বাংলাদেশে শারদীয়া দুর্গাপূজা আসছে তা বোঝার জন্য কোন দিনপঞ্জি বা পঞ্জিকার প্রয়োজন পড়েনা। কারণ দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর, মন্ডপে হামলা, হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা হলেই – এ দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বুঝতে পারেন দুর্গা পূজা সমাগত।

আগে যেমন শরতে কাশফুল ফুটলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বুঝতে পারতেন যে শারদীয়া দুর্গাপূজা আসছে। কিন্তু গত প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী বা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বুঝতে পারেন দুর্গাপ্রতিমা ভাংচুর-মন্দিরে হামলা ও হিন্দুদের ওপর হামলা দেখে।

এটিই এই স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য যেন বাৎসরিক পঞ্জি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বলতেও খারাপ লাগে। কিন্তু একজন ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের নাগরিক হিসেবে করজোড়ে ক্ষমা চাইছি আমার হিন্দু ভাই-বোনদের কাছে।

একটু বলে রাখা ভালো এই দেশে একজন মুসলমানের মরদেহ নৃশংস-উন্মত্ততায় কবর থেকে তুলে তার চরম অপমান করতে পারে একদল ইসলাম ধর্মাবলম্বী। শুধু কি তাই ? তার মরদেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করেছে একদল বকধার্মিক।

আর আমাদের নোবেল লরিয়েট ড. ইউনুসীয় সরকার এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। যেন নিন্দা জানানোটাই সরকারের মুখ্য কাজ। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নয়! এই হলো বাংলাদেশ ! যে দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তাহলে কি ইসলামে একজন মুসলমানের লাশ কবর থেকে তুলে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা জায়েজ ?

এই যে একজন মুসলমানের লাশ কিছু ধর্মান্ধ উগ্র মুসলমান পুড়িয়েছে চরম উন্মাদনায় তার কিয়দংশ যদি কোন হিন্দু বা অন্য ধর্মের নাগরিক করতো তাহলো এতক্ষণে পুরো বাংলাদেশের হিন্দুদের ঘরবাড়ি এরই মধ্যে শ্মশানে পরিণত হয়ে যেতো।

এরমধ্যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে নাকি ‘ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী’ দুই জনকে শনাক্ত করতে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে । তাহলে এর পেছনে কোন না কোনভাবে হিন্দুদের জড়িত থাকার ব্যাপারে হয়তো অচিরেই তথ্য বের হবে।

এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ৫৭৬টি পূজামণ্ডপ বসবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, সারা দেশের পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা দিতে তিন লাখ আনসার থাকবে। কিছু কিছু পূজামণ্ডপে পুলিশও থাকবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো- পূজা মন্ডপে পুলিশ বা আনসার দিতে হবে কেন ? ঈদের সময় বা কোরবানীর সময় কি আনসার বা পুলিশ দিয়ে পাহারা বসিয়ে সেসব ধর্মীয় উৎসব পালন করি আমরা এ দেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ? তেমনতো দেখিনি কখনো। তাহলে হিন্দুদের পুজার সময় পুলিশ বা আনসার পাহারা কেন থাকতে হবে ? হামলা এ পর্যন্ত কারা করেছে ?

হিন্দুরা নিজেরা নিজেরাতো করেনি যতদূর জানি স্বাধীনতার পর থেকে। তাহলে কারা করে ? নিশ্চয়ই হামলাকারিরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী না। স্বাভাবিকভাবেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তো আমাদের দেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সুড়সুড়ি এত বেশি কেনো সেটাও একটু জানা দরকার।

আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিনে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে আগে থেকেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সেখানে কোরআন শরীফ রেখে, কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি মন্দির ভাংচুর ও হিন্দুদের ওপর হামলা করা হয়েছিল।

কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সে সময় পুলিশ অফিসাররা জানিয়েছিলেন, ‘৯৯৯ এ ফোন করা ইকবাল সারারাত পূজামণ্ডপের আশেপাশে অবস্থান করেছে এবং ইকবালকে পূর্ব নানুয়ার পাড়ে গদা নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।’ পরে অবশ্য এই ইকবালকে ‘ মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ’ হিসেবে উপস্থাপন করে ‘ ইসলাম রক্ষা’র একটি অপ-প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে প্রশাসনের মধ্য থেকে।

অপরদিকে ২০২৩ সালে কুমিল্লা এলাকার আওয়ামীলীগ দলীয় সাংসদ একে এম বাহাউদ্দিন দুর্গাপূজা নিয়ে চরম আপত্তিজনক মন্তব্য করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সভায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে মদমুক্ত পূজা উদযাপন করতে বলে হিন্দু ধর্মকে কটুক্তি করেন কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

এ সময় পূজা চলাকালে মদ খেয়ে মণ্ডপে নাচানাচি না করে মাদকমুক্ত পূজা আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে এমপি বাহার বলেন, ‘পূজা চলাকালে মদ খেয়ে নাচানাচি বন্ধ করতে হবে। সারারাত নাচানাচি করে সকালে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। আসুন কুমিল্লা থেকেই শুরু হোক মাদকমুক্ত পূজা আয়োজন। মণ্ডপে লিখে দেবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’। মদমুক্ত পূজা করলে পূজার সংখ্যা কমবে, কুমিল্লায় এত মণ্ডপ হবে না।’

এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের এই হিন্দু ধর্মকে কটুক্তি করা বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে যুব ঐক্য পরিষদ, ছাত্র ঐক্য পরিষদ এবং জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সেবছরই ১৩ অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। কিন্তু নগরীর কান্দিরপাড়, নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় মিছিলে ওই সাংসদ বাহাউদ্দিনের ক্যাডাররা হামলা করে হিন্দুদের মিছিলে।

এতে আদিত্য দাস, সুনীল দাস ও তন্ময় দাস নামে যুব ঐক্য পরিষদ ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের তিন নেতা আহত হন। এই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিধারী আওয়ামীলীগের একজন সাংসদের অবস্থান ! অবশ্য এই সাংসদ নাকি গতবছর ৫ আগষ্টের পর পালিয়ে কলকাতায় গেছেন। সেখানে তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী মমতাজির ছত্রচ্ছায়ায় নাকি বহাল তবিয়তে আছেন।

এদিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর সোমবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে: জে: মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ( অব:) দুর্গাপুজা নিয়ে চরম অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সমাজের বিভিন্ন স্থানেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

তিনি মিটিংয়ে বলেন, এবার পূজামণ্ডপের আশপাশে মেলা বসতে দেওয়া হবে না। পূজামণ্ডপের পাশে মেলা বসলে সেখানে গাঁজার আড্ডা বসে, মদের আড্ডা বসে। এবার কোনোভাবেই মেলা বসতে দেওয়া হবে না। তবে দু-একটা দোকান থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পূজা উদযাপন কমিটির অনুমতি নিয়ে দোকান স্থাপন করতে হবে।

শারদীয় দুর্গাপূজার সঙ্গে ‘গাঁজা ও মদ’কে জড়িয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। অনতিবিলম্বে তাঁর এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা।

গত মঙ্গলবার ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গ

ণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ধর্ম অবমাননাকর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন হিন্দু সম্প্রদায়সহ তাবৎ ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন; অন্যদিকে নিজেকে একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন।’

শারদীয় দুর্গাপূজাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের সব ধরনের ধর্মাচার ও ধর্মীয় অনুশীলনের সঙ্গে ‘গাঁজা বা মদ’ ইত্যাদির কোনো সম্পর্ক নেই বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন, মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতির সময় হামিন্দপুর গ্রামের কামারপাড়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দির চত্বরে পাঁচটি প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা এই সংকটের সর্বশেষ উদাহরণ। এই ঘটনায় দুর্গা, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশসহ পাঁচটি প্রতিমা ও বিভিন্ন সরঞ্জাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজউদ্দীন খন্দকার জানান, সোমবার গভীর রাত ১টার দিকে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় শিক্ষক দীপ্তি রানী জানান, এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

গত এক বছরে বাংলাদেশে ২ হাজারের বেশি মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ফরিদপুর, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় এই হামলাগুলো ঘটেছে।

উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
গত ৩০ জুলাই ফরিদপুরে খাসকান্দি সর্বজনীন কালী ও দুর্গা মন্দিরে কালীমূর্তির হাত, শিবের সাপের লেজসহ বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করা হয়। মন্দিরটি অরক্ষিত ছিল, এবং কোনো সিসিটিভি না থাকায় দোষীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়েছে।

গত ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মহামায়া মন্দিরে সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে মুখোশধারী এক যুবককে দেখা গেছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ২০০ বছরের পুরোনো মহাশ্মশান ও মন্দির উচ্ছেদের চেষ্টা এবং ভাঙচুরের প্রতিবাদে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মানববন্ধন করেছেন।

তারা অভিযোগ করেন, ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ মন্দির ভেঙে গরুর হাট নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। ১৩ অক্টোবর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ১৪টি পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুর হয়। মাত্র দুটি মামলা রেকর্ড হলেও অধিকাংশ অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। গত ২৮ জুন ঢাকার খিলক্ষেতে শ্রীশ্রী সর্বজনীন দুর্গা মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মানববন্ধন করে।

মার্কিন ডিপস্টেট ও জঙ্গী ইউনুসের ‘মেটিকুলাস ডিজাইনে’ এর অংশ হিসেবেই এসব ঘটছে এ বিষয়টি নিশ্চিত। গত বছর ৫ আগষ্টে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলাম ও ছাত্র শিবিরের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত এক বছরে প্রায় ১৫ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচশতাধিক নারী ও তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এই সহিংসতার পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জামায়াতে ইসলাম ও হিজবুত তাহরীরের মতো সংগঠনগুলো সরকারের প্রশ্রয়ে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও ধর্মীয় স্থানে হামলা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এই সংকটকে আরও গভীর করছে।”

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতারা অভিযোগ করেন- এই সরকার মুখে সম্প্রীতির কথা বললেও, বাস্তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। মন্দির ভাঙচুর ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করছে। সরকারকে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং দোষীদের বিচার করতে হবে।”

হিন্দু সম্প্রদায় ও বিশ্লেষকরা অভিযোগ করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। মৌলভীবাজারে ১৪টি মন্দিরে হামলার ঘটনায় মাত্র দুটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জে হামলার পর তদন্ত হলেও দোষীদের গ্রেপ্তারে অগ্রগতি নেই। ময়মনসিংহে মহাশ্মশান উচ্ছেদের চেষ্টা স্থানীয় প্রশাসনের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

হিন্দু ধর্মীয় নেতা বিজয় মিত্র শুভ বলেন, প্রশাসনকে আমরা বারবার অবহিত করেছি, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু ড. ইউনুসীয় সরকারের সময় নয় অতীতের সরকারগুলোর সময়েও তা ছিল। অঅগেও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তাদের ফায়দা লুটেছে সরকারী দল ও সরকারবিরোধী দলৈ থেকে, প্রমাসনের ভেতরে থেকে। বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িক শক্তি আরও উৎসাহিত হচ্ছে।”

সনাতন ধর্মাবলম্বী ও সংখ্যালঘু নেতারা দ্রুত তদন্ত, দোষীদের গ্রেপ্তার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, মন্দির ও মহাশ্মশানের মতো ঐতিহ্যবাহী স্থান সংরক্ষণ করা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। হিন্দু মহাজোটের সহসভাপতি নিউটন অধিকারী বলেন, এই সরকার সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। দেশে সব ধর্মের মানুষের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে হবে।”

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এই উত্থান দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য গভীর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, বাংলাদেশ আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রসঙ্গক্রমে ২০০১ এর বিএনপি-জাশায়াত জোট সরকারের সময়কার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি একটু উল্লেখ না করলেই নয়। ২০০১ এর ১ অক্টোবর নির্বাচনের পূর্বাপর যে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চালিয়েছিলেন বিএনপি-জামাত জোটের নেতাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে তা তো সারা বিশ্ব জানে। সে সময়কার ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাস নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকাতে যে হাজার হাজার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল তার কিছু অংশের সংকলন করেছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর ‘শেতপত্র : বাংলাদেশের সংখ্যালুঘ নির্যাতনের ১৫০০ দিন’ নামে ৩ খন্ডের বই বের হয়েছিল। তাতে একটু চোখ বুলালেই নিজেদের ‘মহান কুকীর্তি’ দেখতে পাবেন মাননীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তাদের অন্ধ অনুসারিরা।

কিন্তু বিএনপি-জামায়াত তখন তারস্বরে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে ফেলেছিলেন যে কিছুই হয়নি। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন তার পক্ষে বলতে গিয়ে সেখানকারই নির্যাতিত এক হিন্দু মহিলাকে মঞ্চে তুলেছিলেন।

কিন্তু সেসময় বিএনপি’র কপাল খারাপ ছিল। সেই নির্যাতিতা হিন্দু মহিলা সব ভয়ভীতি আর প্রলোভন অস্বীকার করে তার উপর এবং অন্যদের উপর কি বিভৎস নির্যাতন চালিয়েছিল বিএনপি-জামাত সমর্থিত ক্যাডাররা তার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। যে সহিংসতা ঘটেছে ও ঘটছে প্রতিনিয়ত তা অবশ্যই কঠোর হস্তে দমন করার দায়িত্ব সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

# রাকীব হুসেইন, প্রাবন্ধিক, লেখক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *