আর কত এই ইন্টেরিম ইউনুস সরকার নিয়ে লিখবো বলুন-এ চিন্তা থেকে সরে এসে মনে করেছিলাম আজ অন্য বিষয়ে লিখবো। কিন্তু আমি সরতে চাইলেও কোনভাবেই এই মহামান্য নোবেল বিজয়ী সরতে দিচ্ছেন না। তিনি তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরতেই দিচ্ছেন না কোনভাবে।
তিনি প্রচণ্ড রকমের প্রচারমুখী একজন মানুষ। ফলে নানাভাবেই তিনি আলোচনায় থাকছেন। গত বছর ৮ আগষ্ট তিনি জঙ্গী টোকাইদের দ্বারা ইন্টেরিম সরকার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই নেমে পড়েছেন প্রচারণায়।
হয়তো তিনি ও তার সহযোগীরা মনে করছেন তারা যেসব কর্মকাণ্ড করছেন তাতে দেশবাসী ও বিশ্ববাসী বেশ তারিফ করবেন। কিন্তু আসলে তা হয়ে যাচ্ছে বিপরীত।
গত প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও কোনভাবেই এই ইউনুস সরকার ও তার চেলাচামুন্ডারা জনগণের আস্থা অর্জন দূরে থাক উল্টো সারা দেশেই ইউনুস সরকার ও তার টোকাই জঙ্গী দল এনসিপির বিরুদ্ধে খেপেছে সাধারণ মানুষ।
এমনকি গত বছর জুলাই-আগষ্টে যেসব লালবদর আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনাবিরোধীতায় ছিলেন একেবারে মারকাট্টা তাদেরও অধিকাংশকেই এখন আফসোস করতে দেখা যাচ্ছে।
এই আফসোসকারিরা যে শেখ হাসিনার পক্ষে বা আওয়ামীলীগের পক্ষের লোক তা কিন্তু নয়, এরা এখনো বিপক্ষে। কিন্তু তাদের এই ইউনুসগং সমালোচনা-আক্ষেপ-আফসোস কিন্তু প্রকারান্তে সেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের পক্ষেই যাচ্ছে। অল্প কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দিলেই বোঝা যায় বিষয়গুলো।
★ এত নিষ্পাপ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতেও হাসি ইউনুসের।
গত ২১ জুলাই দুপুরে মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে অধিকাংশ শিশুসহ অসংখ্য মানুষের মৃত্যুতে সারাদেশের বিবেকবান মানুষ শোকাহত।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়েছে এ ঘটনা। বিভৎসভাবে পুড়ে যাওয়া শিশুরা প্রাণ বাঁচাতে জ্বলন্ত শরীরে ছুটছে। অভিভাবকরা দিগ্বিদিক ছুটছেন তাদের কলিজার টুকরোগুলো খুঁজতে। মানুষ পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। হাসপাতালগুলোতে কচি বাচ্চাগুলোর মরণ চিৎকার। পাগলপ্রায় বাবা-মা পড়ে কয়লার স্তুপে তার সন্তানের দেহ খুঁজছে।
কিন্তু আমরা অবাক- বিস্ময়ে দেখলাম নির্লজ্জতার সব সীমা অতিক্রম করে এ নির্মম ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইউনুস তার সরকারের ‘স্টেকহোল্ডার’ চারটি দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন।
বৈঠকে তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ, জ্যুসপানের দৃশ্য, হাসিমুখে ফটোসেশন দেখে জাতি আরও একবার স্তম্ভিত। তার পরদিনও তিনি আরও ১৩টি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। শোনা যায় ইন্টেরিম প্রধানকে তার অধিনস্তরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি যাননি। কেন যাননি তিনি? নিশ্চয়ই জনরোষের ভয়ে।
অথবা আর্থিক ও ক্ষমতার লোভনীয় কোন কাজ ছাড়া এ ধরনের মানবিক কাজের কোন মূল্য নেই তার কাছে। নাহলে সরকার প্রধান হয়ে, শান্তিতে নোবেল বাগিয়ে নেয়া এই পাষণ্ড জঙ্গী ইউনুসের কি করে হৃদয় কাঁপেনা?
এমনটাও জানা গেলো শিক্ষার্থীদের মৃত্যু বিষয়টি তিনি ওই আলোচনার এজেন্ডাতেও রাখেননি।
তবে অবশ্য উপস্থিত নেতাদের কেউ কেউ নাকি “গোপালগঞ্জের সহিংসতায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা, স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু, সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের পুলিশের পিটুনি নিয়ে সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।”
জানা গেল ‘ এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে (প্রথম আলো, ২৩.০৭.২০২৫)।’
“এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে”। অর্থাৎ এটাই ইউনূসের প্রধান কনসার্ন। প্রশ্ন উঠবে-কেন?
কি এমন ঘটল যে অতগুলো শিশুর হৃদয়বিদারক মৃত্যুর ঘটনার চেয়ে বড়, কি সেই লক্ষণ? ‘লক্ষণ’ না বলে ‘ভীতি’ বা চরম আতংক বলা যেতে পারে।
★ নতুন করে ছাত্র বিক্ষোভ ইউনুসীয় শাসন- শোষণের বিরুদ্ধে।
মাইলস্টোনের মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতেদের সঠিক সংখ্যা, দায়ী ব্যক্তিদের বিচার, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিবের পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবীতে সচিবালয় ঘেরাও করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও শিক্ষা সচিবের অপসারণ দাবি করেছেন। যদিও নির্লজ্জ শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন তিনি পদত্যাগ করবেন না যতক্ষণ না তার নিয়োগকর্তা তা না করেন।
সেখানে শিক্ষার্থীরা এমন কথাও বলেছে – আগের সরকারই ভালো ছিল, আমরা তাঁকে হঠিয়ে ভুল করেছি, আমরাই তাঁকে ফিরিয়ে আনব.. ইত্যাদি।
এ ছাড়া আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, ডাস্টবিন শফিক ও তাদের বহরকে মাইলস্টোন ভবনে ৯ ঘন্টা আটকে রেখেছিল শিক্ষার্থীরা।
এমনও জানা গেছে আসিফ নজরুলের পিঠে জুতার আঘাতও পড়েছে সেদিন। সচিবালয় অবরোধ ও শিক্ষার্থীদেরকে ব্যাপক মারধর করেছে পীসকিপিং মিশনের সেনাবাহিনী ও জামাত- শিবির নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনী।
সেখানে আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী। পুলিশ ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় ১২০০ শিক্ষার্থীর নামে হত্যাপ্রচেষ্টাসহ নানা ধারায় মামলা দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষোভ নিয়ে বলেছে– ” কোথায় হাসনাত, কোথায় সারজিস, কোথায় আসিফ মাহমুদসহ সেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা? আমাদের ওপর এত নির্যাতন, মারধর হচ্ছে কই এসব নেতারাতো একবারও আসলেন না? তারা বলে নেতা? তারা যদি মনে করে থাকে যে তারা ছাড়া বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন হবেনা, তারা যদি মনে করে তারাই একমাত্র ছাত্রশক্তি তাহলে চরম ভুল করবে। আমরা প্রমাণ করেছি তারা সব ভুয়া, বেইমান, জাতীয় বেইমান- প্রতারক… ”
★ গত এক বছরে সরকার চালাতে চরমভাবে ব্যর্থ ইন্টেরিম পেছন ফিরে দেখতে পেলেন খুন-জখম. রাহাজানি, লুটপাট, চুরি-ডাকাতি, মবভায়োলেন্স, অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে লাখ লাখ বেকার বানানো, ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে গত বছর ৫ আগস্টের পর কয়েকশ’ মানুষ হত্যা করে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষকে কারাবন্দী করে আইন-আদালত-বিচার ব্যবস্থার দফারফা করেছে।
রাজশাহীতে এক জজকে আদালত থেকে ধরে এনে রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে এমন ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত সবখানেই চলছে এনসিপি, জামায়াত- শিবির ও বিএনপির মব ভায়োল্যান্স।
যাতে করে বিচারকরাই চরম ভীত ও ক্ষুব্ধ। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছেন না অপমানের ভয়ে।নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ভয়ে। অথচ এমন নজির এই নোবেল লরিয়েট ইউনূসের আমল ছাড়া এর আগে গত ৫৩ বছরের ইতিহাসে দেখেনি কেউ।
★ যখনই কোন একটা সমস্যা দেখা দেয়, ইউনুসের গদি নড়বড়ে হয়ে পড়ে তখনই এই চতুর ইউনুস বিভিন্ন দলকে ডেকে বলে– ভাই ফ্যাসিবাদতো আবার এসে গেলো, আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদেরকে ঠেকিয়ে দেশ বাঁচান।
আর তার এধরনের আহ্বানে ভক্তি গদগদ হয়েছেন অংশগ্রহণকারী দলগুলো। ইন্টেরিমসহ দেশ উদ্ধারকারি(!) ১৩টি দলের নেতৃবৃন্দ আপনারা একদম ভয় পাবেন না।
ভারতের সর্বদলীয় বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। ভারত বাংলাদেশে কখনওই কনভেনশনাল ওয়ারের কথা ভাবছে না। কাইনেটিক-ননকাইনেটিক কোন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথাও ভাবছে না, অন্তত ভারতীয় গণমাধ্যমে এরকম কোনও খবর নেই।
তবে সর্বদলীয় বৈঠকের পরদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে তিন বাহিনী প্রধান, এনএসএ, ডিজিএমও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী যে কোরক্যাবিনেট বৈঠক করেছিলেন সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠেছিল বলে খবরে প্রকাশ।
সেই বৈঠকে এবং আগের অনেক বৈঠকে ভারত সরকার বলেছে তারা “বাংলাদেশে একটি ‘ইনক্লুসিভ নির্বাচন’ আশা করে।” এই ‘ইনক্লুসিভ’ বলতে কী বোঝায় সেটা নিশ্চিতভাবেই ইন্টেরিমসহ সকলেই বোঝেন। আসল ভয় কি সে কারণেই? যে ভয়ে ইন্টেরিমের গ্রুমিং করা মন্ত্রণাদাতারাও ভীত? তাদের নির্বাচনভীতি থেকে তো সেটাই পষ্ট হয়ে উঠছে।
★গোপালগঞ্জ হত্যাকান্ড এ নিরীহ জনগণের ওপর পুলিশ- সেনা’ র হত্যাকান্ডের তদন্ত নয়, তদন্ত হচ্ছে নিরীহ জনতার বিরুদ্ধে ইউনুসীয় শাসনামলে।
ভাবুনতো গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত কিভাবে নির্মম- পাশবিক খুন- নির্যাতন চালিয়েছে এই ওয়াকার- ইউনুসের সেনা- পুলিশ বাহিনী! সেসবের কোন বিচার বিভাগীয় তদন্ত না করে এই জঙ্গি নেতা ইউনুস সেদিন বিক্ষুব্ধ গোপালগঞ্জবাসী এনসিপির টোকাই জঙ্গী গুন্ডাদের যে ধাওয়া দিয়েছিল সেটার ব্যাপারে গত ২৪ জুলাই এক সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। কি হাস্যকর ও বালখিল্য সিদ্ধান্ত!!
ইউনুসের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এ সংক্রান্তে একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে– : গত ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে গোপালগঞ্জ জেলা সদরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর পূর্বনির্ধারিত জনসভাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও নাগরিক নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার বিষয়সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য ঘটনা উদ্ঘাটনের নিমিত্ত একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়- কমিটির সভাপতি সাবেক বিচারপতি ড. মো. আবু তারিক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ; সদস্য খন্দকার মোঃ মাহাবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ; মোঃ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ), আইন ও বিচার বিভাগ; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহীদুর রহমান ওসমানী কমান্ডার, ২১ পদাতিক ব্রিগেড; ( এই ব্রিগেডটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। যা ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে রয়েছে), সরদার নূরুল আমিন, পরিচালক (অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক), কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকা এবং ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী, চেয়ারম্যান, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
উক্ত ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে এই তদন্ত কমিশন গঠিত হয়।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো– তদন্ত কমিটি কাজ শুরুর আগেই ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে– ” তদন্ত কমিটি জানায়, গত ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে গোপালগঞ্জ জেলা সদরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর পূর্বনির্ধারিত জনসভায় নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকগণ পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় কারফিউ জারি করা হয় এবং ইন-এইড-টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও নাগরিক নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার বিষয়সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য ঘটনা উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন।”
কি হাস্যকর ও প্রতারণাপূর্ণ এ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন! আগেভাগেই বলে দেয়া হলো তারা কি করবেন, কি রিপোর্ট দেবেন? — বিষয়টি কি এমন নয় উপরের অংশটুকু পড়লে?
এতে আরো বলা হয় – তদন্ত কমিশন, প্রয়োজনে, উপযুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে কমিশনের সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তদন্ত কমিশনকে সাচিবিক সহায়তাসহ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে এবং কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারবে।
কমিশন উক্ত বিষয়সমূহের উপর ৩ (তিন) সপ্তাহের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামত ও সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।
★ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মানসিক- শারীরিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ!
আমাদের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে একজন ভদ্রমহিলা আছেন। ওনার সম্পর্কে ড. ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগকারি কথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা।
সে ছাত্রনেতাদের দল এনসিপি। সেই এনসিপির অন্যতম নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। তারা নিজেরাই চরম বিরক্ত যা প্রকাশ্যেই বলে ফেললেন সেদিন চাঁদপুরের সমাবেশে।
তিনি সরাসরি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগ দাবি করে বসলেন! জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ গত বুধবার দুপুরে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির পথসভায় দাবি তোলেন।
এই জঙ্গী টোকাই নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। অভ্যুত্থানের পর আমরা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আগের মতো, আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থাও আগের মতো।
একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী (উপদেষ্টা) আছে, চেনেন ওনাকে? উনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই-ব্রাদার কোটায় আসছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। সব সময় বলে আসছি, এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো প্রয়োজন নাই।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসা সম্পর্কে ‘কিছু বোঝেন না’ বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক হাসনাত।
তিনি বলেন, ‘উনার একমাত্র যোগ্যতা উনি গ্রামীণ ব্যাংকে ছিল এবং ড. মুহম্মদ ইউনূসের কাছের মানুষ। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা লইয়া আমরা কী করিব? এবং দুঃখজনক বিষয়, উনি নিজে চিকিৎসা করাইতে সিঙ্গাপুর যায়।
আমরা বললে বিড়াল বেজার হয়। উনাকে নিয়ে একবার কথা বলছিলাম, এরপর উনার আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না। জনগণ উনাকে যে বেতন দিছে, সেগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’
তার মানে কি! কি বুঝলেন পাঠক? ইউনুস কেমন চালাচ্ছেন সরকার? কেমন চালাচ্ছেন দেশ? কেমন চলছে তার বহির্বিশ্ব কূটনীতি? সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন তিনি। তার সবচেয়ে বড় ভয় ফ্যাসিবাদ(!) আওয়ামীলীগের ও তার নেত্রী শেখ হাসিনার।
সাধারণ জনগণসহ অনেকেই প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন প্রতিনিয়ত। শুধু একটু ভালো সৎ নেতৃত্ব একটি গনআন্দোলনেররডাক দিলেই ইউনুস গংয়ের গদি উল্টে যেতে সময় লাগবেনা।
তখন তার বিদেশী প্রভুরাও তার মাথার ওপরে রাখা আশির্বাদের/ দোয়ার হাত গুটিয়ে নিতে দেরি করবেনা। সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুকে স্থপতি বিজয় তালুকদার লিখেছেন,
ক্যাথল্যাব না বলে কিস্তিল্যাব বললে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বুঝতে পারতেন।
ইউনুস সাহেব যদি সত্যি দেশের ভাল চাইতেন তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কোন চিকিৎসককেই দিতেন। দেশের মানুষের ভালো চেয়েও উনি গ্রামীণ ব্যাংকের ভাল বেশী চান বলে কোটা বিরোধী সরকারের উপদেষ্টাতে উনি নিজস্ব কোটায় ওনার ব্যাংকের এমডিরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বানিয়ে দিলেন। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কি হতে পারে?
জনরোষের ভয়ে আপনার নিজের দলের পোলাপানই স্বাস্থ্য উপদেষ্টারে আপনি নিজের কোটায় নিয়োগ দিয়েছেন উল্লেখ করে তার পদত্যাগ চাইলো। উপদেষ্টা পরিষদে একজন ডাক্তার আছেন, তারে দিলেন প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্বে। অন্তত তারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বানালেও তিনি ক্যাথল্যাবের গুরুত্ব বুঝতেন।
কিস্তি আপা সুদের লাভের হিসাব করতে করতে মানুষের চিকিৎসার মধ্যেও রাষ্ট্রের লাভ খুঁজতে চাইছেন। ওনারে যখন এতই উপদেষ্টা করার শখ হলো, ওনারে সমবায় মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দিতে পারতেন। স্বাস্থ্যের মত বিশেষায়িত বিভাগ কেন?
আসলে উপদেষ্টা পরিষদ তো নামে মাত্র, দেশ কারা চালাচ্ছেন তা দেশের এই অরাজক হাল, একটার পর একটা গণবিরোধী সিদ্ধান্ত, নারীবিরোধী সিদ্ধান্ত দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে। যোগ্য মানুষ দিলে তারা প্রশ্ন করবে, কৈফিয়ত চাইবে, দেশবিরোধী কোন কিছু করতে বাধা দিবে বলে যোগ্য মানুষকে উপদেষ্টা বানান নাই এটা বুঝতে পারছি।
# নুরুল ইসলাম আনসারি, প্রাবন্ধিক, লেখক।