার বুটের লাথি দিয়ে পিষ্ট করার লোমহর্ষক দৃশ্য বার বার একাত্তরে বাঙ্গালিদের ওপর পাক বাহিনীর সেই অত্যাচারকেও হার মানিয়েছে।

অথচ গতবছর’ ২৪ এর জুলাই- আগষ্টে সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার- উজ- জামান বলেছিলেন, জনগণের ওপর সেনাসদস্যরা কোন গুলি চালাবেনা। সে অজুহাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা না করে, গণভবনকে রক্ষা না করে বরং অসাংবিধানিক জঙ্গী গোষ্ঠীকে লালন- পালন করছে ড. ইউনুস সরকার।

তবে গোপালগঞ্জে সংঘটিত হত্যাকান্ডের এই দিনটিকে ‘ গোপালগঞ্জ গণহত্যা দিবস’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন গোপালগঞ্জ বাসী। বুধবার দিবাগত গভীর রাতে যখন এ লেখাটি লিখছি তখনো নানামাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে যে বিদ্যুৎ বন্ধ, ইন্টারনেট বন্ধ করে সেনা পুলিশ, জামায়াত জঙ্গী গোষ্ঠী গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নারী- পুরুষ- কিশোর নির্বিচারে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে জাতির জনকের প্রতি চরম অপমানজনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে গোপালগঞ্জের মাটিতে দাঁড়িয়ে কটুক্তি করার যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও আচরণের জবাব দিয়েছে তারা।

‘ কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত এনসিপি নেতাদেরকে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়িতে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পালাতে হয়েছে চোরের মত করে। অথচ তাদের হম্বি- তম্বি ঠিকই আছে। কিন্তু এনসিপি ও ড. ইউনুসের বোধ হয় জানা ছিলনা গোপালগঞ্জের মাটি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ঘাঁটি।

অথচ গত চব্বিশের পাঁচ আগষ্ট জোর করে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশের বাইরে নির্বাসনে পাঠানোর পর অনেকেই মনে করেছিলেন- আওয়ামীলীগ হারিয়ে গেছে। কিন্তু তা হবার নয়।

কারণ বাংলার মাটির অনেক গভীরে এর শেকড় প্রথিত। টোকাই দল এনসিপি’র নেতাদের হয়তো জানা নেই যে ২০০৬ সালে বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের আমলেও আওয়ামীলীগ একাই লগি- বৈঠা নিয়ে বিএনপি- জামায়াতকে মোকাবেলা করেছিল।

আর এখন ২০২৫ সালে এসে বিএনপি- জামায়াত- এনসিপিকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে স্রোতের প্রতিকূলতার মধ্যেও।

সূত্রমতে গোপালগঞ্জে ৯ জন মারা গেছে। তবে অসমর্থিত সূত্রগুলো বলছে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুব- ক্রীড়া ও স্থা নীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া জানিয়েছেন, ” গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। জীবন-মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি না হলে সাধারণ জনগণ কেউ ঘর থেকে বের হবেন না।

সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের ভেঙে দেয়া হবে। ”

পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সবকিছু মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানগণ।”

তারমানে হচ্ছে– ঢাকায় বসেই গোপালগঞ্জে প্রতিবাদী নাগরিকদের ওপর গুলি করে খুন ও অত্যাচার- নির্যাতন করার নির্দেশ তারাই দিয়েচেন। মনে রাখতে হবে- এটা আত্মস্বীকৃত দলিল!! এই মৃত্যুগুলোর দায় কিভাবে এড়াবেন?

পাশাপাশি যদি তুলনা করি চব্বিশের জুলাই- আগষ্টে কথিত গনআন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে তাহলে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দায় এড়াতে পারেন না।

তেমনি চব্বিশের ৮ আগষ্টের পর গোপালগঞ্জসহ সারাদেশে যেসব হত্যকান্ড হয়েছে তার দায়ও শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনুসও দায় এড়াতে পারেন না যুক্তিসংগত ভাবে।

সমালোচকরা রাজনীতিবিদগণসহ বুদ্ধিজীবীগন অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের হাত রক্তে রঞ্জিত। তাহলে গত ‘২৪ এর ৮ আগষ্টের পর বাংলাদেশে যত হত্যাকান্ড হয়েছে সর্বশেষ গোপালগঞ্জ গনহত্যাসহ একই যুক্তিতে ড. ইউনুসসহ তার ইন্টেরিম সরকার ও সরকারি সহযোগীদের হাতও রক্তে রঞ্জিত।

শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ যদি ফ্যাসিবাদী দোষে দুষ্ঠ হয় তাহলে জঙ্গী নেতা ড. ইউনুস ও তার দোসররা আরো বড় ফ্যাসিবাদী নিশ্চয়ই।

এনসিপি’র নেতাদের ( যারা গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর ছদ্মাবরণে ছিল) অনেকেই মেট্রোরেলে আগুন দেয়া, বিটিভি ভবন জ্বালিয়ে দেয়া, অসংখ্য পুলিশ খুন ও পুলিশ সদস্যদের খুন করার পর প্রকাশ্যে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা, অনেক থানা আক্রমণ, অস্ত্র গোলাবারুদ লুটপাট ইত্যাদি না করলে নাকি তাদের অভ্যূত্থান(!) সফল হতোনা বলে মিডিয়ায় স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দিয়েছে তাহলে তারা কেন বিচারের আওতায় আসবে না?

হত্যার অভিযোগে যদি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুন্যালে মামলা হতে পারে তাহলে খুনের দায়ে ইউনুসসহ তার সহযোগীদের নামে মামলা হবেনা বা তাদেরকে কারাগারে ঢুকানো হবে না?

এতসব মৃত্যুর জন্য, খুনের জন্য, ধর্ষণের জন্য এখন আর উপদেষ্টা আদিলুর রহমানসহ কথিত মানবতাবাদীদের মানবতা উথলে ওঠে না!? অ্যমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নেতৃবৃন্দের এখন আর মানবতার জন্য প্রাণ কাঁদেনা কেন? মার্কিন পরাশক্তি ও সেই বলয়াভুক্ত পশ্চিমা শক্তির ভয়ে?

তবে এরই মধ্যে কিছু এনজিও কর্মী, মিডিয়া কর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠক কিছুটা ভোল পাল্টাতে শুরু করেছেন। তা বিবেকের তাড়ণায় হোক বা পিঠ বাঁচানোর ভয়ে হোক। অনেকের ফেইসবুক প্রোফাইল আর লাল নেই। কারন তারা যে একাত্তরের খুনী আলবদরদের ভাই লালবদর তাই সম্ভবত। এমনই এনজিও- নারী সংগঠক ফেরদৌস আরা রুমি তার ফেইসবুকে গত ১৬ জুলাই উষ্মা প্রকাশ করে লিখেছেন– আপনাদের অপরিণত রাজনীতির শিকার আমরা কেন হব?

তাও তো পুলিশ সেনাবাহিনী পুরা নিরাপত্তা দিয়া আপনাদের বের করে আনছে। যদিও এই ন্যাক্কারজনক হামলার আমরা নিন্দা জানাই। কোনো হামলাই গ্রহণযোগ্য না। কিন্তু আপনারা যথেষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে হিরোগিরি দেখাইতে গেছেন কেন- এই প্রশ্নে গোস্বা হইয়েন না। কারণ আপনেরা কই যাইতেছিলেন নিজেরাই জানেন। আর পাঁচটা জেলার মতো গোপালগঞ্জ কেন ভাইবা নিছিলেন?

আবার বইলেন না ভিকটিম ব্লেমিং করতেছি। আজকে যেমনে হুংকার দিতেছেন নিজেদের ওপর আক্রমণ হইছে বলে, এর আগে এত এত দলবদ্ধ হামলা, উগ্রবাদী ইসলামিস্টদের হামলা, মাজার ভাঙ্গা, বিগত এক বছর ধরে চলা নারী হেনস্তা বা নিপীড়নের সময় আপনাদের হুংকার কই ছিল?

তখন থেকে চিল্লান দিলে আজকে পুলিশ বাহিনী সংস্কার হইতো, আপনেরাও নিরাপদ থাকতেন, আমরা আম জনতাও নিরাপদ থাকতাম। তাও আপনাদের হুংকারে আপনাদের সরকার পড়িমরি আপনাদের উদ্ধারে তৎপর হইছে, আপ্নেরা তবু নিরাপত্তা পান। কিন্তু আপনেদের সরকার আমাদের এখনো হয় নাই বইলা আমরা এখনো অনিরাপদ অবস্থায় চলি ফিরি।

আজকের ঘটনার পর সবার নিরাপত্তার দিকে একটু নজর দিয়েন। আপ্নেদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারে আরও রাখবেন কিনা ভাইবেন। অবশ্য অন্যান্য উপদেষ্টাদের অবস্থাও তথৈবচ! চারজনের নিহতের খবর দেখলাম। বিনা বিচারে কোনো প্রাণ হরণ গ্রহণযোগ্য না।”

গণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করা এবং তা প্রচারে সভা- সমাবেশ করার অধিকার গনতন্ত্রে বিশ্বাসী ও চর্চাকারি সবারই রয়েছে। টোকাই জঙ্গীদের নতুন দল এনসিপি’ রও রয়েছে। দেশের অন্য জেলাতে এনসিপি সমাবেশ করেছে ‘পদযাত্রা’ নাম দিয়ে। খুব ভালো কথা।

কিন্তু হঠাৎ করে তা “মার্চ টু গোপালগঞ্জ” কেন হয়ে গেল? নাকি এনসিপি’ র জঙ্গীরা ভেবেছিল যেভাবে ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত, মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে ও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিতে পেরেছিল তেমনি তারা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিও ভেঙ্গেচুড়ে ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারবে?

তাদের সে খায়েশ আর পূরণ হয়নি বঙ্গবন্ধুর রক্তঋণে কৃতজ্ঞ গোপালগঞ্জবাসী। এনসিপি’ র সমাবেশের আগেই আওয়ামীলীগের নেতৃস্থানীয় এবং গোপালগঞ্জবাসী বলে দিয়েছেন, “আপনারা আসেন, সমাবেশ করেন কিন্তু অনুরোধ থাকবে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা নিয়ে কোন কথা বলবেন না এবং টুঙ্গিপাড়ামুখী হবেন না। যদি এগুলো করা হয় তবে গোপালগঞ্জবাসী এসবের জবাব দেবে।”

কিন্তু ধৃষ্টতা ও শক্তিমত্তা ( স্থানীয় ভাষায় হ্যাডম) দেখাতে কেউ খোদ গোপালগঞ্জ গিয়ে ‘ মুজিববাদ মূর্দাবাদ’ বলবেন আর গোপালগঞ্জবাসী সহ্য করবে, বাংলাদেশ সহ্য করবে সেটা হবেনা। আওয়ামীলীগ ১৬ বছরের শাসনামলে তারা কোনভাবেই ভাবে নাই তারা রংপুরে গিয়ে কিংবা বগুড়া গিয়ে এভাবে দখলদারিত্ব কায়েম করবে বা ধৃষ্টিতা দেখাবে, এটাই শিষ্টাচার।

সেখানে এই টোকাই এনসিপি গত ১১ মাসেই সেই ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। তার পরও গোপালগঞ্জবাসি ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে, সেনাবাহিনী কিংবা কোন বাহিনীর উপর তারা আক্রমণ করেনি এমনি এনসিপির উপরও আক্রমন করেনি। নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরে তারা প্রতিরোধ করেছে।

প্রয়াত সেনাশাসক জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় গোপালগঞ্জে গিয়েছিলেন সমাবেশ করতে। পারেন নাই।

আরেক সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের ঘটনাও প্রায় একই। রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ গোপালগঞ্জ সফরে যান। এরশাদ সামরিক শাসক থেকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিজের রূপান্তর নিশ্চিত করতে গোপালগঞ্জ সফরের উদ্যোগ নেন। তিনি চেয়েছিলেন সেখানে জাতীয় পার্টির জনভিত্তি তৈরি করতে, যার ফলে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়। তার গাড়িবহর কাশিয়ানী ও টুঙ্গিপাড়ার মধ্যবর্তী এলাকায় গাছ ফেলে অবরোধ করে আটকে দেয়া হয়।

ইট,পাথর, বাঁশ, মাটি ইত্যাদি দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সভাস্থলে এরশাদের আগেই উপস্থিত হয়ে যায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। তারা সভাবেশ মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেয়। চেয়ার-টেবিল ভেঙে ফেলে।

এরশাদ গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চে উঠতে চাইলে তীব্র হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে দ্রুত সেনাবাহিনী এসে সভা বাতিল করে হেলিকপ্টার যোগে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে।

কিন্তু জিয়া এবং এরশাদ পারেন নাই, তার মানে তার উত্তরসূরীরা কেউ পারবে না? হাসনাত, সারজিসদের কি তাদের পূর্বসূরীদের এই ইতিহাস জানা নাই? অবশ্যই আছে। ইতিহাস জেনেই তারা ইতিহাস বদলাতে গোপালগঞ্জ গেছে। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই তারা গোপালগঞ্জ গেছে। গোপালগঞ্জের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে,গোটা দেশবাসীকে সাক্ষী রেখে তারা বজ্র কণ্ঠে স্লোগান দিয়েছে, “মুজিববাদ মুজিববাদ- মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ। মুজিববাদের আস্তানা-ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও”!

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও বলেছিলেন,’গোপালগঞ্জের নামই বদলে দেবো’। কিন্তু সে আশাও পুরণ হলোনা তার।

টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল অত্যন্ত সম্মানের অত্যন্ত পবিত্র একটি জায়গা। বঙ্গবন্ধুর অনুসারি বঙ্গবন্ধুপ্রেমি,
আওয়ামী লীগ যারা করে, তাদের কাছে একটি এক প্রকার ধর্ম বিশ্বাসের মত। আর তা এত শক্ত ধর্ম যে, এরকম বিপর্যয়ের এক বছর পেরিয়ে গেলেও, একটা লীগ কর্মীকে অনুশোচনা করতে দেখা যায়নি। কেউ দল পাল্টিয়ে অন্য দলে যোগ দেয়নি।

এখন এই ধর্মবিশ্বাসের মত মুজিবাদর্শের কোটি কোটি মানুষকে কোন শক্তিতেই, কোন রক্তচক্ষুতেও দমানো যাবেনা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামীর সশস্র ক্যাডার বাহিনী রাজাকার, আলবদর আলসামশদের চরম নির্যাতনের পরও ” জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” বলে হাসতে হাসতে প্রাণ দিতে দ্বিধা করেনি। সেই মুজিবাদর্শের সৈনিকদের দমানো সম্ভব? পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নজির কোথাও আছে বলে জানা নেই।

আর ঠিক তাই বুধবার ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে শত শত সেনা- পুলিশ- বিজিবি দিয়ে সয়লাব ও টার্গেট করে মানুষের দিকে গুলি ছোড়ার যে দৃশ্য দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে তাতে পাকিস্তানী বর্বর হানাদারের অত্যাচারকেও হার মানিয়েছে।

বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতে এখন যেহেতু কোন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নেই তাই তাদের ওপর কোন আস্থাও নেই জনগনের।তাই মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভর করে বেশি।

গোপালগঞ্জের মর্মান্তিক ঘটনা- সংঘর্ষের পর প্রান বাঁচাতে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানের ট্যাংকে করে সেখান থেকে এনসিপির বাঘা বাঘা (!!) নেতারা যেভাবে পালালেন তাতে এনসিপি’ র অর্জন কি সেটা জানতে বড় ইচ্ছে হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার পরও গোপালগঞ্জের হাজার হাজার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, ববঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার অনুসারিরা এনসিপি’ র সভামঞ্চে ভাংচুর করে নিশ্চয়ই নতুন কোন বার্তা দিয়েছেন।

এখন তা যদি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন কি করার থাকবে এনসিপি ও ইউনুস- জামাতীদের? যখন লেখাটি লিখছি তখনও গোপালগঞ্জে কারফিউ চলছে। বুধবার দিবাগত সারারাত সেখানে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে সেনা- পুলিশ।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাতে নিহতদের ব্যাপারে কোন কথাই নেই!! এরা কি এ দেশের মানুষ না? এনসিপি কি মনে করেছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙ্গার পর বাঙ্গালীর অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরও উচ্ছেদ করতে পারবে বিনা বাধায়? যে দলটি এখন পর্যন্ত নিবন্ধনই পায়নি সেই এনসিপিকে রাষ্ট্রযন্ত্র পুরোটাই সমর্থন- নিরাপত্তা দিয়েছে। কেন? কিংস পার্টি বলে?

বুধবার রাত ৮ টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে যে কারফিউ জারি করা হয়েছে তাও প্রধান উপদেস্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

এনসিপি’ র কথা ছিল- গোপালগঞ্জ শেষ করে মাদারীপুরে যাবে। এরপর বললো- ‘গোপালগঞ্জ স্বাধীন না করে ঢাকা ফিরবে না।’ অতঃপর আর্মির সাজোয়া যানের ভেতরে লুকিয়ে উল্টো পথে বাগেরহাটের রাস্তা ধরেছে- টোকাইয়ের পার্টি। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টার পেজ থেকে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এটা যে, কিংস পার্টি সেটা আর কতভাবে প্রমাণ করতে হবে?

দেশের এত গন্ডোগোল, রাজনৈতিক সহিংসতার কোন একটা ঘটনায় কি প্রধান উপদেষ্টা বিবৃতি দিয়েছে? এ বিবৃতির মাধ‍্যমে ড. ইউনুচের অন্তবর্তীকালীন সরকার আবারও নিরপেক্ষতা হারালো – অর্থাৎ এ অবৈধ সরকার দিয়ে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে সম্ভব নয়- এটা আবারও প্রমাণিত।

স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্ন জাগে যে, গোপালগঞ্জের ঘটনা ঘটানোর জন্য আগে থেকেই নীলনকশা করা ছিল ইউনুস সরকারের? তার মানে এটি একটি ‘ হিডেন এজেন্ডা ছিল তাদের? নির্বাচন যাতে বন্ধ করা যায় সেজন্যই একটি সুগভীর ষড়যন্ত্রের ছক করা হয়েছে। মার্কিনীদের ‘ ডীপ স্টেট ‘ এর ‘ মেটিকুলাস ডিজাইন’ এ চলছে শান্তিতে নোবেল লরিয়েট ইউনুস জঙ্গী গংয়ের কাজ।

# ইশরাত জাহান, প্রাবন্ধিক, লেখক, নারী সংগঠক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *