শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মেটিকুলাস ডিজাইনে ইসলামী জঙ্গী ক্যু করে বাংলাদেশের ক্ষমতা কুক্ষিগতকারি ড. ইউনুসের মেয়ে যদি এভাবে ধর্ষিত হতো তাহলেও কি তাঁর টনক নড়তো কখনো?!

ঠিক জানিনা আমরা। হয়তো তাঁর হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হতো যদি সত্যিকার অর্থেই তিনি মানুষ হয়ে থাকেন।

অথবা তাঁর কোন বিকারই নেই– কারণ তাঁর ক্ষমতা- প্রতিহিংসার উন্মাদনায় মত্ত থাকায় এসব কোন বিষয়ই হয়তো তাঁর কাছে।

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু রমণীকে পুরো বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করার পৈশাচিক উন্মত্ততার বিষয়টি জানলাম ২৮ জুন রাত ১১ টার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এমনটাই ঘটিয়েছে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর- আলশামস বাহিনীর সহায়তায়।

আবার এ দেশীয় দোসর জামায়াতের ক্যাডাররাও একাত্তরে এমনভাবে মানবতা বিরোধী পৈশাচিক উন্মত্ততায় লিপ্ত ছিল। আর এসব কিছুকে ‘ পবিত্র ইসলাম’ এর নামে জায়েজ বলে ফতোয়া দেয়া হতো।

কারণ এসব নাকি ‘গণিমতের মাল’। যুদ্ধের সময় নাকি এসব ‘ হালাল’। তা বাংলাদেশে কি আবার সেই একাত্তর ফিরে এসেছে?

গত বছর ৫ আগষ্টের পর থেকে যে সব বীভৎসতা দেখছি- শুনছি তা কোনভাবেই একাত্তরের চেয়ে কম নয়, বরং নির্মমতায়- পৈশাচিকতায়- প্রতিহিংসায় অনেক বেশি। শুধু নারী নয়।

এসব হায়েনাদের কাছে আমাদের বাংলাদেশ আমাদের ‘ বাংলা মা’ ই যেন ‘ গণিমতের মাল ‘ হয়ে গেছে। গত ২৮ জুন রাতে কুমিল্লা মুরাদনগরে আমার সেই অসহায় মা’ র আর্তচিৎকার আর হায়েনাদের পৈশাচিক উল্লাস বেশিক্ষন দেখতে পারিনা।

লজ্জা ঘৃণা ক্ষোভ অক্ষমতা সবকিছু মিলিয়ে গা গুলিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সেখানে কল্পনা করেছি নিজেকে। এই দেশে আমি ইশরাত জাহান আর তো বেঁচে নেই।

আমার কাছে মনে হয়েছে আমি- আমার মা- পুরো নারীসমাজকে বিবস্ত্র করা হয়েছে। আমার ‘ জন্মভূমি মা’ কে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করেছে নেকরের দল।

আবার এই বর্বর ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তার মানে – ‘ তোমরা হিন্দুরা এদেশে থাকতে পারবেনা। তোমরা গণিমতের মাল।

‘আমার মা আজ বিবস্ত্র, আমার মা আজ ধর্ষিত।পুরো বাংলাদেশ বিবস্ত্র- ধর্ষিত। বাংলাদেশের স্বাধীন (!!!) সংবাদ মাধ্যমের একটি নমুনা দেই একটি বহুল প্রচারিত নিউজ পোর্টালের।

বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম এই নিউজটি দিয়েছে এভাবে–মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে হিন্দু নারীর মামলা।
এই ছিল শিরোনাম।

তারপর যা বলা হয়েছে নিউজে তা হলো- ‘ ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে; মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে এলাকায় বেশ সমালোচনা শুরু হয়। পুলিশ আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

মামলায় বলা হয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে ওই নারী বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর ওই নারীর বাবা-মা বাড়ির বাইরে যান। তখন ফজর আলী বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে স্থানীয়রা এসে ফজর আলীকে ধরে মারধর করে এবং কেউ কেউ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়।

ওই নারী বলেন, টাকা ধার নেওয়া নিয়ে ফজর আলীর সঙ্গে তাদের পরিবারের পরিচয় ঘটে। এ সূত্র ধরেই ফজর আলী বাড়িতে প্রবেশ করে। মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ফজর আলীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। বাদির স্বাস্থ্য পরীক্ষাও শেষ। তবে আসামি পলাতক রয়েছে।

অভিযুক্ত ফজর আলীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এ ঘটনাটি যারা ভিডিও করে ছেড়ে দিয়েছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এমন ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’

শান্তিতে নোবেলপ্রাপ্ত ড. ইউনুস এখন দেশের হর্তাকর্তা, বিধাতাও বটে। তিনি যে দেশবাসীকে কি শান্তিতে রেখেছেন তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। গা হিম করা এমন এক ঘটনার তিন দিন পার হয়ে গেলেও, আসামী গ্রেফতার হয়নি।

যারা ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে তাদেরকে শনাক্ত করা হয়নি। সেসব ভিডিও ফেসবুক থেকে সরানো হয়নি এবং দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে এরকম এক বিভৎস ঘটনার কোনো রিপোর্ট হয়নি।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, যারা বাঁচাতে গেছে বলে দাবি করছে, তাদের কেউ কেউ সেই নারীর গায়ে হাত তুলছে। ভয়াবহ ট্রমায় পড়া সেই নারী একদিকে কাপড় খুঁজছেন, আরেকদিকে নিজেকে ভিডিও থেকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! কোথায় পৌঁছেছে আমাদের মনমানসিকতা?

মুরাদনগরের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়! আগস্টের ৫ তারিখ বিকেলে যে মবের রাজত্ব এই দেশে শুরু হয়েছে, এটা তার চূড়ান্ত রূপ। এটাই ড. ইউনূসের দেয়া “নতুন বাংলাদেশ”।

তাই ২০২৫ সালে আগস্টের ৮ তারিখ যে নতুন বাংলাদেশ উদযাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেটা ঠিক আছে। এরকম বাংলাদেশ আমরা আগে কখনো দেখি নাই। গত ১১ মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার ধারাবাহিকতা দেখে এটি বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যে নারীবিরোধী চক্র এই দেশে দীর্ঘদিন ধরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে, এটা মূলত তারই চূড়ান্ত রূপ।

কার্যত সরকারবিহীন একটা দেশে তারা তাদের সুপ্ত উদ্দেশ্য হাসিল করছে!

একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবো- গতবছর জুলাই-আগস্টে যখন তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দালন হয়, তার সম্মুখ ভাগে ছিল নারী।

সে সময় পুলিশ বাহিনীর সাথে ঘটতে থাকা প্রায় সমস্ত সংঘর্ষে নারীকে সামনে ঠেলে দিয়ে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু যেই না আন্দোলনে জিতে গেলো, ক্ষমতা যখন কুক্ষিগত করা গেলো, আমরা গত ১১ মাস ধরে দেখলাম, কিভাবে সমস্ত জায়গা থেকে একটু একটু করে নারীদেরকে ছেঁটে ফেলা হলো।

অপু ভট্টাচার্য নামে এক বিক্ষুব্ধ নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, শুধু আন্দোলনে নয়, সরকার পরিচালনা থেকে শুরু করে তথাকথিত সংস্কার প্রক্রিয়া — কোথাও নারী নেই।

এই যে ঐকমত্য কমিশন নামের একটা দলের সাথে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর দিনের পরে দিন মিটিং হয়, আমি বিস্মিত হয়ে দেখি, সেসব মিটিংয়ে একটা নারীও নেই। ৫১% জনগোষ্ঠির সংস্কার করছে ৪৯% জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।

এই ১১ মাস ধরে রাস্তায়, লঞ্চে, বাসে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপরিকল্পিতভাবে শুরু করা নিপীড়নের মাধ্যমে ভীতি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যেই নারীরা এই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করেছিলেন, গ্রামে পরিবার রেখে যেই নারী ঢাকায় চাকুরি করতেন, প্রতি সপ্তাহান্তে রাতের বাসে চড়ে তার রেখে আসার সন্তানের কাছে ছুটে যেতেন, আবার ফিরতেন শনিবার রাতে, আমরা এখন দেখছি, সেসব নারীদের রাতের বাসে/ট্রেনে একলা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

মাগুরায় আট বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষিত হওয়ার পর, ঘটনার বিভৎসতায় মানুষ হতবাক হয়ে গিয়েছিল। মানুষের জোরালো প্রতিবাদের কারণে বাধ্য হয়ে সরকার আসামীদের গ্রেফতার করেছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে চার্জশিটও দিতে বাধ্য হয়েছে।

এর বাইরে, গত ১০ মাসে ঘটে যাওয়া শত শত ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রীকে ওড়না না পরার কারণে রাস্তায় কটুক্তি শুনতে হয়েছে, সেই কটুক্তিকারীর গলায় ফুলের মালা পরিয়ে তাকে জেল থেকে বের করে আনা হয়েছে।

চট্টগ্রামে আন্দালনকারী এক নারীর পশ্চাৎদেশ লক্ষ্য করে লাথি মারা শিবির ক্যাডারকে গ্রেফতারের দুই দিনের মাথায় জামিন দিয়ে দেয়া হয়েছে; জামিনের পর তাকেও ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জে লঞ্চ থামিয়ে দুই নারী যাত্রীকে বেধড়ক পেটানো যুবককেও থানা থেকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করা হয়েছে। পত্রিকার ‍রিপোর্ট বলছে, গত ১০ মাসে নারীর বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার মাত্র ১% অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমস্ত ঘটনায় একটাই মাত্র কমন বিষয় দেখা গেছে, সেটা হলো অভিযুক্তের গলায় ফুলের মালা!

এরপর নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ আর দম্ভ দেখেছি, যেভাবে ঢাকার রাস্তায় হাজার হাজার দাড়ি টুপিওয়ালাদেরকে জড়ো করে শোডাউন দেয়া হয়েছে, খোদ রাজু ভাস্কর্যের পাশে নারীর অবয়ব বসিয়ে সেটায় জুতাপেটা করা হয়েছে, এ সকল কার্য যারা করেছে, তাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে কিংস পার্টি হিসেবে খ্যাত এনসিপির সুপ্রিম লিডাররা গিয়ে সায় দিয়ে এসেছেন, সেখান থেকেই বুঝা গিয়েছিল যে, মবের ওপর টিকে থাকা সরকারের এসব ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মুরোদ নাই।

সব সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে কথাবার্তা চললেও, নারী সংস্কার কমিশনের দেয়া একটা সুপারিশ নিয়েও যে কোনো টু শব্দটা হচ্ছেনা, সেটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়; বরং এখান থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, তৌহিদী জনতার সাথে ইউনূস সরকারের দফারফা হয়ে গেছে। নারী সংস্কার কমিশন ও তাদের দেয়া রিপোর্ট মূলত মায়ের ভোগে চলে গেছে।

মুরাদনগরে যা ঘটেছে, একটা দেশে সেটা হুট করে ঘটে না। অপরাধী ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে। সে দেখতে চেষ্টা করে, অপরাধ করলে সাজা হয় কিনা, সে বোঝার চেষ্টা করে তাকে থামানোর কেউ আছে কিনা।

সে অনুযায়ী সে তার পরিকল্পনা সাজায়! মুরাদনগরের ঘটনা একজন অপরাধীর চূড়ান্ত পরিকল্পনারই পরিণতি। যারা ভিডিও করেছে, তাদেরকে অপরাধী ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না আমার। কিন্তু মনের আরেকটা অংশ বলছে, সেই ভিডিও না ছড়ালেতো এই নৃশংস বিভৎসা ঘটনার কথা এই দেশ জানতেও পারতো না।

তিন দিন পরে এসে পুলিশকেও বিবৃতি দিতে হতো না। কাল সকালে যে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুকে চমৎকার বাংলায় একটা বিবৃতি ঝুলবে, সেটাওতো ওই ভিডিও ছড়ালো বলে!

আমাদের কি দুর্ভাগ্য! মবের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটা সরকারের কাছে বিচার চাইতে হলেও মবের মাধ্যমেই চাইতে হয়, সম্ভ্রম-সম্মান-গা বাছাতে মরিয়া হয়ে ওঠা এক নারীর নগ্ন ভিডিও ছড়াতে হয়; তা না হলে যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়ে বিকট শব্দে নাক ডাকতে থাকা সরকারের কোনোকিছুতেই কোনোকিছু যায় আসে না?

সচেতন প্রতিবাদী সংস্কৃতিকর্মী- আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ লিখেছেন — মুরাদনগরে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনাটার বর্ণনা দেখেছেন আপনি?

না, নারীটিকে কোথাও একা পেয়ে ধর্ষণ করেছে বা সেরকম কোন ঘটনা নয়। মেয়েটি যে বাড়ীতে ছিল সেখানে গিয়ে ধর্ষক তার ধরণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। ভয়ে নারীটি ঘরের দরোজা আটকে দেয়।

ধর্ষক দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে ও নারীটিকে ধর্ষণ করে চলে যায়। ভাবখানা যে ধর্ষণ করা তার অধিকার এবং ধর্ষণ করা থেকে কেউ তাঁকে বাধা দিতে পারবে না। বিস্ময়কর লাগছে? আরেকটা তথ্য যুক্ত করি, তাইলে আর অবাক লাগবে না।

নারীটি ধর্ম বিশ্বাসে হিন্দু আর ধর্ষক একজন মুসলমান। এই পোড়ার দেশে একটি হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করতে চাওয়া খুব বড় কোন অপরাধ বিবেচিত হয় না। আসলে ধর্ষণ ব্যাপারটাকেই আমাদের দেশে এমনিতে বড় কোন অপরাধ বিবেচনা করে না বেশিভাগ মানুষ।

ধর্ষণের শিকার নারীকেই সাধারণত কোন না কোনভাবে দায়ী করা হয় ধর্ষণের জন্য। মুরাদনগরের মেয়েটি শুধু যে নারী সেটাই কেবল নয়, তিনি একজন হিন্দু নারী। নারীকে আমরা পূর্ণ মানুষ মনে করিনা এবং হিন্দুদেরকে আমরা পূর্ণ নাগরিক মনে করি না। ফলে হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধর্ষক যদি কোন সঙ্কোচ না করে বা ভয় না সেটাতে তো বিস্ময়ের কিছু নাই আরকি।

না, কেবল বিচারের দাবী করছি না। বিচার পাওয়া তো ভিক্টিমের অধিকার, আর সেটা নিশ্চিত করা সে তো সরকারের দায়িত্ব। বিচার তো হবে। আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করছি, সত্যটা এড়িয়ে যাবেন না- মুরাদনগরের এই ঘটনাটি একটি সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের ঘটনা।

এইটা যতদিন আমরা স্বীকার না করবো, ততদিন আমরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করতে পারবো না। এইটা একটা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস- এই নারীটি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি হিন্দু বলেই। ওঁর জায়গায় একজন মুসলিম নারী হলে ধর্ষক সম্ভবত এতো বেপরোয়া হতো না।

আপনি আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলুন, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন মানুষই নিজেকে পূর্ণ নিরাপদ মনে করে? করে না। হিন্দুরা আমাদের এখানে সবসময় আতঙ্কে থাকে, একজন হিন্দু এই দেশে মুসলমানদের সমান ভাতে পারে না নিজেকে। কেন?

কারণ সেই ১৯৪৭ থেকে অদ্যাবধি এই দেশে আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। আমি এমন পরিবার জানি, যারা নিজের মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, সেইখানেই পড়াশুনা বিবাহ ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছে। কেন?

কারণ মেয়েটির বাবা মা এই দেশে নিজের কন্যাকে নিরাপদ মনে করেননি। আপনি কি এইরকম কাউকে জানেন না? খোঁজ নিন আপনার আশেপাশে, দেখবেন, পাবেন।

প্রকৃত সমস্যা উপেক্ষা করবেন না। প্রকৃত কারণটি চিহ্নিত করুন এবং সেটা স্পষ্ট কণ্ঠে স্বীকার করুন। আমাদের দেশে তীব্র সাম্প্রদায়িকতা বিরাজ করে এবং প্রতিদিন প্রতি সপ্তা প্রতি মাস দেশের কোথাও না কোথাও হিন্দুদের সাথে অন্যায় করি আমরা। এমনিতেই দেশের সকল মানুষই আতঙ্কে থাকে, পুলিশ ঠিকমত কাজ করে না, প্রতিনিধিত্বমুল সরকার নাই, গুণ্ডার দল কখন কার বাড়ীতে দলবেঁধে এসে হাজির হবে কেউ জানেনা।

হিন্দু নাগরিকদের এই নিরাপত্তাহীনতা মুসলিম নাগরিকদের তুলনায় দ্বিগুণ, কেননা বাড়তি হিসাবে ওদের প্রতিনিয়ত শঙ্কায় থাকতে হয় সম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের। কেবল ধর্মবিশ্বাসের কারণে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হওয়া এই দেশে অভিনব কিছু নয়।

মেহেরবানী করে সাম্প্রদায়িকতাকে আরেকটি আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি ইস্যু ভাববেন না। সাম্প্রদায়িকতা এখন এমনভাবে ছড়িয়েছে যে এমনকি আপনি যাদেরকে বাম প্রগতিশীল লিবারেল বা সেক্যুলার হিসাবে চেনেন, ওদের পেটের মধ্যেও ঠিকই লুকিয়ে থাকে সাম্প্রদায়িকতা।

আমি তো এমনকি একজন দুইজন কমিউনিস্টের মুখেও ঐসব কথা শুনেছি, যেগুলি স্পষ্টতই পেটের অভ্যন্তরে বিরাজমান সাম্প্রদায়িকতা থেকে উৎসারিত।

ভুলে যাবেন না, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটা দেশ কখনোই সভ্য হতে পারে না, গণতন্ত্র তো দূর কি বাত।

তাই সবকিছু দেখে শুনে মার খেতে খেতে বলি– এখনো সময় আছে, গর্জে ওঠো নারী। গর্জে ওঠো একাত্তরের সেই বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা।

আমাদের আবার প্রয়োজন বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর মত বিপ্লবীর। আমাদের মধ্যেই আছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে বীরত্বের সাথে লড়া তারামন বিবি বীরপ্রতীক।

আমাদের রয়েছে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের বীবত্বগাঁথা। যিনি একাত্তরে দাঁ দিয়ে কুপিয়ে ৫ রাজাকারকে হত্যা করেছিলেন। সম্প্রতি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মা সখিনা বেগম পরকালে চলে গেছেন।

কিন্তু তাই বলে কি এ বাংলার বীর নারী ও তাদের দামাল ছেলেরা বসে থাকবে নিশ্চুপ তাদের বাংলা মায়ের এ চরম অপমানে? নিশ্চয়ই না। একাত্তরে নারী- পুরুষের যৌথ প্রতিরোধে এ বাংলা মায়ের জন্ম হয়েছে। আবারও সেই মা’ কে বিবস্র- অপমানের প্রতিশোধ হবে শত- সহস্র গুণে।

এ দৃঢ়প্রত্যয়ে গর্জে উঠবে বাংলাদেশ–

মাগো ভাবনা কেন
আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।

আমরা হারবোনা,হারবোনা
তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়বনা
আমরা পাথর দিয়ে দূর্গ ঘাটি গড়তে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি

আমরা অপমান সইবনা
ভীরুর মত ঘরের কোণে রইবনা
আমরা আকাশ থেকে বজ্র হয়ে ঝড়তে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি

আমরা পরাজয় মানবোনা
দুর্বলতায় বাঁচতে শুধু জানবোনা
আমরা চিরদিনই হাসি মুখে মরতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি

মাগো ভাবনা কেন
আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।

## ইশরাত জাহান, লেখিকা, নারী অধিকার সংগঠক, প্রাবন্ধিক, ঢাকা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *