বাঙালিয়ানা কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের।

পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা দেখাতে গিয়ে তাঁরা বাঙালির ইতিহাসটাকেই মুছে দিতে চাইছেন। অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা শিকড়েই কুঠারাঘাত করতে চান তাঁরা।

সেই চেষ্টারই অঙ্গ হচ্ছে ৫ আগস্ট নির্বাচিত সরকারের পতনের দিনটিকে তাঁরা জাতীয় ছুটি হিসাবে ঘোষণা করেছেন।

জামায়াতে ইসলামির ক্ষমতায় ভর করে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকেও মুছে দিতে বদ্ধপরিকর।

তাইতো ক্ষমতায় বসেই ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবসের ছুটি তাঁরা বাতিল করেছেন। এমনকী, পহেলা বৈশাখ, বাঙালির ঐতিহ্যের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাতিল করে চালু হয়েছে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’।

এমনকী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবকেও ম্লান করতেও সক্রিয় টিম-ইউনূস।

বাংলাদেশকে পুরোদমে ইসলামি রাষ্ট্র বানানোর ছক প্রস্তুত। জামায়াতে ইসলামির ছত্রছায়ায় বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন একাত্তরের প্রতিশোধ নেবার এই সুযোগ ছাড়তে নারাজ।

তাই ইতিহাসকেই তাঁরা চাঁদমারি করছেন। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের ওপর নৃশংস হামলার দিনটিকে আর জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন বন্ধ।

ক্ষমতায় বসেই ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল করেছেন ইউনূস ও তাঁর সরকার। শুধু তাই নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বলে-কয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সামনে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত ৩২ ধানমন্ডিকে ধূলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্বাধীনতার কোনও স্মারকই তাঁরা রাখতে চান না। বঙ্গবন্ধুর প্রতি এই আক্রোশের পিছনেও রয়েছে একাত্তরে পরাজয়ের জ্বালা।

মৌলবাদীরা কিছুতেই পাকিস্তানের মায়াজাল থেকে বার হতে পারছেন না।

৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জঙ্গি ও জেহাদিদের কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশছাড়তে বাধ্য করা হয়।

জেল থেকে দাগী সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ছাড়িয়ে নিয়ে চলে তান্ডব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা পরাস্ত হন সেই তান্ডবের কাছে। নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে প্রতিষ্ঠিত হয় মৌলবাদীদের পছন্দের সরকার।

ছাত্রদের সামনে রেখে বিদেশি ষড়যন্ত্রে মৌলবাদী ও জঙ্গিদের হাতে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার দিনটি ঘটা করে পালন করতে চলেছে ইউনূস সরকার।

তাই সেদিন থাকবে জাতীয় ছুটি। অনির্বাচিত সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি। বিশেষ করে নব্য রাজাকার ও পাকিস্তানপন্থীরা।

ইউনূসের সরকারের প্রথম থেকেই একটাই চেষ্টা, পাকিস্তানকে খুশি করতে হবে। একাত্তরে পাকিস্তানি বর্বরতা ভুলে এখন তাঁদের  নির্দেশেই চলছেন তাঁরা।

পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের পরামর্শদাতাদের ঘনঘন বৈঠক। মৌলবাদীরা ফের নারীর অধিকার কেড়ে নিতে সক্রিয়।

বাংলাদেশে উড়ছে আইএসআইএস জঙ্গিদের পতাকা। ফতোয়া জারি হচ্ছে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। মাদ্রাসা শিক্ষালয়গুলি হয়ে উঠছে জঙ্গিবাদীদের প্রশিক্ষণ শিবির। বাঙালিয়ানা মুছে ফের উর্দুর দাসত্ব করতে চাইছেন কেউ কেউ।

তাই তো একুশের বইমেলাতে দেখা গিয়েছে মৌলবাদীদেরই দাপট।

বিপদ আরও বাড়াতে বাংলাদেশে মৌলবাদীরা এবার একজোট হচ্ছেন। পর্দার আড়াল থেকে নয়, পাকিস্তানের মদদে প্রকাশ্যেই একাট্টা হচ্ছে সমস্ত জঙ্গি সংগঠন।

তাই নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই জামায়াতে ইসলামির মহাসচিব অধ্যাপক মিয়াঁ গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমিক শক্তিকে জয়ী করতে হবে।

দেশের ইসলামি দলগুলির মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলির একটি ভোটবাক্স থাকবে।’ ইঙ্গিত স্পষ্ট, ধর্মের ভিত্তিতেই নির্বাচন চাইছে জামায়াত। বাংলাদেশে ইসলামি শাসন প্রবর্তনই তাঁদের বহুদিনের শখ।

তাই সমস্ত মুসলিম সংগঠনকে আন্তর্জাতিক অপশক্তির অর্থায়ণে এক ছাতার তলায় আনতে সচেষ্ট জামায়াত। আর এই কাজকে দ্রুত করার স্বার্থে ইতিহাস মুছে ফেলতে  চাইছেন তাঁরা।

তাই সমাজ মাধ্যমে  মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতো ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামেও কুৎসা রটানো চলছে। ভাষা নয়, ধর্মের ভিত্তিতেই বাঙালির জাত্যাভিমানে আঘাত করতে চায় জামায়াত।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র আরও অস্বচ্ছ হয়ে উঠেছে।

বিএনপি ঠিক কী চাইছে, সেটাও স্পষ্ট নয়। বৈঠকের আগে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধের চেতনা নিয়ে তাঁরা যতোটা যত্নশীল ছিলেন, এখন তাতে টোল পড়ছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকেও মাঝেমধ্যে তাঁরা অস্বীকার করছেন বলে মনে হয়।

কারণ ক্ষমতার লোভে আওয়ামি লিগের সমালোচনা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করতেও শোনা যাচ্ছে বিএনপি নেতাদের মুখে।

অথচ, দলের বর্তমান চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার স্বামী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাবা জিয়াউর রহমান নিজে দেশের মুক্তির জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

আমেরিকা ও চীনের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান যে গণহত্যা চালায় তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন জিয়া। অথচ, তাঁর দল আজ ক্ষমতার লোভে দিকভ্রষ্ট। তাঁরা আজ প্রকাশ্যে ভারতের সহযোগিতা চাইলেও অন্ধ ভারত বিরোধিতার রাস্তাও পরিহার করছেন না।

তাই দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভি বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী দল পলাতক আওয়ামি লিগকে পুনর্বাসন দিতে ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা নানা ভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনার পতনকে তারা সহ্য করতে পারছে না। লন্ডনে ইউনূস–তারেক রহমানের বৈঠকের পর টার্গেট করে পার্শ্ববর্তী দেশ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’ রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বেজিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেন।

কমিউনিস্ট পার্টির অতিথি তাঁরা। তবে বেজিং উড়ে যাওয়ার আগে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হন। ফলে বিএনপি ঠিক কী চাচ্ছে বোধগম্য নয়।

আসলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে জামায়াতের ছত্রছায়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তিত বিএনপি নেতৃত্ব।

জনবল তেমন না থাকলেও ইউনূস-সরকারের সৌজন্যে এনসিপি নেতারা নিজেদের মস্ত বড় তালেবড় ভাবতে শুরু করেছেন। তাই নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দিয়েই এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী দাবি করেছেন, ‘নিবন্ধন পাওয়ার পর এনসিপির নেতৃত্বে আগামী সরকার গঠন হবে।

আগামী সংসদে ৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসন পাবে এনসিপি।’

জামায়াতের ওপর ভর করে ইউনূস চাইছেন সংস্কারের নামে বাঙালির ইতিহাসকে মুছে ফেলতে।

তাই সংস্কার নিয়ে তাঁদের এতো মাথাব্যাথা। অনির্বাচিত সরকার সংসদের অনুমোদন ছাড়াই সংবিধান বদল করতে চাইছে। চাইছে দেশের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতকেও বদল করতে।

পুরো রোডম্যাপ জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামি দলের। রাষ্ট্রীয় চেয়ারের লোভে কার্যকর করতে সচেষ্ট ইউনূস। তাঁকে সহযোগিতায় রয়েছেন এনসিপির নব্য নেতারা।

তাঁদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, পাকিস্তানের বানানো চিত্রনাট্য অনুযায়ী বাঙালিয়ানাকে ধ্বংস করে উর্দুকে ফিরিয়ে এনে ইসলামি অনুশাসন জারি।

#আনোয়ার হুসেইন।    

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *