বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটাকেই দখল করতে চাইছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত ও তাঁদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির (আইসিএস) চাইছে, দেশের সামরিক, নৌ ও বিমান বাহিনীতে বেশি করে নিজেদের লোক ঢোকাতে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে তারা। অফিসার ও সাধারণ সৈনিক উভয় ক্ষেত্রেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনামলকে কাজে লাগিয়ে ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাসীদের তাঁরা বেশি করে সেনাবাহিনীতে ঢোকাতে চায়।
উদ্দেশ্য, ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতা যার হাতেই যাক না কেন, সেনাবাহিনী তাঁদের হাতের মুঠোয় থাকবে। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরাসরি নাক গলাচ্ছেন জামায়াতের নেতারা।
ছাত্র শিবিরকে ব্যবহার করা হচ্ছে যুবকদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে উৎসাহী করে তোলার কাজে।
জামায়াত মগজধোলাই করেই দেশের ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট সরকার গঠিত হলে কৌশলে নিজেদের মতাদর্শে বিশ্বাসীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছিলেন জামায়াত নেতারা।
সেনাবাহিনীতেও জোট সরকারের পাঁচ বছরে প্রচুর জামায়াতের আদর্শে অনুপ্রাণিত যুবক অফিসার ও সাধারণ সেনা পদে নিযুক্তি পান।
বিডিআরের বিদ্রোহীরাও ছিলেন তেমনি নিয়োগপ্রাপ্ত। কৌশলে বাংলাদেশের প্রতিটি স্পর্শকাতর বিভাগেই নিজেদের লোক ঢুকিয়ে ভবিষ্যতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চান শফিকুররা।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই চেষ্টা চলছে পুরোদমে। বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষাকেন্দ্রে জামায়াতের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। বিচারব্যবস্থাতেও তাঁদেরই রমরমা।
সেনাবাহিনীতেও মৌলবাদীদের আধিপত্য বিস্তারে তাঁরা বেশ সক্রিয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ২০২৬ বি ক্যাডেট ব্যাচেরনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতও সক্রিয় হয়ে পড়েছে তাঁদের অনুসারিদের নৌবাহিনীতে ঢোকাতে। আগ্রহী প্রার্থীদের সরাসরি নৌ বাহিনীর কাছে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার বদলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসে আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হচ্ছে।
আইসিএসের নির্দেশ, আবেদন পত্রের সঙ্গে চাকরি প্রার্থীদের স্থানীয় জামায়াত বা তাদের শাখা সংগঠনের সুপারিশ করা চিঠিও বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগে সরাসরি ভূমিকা নিতে চাইছে জামায়াত।
শুধু নৌসেনাই নয়, বিমান ও পদাতিক বাহিনীতেও তাঁরা নিজেদের লোক ঢোকাতে ব্যস্ত। বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার এটাও একটি জামায়াতের কৌশল।
সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য ইসলামিক ছাত্র শিবির একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও খুলেছে। সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে আইসিএসের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম যুবকদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করছেন।
জামায়াতের প্রচার মাধ্যম মজলিস-ই-শুরাতেও প্রচারনা চলছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ভার দেওয়া হয়েছে দেলওয়ার হোসেনকে। জানা গিয়েছে, সেনা অফিসার তৈরি করার জন্য জামায়াত ও ছাত্র শিবির তাঁদের কল্যাণ তহবিল থেকে প্রচুর অর্থ দিচ্ছে।
তাঁরা চাইছে, জামায়াতের হাতের পুতুলরাই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করুক। তাঁদের এই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ণে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চিরকালই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। অসাম্প্রদায়িক কাজকর্মের জন্য তাঁদের আলাদা সুনাম রয়েছে। সেই সুনামেই এবার আঘাত করতে তৎপর জামায়াত।
তাঁরা চাইছে, মৌলবাদের আধিপত্য বাড়ুক সশস্ত্রবাহিনীতে। নিজেদের শক্তিতে নির্বাচনে তাঁদের জয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই।
এটা বুঝতে পেরেই জামায়াতের নেতারা নানা বাহানায় নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছেন। তাঁদের লক্ষ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে আসা জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি নেতাদের কাজে লাগিয়ে ‘মাইনাস টু ফর্মুলাকে’ বাস্তবায়িত করা।
অর্থাৎ আওয়ামি লিগের মতোই বিএনপিকেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দান থেকে হঠাতে চাইছে তাঁরা। তাঁদের সেই কৌশল রূপায়ণের চেষ্টা চলছে পুরোদমে।
ইসলামিক বিভিন্ন শক্তিকে একজোট করে বাংলাদেশে মৌলবাদী শাসন চালু করতে চায় জামায়াত। চলছে তারই পুরোদমে প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির অঙ্গ হিসাবে সেনাবাহিনীকেও তাঁরা কব্জা করতে চায়।
নিজেদের পছন্দের লোকজনই যাতে তিন বাহিনীতে নিয়োগ পান তারই চেষ্টা চলছে। সমস্ত নিয়োগ পদ্ধতিকেই জামায়াত নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল হিসাবে ব্যবহার করছে।
বিএনপি নেতারা নির্বাচনের দাবি নিয়ে বিবৃতিযুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় জামায়াত অনেকটা ফাঁকা মাঠেই সেনাবাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে।
পাকিস্তান ও তুরস্ক-সহ বিভিন্ন দেশ জামায়াতকে এই কাজে সর্বতোভাবে সাহায্য করছে। বাংলাদেশকে মৌলবাদীদের হাতের পুতুল হিসাবে গড়ে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য।
সেই লক্ষ্যেই নিজেদের সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে পরিচালিত করছে জামায়াত। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বিসর্জন দিয়ে গোটা বাংলাদেশেই শরিয়তের শাসন চালু করতে চায় তাঁরা।
তাই সেনাবাহিনীকেও শরিয়তি শাসনের আওয়াত আনতে চায় জামায়াত। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁদের অতি তৎপরতা সেটাই প্রমাণ করে।
#আনোয়ার হুসেইন