ত্রিশ লাখ শহীদ, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের আহত হওয়া, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের ইতিহাস মুছে ফেলে এখন ‘ ইসলামী জঙ্গী ক্যু’ এর নামে কথিত জুলাই অভ্যূত্থানকে ‘মহান’ করার সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে নোবেল লরিয়েট ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অবৈধ সরকার।
গত জুলাই-আগষ্টে দেশব্যাপী জ্বালাও পোড়াও-ধ্বংসলীলা চালানো, কয়েক হাজার পুলিশ সদস্যকে পুড়িয়ে খুন করা, কয়েকশ থানা জ্বালিয়ে দেয়া জঙ্গীদেরকে উপাধি দেয়া হয়েছে ‘ জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধা’।
আর সেই ‘জুলাই শহীদ’ এর পরিবারের সদস্য ও ‘জুলাই যোদ্ধা’রাই সরকারি-বেসরকারি চাকরিসহ নানা ‘কোটা সুবিধা” প্রাপ্ত হবেন।
দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশের। দুর্ভাগ্য এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের গলায় এই ইসলামী জঙ্গী সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধাদের চরম অপমান করা হয়।
গলায় জুতার মালা পড়ানো হয়।সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাসহ আরো হয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে চরম অপমান করে গলায় জুতার মালা পড়ানোর মত ধৃষ্টতা দেখিয়েছে এই অবৈধ জঙ্গী সরকারগং।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনকের ভাষ্কর্য গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়।
স্বাধীনতার সূতিকাগার হিসেবে ইতিহাসখ্যাত ‘ বঙ্গবন্ধু যাদুঘর’ ঐতিহাসিত ত্রিশ নম্বরের বাড়ি কয়েকদিন ধরে পৈশাচিক উল্লাসে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়, লুটপাট ও অঅগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে।
এর বিপরীতে পুরষ্কার (!!) হিসেবে একটি দেশকে ধ্বংসের জন্য ইসলামী ইসলামী জঙ্গীদের দেয়া হয় ‘ জুলাই শহীদ, ‘ জুলাই যোদ্ধা’ উপাধি। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে।
অথচ এই “ কোটা” প্রথার বিরুদ্ধেই কিন্তু কথিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল। কিন্তু অবৈধ ইউনুস সরকার সরাসরি গেজেট করেই এই কোটা চালুর ঘোষনা দিয়েছে।
জাতির সঙ্গে প্রতারণারওতো একটি সীমা থাকা উচিত। তবে আতংকে আছে সরকার তা বোঝা গেছে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের কথায়।
‘জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদরা ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন।
শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।’
গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ( যিনি ইতিমধ্যে ডাস্টবিন শফিক নামে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন) এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গত ৯ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্য কোটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করে আওয়ামীলীগ সরকার উৎখাত করলো ইউনুসগং ও তার অনুগত জঙ্গী শিক্ষার্থীরা।
যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের সঙ্গে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দিলেন তাদেরকে যতভাবে পারা যায় খাটো করার অপচেষ্টা করছে এই জঙ্গী ইউনুস সরকার।
আর এই সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন একজন খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই আজম বীর প্রতীক।
এই ফারুক-ই-আজম আবার চট্টগ্রামে ‘ নোবেলজয়ী ড. ইউনূস সুহৃদ’ নামে একটি সংগঠনের নেতা।
এটির নেতৃত্বে রয়েছেন ইষ্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য মু.সিকান্দর খান, জিয়াউর রহমানের আমলের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক আবুল ফজলের সুযোগ্য পুত্র প্রাবন্ধিক-সাংস্কৃতিক সংগঠক আবুল মোমেন।
আবুল মোমেন আবার দৈনিক আমাদের সময়েরও সম্পাদক এবং তিনি তাঁর পিতার ন্যায় আওয়ামীলীগ-বিএনপিসহ সব সরকারের সাথেই তৈলমর্দনকরে সুবিধা আদায় করতে সিদ্ধহস্ত। আওয়ামীলীগ আমলে তিনি ২০১৭ সালে একুশে পদকও বাগিয়ে নিয়েছেন।
ফারুক-ই-আজম ও আবুল মোমেন অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও বর্তমান সরকারের কাছ থেকে যত সুযোগ সুবিধে নেয়া যায় তার সবই আবুল মোমেন পাচ্ছেন।
মুখে প্রগতিশীলতার কথা বলে তিনি ‘ সুশীল সমাজ’ এ তার অবস্থান করে নিয়েছেন। কিন্তু জুলাই-আগষ্টে যে নারকীয় তাণ্ডব ও জঙ্গীবাদেও উত্থান হলো তার বিরুদ্ধে একটি বাক্যও তিনি ব্যয় করেননি।
অথচ আওয়ামীলীগ আমলে সব ধরনের সুযোগ সুবিধে নিয়েছেন তিনি। বর্তমান সরকারের সময়েও নিচ্ছেন, যেহেতু খোদ প্রধান উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টাসহ আরো বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা তার অত্যন্ত ঘনিষ্ট।
তো এই ফারুক-ই আজমই গত ২৪ জুন ঘোষণা করলেন- চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পাবেন।
মাসিক ভাতার পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘আহত যোদ্ধারা’ আজীবন সরকারি মেডিক্যাল হাসপাতালগুলোতে বিনা খরচে চিকিৎসা পাবেন।
সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা জানান বলে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এক সংবাদ প্রকাশ করেছে।
এত জানানো হয়, উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ৫৪ বছর লেগেছে।
কিন্তু আমরা (বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার) মাত্র ৭-৮ মাসের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ যোদ্ধা ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে ফেলেছি। এটাই অন্তর্র্বতী সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ।
আগামীতেও আহত যোদ্ধারা যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন, সেভাবে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০ম তলায় এ অধিদপ্তরের জন্য বিশ জন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে অধিদপ্তর থেকে জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে।
জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
আহত জুলাই যোদ্ধারা ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘এ’ মাসে ২০ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি মাসে ১৫ হাজার এবং ‘ক্যাটাগরি’ ক্যাটাগরি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী সনদ ও পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন।
এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে।
আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে।
তাছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে।
তিনি বলেন, আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নেয়ার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবন যাপন করতে পারছেন না, যেমন যার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে।
অথবা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যার কারণে তার পক্ষে একা একা চলাফেরা করা অসম্ভব, তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধা হিসাবে বিবেচিত হবেন।
এই ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকাসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। বাকী ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে পাচ্ছেন।
তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র পাবেন।
গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
‘ক্যাটাগরি- বি’ তে রয়েছেন ৯০৮ জন। যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু অন্যের সহায়তা ছাড়া মোটামুটি চলাফেরা করতে পারেন, যেমন যাদের এক চোখ বা এক পা নষ্ট হয়ে গেছে বা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যে, তারা একা মোটামুটি চলতে ফিরতে পারেন।
অর্থাৎ চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম যোদ্ধারা আছেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তাঁরা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন।
এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আর আগামী মাসে বাকি ২ লাখ টাকা পাবেন। তাছাড়া এই বি” ক্যাটাগরির যোদ্ধারা ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন।
সাথে প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মসংস্থানে চাকরি ও পরিচয়পত্র পাবেন।
চিকিৎসার পর বর্তমানে যারা সুস্থ তাদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ১০ হাজার ৬৪২ জন ‘ জুলাই যোদ্ধাকে’ এই ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এছাড়া আগামী মাস থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে পাচ্ছেন পুনর্বাসন সুবিধা এবং পরিচয়পত্র।
উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ৫ আগস্টকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার।
জাতীয় দিবস হিসেবে আগামীতে এই দিবসকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হবে।
তিনি বলেন, ৮৩৪ শহীদ পরিবারের মধ্যে ১৩৪ জনের পরিবারকে ওয়ারিশ জটিলতার কারণে পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। তাও অতি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
আহত যোদ্ধাদের তালিকায় যে সব ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে সেটারও সমাধান করা হচ্ছে।
আতংকে আছে অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার।
অন্তবর্তী সরকারের অবৈধ উপদেষ্টারা যতই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা-সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নানা বাগাড়ম্বর করুন না কেন তারাও আতংকের মধ্যে আছেন। কখন জানি কি হয়ে যায় !
কখন আবার পাশার দান উল্টে যায়! কারণ গত প্রায় ১১ মাসে তারা অবৈধ-অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় বসে যেসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন তার জন্য তারাও যে স্বস্তিতে আছেন তা কিন্তু নয়।
এজন্যই মুখ ফসকে তারাও মাঝে মধ্যে তাদের আতংকিত হওয়ার বিষয়টি নিজেদের অজান্তেই প্রকাশ করে ফেলছেন।
বর্তমান সরকার ও সরকার গংয়ের মধ্যেই যে ঐক্য নাই তাও প্রকাশ হয়ে পড়ছে। গত ২২ জুন রোববার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জে কথিত গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি কিছু আশংকা-অনৈক্য-ভীতির কথা বলে ফেলেছেন।
পশ্চিমাদের অর্থায়নে ও পরামর্শে চালিত ‘ অধিকার’ নামে একটি এনজিও তথা কথিত মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান এই আদিলুর রহমান খান।
যে অধিকার দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ ইসলামী জঙ্গীদের পক্ষে নানাভাবে প্রচারণা চালিয়েছে।
বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের নাকের ডগায় বসেই কিন্তু এই আদিলুর রহমান খানদের মালিকানাধীন কথিত মানবাধিকার সংগঠন ‘ অধিকার’ তার অপতৎপরতা চালিয়ে গেছে।
কিন্তু তখন তাদের কিছু হয়নি। গত চব্বিশের ৫ আগষ্ট বাংলাদেশে ‘ইসলামী জঙ্গী ক্যু’ এর পর আদিলুর রহমান বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের শক্তিশালী উপদেষ্টা হয়ে বসেন।
সেই অবৈধ অন্তবর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গত ২২ জুন মুন্সীগঞ্জে “ ঐক্য মাঝে মাঝে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে” মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ ৫ আগস্টের শক্তির মধ্যে যেন একটু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।
এটা হতে দেওয়া যাবে না। ৫ আগস্টের সব শক্তিকে একসঙ্গে থাকতে হবে যেন ফ্যাসিবাদ আর ফিরে আসতে না পারে।’
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে আদিলুর বলেন, ‘আমরা আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। থাকব বলার উপায় নেই। কারণ, কাল হয়ত দেখা যাবে আমরাও নেই।
যতক্ষণ ঐক্য ও সংগ্রাম থাকবে ততক্ষণ এটা চলমান থাকবে। নয়ত স্থবির হয়ে যাবে এবং আমরাও আক্রান্ত হবো।” তার এসব মন্তব্যের মধ্যেই কিন্তু তাদের অনৈক্য-অপরাধ-ক্ষমতায় না থাকার শংকাটি বিষয়টি।
এই মতবিনিময় সভায় আদিলুর রহমান খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব নিয়েছে, একইভাবে জুলাইয়ের যোদ্ধাদেরও দায়িত্ব নেবে।
‘জুলাইয়ে পরিবারগুলোকে সাপোর্ট দিতে, আহতদের পুনর্বাসন করতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আলাদা অধিদপ্তর তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।’
তিনি বলেন, ‘বিচারের প্রশ্নে তড়িঘড়ি করলে বিচার সঠিক হয় না। আবার দীর্ঘসূত্রিতায় বিচারহীনতার সৃষ্টি হয়। আমরা সচেতন আছি যেন বিচার সঠিকভাবে হয় এবং অপরাধীরা ধরা পড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ অপরাধীরা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য রেড নোটিশ জারি হয়েছে।’
কিন্তু এই রেড নেটিশ আদৌ কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করবে কীনা সে ব্যাপারে বর্তমান সরকারের কাছে কোন জবাব নেই।
কারণ গত প্রায় এগার মাসে প্রধান উপদেষ্টা প্রায় ডজনখানেক বিদেশ সফর করে অশ্বডিম্ব প্রসব ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি।
এখনো মামলা বাণিজ্য চলছে অকপটে স্বীকার করে ‘মানবাধিকার ব্যবসায়ী আদিলুর রহমান খান বলেন-‘ ‘মামলা বাণিজ্য থেকে আমরা এখনো মুক্ত হইনি’’।
তার মানে তাদের সমর্থিতরা সারাদেশে মামলা বানিজ্য করে হয়রানি তো করছেন পাশাপাশি বানিজ্য করছে দেদারসে।
উপদেষ্টা আওয়ামীলীগের নাম উচ্চারণ না করেই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘ ফ্যাসিবাদ বারবার আসার চেষ্টা করবে। আমাদের প্রধান কাজ তাকে প্রতিহত করা।
ফ্যাসিবাদ যেন কখনো বাংলাদেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। ফ্যাসিবাদী শক্তিকে চিরস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে মাটিচাপা দেওয়া আমাদের অন্যতম কাজ’।
কিন্তু এই আদিলুর রহমান খান, ফারুক-ই-আজম, ডাস্টবিন শফিকরা হয়তো বুঝতে পারেনি দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশি সময়ে তিলে তিলে গড়ে ওঠা একটি দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শেকড় এদেশের মাটির গভীরে প্রোথিত।
এই দলটি কোন সেনা ছাউনি থেকে বা সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্রে তৈরী হয়নি, আজকের অবৈধ-অসাংবিধানিক অন্তবর্তী সরকারের মত কচুড়িপানার মত ভেসে আসেনি।
নানা ব্যর্থতা-সীমাবদ্ধতা ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফলে হয়তো বড় ধাক্কা খেয়েছে দলটি। কিন্তু এদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল ও মানুষকে দমানো যাবেনা নিশ্চয়ই।
#নুরুল ইসলাম আনসারি, লেখক, প্রাবন্ধিক।