ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারি যতই কাছে আসছে ততই কথিত জুলাই অভ্যুত্থানের একসময়ে সাথী বিশেষ করে জামাত-বিএনপি-এনসিপি’র মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠছে।

গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, বিএনপি-জামায়াতসহ বাংলাদেশের ২৫টি রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে এতে স্বাক্ষর করে।তবে এই কথিত জুলাই অভ্যুত্থানের মূল অংশীদার হিসেবে দাবিদার কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত টোকাই জঙ্গীদের দল এনসিপি এখনো এই কথিত সনদে স্বাক্ষর করেনি ‘গোসসা’ করে।

এখন একদল আরেক দলকে আক্রমণাত্মকভাবে বাক্যবাণে দোষারোপ করে চলছে। একসময়কার “গলাগলি” এখন ‘গালাগালি’ তে পরিণত হয়েছে ।

আবার এর মধ্যে তড়িঘড়ি করে ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ এর নাটের গুরু জঙ্গী-প্রতারক নোবেল লরিয়েট ড. ইউনুসীয় সরকার চাইছে যে কোন প্রকারে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে। কিন্তু যে সরকারই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা কোন আইনের ভিত্তিতে, কোন নৈতিকতার ভিত্তিতে সেই আদেশ জারী করবে?

যে অবৈধ সরকার কট্টর ইসলামী জঙ্গী দলগুলোকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানকেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার মত আস্পর্ধা দেখায় তারা কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানের অধীনেই রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ নিয়েছে।

আবার এরাই এখন সংসদ ছাড়া তাদের খুশীমতো জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে চায়। এ যেন মামাবাড়ির আবদার!

অনেকেই বলছেন ‘জুলাই সনদ‘ এখন ‘ঝুলাই সনদ’ হয়ে গেছে।

তবে এই আবদার আদায় করতে গিয়ে এখন নিজেরা নিজেরাই প্রচন্ড বিরোধে জড়িয়ে গেছে। কোথাকার কোন এক মার্কিন নাগরিক আলী রিয়াজ নতুন করে গজিয়েছেন বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের দন্ডমুন্ডের কর্তাব্যক্তি হয়ে।

যিনি নিজেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানের নিয়ম-নীতিকে অস্বীকার করে নতুন থিউড়ির আবিষ্কারক হয়েছেন। যেন তিনি ভাস্কোডা গামার মত নতুন এক দেশের সন্ধান পেয়ে গেছেন। যেখানে তিনি তার চাকরিদাতা ড. ইউনুসকে নিয়ে নতুন এক দেশ গড়ার দিবাস্বপ্ন দেখছেন।

অবশ্য ইউনুসতো ‘রিসেট বাটন’ চিপে মুক্তিযুদ্ধসহ এ সংক্রান্ত সব অবদানকে অস্বীকার করতে চাইছেন অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এই বঙ্গীয় দেশে কোন কিছুই যে এত সোজা নয় তা বোধ হয় বুঝতে এখনো বাকি রয়ে গেছে তাদের।

কথিত জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের পর এই সনদ বাস্তবায়নে সুপারিশ গত ২৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয় ঐকমত্য কমিশন।

এর পর থেকে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো এই সনদে সই করেনি, কবে করবে তারও ঠিক নেই।

ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে ওই যে মার্কিন নাগরিক আলী রিয়াজ সংবিধান সংস্কার আদেশের যে খসড়া জমা দিয়েছেন সেখানে ২৭০ দিনের মধ্যে প্রস্তাব পাসের কথা বলা হয়েছে।

বিকল্প সুপারিশে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে তা সংসদ তথা সংবিধান সংস্কার পরিষদ পাশ না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে। — আচ্ছা কোথায় সংসদ কোথায় কি? এমন গাঁজাখুড়ি কথা কেউ কখনো শুনেছেন যে ২৭০ দিনের মধ্যে মানে ৯ মাসের মধ্যে পাশ না করলেও নাকি অটোপাশ হয়ে যাবে?

এটি কি কথিত জুলাই অভ্যুত্থানের পর কতিপয় পরীক্ষার্থীর( এস এস সি) অন্যায়-অযৌক্তিক মব সন্ত্রাসের ফলে অটোপাশের মত?

এই অধ্যাপক আলী রিয়াজ নাকি একসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি মার্কিন মুল্লুকে গিয়ে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিভাগের কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেছেন-“ ভাগ্যিস এই মহাজ্ঞানী শিক্ষকের ক্লাশ করতে হয়নি আমাদের !”

সংবিধানে কিছু জঞ্জাল নাকি অটো ঢুকে যাবে এবং তা সংবিধান হিসেবেই নাকি গণ্য হতে থাকবে। চূড়ান্ত অরাজকতার আর কিছু বাকী রেখেছেন এই দুই অপ-অধ্যাপক ?

জুলাই সনদে সাক্ষর, সনদ বাস্তবায়ন আর আগামী ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন নির্বাচন (আদৌ তা হবে কিনা তা নিয়ে প্রচন্ড ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা রজার খলিলের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে জানানো হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে বির্বিঘ্নে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।

কিন্তু রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে নানামুখী দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের শেষ নেই। তবে দেশের সাধারন নাগরিক যারা কিছুটা হলেও বোঝেন বাংলাদেশের রাজনীতি তাদের মতে- আরে ভাই কোত্থেকে হবে নির্বাচন ?

নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য ইউনুসের এজেন্টরাইতো নানাভাবে বিভিন্ন দলের মধ্যে ঢুকে একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে , এক নেতা আরেক নেতার বিরুদ্ধে গালিগালাজ করছে, হুমকি দিচ্ছে নানাভাবে। এসব বোঝার জন্য কি ভাই রাজনীতি বিশারদ হইতে হয়? সত্যিই বোধ হয় তাই।

কারণ গত চব্বিশের ৫ আগষ্টের পর থেকে যে প্রতারণা-ঠকবাজি-মব সন্ত্রাসের রাজনীতি চলছে তা দেখে ও এদের নির্যাতনে এদেশের সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে এদের চরিত্র।

কথিত জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে একসময়ে চরম গলাগলি করা রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মধ্যে যে এখন গলাগলি’র জায়গা যে গালাগালি’তে উন্নীত হয়েছে তা অল্প কযেকটি উক্তি দেখলেই বোঝা যায়।

গত ১ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ‘আজমতে সাহাবা’ শীর্ষক মহাসম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “রাজনীতির সঙ্গে একটি দল ইসলামকে ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করতে চায়।

জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে বলা এই বক্তব্যে তিনি বলেন, তাদেরকে অপরাজনৈতিক সংস্কৃতি বিলুপ্ত করতে সঠিক পথে রাজনীতি করতে হবে। এর ফলে দেশ থেকে অপরাজনীতি বিদায় হবে। এই রাজনৈতিক দলটি নির্বাচন ও রাজনীতির সঙ্গে ইসলামকে ব্যবহার করে জাতির মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে চায়। তারা ইসলামের ক্ষতি করতে চায়।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আমরা ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। আমরা মদিনার ইসলামের চর্চা করি। আমরা মদিনার ইসলামে বিশ্বাস করি। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে ইসলামের প্রবর্তন করে গেছেন, সেই ইসলামের অনুসারী আমরা। এখানে আমরা মওদুদী ইসলামের অনুসারী তো নয়। সুতরাং যারা ফিতনা তৈরি করে দেশের মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের কাছ থেকে আমাদেরকে সাবধান হতে হবে।”

বিএনপি’র সাবেক সাংসদ ও মিডিয়া তার্কিক বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সমালোচনা করে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি নির্বাচন চায় না।

তারা চায় যেই সরকার আছে ( ইউনুসীয় সরকারকে উদ্দেশ্য করে) সেই সরকারই চলুক। সরকারের সঙ্গে থেকে তারা যত সুযোগ সুবিধা আছে তা নিতে চায়। গত ৩১ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার জয়ধরকান্দি ও তেলিকান্দি এলাকায় পৃথক তিনটি সমাবেশে জামায়াত ও এনসিপিকে নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন তিনি।

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে যেন নির্বাচন না হয় সেই চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপি ছাড়া অন্য দলগুলো নির্বাচন পেছাতে চায় তাদের লাভে। কিন্তু আপনারা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে পা দিবেন না। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন না হয় সেটা আমরা মেনে নেব না।

রুমিন ফারহানা এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে এমনও বলেছেন, ‘ ১৫-২০ বছরের পোলাপান এসে বলে তারা নাকি সব করেছে। তোমরা পোলাপান শুক্কুরে শুক্কুরে ২০ দিন তোমাদের বয়স হইছে। তোমাদের সাবালক হওয়ার বয়স যত আমাদের নেতাকর্মীদের জেল খাটার সময় এর সমান। তোমরা এগিয়ে যাও ঠিক আছে। কিন্তু বাবার চেয়ে এগিয়ে যাবে না।’

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ আরেককাঠি বাড়িয়ে বললেন- ‘আমাদের জুলাই সনদের প্রয়োজন নেই। একটি সংসদ প্রয়োজন, যারা গণতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করবে।’

তিনি গত ১ নভেম্বর রাজধানীর প্রেস ক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনা এমন ঘোষনা দিয়ে জুলাই সনদ নিয়ে বললেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, তা নিয়ে হওয়ার কথা ছিল সনদ। আমরা ডিসেন্ট দেখতে চাই না। সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা সনদ সম্পন্ন করবেন। এখন প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন।

অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে মেজর হাফিজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদেরকে এই সরকার ভুলিয়ে দিতে চায়। তিনি বলেন, এই সরকার কোথাও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা চলছে। অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ সংগ্রামের সঙ্গে অন্য কোনো আন্দোলনের তুলনা হয় না। এই দেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তা ভুলে গেলে চলবেনা।”

বিএনপির আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, দুই থেকে তিনটি দলের মতামত জোর করে বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ষড়যন্ত্র পরিহার করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে।’ গত শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত বিভাগীয় ব্যবসায়ী সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়, বিলম্বিত করতে চায়, প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, “ঐকমত্য হয়েছে, সই হয়েছে, এর বাইরে গিয়ে এখন নতুন নতুন দাবি নিয়ে আসছে। ঐকমত্য কমিশনের নিজস্ব মতামত আছে।

তাদের মতামত দেয়ার জন্য রাখা হয়নি। ঐকমত্য কমিশনে যারা আছেন, তারা নিজ নিজ কাজে ফিরে যান। জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন”।

এদিকে বিএনপি, এনসিপি ও ইউনুস সরকারেরও সমালোচনা থেকে পিছিয়ে নেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি যে পরিস্থিতি তৈরি করছে, তা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিএনপির তৈরি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উত্তাপ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। গত ১ নভেম্বর বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এসব মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

এই সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অতীতেও একটি বিশেষ দলের প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, বলে জামায়াতের এই নায়েবে আমির দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন গিয়ে একটি অসম এবং অবৈধ চুক্তি ও একটি দলের চাপে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। সর্বশেষ উপদেষ্টা পরিষদে গৃহীত একটি দাবির (রাজনৈতিক দলের মার্কা ব্যবহার) সঙ্গে অন্য একটি দল দ্বিমত পোষণ করায় আবার সেটাকে পুনর্বিবেচনার নামে সেই দলটির প্রতি সরকার আনুগত্য প্রকাশ করেছে। এতে নিঃসন্দেহে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হয়েছে।’

গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত যখন পরস্পরবিরোধী অবস্থানে, তখন তাদের মধ্যে গোপন সমঝোতার কথা বললেন টোকাই জঙ্গীদের সংগঠন এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপি নোট অব ডিসেন্টের জায়গা থেকে সরে আসবে, আর জামায়াত হয়তো নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি থেকে সরে আসবে। এ ধরনের একটি ইনার টেবিলে বোঝাপড়ার খবর আমরা শুনতে পাচ্ছি।’

গত শনিবার ( ১ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডে বিএমএ ভবনে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, এখন বড় দুটি দলের মধ্যে জুলাই সনদ একটা ভোটের জন্য দর-কষাকষির সনদ হয়ে গেছে। এনসিপি অবস্থান নিয়েছে, ভোটের দর-কষাকষিতে জুলাই সনদকে রাখবে না। কারণ, তাহলে এই সনদ বাস্তবায়ন হবে না।

ইউনুসীয় সরকার গংয়ের রোষানলে পড়া জাতীয় পার্টি রয়েছে বেকায়দায়। তারপরও তাদের কোন কোন নেতা সরকার ও বিভিন্ন দলের সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না। জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী গত ১ নভেম্বর বিকেলে রংপুর নগরীর জাতীয় পার্টি সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে কর্মী সভা শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো মূলত জামায়াত, বিএনপি ও এনসিপির প্রভাবময়। এই ধরনের কাঠামোর মধ্যে কোনো নির্বাচন কার্যকরভাবে করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, ‘দেশকে বাঁচাতে গেলে ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে।

‎জাপা মহাসচিব বলেন, গত ১ বছরে ১৪০ জন মবের কারণে মারা গেছে; অর্থনৈতিক সংকট ও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রশাসনিক ছক আঁকা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়।

এমনতরো রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনৈক্যের মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সরকার অনড় থাকবে। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধ্যাদেশের খসড়ায় আবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সদ্য অনুমোদন দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া আবারও সংশোধন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জোটগতভাবে নির্বাচন করলে নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না।

অর্থাৎ কোনো প্রার্থী চাইলে নিজ দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন, অথবা জোটের কোনো দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন।

কথিত জুলাই সনদের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে।

বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।

# নুরুল ইসলাম আনসারি, লেখক, প্রাবন্ধিক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *