হেই দিল্লী না ঢাকা ! ঢাকা ঢাকা । “ভারত যাদের মামার বাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি … দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা … ভারতের আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ … ভারতীয় পণ্য – বর্জন বর্জন।
‘ভারতের আগ্রাসন, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ভারতের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আমার দেশ ডুবলো কেনো, সরকারের কাছে জবাব চাই’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়তে হবে ভারত ভক্তি’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’। ইত্যাদি শ্লোগানে কেঁপেছিল বাংলাদেশ।
সেটি গত ২০-২৪ এর জুলাই-আগষ্ট থেকে ২০২৫ এর প্রথম ৪/৫ মাস ছিল। তারপর থেকে কেন জানি মিইয়ে গেছে। এখনতো আর সেই স্লোগানও শোনা যায় না, রাজপথও কাঁপেনা।
এর সবই করেছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামাত-শিবির-হিযবুত-হেফাজতসহ আরো কয়েকটি চরম উগ্রবাদী দলের নেতাকর্মীরা।
সেই সাথে বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলন ( বৈছাআ) এর সে সময়কার তেজী নেতা ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ্। এই হাসনাত পরবর্তীতে এই বৈছাআ’র রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি’রও খুব প্রভাবশালী নেতা বনে যান। শুধু নেতাই নয়। গতবছর সে তো রীতিমতো ভারতের ‘ চিকেন নেক’ নিয়েও বেশ গরম গরম কথা বলেছিলেন।
ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে এমনটাই বলেছিলেন যে, আপনারা ‘চিকেন নেক’ সম্পর্কে ভুলে যাবেননা, ওটা যে কোন সময় দখল করে ফেলবো, ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু এমন কি ঘটলো যে, হঠাৎ করে ভারত বিরোধী ও প্রচন্ড পাকিপ্রেমী ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকার ভারতের নেতৃত্বের কাছে উপহার হিসেবে আম পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণ ইলিশমাছ না পেলেও আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রায় ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ পাঠালো বাংলাদেশ।
অবশ্য ইলিশ পাঠিয়েছেন টাকার বিনিময়েই। এটি ছিল বাণিজ্য। মাঝখানে কয়েকদিন ভারত থেকে আর চাল-পেঁয়াজ বা অন্য কিছু আমদানী না করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে এবং রাজনৈতিক মহল থেকেও।
কিন্তু প্রতিবেশী ভারত থেকে বিশেষ করে খাদ্যপণ্য না আনলে দেশে অনেক বড় সংকট তৈরী হবে বাজারে। যার বেশি প্রভাব পড়বে সাধারণ জনগণের ওপর।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে- কি এমন যাদুবলে “ চরম শত্রু রাষ্ট্র ভারত” হঠাৎ আবার বন্ধু হতে শুরু করলো !
শুধু আম-ইলিশ নয় এবার কয়েকদিন আগেই ঢাকায় এনডিসি ( ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ)’র অনুষ্ঠানে বিশেষ মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশে দায়িত্বরত ভারতীয় হাইকমিমশনার প্রণয় ভার্মাকে।
তিনি সেখানে গিয়ে তো দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করাসহ নানা বিষয়ে কথা বলে এসেছেন।
যেখানে পাকিস্তানী মন্ত্রী, এমপি, সেনাপ্রধান, বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল, এমনকি পাকিস্তান থেকে হঠাৎ করে কন্টেইনার বোঝাই পণ্য বাংলাদেশে আসছে অহরহ। আর বলতে গেলে বাংলাদেশে অনেকটা নিজের দেশ ভেবে এখানেই দীর্ঘদিন থেকে অবস্থান করছেন পাকি বিভিন্ন সেনা অফিসারগণ।
অবশ্য আমরা কখনোই চাইনা প্রতিবেশি ভারত রাষ্ট্রটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে থাকুক। বরং উভয় দেশই নিজ নিজ সম্মানজনক অবস্থান বজায় রেখে সৎ প্রতিবেশী হিসেবে আচরণ করতে পারে। তবে গত জুলাই-আগষ্ট থেকে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ( যেহেতু তিনি পদত্যাগ করেননি) ‘র ভারতে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে একটি প্রবল ভারতবিরোধী পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।
গতবছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ভারতের আসাম-ত্রিপুরার প্রবল বন্যা এবং সেই সাথে বাংলাদেশের স্মরণকালে বন্যায় ফেনী ও এর আশপাশের বিশাল জনপদ তলিয়ে যায় পানিতে।
তখনতো এই প্রাকৃতিক বৃষ্টি-বন্যার জন্য ভারতকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালিগালাজ করেছে উপরে বর্ণিত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। এমনকি বাংলাদেশের সীমান্ত জুড়ে বিভিন্ন নদীর ভাটিতে সুউচ্চ বাঁধ দিয়ে সেই বন্যার পানিতে ভারতকে ভাসিয়ে দেয়ারও নানা কল্পকাহিনী শোনা গেছিল।
তখনকার বৈছাআ’র আরেক প্রভাবশালী নেতা সারজিস আলমসহ আরো কয়েকজন নেতা আখাউড়া সীমান্ত পার হয়ে ত্রিপুরাতে গিয়ে প্রতিবাদ এমনকি দখল করারও হুমকি দিয়েছিল।
তারা সড়কপথে গাড়ির বহর নিয়ে সীমান্তের কাছাকাছি অংশে গিয়েও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। শুধু পারেনি সীমান্ত পার হয়ে ত্রিপুরাটি দখল (!) করে নিতে ।
এমনও হয়েছে যে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে প্রবেশপথে ভারতীয় পতাকা এঁকে তা পা দিয়ে মারিয়ে যেতে বাধ্য করেছে শিক্ষার্থীদেরকে।
এমনকি বিভিন্ন স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনেও তীব্র ভারত বিদ্বেষ ও হিন্দু বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে চরমভাবে অপমান-টিটকারি-হয়রানী-চাকরিচ্যুত-কান ধরে ওঠবস করানোসহ নানাভাবে অপমান করা হয়েছে। এমনভাবে আচার-আচরণ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতের নাগরিক এবং তারাই এসব পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোষ্ট ২৭ নভেম্বর ‘ ২০২৪ এর একটি সংবাদে দেখা গেছে- ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত একটি সমাবেশে ভারত বিরোধী প্ল্যাকার্ড আর শ্লোগান ছিল তীব্রভাবে।
চট্টগ্রামে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জন্য শোকসভা এবং সম্প্রীতি সমাবেশ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই সমাবেশের প্ল্যাকার্ডের স্লোগানে ভারত বিরোধিতা ফুটে উঠেছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল পৌনে তিনটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
এতে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন।
এ সময় সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার বিচারের দাবিতে উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়। তাদের হাতে বেশ কয়েকটি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
এতে শ্লোগান হিসেবে লেখা রয়েছে— ভারতের সাথে নতজানু পররাষ্ট্র নীতি আলিফ হত্যার জন্য দায়ী, ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে, শান্ত থাকার স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতারণা, ছাত্রজনতা মানে না মানবে না, ক্ষমতা না জনতা? ক্ষমতা না একতা?
ভারত নয় বিধাতা, জনতার একতা, ভারত যাদের ঠিকানা এ দেশ তাদের চাই না, শান্ত থাকার নাই গতি চুপ থাকা তো ভারত ভীতি এবং খুনি হাসিনার রাজনীতি ভারতের সাথে সম্প্রীতি।
শুধু প্ল্যাকার্ড নয়, শ্লোগানেও ভারত বিরোধিতা ফুটে উঠেছে।চট্টগ্রাম আদালত পাহাড়ের পাদদেশ থেকেও প্রায় ৫০০ মিটার দূরে উগ্র ইসলামপন্থীরা সাধু চিন্ময় দাসের অনুসারিদের ওপর হামলা চালালে সেখানে সংঘাতের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গিয়েছে যে, অ্যাডভোকেট আলিফ একসময়ে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এবং তিনি তার অন্য সহযোগীদের নিয়ে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে হিন্দুদের ধাওয়া ও হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এসময় উভয় পক্ষেই হামলা-পাল্টা হামলা ঘটেছিল।
তার মধ্যে পড়েই অ্যাডভোকেট আলিফ গুরুতর আহত হয়েছেন। এক ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, আলিফ অন্যদের সহায়তায় হেঁটে সিএনজি অটোরিক্সায় উঠেছেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু পথিমধ্যে এমন কি ঘটলো যে হাসপাতালে যেতে প্রায় ঘন্টা দুয়েক সময় লেগেছিল এবং হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার এই মৃত্যুটি প্রচন্ড রহস্যে ঘেরা।
আগে থেকে পরিকল্পিত ডিজাইনের অধীনে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে কিনা সেটিই প্রশ্ন। ইউনুস সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজন ছিল একটি লাশ। সে কাজটি তারা জামাত-শিবির-বিএনপি’র মাধ্যমে করিয়ে নিয়েছে।
আর তাতে ‘ শিকার’ হয়েছে অ্যাডভোকেট আলিফ। সেই আরিফ হত্যাকান্ডকে “ ইস্যু’ তৈরী করে চরম সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হিন্দুদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা, হিন্দু আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা-হামলা-নানাভাবে হয়রানি শুরু করে।
মূলত আদালতে বিচারতো দূরের কথা বেশ কয়েকমাস এসব আইনজীবীরা আদালতেই যেতে পারেননি। আর তখনও চরম ভারত বিরোধীতা ছড়ানো হয়। ছড়ানো হয় হিন্দু বিদ্বেষ।
শুধু যে বৈছাআ বা এনসিপি বা জামায়াত-বিএনপি ভারতের বিরোধিতা বা প্রচন্ডভাবে সমালোচনা করেছে তা কিন্তু নয়। গত চব্বিশের ৮ আগষ্ট বিদেশ থেকে উড়ে এসে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই শান্তিতে নোবেল পাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভারতের বিরুদ্ধে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য নিয়ে নানা ধরনের উষ্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন।
শুধু তিনিই নন, তার উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যরা ও তার প্রেস সচিব সফিকুল আলম ( ডাষ্টবিন সফিক) আরো কয়েকধাপ এগিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিতে থাকেন।
বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ বছরের ২৮শে মার্চ তার প্রথম চীন সফরের সময় ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ বা উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে নিয়ে যে তীব্র অসৌজন্যমূলক-অকূটনীতিসুলভ মন্তব্য করেছিলেন, তার রেশ এখনো যায়নি।
বেইজিং সফরকালে সামাজিক বাণিজ্যের অন্যতম প্রবক্তা প্রফেসর ড. ইউনুস মন্তব্য করেন– ভারতের সেভেন সিস্টার্স ‘ল্যান্ডলকড’ বা স্থলবেষ্টিত একটি অঞ্চল এবং ওই অঞ্চলে ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ বাংলাদেশ – চীন যেটাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রসারের কথা ভাবতে পারে।
তবে ভারত বা ভারতের কোনও অংশই যে ‘স্থলবেষ্টিত’ নয়, তা বোঝাতে বিমসটেকের প্ল্যাটফর্ম থেকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এ বছর ৩ এপ্রিল বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে লম্বা উপকূলরেখা কিন্তু ভারতেরই।
এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরেও উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘অ্যাকসেসে’র পথ প্রশস্ত হতে চলেছে বলে তিনি দাবি করেছেন। মি. জয়শঙ্করের এই মন্তব্য যে অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতেই, তাতে কোনও সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই।
এ ব্যাপারে তখন তীব্র প্রতিক্রিয়া ছিল ভারতের। দিল্লিতে সাউথ ব্লকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “একটা কথা ফ্যাকচুয়ালি কারেক্ট হলেই যে ডিপ্লোম্যাটিক্যালি কারেক্ট হবে, তার কোনও মানে নেই। অধ্যাপক ইউনূস যে কারণেই ওই মন্তব্য করে থাকুন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা যে তার একটা ‘সেমসাইড গোল’, তাতে আমাদের অন্তত কোনও সন্দেহ নেই।”
গত চব্বিশের বন্যার পরে ডিসেম্বরের দিকে বাংলাদেশে অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর অফিসারদের সংগঠন “ রাওয়া ”র কয়েকজন নেতা এই বলৈ হুমকি দিয়েছিলেন যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতা দখল করতে মাত্র ৪দিন সময় লাগবে বাংলাদেশের।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে দেখা যায় সেখানে বাংলাদেশের সাবেক এক সেনা অফিসার হুমকি দিয়ে বলছেন-কলকাতা দখল করতে আমাদের ৪দিন লাগবে।
সে সংবাদটিতে বলা হয়েছে-রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবের সামনে ‘জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদ’–এর ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। পরে কর্মসূচিতে বক্তারা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন।
ভারতের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের মিছিল থেকে প্রাক্তন সেনাবাহিনীর মেজর (অবঃ) শরীফ বলেন, আমি মেজর শরীফ । আমি ভারতকে বলে দিতে চাই , যে যুদ্ধ আমরা করছি , আমরা শুধু দুই লক্ষ সৈনিক না আমাদের সাথে ১৮ কোটি জনগণ আছে। আমাদের ট্রেনিং আমাদের দক্ষতা ভারতের চেয়ে অনেক বেশি।আমাদের সাথে যদি ভারত যুদ্ধ করে আমরাও চার দিনের মধ্যে কলকাতা দখল করে নিব।
পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শক্তি সম্পর্কে বলতে সমাবেশে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান বলেন, ‘মোদিজি (নরেন্দ্র মোদি), অমিতজি (অমিত শাহ) এবং রাজনাথজি (রাজনাথ সিং)—আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যেটা দেখেছেন, সেটি বাহাত্তর সালের। সেই সেনাবাহিনী এখন আর নাই।
আমরা এখন যেকোনো শত্রু মোকাবিলায় প্রস্তুত। আপনারা আর আস্ফালন তুলবেন না, ভয় দেখাবেন না। আপনাদের সীমান্তেই রুখে দিতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ১৭ কোটি জনতা আছে।
এ বছরই মে মাসের দিকে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী(বিজিবি) ‘র সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এএলএম ফজলুর রহমান এক ফেসবুক পোস্টে ফজলুর রহমান বলেন, “ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করলে বাংলাদেশের উচিত হবে উত্তর পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য দখল করে নেওয়া। এ ব্যাপারে চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করি।”
প্রসঙ্গত এই সাবেক সামরিক অফিসার ও বিজিবি প্রধান ফজলুর রহমান কিন্তু ইউনুস সরকার গঠিত বিডিআর কমিশনের প্রধান। এমন ব্যক্তিই এখন নানা বিতর্কিত মন্তব্য করছেন যাতে করে দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
তবে তার এই মন্তব্যে পরে বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ইউএনবি’র বরাত দিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনে গত ২ মে’২০২৫ এ প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, বিডিআর কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এএলএম ফজলুর রহমান তার ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে যে মন্তব্য করেছেন, তা একান্তই তার ব্যক্তিগত বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (২ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই মন্তব্যের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই মন্তব্য বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বা নীতির প্রতিফলন নয়। সরকার কোনোভাবেই এ ধরনের বক্তব্য সমর্থন করে না বা এর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে না।
এছাড়া মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এএলএম ফজলুর রহমানের ব্যক্তিগত মন্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে সম্পৃক্ত করা থেকে বিরত থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ সব দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, পারস্পরিক সম্মান ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এমন সব পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৩ জানুয়ারি বাংলা ট্রিবিউন এর এক সংবাদে তাদের দিল্লি প্রতিনিধির বরাতে বলা হয়েছে–‘সম্পর্ক’ স্বাভাবিক হবে ঢাকায় নির্বাচিত সরকার এলে, জানালেন ভারতের সেনাপ্রধান।
বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যে স্বাভাবিক হবে না, তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। দুই দেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক এখন ‘নিখুঁত’ আছে, এ কথা জানানোর পাশাপাশি তিনি যোগ করেন—দুই দেশের সম্পর্ক তখনই স্বাভাবিক হবে, যখন একটি (মানুষের ভোটে) ‘নির্বাচিত সরকার’ বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে।
‘যদি আপনারা দুই দেশের সম্পর্কের কথা বলেন, সেটা ওখানে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সম্ভব নয়। তবে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক একদম ঠিক আছে, সব দারুণভাবে চলছে’, মন্তব্য করেন ভারতীয় সেনাপ্রধান।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দিল্লিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল দ্বিবেদী সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।
সবকিছু মিলিয়ে সেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় ১৯৭১ থেকে ভারত বাংলাদেশকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে গেলেও বাংলাদেশে একধরনের ভারতবিরোধিতা ও হিন্দু বিরোধিতা রয়েই গেছে। তবে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটুক সেটি যেকোন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিকের কাম্য।
# ইশরাত জাহান, লেখিকা, প্রাবন্ধিক ও নারী সংগঠক।