ঢাকার শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরের ভাস্কর্য বা ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলেছে। প্রতিদিন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট ভাস্কর্য -ম্যূরাল ভাঙ্গা হচ্ছে।
মাটির সাথে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে ও হচ্ছে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। হয়তো এরই ধারাবাহিকতায় একদিন হয়তো আমাদেরকে দেখতে হবে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত বাঙ্গালির আত্মচেতনার-আত্মপরিচয়ের-বাঙ্গালীর গর্বের ও অতি শ্রদ্ধার শহীদ মিনারগুলো গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
কারণ এসব চেতনাকে বড় ভয় ধর্মান্ধ ইসলামী মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গী গোষ্ঠীর। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে এদেশের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার পরিকল্পনা-নির্দেশ হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য বা ম্যুরাল দেখে প্রজন্ম আবার ঘুরে দাঁড়াবে মৌলবাদ- স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে সে ভয়ে চরমভাবে ভীত তারা।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরকে ভয় জামাতী-মৌলবাদীদের। কারণ এই শাহবাগই অগ্নিস্ফুরণ ছড়িয়ে দিয়েছিল সারাদেশের আনাচে কানাচে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার করার প্রত্রিয়াকে তরান্বিত করতে।
তাই এত ভয়, এত ক্রোধ, এত বিদ্বেধ, এত প্রতিশোধ স্পৃহা। অন্ধকারের কীট জামায়াত-জঙ্গীচক্র ভীত স্বনামধন্য গবেষক-মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তচিন্তার অধ্যাপক আবুল বারকাতের গবেষনা নিয়ে। তাই তাঁকেও রেহাই দেয়নি ইউনুস সরকার ও তার জঙ্গী সাগরেদরা। কারান্তরালে পাঠিয়েছে তাঁকে।
নতুন করে ‘ জুলাই স্মৃতিস্ম্ভ’ গড়ার নাম করে আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভাঙ্গার চেষ্টাও যদি এই জঙ্গী শক্তি করে থাকে তাহলেও অবাক হবো না।
এসব যদিও আপাতত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও বঙ্গবন্ধু বিরোধী হিসেবে ট্যাগড হচ্ছে, কিন্তু ইসলামী মৌলবাদীরা তো মূর্তি, ভাস্কর্য্য, ম্যুরাল থাকাকে পুজা করার সাথে তুলনা করে। কিন্তু তারা যে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরী করেছে, করছে সেগুলো তবে কি ?
রাজধানী ঢাকার শাহবাগে স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখে চলচ্চিত্র নির্মাতা, গল্পকার ও সৃজনশীল প্রকাশক শায়লা রহমান তিথি তার ফেইসবুকে লিখেছেন, তোমরা কেন বলো— এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না,,
এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না,,,
আমি তো বলি, “এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ”। একদিন দেখা যাবে কফিনের কাপড় কেনার কাপড়ও নেই কোন দোকানে। দাফন হবে প্লাস্টিকের কভারে মুড়ে।
মৃতদের নিয়ে মঞ্চে নৃত্যের উল্লাস দেখতে দেখতে একদিন আমাদের মরণ হবে। আমি দেশের নেগেটিভ বা বিভীষিকার কথা কখনো লিখি না। নিজের কথাই লিখি। আমি বাংলা মায়ের সন্তান। আমার কথাই দেশের কথা।
বাস্তব কথাই বলছি- যে দেশের মন্ত্রী,সচিব, বেশিরভাগ উপদেষ্টাগণ সারাদিন বসে থাকার পরেও সাধারণ মানুষের পাঁচ মিনিট কথা শোনার সময় হয় না, কথা বোঝার সময় হয় না, শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহবোধ করে না- সেই দেশ থেকে আমরা কি আশা করতে পারি!
তারা মনে করেন দেশের কাজ তারা একাই করেন। দেশের সাধারণ জনগণও প্রয়োজনীয় কাজ ফেলে অফিস ছুটি নিয়ে তাদের কাছে যায় দুটো পরামর্শের জন্য।
দু’একজন বাদে বাকি সবাই রোবট নয়তো মহামানব। তাদের ব্যস্ততা আমরা জানি। একেকটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তকগণ কী পরিমাণ ব্যস্ত থাকেন বর্তমানে নিজ চোখে দেখা। পাশাপাশি নিজ চোখে এটাও দেখা কতটা তাচ্ছিল্য তারা দেখাতে পারে অকারণে!
গতকালের ( ১২ জুলাই)রাতে দেখা ভিডিওর পৈশাচিকতা দেখে ঘুমাতে পারিনি। দেখা যাবে আরেকদিন এমন একটা ঘটনা ঘটলে ঠিকই ঘুমাতে পারছি।
যেমন থ্রিলার মুভি দেখে ঘুমাই। কারণ দেশের সব মানুষ এসব দেখে দেখে কিছুদিন পর অভ্যস্ত হয়ে যাবে। ভয় ভীতি দয়া মায়া বলে কোন অনুভূতি থাকবে না।
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে এখনই সময়, সবাই মিলে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় একটি আদর্শ সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়া নয়তো শুরুতেই শেষ হয়ে যাওয়া শতভাগ নিশ্চিত।
এই যে এতসব কিছু বলছে জনগণ বা নানাভাবে কিছুটা প্রকাশ্যে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাতে কিন্তু কোন ভ্রুক্ষেপ নেই বা কান পেতে শোনার কোন প্রয়োজনই বোধ করছেন ‘ইন্টেরিম সরকার’।
কারণ এই মেটিকুলাস ডিজাইন’ এর মাধ্যমে এ দেশটিকে জামায়াত- জেএমবি-হিযবুত তাহরিরসহ অন্য ইসলামী জঙ্গীবাদের মাধ্যমেইতো ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন ‘শান্তিতে নোবেলজয়ী’ ড. মুহম্মদ ইউনুস।
অথচ তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীন ব্যাংকও ইসলামী মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েছিল বেশ কয়েকবছর আগে।অপর বৃহৎ এনজিও ব্যক্তিত্ব প্রয়াত ফজলে হাসান আবেদের ব্র্যাক এর স্কুলও মৌলবাদীদের হামলার শিকার হয়েছিল।
অথচ এরা দুজনেই কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরোধী বলয়ের লোক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নামাজ-কালাম-হজ-যাকাত পালন না করা ইউনুস কোন যাদুর বলে বাংলাদেশে মৌলবাদী জঙ্গীদের অতি কাছের লোক হয়ে উঠলেন ?
এই ইউনুসকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মওলানা, ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী সুদি ইউনুস হিসেবে গালিগালাজ করেছে মাত্র কয়েকদিন আগেও।
অথচ এখন ‘ ইসলামের চরম গুণাহ্ সুদ’ খাওয়া ইউনুস তাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠলেন ! আর ছোটবেলা থেকেই চরম প্রতারক ইউনুস বাংলাদেশের মৌলবাদী-মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য মৌলবাদী-জঙ্গী গোষ্ঠীকে একেবারে নিজের পকেটে ভরে ফেললেন!
এই মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ বাংলাদেশে কোনভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক ও অবৈধ অস্ত্র ও জঙ্গী ট্রেনিং নিয়ে এদেশের সমাজ-রাজনীতিও রাষ্ট্রব্যবস্থায় তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে তা নিয়ে গভীরভাবে গবেষণার কাজ করেছেন খ্যাতিমান গবেষক ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আবুল বারকাত।
বেশ কয়েকবারই পেশাগত কারণে এই খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ-গবেষক-বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এসব বিষয়ে আলাপ করার সযোগ হয়েছিল।
গত ১০ জুলাই গভীর রাতে এমন একজন প্রবীণ-স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ-গবেষককে ড. আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে জঙ্গী ইউনুস সরকার।তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির মামলায় নাকি গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশের উপরের লেভেলের ব্যক্তিরা।
প্রফেসর বারকাত শুধু মৌলবাদী জঙ্গিত্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়েই গবেষণা করেননি।তিনি বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর কিভাবে রাষ্ট্রীয় আইনের যাঁতাকল চালিয়ে নিষ্পেষণে ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে তা নিয়েও অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য গবেষণা করেছেন।
বই প্রকাশ করেছেন।যা বাংলাদেশে তো বটেই বিদেশের বিভিন্ন একাডেমিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন অনেকে।আপাদমস্ত একজন খাঁটি-নির্লোভ-দেশপ্রেমিক এই অধ্যাপক-গবেষককে বাংলাদেশের বর্তমান মৌলবাদী-জঙ্গীবাদী-মুক্তিুযুদ্ধ-স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী জঙ্গীবাদীরা সহ্য করবে কি করে বলুন ?
কারণ রাজনীতিবিদগন মাঠে ময়দানে জামায়াতে ইসলামী- মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে গলাবাজি করতেন। স্রেফ রাজনৈতিক কথার ফুলঝুড়িতে জনগণ-শ্রোতাদেরকে বাহবা পাওয়ার জন্য অনেকটা।
কিন্তু অনেকে সঠিক তথ্য প্রমাণ ও পরিসংখ্যান ও কোত্থেকে এতসব ( জঙ্গীবাদের টাকার উৎপত্তি-বিকাশ) ঘটছে তা বলতে পারতেন না।হাতেগোনা কয়েকজন হয়তো বলতেন, তাও এই অধ্যাপক বারকাতের গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে।
আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে যতদুর জানি বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়েও এমন একজন বিদগ্ধ-সজ্জন অধ্যাপককে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে চরমভাবে।
আওয়ামীলীগ সরকারের সময় তাকে কিন্তু অর্থমন্ত্রী পদে সম্মানিত করার কথা ছিল। কিন্তু নানামুখী হিংসা-দ্বেষের কারণে এমন একজন যোগ্য ব্যাক্তিকে সেই পদে পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশবাসী।
তাকে অর্থমন্ত্রী পদে সম্মানিত না করে করা হয়েছিল জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান।তাও যে খুব বেশিদিন সেখানে থাকতে পেরেছিলেন তাও না।
কিন্তু সেই পদে থাকার সময়কালে নাকি তিনি তার সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
পাঠক হয়তো বলবেন যে, ধান বানতে শিবের গীত কেন গাইছি ? গাইছি এ কারণে যে, কখনো কখনো কোন ব্যক্তি নিজেই তার কৃতকর্মের জন্য হয়ে ওঠেন প্রতিষ্ঠান। আর সেই প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রফেসর ড. আবুল বারকাত।
হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চয় আরেকদিন লিখবো। মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে তিনি কি দেখিয়েছেন তার গবেষনার মাধ্যমে তাই শুধু তুলে ধরছি সংক্ষিপ্তভাবে।
তার গবেষণালব্ধ ‘ বাংলাদেশে মৌলবাদ জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতির অন্দর-বাহির’ শিরোনামে বইটি সংগ্রহ করে পড়ে দেখতে পারেন পাঠকগণ চাইলে।
বিভিন্ন সময়ে এই অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা-গবেষকের সঙ্গে আলাপচারিতা, তার বই ও অনলাইন বার্তা সংস্থা বাংলা ট্রিবিউনের সূত্র ধরে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
খ্যাতনামা এই গবেষকের মতে পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর থেকেই বাংলাদেশে মৌলবাদী-জঙ্গীবাদী সন্ত্রাস ও তাদের অর্থনীতির বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে।
২০১৬ সালের মে মাসে প্রফেসর ড. আবুল বারকাত অনলাইন বার্তা সংস্থা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন- গত ৪০ বছরে ( অর্থাৎ ১৯৭৫ এর পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশের জঙ্গিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে মৌলবাদী জঙ্গিত্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করে জানিয়েছেন, গত ৪০ বছরে মৌলবাদের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে নিট মুনাফা হয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
এর প্রায় ২০ শতাংশ বা ৪০ হাজার কোটি টাকা সরাসরি ব্যয় হয়েছে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে। এর একটা বড় অংশ ব্যয় হয়েছে তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণে। এছাড়া কর্মীদের বেতন ভাতা ও দৈনন্দিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায়ও একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে।
তিনি বার বারই বলে আসছিলেন, বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা উগ্র রূপ ধারণ করেছে। এ সাম্প্রদায়িকতা ভেতরে ও বাইরে উভয় শক্তির মাধ্যমে ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতাভিত্তিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া’কে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে প্রয়োগ করে সুসংগঠিত জঙ্গি কার্যক্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছে তারা।
আবুল বারকাতের মতে- মৌলবাদী জঙ্গিবাদের তিন বাহু। উপরের বাহুতে রয়েছে ইসলাম নামাঙ্কিত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। এর নিচের বাহুতে রয়েছে জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ ১৩২টি চিহ্নিত জঙ্গি সগঠন। আর অন্য বাহুতে রয়েছে ইসলামী ব্যাংকসহ মৌলবাদের অর্থনীতির ২৩১টি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে জঙ্গীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণে অনেক টাকা ব্যয় হয় বলে উল্লেখ করেন এই গবেষক ।
তিনি বলেন, এর বড় প্রমাণ হচ্ছে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় অভিযোগ তুলেছে- বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ১৪৮টি অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে।
কিন্তু সেই অভিযোগের কোন প্রতিবাদ করেনি কেউ। গত ৪০ বছরে মৌলবাদের অর্থনীতি থেকে নিট মুনাফাগুলো যদি যোগ করা হয় তাহলে, এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ লাখ কোটি টাকা। যা জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। তার ২০ শতাংশ তারা ব্যয় করেছে অস্ত্র প্রশিক্ষণসহ জঙ্গি কাজে।
প্রফেসর বারকাতের মতে, বাংলাদেশে যারা এই মৌলবাদ জঙ্গিবাদের রাজনীতি করছে, আর যারা পৃথিবীতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করছে সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী।
তারা ধর্মের মাইথোসের সঙ্গে বাস্তবের লগোজ (ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে বাস্তবতা) মিশ্রণ ঘটিয়ে অর্থনৈতিক শক্তিভিত্তিক রাজনীতি গড়ে তুলেছে। এদের হাতে রয়েছে প্রচুর অর্থ। রয়েছে প্রচুর অস্ত্র। এরা ডিসিপ্লিনও মানে। এরা মানুষের আবেগকে কাজে লাগাতে পারছে। যেটা ইরানের খোমেনিও পারেননি।
তিনি তার গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে বলেছেন, ২০১৪ সালে মৌলবাদের অর্থনীতির খাত-প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বার্ষিক নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।
এ আয়ের সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ আসছে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি সংস্থা, ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন থেকে আসছে ১৮.৮ শতাংশ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০.৮ শতাংশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৯.২ শতাংশ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে ৮.৫ শতাংশ, সংবাদমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে ৭.৮ শতাংশ এবং পরিবহন যোগাযোগ থেকে ৭.৫ শতাংশ।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে হত্যা পরবর্তী সময়ে মৌলবাদের অর্থনীতি বলে একটি জিনিস গড়ে উঠে বলে জানান অধ্যাপক আবুল বারকাত। তবে সেটা টের পাওয়া গেছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৩০ বছর পর।
এই মৌলবাদের অর্থনীতি গড়ে উঠেছে প্রধানত ৮ খাতকে কেন্দ্র করে। এই ৮ খাতে তারা যে বিনিয়োগ করেছে, তার একটা বড় অংশ পেয়েছে ১৯৭১ সালে লুটপটের মাধ্যমে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ১৯৭৫ পরবর্তীতে কো-আইডোলজি ইনভেস্টমেন্ট বা সম-মতাদর্শের বিনিয়োগ। আর এই সম-মতাদর্শের বিনিয়োগের বেশির ভাগই এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইসলামী দেশ থেকে।
বাংলাদেশে মূলত ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে জঙ্গীদের অর্থায়ন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এই ব্যাংক জঙ্গি অর্থায়ন করে এর বড় প্রমাণ হলো- ২২টি চেক জঙ্গি অর্থায়নের অপরাধে তাদের শাস্তি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন ড. সালেহ উদ্দিন।
জঙ্গি অর্থায়ানে ব্যবহৃত ইসলামী ব্যাংকের ২২টি চেক ধরা পড়লেও বাস্তবে ব্যবহৃত হয়েছে ২২০০টি চেক। কিন্তু প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র ২২টি।
প্রফেসর বারকাতের মতে, মৌলবাদের অর্থনীতি ও সংশ্লিষ্ট রাজনীতি আমাদের মূল চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমাদের সংবিধানে সাংবিধানিক চেতনার বিরুদ্ধেও কাজ করছে। সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতিরও বিরুদ্ধে। এসব কারণে আমি ২০০২ সাল থেকে এই মৌলবাদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলা শুরু করেছি।
ড.আবুল বারকাত জঙ্গীবাদ সৃষ্টিতে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে কিছু প্রস্তাবনাও তুলে ধরেছিলেন।তার সেই প্রস্তাবনার মধ্যে ছিল- তারা যত ধরনের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে গড়ে তুলেছে সেসব প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পক্ষীয় অডিট হওয়া দরকার।
সেটা বাংলাদেশি অডিট ফার্ম দিয়ে না করে বিশ্বের অন্য কোনও দেশের অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করাতে হবে যে তারা শুধু লেনদেন কিভাবে করেছে। তাদের টাকা কোথা থেকে আসে আর টাকা কোথায় যায়। এটা করতে ৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
আর সেই অডিটে যদি জঙ্গি কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মেলে তাহলে সব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হবে। তবে জাতীয়করণ করাও যদি সমস্যা হয়, তাহলে ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন করতে হবে। তারপর পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করতে হবে।
পর্ষদে দাড়ি-টুপিওয়ালা লোকজন রাখা যাবে, তবে যারা অসাম্প্রদায়িক তাদেরকে রাখতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে তাদেরকে রাখতে হবে। ইসলামী ব্যাংকসহ জঙ্গিদের সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমি প্রধানত জাতীয়করণের পক্ষে। জাতীয়করণ করে এটাকে রাষ্ট্রের মালিকানায় নিয়ে আসতে হবে।
মুনাফার একটা অংশ মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের কাজে ব্যয় করতে হবে। আরেকটা অংশ জঙ্গিদের হাতে যেসব ব্লগার নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের মধ্যে এবং বাকি অংশ সামগ্রিক মানব উন্নয়নে ব্যবহৃত হতে পারে।
খ্যাতিমান এই অধ্যাপক-গবেষক ড. আবুল বারকাত কিন্তু তার লেখা, গবেষনা, বই ও নানা প্রকাশনাসহ বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়াতে নানা সময়ে এসব ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারি রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের সর্বোচ্চ পদধারী ও তাদের তোষামোদকারি কিছু বুদ্ধিজীবী এসবকে গুরুত্ব দেননি।
শত্রু কিন্তু মানুষ চিনতে ভুল করেনি। ফলে তাঁর মতো একজন অধ্যাপক-জ্ঞানী গবেষককে এই বয়সে এসে কারাগারে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
তাই বলতে হয় আর কতকাল দেখতে হবে এ খান্ডব-দাহন?
# নুরুল ইসলাম আনসারি, লেখক, গবেষক।