বাংলাদেশ নামের দেশটি হিন্দুদের নয় তা আবারো নতুন করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসের জঙ্গী সরকার।
বাংলাদেশ যে আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ নেই, এটি যে পাকিস্তানের চেয়েও বর্বর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে তা সাম্প্রতিককালের কয়েকটি ঘটনা দেখলেই বুঝতে আর কষ্ট হয়না।
বাংলাদেশকে যেনো বাংলাস্তানে পরিণত করেছে বর্তমান অসাংবিধানিক অবৈধ সরকার।
ঢাকার খিলক্ষেতে সার্বজনীন দূর্গা মন্দির ধর্মান্ধ গোষ্ঠীসহ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সলিমপুরে শ্মশান কালীবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া, খুলশী থানাধীন শতবছরের অধিক পুরনো ঐতিহ্যবাহী মন্দির ও গুরুকুল আশ্রমের উন্নয়নকাজ বন্ধ করে দেয়া, কথিত ধর্ম অবমাননার নামে পঞ্চগড়ে এক নরসুন্দর ও তার পুত্রকে প্রকাশ্যে বেধড়ক পিটুনি, হেনস্থা করা সহ নানা কর্মকান্ডই প্রমাণ করে অবৈধ ইউনুস সরকার চরম সাম্রদায়িক মনোভাব পোষণই শুধু নয় তা তারা তাদের নিত্যদিনের কাজের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
শুধু তাই নয়, হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় উৎসব কিভাবে পালন করবে তাও কঠোরভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উর্দ্ধতন করিৎকর্মাকর্মকর্তারা।
২৭ জুন শুক্রবার হিন্দুর ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা পূজা ও রথটানা অনুষ্ঠান। কিন্তু সেই রথযাত্রাও কঠোরভাবে সংকুচিতই শুধু নয় সিএমপি( চট্টগ্রাম মেট্রাপলিটন পুলিশ। ইতিমধ্যেই ইসকর প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির কর্তৃপক্ষকে রীতবমত হুমকি দিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
যে সংসারত্যাগী সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সনাতনী তথা হিন্দুদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার কন্ঠ ছিলেন তাঁকে বড় ভয় পুলিশ ও সরকারের।
এজন্য তারা বলেছে- চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ অন্য কোন ব্যক্তির নামে, কোন দলের নামে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন প্রদর্শন করলে বা স্লোগান দিলে প্রশাসন সাথে সাথেরতাকে তুলে নিয়ে যাবে। প্রশাসনের কাছে নাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে রথকে ব্যবহার করে যে কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
প্রশ্ন হলো– অযৌক্তিক- অন্যায়ভাবে জেলের মধ্যে পুরে রাখা ” বাংলাদেশ সম্মিলিত জাগরণ জোট ” এর মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বা চিন্ময় প্রভুর ব্যাপারে কোন কথা বলা যাবেনা।
চিন্ময়ের মুক্তির ব্যাপারে কোন দাবি তোলা যাবেনা রথযাত্রার সময়ে। একটি রাষ্ট্রে একজন সাধুকে বিনা বিচারে মাসের পর মাস কারাগারে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।
অথচ তার মুক্তির ব্যাপারে বা অন্য কোন ব্যাপারেই আলাপ- আলোচনা, মুক্তির দাবিতে কোন কোন পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেট বহন বা স্লোগানও দেয়া নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মত প্রকাশের জন্য বর্তমান ” শান্তির সরকার” কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছে।
তারমানে ন্যুনতমভাবেও কোন প্রতিবাদ করা যাবেনা। এই হলো জঙ্গী ইউনুস সরকারের পাইক- পেয়াদার মতামত প্রকাশের অবাধ স্বাধীতার!! নাগরিকরা তাদের মুখটি পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। কারো মুক্তি চাওয়া যাবেনা এ কেমন স্বাধীনতা!?
এমনতরো পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিক্ষুব্ধ নাগরিক লিখেছেন– এরকম কঠোর রথযাত্রা হলে,উগ্রবাদীরা এবং সরকার প্রশাসন সারা বিশ্বকে জানান দিবে,দেখো বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা কত সুন্দর রথযাত্রা উৎসব পালন করতেছে,এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা এখানে সুরক্ষিত নিরাপদ আছে।
তাদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন হচ্ছে না।
এটা একটা ষড়যন্ত্র। সাবধান চট্টগ্রামের সকল সনাতনীরা। এই ষড়যন্ত্রে পা দিবেন না।
যেখানে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সহ আরো অন্যআন্য সনাতনী রা সনাতনী দের অস্তিত্ব রক্ষা লড়াইয়ে আজ মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী করে রেখেছে, সেখানে রথযাত্রার এমন কঠোর আইন কানুন করা মানেই ষড়যন্ত্র।
বয়কট করলাম এমন ষড়যন্ত্র। এমনকি রথযাত্রার কোন লাইভ ভিডিও করার ক্ষেত্রেও কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারমানে পুরোটাই সরকার – পুলিশের খেয়াল খুশীমত চলতে হবে। নাহলে গর্দান কাটা পড়বে এমন ভীতিকর পরিস্থিতিই সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: গত ৫ আগষ্ট ড. ইউনিস প্রযোজিত ও ইসলামী জঙ্গী পরিচালিত ” মেটিকুলাস ডিজাইনে” রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সারা দেশেই হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন, খুন হামলা, ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট- অগ্নিসংযোগ, ধর্ষনসহ নানা কিছু করা হয়।
যা এখনো বিদ্যমান। সারাবিশ্বেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসব অপকর্ম প্রচারিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকামি মানুষ এর বিচার ও প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশও করেছেন।
মানবাধিকার সংগঠক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশগুপ্তসহ অনেক হিন্দু নেতা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে খুন- দাঙ্গা হাঙ্গামা- খুনের চেষ্টা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তুলে মামলা দেয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার করে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। কমনওয়েলথ জানালিস্ট এসোসিয়েশনেরনেতা, ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্তকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদিন যাবৎ কারান্তরীন করে রাখা হয়েছে। জামিনও দিচ্ছেনা।
এমনকি তার পরিবারের সদস্যদেরকেও নানা ভয়ভীতি ও হয়রানির মধ্যে রাখা হয়েছে। এমনভাবে সারা বাংলাদেশেই অনেক সাংবাদিক যারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী তাদের অনেকের নামে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে চরমভাবে হয়রানী করছে ইউনুস সরকার ও তার বশংবদগন।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন নীপিড়নের বিরুদ্ধে সব দলমত নির্বিশেষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস অন্যান্য সাধু- সন্তদের নিয়ে সরব হয়েছিলেন।
মাঠে ময়দানে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। বিদেশী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও তা প্রচার হয়েছে। যাতে ভয় পেয়ে যায় ইউনুস সরকার।
তাই এ আন্দেলন দমাতে তাঁকেসহ তার সহযোদ্ধাদের নামে রাষ্টদ্রোহ মামলাসহ নানা হয়রানীমূলক মামলা দেয়। গ্রেপ্তার করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তারের আগে সংগ্রামী- প্রতিবাদী এই চিন্ময় দাস সনাতনী সমাজের পক্ষে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন।
# অনেকেই মনে করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যৌক্তিক ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ আরো পাঁচ দাবি উত্থাপন করা হয় তখন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে চট্টগ্রামের সম্মেলনে হাজারী গলিতে হিন্দুদের ওপর গত ২০২৪ এর ৫ নভেম্বর হামলা- লুটতরাজ ও হাঙ্গামার ঘটনার বিচার দাবি করে বলেছেন — জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ৫ নভেম্বরের পরে আরো নতুন পাঁচ দাবি তুলে ধরা হয়। যদিও এর আগে বাংলাদেশ সম্মিলিত জাগরন জোটের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছিল। পরে আরো পাঁচটি দাবিসহ মোট ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
নতুন যে পাঁচদফা দাবি তোলা হয় তা হলো— ‘৫ নভেম্বর হাজারী গলির ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, একই ঘটনায় আটক ও নির্মম নির্যাতনের শিকার নিরীহ সনাতনীদের মুক্তি দিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, আটক সনাতনীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করা, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে গভীর রাতে নিরীহ সনাতনীদের ওপর নির্যাতন করা অতিউৎসাহীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাধু-সন্ত ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার।’
এর আগে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনসহ ৮ দাবি জানানো হয়। দোষীদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে। ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করতে হবে এবং জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করার পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে। এবং শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা দিতে হবে।
কিন্তু সব দাবি সরকারের কাছে লিখিতভাবে উপস্থাপন করার পরও কোন প্রতিকারতো পাওয়া যায়নি উল্টো হয়রানি- নির্যাতন বহিগুনে বেড়ে গেছে যা সংবাদমাধ্যমে রহস্যজনক কারনে প্রকাশিত হচ্ছেনা।
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তাদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছেন এভাবে–‘ সম্মিলিত সনাতনী জোটের মুখপাত্র শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে কারাগারে রেখে হিন্দুদের প্রাণের দাবি জলাঞ্জলি দিয়ে যারা রথের দড়ি টানতে যাবেন তারা অকৃতজ্ঞ।’
কেউ বলেছেন’ বস্তাবন্দী স্বাধীনতা, এবার ভাবছি রথযাত্রার রথ টানতে যাবোনা। শিকলবন্দী স্বাধীনতার কোন দরকার নেই।’
## ইশরাত জাহান, লেখিকা, প্রাবন্ধিক ও নারী অধিকার সংগঠক, ঢাকা।