মার্কিন ‘ডিপস্টেট’ ও নোবেল লরিয়েট ইউনুসের ‘ মেটিকুলাস ডিজাইন’ এর অভ্যন্তরে যে ইসলামী জঙ্গীবাদ সোনার বাংলাদেশকে ছারখার করে দিয়েছে তা গত চব্বিশেই বুঝতে পেরেছিলাম।

কথিত ছাত্র-গণআন্দোলনের নামে যে দেশে জঙ্গীবাদের চরম উত্থান ও সামরিক-জঙ্গী ক্যু হয়েছিল তা তখন থেকেই বলে আসছিলাম এ ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজের দল গুছায়নি। সরকার গুছায়নি। দেশকেও গুছায়নি। তবে কিছু নেতা-গিরগিটি তাদের আখের গুছিয়েছে।

এরই সুযোগে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের সর্বত্র একাত্তরের পরাজিত মার্কিন-পাকিস্তানী অপশক্তি তাদের অবস্থানকে কিন্তু ঠিকই সুসংহত করে নিয়েছে। আওয়ামীলীগ এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম নাগরিকের মন রক্ষা ও “ধর্ম” রক্ষায় বেশি মনযোগী ছিল। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ইসলামী সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদ তার শুধু ঘাঁটিই গেড়ে বসেনি, তারা ২০২৪ এর ৫ আগষ্ট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাই দখল করে নিয়েছে।

এ কথাগুলো বার বার বলার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন প্রগতিশীল মহল থেকে এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগকে, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তথা প্রধানমন্ত্রীর গোচরে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনিও ঠিক তাঁর পিতা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতই এসব কানে তোলেননি।

বরং তিনি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাকে কোন ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে দেন।তিনি হয়তো ধারণা করেছিলেন যে, এই কওমী ইসলামপন্থীরা ( রাজনৈতিকভাবে এরা হেফাজতে ইসলামী, জেএমবি, হরকাতুল জেহাদ, লস্কর-ই-তৈয়বাসহ চরম ইসলামি জঙ্গী অনুসারি) তাঁকে অর্থাৎ আওয়ামীলীগকে ভোট দেবে।

পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী’র বিরোধীতা করবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। কিন্তু সেটি ছিল সম্পূর্ন ভুল ধারণা ও রাজনৈতিক অপরিপক্কতাসহ আওয়ামীলীগের মত মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারি দলের অনেক বড় রাজনৈতিক ব্যর্থতা। এ বিষয়টিই বোঝেননি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী। যার মাশুল দিচ্ছে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবচেয়ে বড় অংশের নাগরিকরা।

এই কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চরমভাবে মিসগাইড করেছিলেন তারই মন্ত্রীসভার সদস্য ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। হাছান মাহমুদ ছিলেন তৎকালীন হেফাজতে ইসলামীর আমীর ও হাটহাজারিতে অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কওমী মাদ্রাসার (এই মাদ্রাসাটির নাম আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম।

এটি কওমী মাদ্রসার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সমতুল্যের) প্রধান নেতা মাওলানা আহমদ শফি তথা তেঁতুল হুজুরের খুব কাছের লোক এবং আত্মীয়। তাঁকে তেঁতুল হুজুর কেন বলা হয় তা নিশ্চয়ই পাঠকের অজানা নয়।

ড. হাছান মাহমুদ এই আত্মীয়কে ম্যানেজ করেছিলেন শেখ হাসিনার কিছুটা গুণগান করতে। এবং তাতে সফলও হয়েছিলেন। কওমী মাদ্রাসাকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়াতে হেফাজতে ইসলামী তথা কওমী মাদ্রাসাগুলোর পক্ষ থেকে তখন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে “ কওমী মাতা” উপাধি দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছিলেন।

হাটহাজারিতে এই মাদ্রাসাটির জন্য রেলওয়ের মূল্যবান বেশ বড় জায়গাও বাগিয়ে নিয়েছিল তখন।

কিন্তু যে উদ্দেশ্য বা লোভে পড়ে ( ভোট পাওয়ার লোভ) আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গী উৎপাদনের অন্যতম কারখানা কওমী মাদ্রাসাকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন সে আশাভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি।

শুধু হাটহাজারির বড় মাদ্রাসাই নয় সারাদেশেই কওমী মাদ্রাসাগুলো আওয়ামীলীগ সরকারের নানা ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তা পেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা এটি বুঝতে পারেননি যে এই হেফাজতে ইসলামী ঠিকই ভেতরে ভেতরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য চরমপন্থী উগ্র উসলামী গোষ্ঠীর সঙ্গে আভ্যন্তরীন সম্পর্ক রেখেছে।

যার বহি:প্রকাশ ঘটেছে ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্ট এর কথিত ছাত্র-গণআন্দোলনে। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে – শেখ হাসিনা যদি কওমী মাতা হয়ে থাকেন তাহলে সারাদেশের কওমী অনুসারিরা সবাই তাঁর সন্তান। তো সেই সন্তানেরা তাদের সেই “ কওমী মাতা শেখ হাসিনা”কে রক্ষা করলোনা কেন ? অবশ্য এ প্রশ্ন করলে প্রশ্নকর্তাকে আওয়ামী সদস্যরা “ জামায়াত” বা অন্য কোন ট্যাগ লাগিয়ে দেবেন।

১৯৭১ এ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশটি পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিলো, একটি নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট বাংলাদেশের জন্ম হলো।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কিন্তু নানা চড়াই-উৎরাই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশটিকে একটি স্বাবলম্বী-আত্মনির্ভরশীল দেশে পরিণত করার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা- এ বিষয়টি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

কিন্তু সেখানে তিনি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারি কিছু “গিরগিটি”র কারণে। এসব গিরগিটি যেমন তাঁর আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ছিল ও রয়েছে তেমনি তার দলের মধ্যেও রয়েছে।

এসব অতি স্তাবকরা সবসময়েই “গিরগিটি’র ভূমিকা পালন করেছে। যেমন ছিল বঙ্গবন্ধুর সময়ে , তেমনি তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার সময়েও। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে খোন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মাহবুব আলম চাষীসহ আরো বেশ কয়েকজন ‘ গিরগিটি’ ছিলেন।

তেমনি শেখ হাসিনার শাসনামলেও অসংখ্য ‘গিরগিটি’ তাকে ঘিরে রেখেছিল। ফলে সত্যিকার দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ, নির্লোভ আওয়ামী সমর্থক-নেতাকর্মী, নির্লোভ বঙ্গবন্ধু প্রেমিক লোকজনকে তিনি দূরে ঠেলে রেখেছিলেন।

তার জীবন্ত প্রমাণ আমরা পেয়েছি এ বছর ১৫ আগষ্টে একজন রিক্সাচালক আজিজুর রহমানের মত সত্যিকার বঙ্গবন্ধু প্রেমিকের কাছ থেকে। যে আজিজুর আওয়ামীলীগ নয় শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন ধানমন্ডির সেই অবিনাশী বাড়িটির দিকে।

তিনি যেতে পারেননি মব সন্ত্রাসীদের কারণে ঠিকই, কিন্তু তাঁর শ্রদ্ধাঞ্জলি পৌঁছেছিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে। জেল পর্যন্ত খাটতে হলো তাঁকে। তার বিরুদ্ধে জঙ্গী ইউনুসের করিৎকর্মা পুলিশ কর্মকর্তারা খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে দিলেন !

কিন্তু এমন আজিজুররা কিন্তু কোনদিন আওয়ামীলীগ থেকে-আওয়ামীলীগ সরকার থেকে কখনো কিছু চায়নি। পায়ওনি। তাঁদের চাওয়া-পাওয়াতো এ দেশেটির সফল রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমন হাজারো-লাখো আজিজুর এদেশের আনাচে কানাচে রয়েছে। কই তাদের অবদান কি আমাদের আওয়ামীলীগের বাঘা বাঘা নেতারা স্মরণ করেন কখনো ?

যেই নুর হোসেন নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় নিজের উদোম শরীরে ‘ স্বৈরাচার নীপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে বুকের তাজা রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছিল ঢাকার রাজপথে তাঁর সেই আত্মত্যাগকে কয়জন রাজনীতিবিদ সত্যিকার অর্থে সম্মান জানান ?

২০২৪ এর ৫ আগষ্টের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যখন দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হলো তার আগে-পরেতো অনেক বাঘা বাঘা নেতা দেশ থেকে চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। অনেকে অবশ্য গ্রেপ্তার হয়ে এখনো নানা নির্যাতন ভোগ করছেন কারাগারে।

কিন্তু ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে সত্যিকার অর্থেই তেমন কোন কর্মসূচী পালন করতে পেরেছে আওয়ামীরগি বা তার সহযোগী সংগঠনগুলো ? নানা বাধার কারণে পারেনি হয়তো। তবে জাতির পিতার যে আদর্শ তা ঠিক কতজন ধারণ করতে পেরেছেন?

যদি পারতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় গত চব্বিশে’র ৫ আগষ্ট সৃষ্টি হতোনা। দেশ আবার সেই পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরে যেতোনা। বর্তমান জঙ্গী ইউনুস সরকার শুধু পারছেনা বাংলাদেশ নামটিকে বদলে দিয়ে আবার একাত্তর পূর্ববর্তী ‘ পূর্ব পাকিস্তান’ এ ফিরে যেতে। শুধু নাম বদলটিই বাকী রেখেছেন এই নোবেল লরিয়েট। বাদবাকী সব কিছুই অবশ্য চলছে পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের নির্দেশে।

তার চরম প্রমাণতো আমরা সেই গত ’২৪ এর ৫ আগষ্ট থেকে এখন প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যেসব দেশ পরম বন্ধুর মত হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল নিজেদের অনেক ক্ষতি স্বীকার করেও সেসব দেশকেই চরম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিনিয়ত তাদেরকে গালি দেয়া হচ্ছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের চরমভাবে অপমানিত করা হচ্ছে। জুলাইয়ের কথিত গণ আন্দোলনের সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধ- মুক্তিযোদ্ধা- বঙ্গবন্ধু-জয় বাংলা কে যতভাবে অপমান-লাঞ্ছিত করা যায় তার কোন কিছুই বাদ রাখেনি এই ‘জঙ্গী ক্যু’ এর অভিনেতারা।

যার ফলে এখন বাংলাদেশে এখন ঘন ঘন পাকিস্তানী মন্ত্রী-আমলা-সামরিক কর্মকর্তা-গোয়েন্দা কর্মকর্তা-পাকিস্তানী জাহাজ-পণ্য ইত্যাদিতে ভরে উঠছে। আর এসব পাকি কর্তাব্যক্তিরা এই স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকেই চরমভাবে অপমান করে যাচ্ছে।

আর ইউনুস সরকার, সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল- বিএনপি- জামায়াত- এনসিপিসহ অন্য দলগুলোও গদগদ হয়ে তাদেরকে সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছে। জামায়াত-এনসিপি’র কথা না হয় বাদই দিলাম।

কারণ তারা পাকিস্তানী মায়ের পেটের ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্র-পুত্রী। কিন্তু বিএনপিতো নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার দল হিসেবে দাবি করে। কারণ এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধকালে একটি সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন।

কিন্তু ভাবতেও অবাক লাগে সেই বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী ও দলটির বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে বিএনপি দল থেকে আপাতত: তিন মাসের জন্য বহিষ্কার করলো।

তার অপরাধ তিনি এসব জঙ্গী টোকাই এনসিপি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘাতক দল জামায়াতে ইসলামী’র প্রচন্ড কড়া সমালোচক। আর সেজন্য এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার জন্য কিছু জঙ্গী-অসভ্য টোকাইকে তার পেছনে লেলিয়ে দেয়া হলো। অশ্রাব্য ভাষায় শ্লোগান দেয়া হলো তার বিরুদ্ধে।

কাগজে সেই অকথ্য ভাষা লিখে এক তরুণী ও কিছু হুজুর জাতীয় লোককে দেখা গেছে এই মব সন্ত্রাসী কাজে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য।

জঙ্গী ইউনুস সরকারত্যাগী সাহসী কূটনীতিক মরক্কোর সাবেক রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশীদ সম্প্রতি তার ফেইসবুকে একটি পোষ্টে লিখেছেন- “ প্রায় ২৫ বছর পাকিস্তানি কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি। এই পঁচিশ বছরে এদের চেহারা ক্রমে মলিন হয়েছে, এদের কাপড় চোপড়ের মান ক্রমে নিচের দিকে নেমেছে।

আরও আরও অবনতি দেখেছি যা ভদ্রতার খাতিরে উল্লেখ করলাম না। এরপরও বাংলাদেশের মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী স্বাধীনতাবিরোধিদের কী পেয়ার পাকিস্তানের সাথে। দুইতিন বছর আগেও শতশত পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক শিক্ষিত মানুষ বলেছে: সুইজারল্যান্ড দরকার নাই, আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। সেই বাংলাদেশ তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোলমডেল।

গত এক বছরে ইউনুস সেখান থেকে বাংলাদেশকে টেনে ডুবিয়েছে। অচিরেই হয়তো আমাদেরও বলতে হবে: সিঙ্গাপুর নয়, আমাদেরকে পাকিস্তান বানিয়ে দাও। সাবাস ইউনুস! তুই বড়ই ধন্য। ধন্য তোর অর্জন।” এই কূটনীতিক আরো অনেককিছুই লিখেছেন, কিন্তু এত বড় লেখা পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে তাই আর উল্লেখ করলাম না।

মুক্তিযোদ্ধা, লেখক মনজুরুল হক অত্যন্ত স্পষ্ট ও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, “ মুক্তিযুদ্ধ কোনও কল্পবিলাস নয়, নিরেট বাস্ততা। বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে নিয়ে কয়েকজন পার্ভাট আর ডিরেইলড বিএনপি অথোরিটি যে বøান্ডার করেছে তার প্রতিবাদে অনেকে অনেকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ফেসবুক পরিসরে সকলেরই কথা বলার সমান অধিকার। তাই বলে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আবেগী কথাবার্তা অর্থহীন।

তিনি বলেন-কয়েকজনকে বলতে দেখলাম-“আপনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করতেই পারেন। পারেন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করতে, গলায় জুতোর মালা পরাতে, ছবিতে জুতো মারা কর্মসূচি পালন করতে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে দেওয়া যায়, মব লেলিয়ে অপদস্থ করা যায়, হত্যা করা যায় কিন্তু নিঃশেষ করা যাবে না।”

আমি স্পষ্টভাবে এইসব আবেগী কাব্য ঢঙের ন্যাকামির তীব্র বিরোধীতা করি। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মব লেলিয়ে অপদস্থ করে জুতোর মালা পরিয়ে জেলে পুরো হত্যা করা হচ্ছে, আর আপনি ন্যাকা ন্যাকা শব্দে বলছেন-“একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে দেওয়া যায়, মব লেলিয়ে অপদস্থ করা যায়, হত্যা করা যায় কিন্তু নিঃশেষ করা যাবে না!”

একজন মুক্তিযোদ্ধা কোনও দলের প্রতিনিধি হয়ে যুদ্ধে যাননি। তিনি দেশরক্ষা, দেশের মানুষ রক্ষার কর্তব্যে গিয়েছেন। বর্তমান সময়ে তিনি কোন দল করেন, কি পেশায় আছেন এসব মোটেও তার মুক্তিযোদ্ধার ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করে না যদি না তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত না মেলান।

সামর্থ্য থাকলে ফজলুর রহমান বা এমন সংকটে পড়া মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাঁড়ান। তার হয়ে প্রতিবাদ করুন। সাত-আটজন টোকাই মবকে রুখে দেওয়া হাতি-ঘোড়া নয়। মুক্তিযোদ্ধারা বয়োঃবৃদ্ধ কিন্তু আপনি তো তা নন। আপনি মুক্তিযুদ্ধের এই প্রজন্মের সমর্থক। তাই তাদেরকে রক্ষা করা আপনার কর্তব্য। না পারলে চুপ থাকুন, তবুও দয়া করে-“একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে দেওয়া যায়, মব লেলিয়ে অপদস্থ করা যায়, হত্যা করা যায় কিন্তু নি:শেষ করা যাবে না!”-এর মত ন্যাকামি করবেন না।”

তবে এতসব হতাশার মধ্যেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারি জামায়াতে ইসলামীসহ তাদের একই তরিকার লোকজন প্রতিবাদী-প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান সম্পর্কে যত অপপ্রচার ও বিরোধীতাই করুক না কেন তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় কিন্তু তাঁর পক্ষে অসংখ্য সাধারন মানুষ তার পক্ষে দাড়িয়েছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানরে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং তাঁর বাসার সামনে মবতন্ত্রের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জের ইটনা ও অষ্টগ্রামে বিক্ষোভ হয়েছে। এই দুই উপজেলা তাঁর নির্বাচনী এলাকায় পড়েছে। গত ২৬ আগষ্ট মঙ্গলবার বিকেলে আইনজীবী ফজলুর রহমানের জন্মভূমি ইটনায় হাজারো মানুষ প্রথমে ইটনা সদর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে উপজেলা পরিষদের পাশে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

এতে অন্যদের মধ্যে ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক স্বপন ঠাকুর, সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলামসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। এর আগে দুপুরে অষ্টগ্রাম উপজেলা সদর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন শত শত মানুষ। পরে সদর বাজারের জামতলী মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সেখানে বক্তব্য দেন অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম শাহীন, যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, সদস্যসচিব আলী রহমান খান প্রমুখ।

এই দুই সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফজলুর রহমান একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারি। ৫ আগস্টের পর থেকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পক্ষ থেকে একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য আসতে থাকে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ফজলুর রহমান এসব দেখে চুপ থাকতে পারেননি।

এর পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও এনসিপি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাঁরা অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তা না হলে ঢাকা অভিমুখে মার্চ করা হবে- এমন ঘোষণাও দেন তারা সমাবেশ থেকে।

তাই শত-হাজার দু:খ-হতাশার পরেও বলে উঠি -আমার মাটি আমার মা পাকিস্তান হবেনা। তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা-মেঘনা যমুনা। মুক্তিযুদ্ধই আমাদের একমাত্র আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধারাই আমার সোনার বাংলার স্রষ্টা। এই বাংলা হারবেনা কোনদিন।

তবে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগকে গিরগিটি থেকে অত্যন্ত সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। দলকে-নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ হয়ে সাধারণ জনগণের হৃদয়ে স্থান নিতে হবে।

# রাকীব হুসেইন: লেখক, প্রবন্ধিক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *