বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা যদি কোন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টানদের ওপর আক্রমণ করে, তাদের মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা এসব ভেঙ্গে দেয়, পুড়িয়ে দেয় তাতে কোন সমস্যা নেই।
যদি এসব ধর্ম নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও তাদেরকে দেশত্যাগ করার প্রকাশ্যে হুমকিও দেয় তাতেও কোন সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে কোন ধর্মীয় অবমাননা হয়না। কিন্তু ধর্মীয় অবমাননা হয় শুধুমাত্র অন্য ধর্মাবলম্বীদের কেউ যদি আকারে ইঙ্গিতেও কিছু প্রকাশ করে তাহলেই।
যদিও বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত অন্য ধর্মাবলম্বী কোন সদস্য মুসলিমদের ধর্ম বা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য করার দুঃসাহস দেখায়নি। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে যত মামলা হয়েছে তার সবগুলোই হয়েছে অন্য ধর্মাবলম্বী মূলত হিন্দুদের বিরুদ্ধে।
অবশ্য রামুতে এক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর বিরুদ্ধেও ধর্ম অবমাননার কল্পিত অভিযোগ তুলে সেখানে অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছিল কয়েকবছর আগে। তবে কোন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর বিরুদ্ধে কখনো ধর্মীয় অবমাননার মামলা হয়েছে বলে জানা যায়নি।
গত ২০২৪ সালে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ইসলামী জঙ্গী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে সারাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী নাগরিকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করছিল। আর সেই সনাতনী আন্দোলন শুধুমাত্র গতানুগতিক যেসব সনাতনী সংগঠন ছিল এতদিন বাংলাদেশে তারা করেনি। এর সাথে আপামর হিন্দু জনগোষ্ঠী সমবেত হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল।
বিভিন্ন মঠ মন্দির-আশ্রমের ধর্মীয় সাধু-সন্তরাও মাঠে নেমে এসেছিলেন। আর তখন এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চিন্ময় দাস নামে এক গৃহত্যাগী সাধু।
যিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারি মেখলে অবস্থিত একটি মন্দির ও আশ্রমের প্রধান সংগঠক ছিলেন। তিনি মূলত বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি মোর্চার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অধিকাংশ নাগরিক সংহতি জানিয়ে মাঠে নেমেছিলেন।
কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সেই প্রতিবাদী-অধিকার আন্দোলনকে জঙ্গী ইউনুস সরকার মনে করলেন, এটি তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন।
জামায়াত-শিবির-হেফাজত-, এনসিপি( তখনকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক যা পরবর্তীতে এনসিপিতে পরিণত হয়) জামায়াতে ইসলামী, বিএনপিসহ ইসলামী দলগুলো চরম বিরোধীতা করতে শুরু করে। তারা এটিকে ভারতীয় ও হিন্দুত্ববাদী চক্রান্ত বলে নানা ষড়যন্ত্র খুঁজতে থাকেন।
শুধু তাই নয় তারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারি চিন্ময় সাধু ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে নানারকম অপপ্রচার চালানো শুরু করে। পাশাপাশি পতাকা অবমাননার অভিযোগ তুলে তা দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও করে।
যদিও এটি কোনভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়না। আর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে শুধুমাত্র রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের মনোনীত ব্যক্তি। তা মানা হয়নি। শুধুমাত্র চিন্ময়কে কারাগারে রাখার জন্য এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি করা হলো।
সেই মামলাটি করা হয়েছিল চট্টগ্রামের নিউমার্কেটের মোড়ের গোলচত্বরের যে স্মম্ভ রয়েছে তার চূড়ায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে একটি গেরুয়া রঙ্গের পতাকা টানানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যে মামলাটি করা হয়েছিল সেটিতে পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়। যা চরমভাবে হাস্যকর।
মূলত এটি ছিল চিন্ময় সাধুকে গ্রেপ্তার করে হিন্দুদের প্রতিবাদ ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়া।
অথচ এর পরেও আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি ইসলামী ছাত্র শিবির, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামী, চরম উগ্রবাদী ইসলামী জঙ্গী ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন তাদের পতাকাকে জাতীয় পতাকার উপরে বেঁধে মিটিং মিছিল করেছে। কিন্তু তখন আর কোন জাতীয় পতাকার অবমাননা হয়নি!
তখন রাষ্ট্রদ্রোহীতা হয়নি। কারণ এরা ইসলামী সংগঠন। তাই এদের কর্মকান্ড কখনো অপরাধের পর্যায়ে পড়েনা জঙ্গী-প্রতারক ইউনুস সরকারের কাছে।
এমনকি আমরা এমনও দেখেছি যে, রাস্তায় জাতীয় পতাকা বিছিয়ে তার ওপর দাঁড়িয়ে ইসলাম রক্ষাকারিরা নামাজ পড়েছে। এসবও সামাজিক যোগাযোহ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। অথচ তাতে কোন সমস্যা হয়নি এদেশের ইসলাম পন্থী দেশপ্রেমিক (!) নাগরিকদের।
অতি সম্প্রতি চট্টগ্রামের সেই বহুল আলোচিত-সমালোচিত নিউমার্কেট চত্বরে পতাকা কান্ড’র স্থানে আরো একটি পতাকা অবমাননার ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন বা বিএনপিসহ অন্য ইসলামপন্থীরা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ।
এমনকি চট্টগ্রাম বা ঢাকার কোন পত্রিকাতেও এ ধরনের কোন সংবাদ চোখে পড়েনি। চট্টগ্রাম থেকে আমার পরিচিত কয়েকজন জোনালেন যে, নিউমার্কেটের গোল চত্বরে যে স্মৃতিস্তম্ভটি রয়েছে সেটির চুঁড়ায় জাতীয় পতাকার খানিকটা উপরে চাঁ-তারকা খচিত একটি সবুজ রঙ্গের পতাকা উড়ছে বেশ কিছুদিন ধরে।
যতদূর জানা গেছে এই পতাকাটি কোন ইসলামী ধর্মীয় সংগঠন লাগিয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও কিছু নির্দিষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে। সেগুলো মেনেই জাতীয় পতাকার উত্তোলন ও তা সঠিক সময়ে মর্যাদার সাথেই নামাতে হয়।
কিন্তু নিউমার্কেটের মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় পতাকাটি সেই যে লাগানো হয়েছে তার আর নামানোর কোন উদ্যোগ কেউ নেয়নি। আবার এটির ওপরে অন্য আর একটি ভিন্নরকম পতাকা উড়িয়ে দেয়ার পরও কি জাতীয় পতাকার অবমাননা হয়নি? এতে করে কোন রাষ্ট্রদ্রোহ হয়নি? নাকি এটি ইসলামী চিহ্ন সম্বলিত পতাকা বলে কোন অপরাধ ঘটেনি? (গত ২৫ সেপ্টেম্বর তোলা ছবি সংযুক্ত করা হলো)
তাহলে জাতীয় পতাকার অবমাননা হয় শুধুমাত্র হিন্দুদের ক্ষেত্রে ? আর রাষ্ট্রদ্রোহ ঘটে শুধুমাত্র হিন্দুদের ক্ষেত্রে ? – এমন ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্ন উঠলেও কিছু করার নেই। কোন মুসলিম তাদের চাঁদতারা খচিত ইসলামী পতাকা বা কোন ইসলামী জঙ্গী সংগঠন তাদেরর দলীয় পতাকাও যদি জাতীয় পতাকার ওপরে তুলে দেয় তাতে কোন অপরাধ নেই ? যত দোষ হিন্দুসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য কোন দোষ নেই। আর যদিও তা দেশের প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটে তাতেও কোন দোষ নেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের। কারণ ইসলাম হচ্ছে তাদের ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম।
এবছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা শুরু হওয়ার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাংচুর, মন্দির-মন্ডপ ভাংচুরের খবর দেখেছি আমরা।
তা নিয়ে নানা ধরনের সরকারি-বেসরকারি মন্তব্যও শুনেছি। সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুর্গাপূজার আয়োজন নিয়ে চরম অপমানজনক মন্তব্য করলেও তা নিয়ে তেমন কোন প্রতিবাদ দেখিনি আমরা হিন্দু ধর্মীয় অধিকার আদায়ের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে।
এর কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলছেন- নানা ধরনের হয়রানীর শংকা, আবার কেউ বেলছেন ধর্মীয় ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সুবিধা আদায়ের কারণে তোষামোদী। কেউ পদ-পদবীর লোভে কোন প্রতিবাদ করছেন না।
বরং চরম তোষামোদে ব্যস্ত এসব নেতারা। যা গত কয়েকদিন দুর্গাপূজা উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের সময়েই দেখা গেছে।
এবার ধর্মীয় অবমানননার বিষয়ে দু চারটে কথা না বললেই নয়। বার্তা সংস্থা বিডিনিউজটুয়েন্টিফোর ডটকম গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধির বরাত দিয়ে জানিয়েছে- “ মানিকগঞ্জে একটি শতবর্ষী কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে ধর্মীয় উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় একটি শতবর্ষী কালী মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের ভবানিপুর গ্রামের বিশ্বাসপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে শিবালয় থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান।
কালী মন্দির কমিটির সভাপতি রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “আমাদের মন্দির শতবর্ষী। ১০০ বছর আগে থেকে এখানে কালী পূজা হচ্ছে। সকালে স্থানীয়রা মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে ভাঙচুরের চিহ্ন দেখে আমাকে জানান। কালী প্রতিমার হাত, মাথা ভেঙে দিয়ে গেছে।” গ্রামে আগে কখনও এমন ঘটেনি জানিয়ে রঞ্জন বিশ্বাস আরও বলেন, “আমরা হিন্দু-মুসলমান এখানে একসঙ্গে বাস করছি। কোনো বিরোধ নেই। দুর্গা পূজা শুরুর সময়ে এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা হচ্ছে বলে ধারণা করছি।”
এ ঘটনায় পুলিশ সুপার, পূজা উদযাপন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।ওসি কামাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, জেলা পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন”।
আচ্ছা এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে- এই যে প্রতিমা ভাংচুর করা হলো এতে কি ধর্মের অবমাননা হয়না? এর ফলে কি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ঘটেনি? এর কারণে কি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের মনে আতংক দেখা দেয়নি যে এ অবস্থায় তারা আর এদেশে থাকতে পারবেন কিনা ? বা থাকলেও শান্তিপূর্ণভাবে-নিরাপদে থাকতে পারবেন কিনা? সত্যিকার অর্থে এর সঠিক উত্তর আমাদের সবারই জানা। আর তা হলো- “না”।
কী করলে ধর্মীয় অবমাননা হবে?
এমন প্রশ্নর উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা জানতে পারলাম তাহলো- বাংলাদেশের আইনে বলা হয়েছে, ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। কোন ধর্মীয় স্থানের ক্ষতি সাধন, অসম্মান করা, লিখিত বা মৌখিকভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি, অসম্মান করার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় স্থানে অনধিকার প্রবেশ বা ধর্মীয় বাক্য বা শব্দের বিকৃতি ধর্মীয় অবমাননা বলে গণ্য হবে।
সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক কয়েকবছর আগে বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”বাংলাদেশের আইন কোন নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়। সব ধর্মের অনুসারীরাই তাদের ধর্মানুভূতি আহত হলে এই আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন। তবে সাধারণত দেখা যায়, ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীরাই এই আইনের আশ্রয় বেশি নিয়েছেন।
“অন্য ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী বাংলাদেশে ধর্মবিশ্বাস আহত হওয়ার অভিযোগে এই আইনের সহায়তা নিয়েছেন বলে আমার জানা নেই।”
আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশের আইনে ধর্মানুভূতি আঘাত করার অভিযোগে মামলা করার বা বিচার প্রক্রিয়ায় শাস্তির উদাহরণ বেশি নেই। কিন্তু ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ বা পিটিয়ে হত্যার ঘটনা অনেকবার ঘটেছে।
বাংলাদেশের আইন ও শাস্তি
বাংলাদেশে যে আইনে ফৌজদারি অপরাধের বিচার করা হয়, সেই ১৮৬০ সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে ধর্মীয় অবমাননার বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন রয়েছে। আইনটি ১৯২৭ সালে সংশোধন করে নতুন একটি ধারা যোগ করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই আইনটি সামান্য পরিবর্তন করে গ্রহণ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, বাংলাদেশে বা ভারতে ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা বা ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই আইন রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৬০ সালে যে ফৌজদারি দণ্ডবিধি তৈরি করা হয়, সেখানেই এ সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। পরবর্তীতে যদিও সেটি কিছু কিছু সংশোধিত হয়েছে।
”এই আইনের ২৯৫ থেকে ২৯৮ ধারায় ধর্মীয় অবমাননার ব্যাখ্যা ও শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। যেকোনো ধর্মের মানুষের জন্য তাদের বিশ্বাস আহত হলে ফৌজদারি দণ্ডবিধির আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। ” তিনি বলছেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শান্তি-সম্প্রীতি-নিরাপত্তা- নাগরিক অধিকারের বার্তা নিয়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস গেলেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে।
আমরা দেখেছি তখন হিন্দু নেতারা কি পরিমান তোয়াজে ব্যস্ত ছিলেন। শান্তির দূত (!) প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস সেদিন ঢাকেশ্বরী মন্দিরের অনুষ্ঠানে বললেন-“ ঐক্যবদ্ধ হলে আমরা সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে পারবো। আমরা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ধর্মপালন করতে চাইনা।
আমরা নাগরিক হিসেবে মুক্তভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে চাই। এটি নিশ্চিত করতে হবে– আমরা এমন একটি দেশ বানাতে চাই। নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে ধর্ম পালন করবো- এটি কোন ধরনের দেশ বানালাম আমরা?এটি হাস্যকর একটি বিষয়।
এমন দেশ বানানোর জন্য কি আমরা এত ত্যাগ-এত রক্ত দিয়েছি? তাই আমি বলি নিরাপত্তা নয়, বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমরা ধর্ম পালন করতে চাই। এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তভাবে ধর্ম পালন করার নিশ্চয়তা চাই।”
বাংলাদেশ নামক দেশটি ধ্বংসের এই হেডমাষ্টার হিন্দু নেতাদেরকে হিপনোটাইজ করার মত করে আরো বললেন-“ ধর্ম নিয়ে যত পার্থক্যই থাকুকনা কেন রাষ্ট্র আমাদের প্রতি পার্থক্য করতে পারবেনা। কারণ রাষ্ট্র দায়বদ্ধ।
যে যে ধর্ম-মতবাদেই বিশ্বাস করুন না কেন রাষ্ট্রের কাছে সে নাগরিক। সংবিধানেই সেই নাগরিকের অধিকার দেয়া আছে। সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা আছে অধিকার। কোন অধিকার নাই রাষ্ট্রের কারো প্রতি বৈষম্য করার। কাজেই যত কথাই বলি নাগরিক হিসেবে অধিকার দিতে হবে.. ইত্যাদি ইত্যাদি।”—প্রকৃতপক্ষে এগুলো হলো- বাতকা বাত। বলতে হয় তাই বলেন।
আসলে এসব হলো সান্ত্বনার বাণী।আইন যা আছে তার সবকিছুই বাস্তবায়ন হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ইচ্ছে অনুসারে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোন আবদার এখানে টিকবেনা। এটি ফাইনাল। এতে ইসলাম ধর্মের বাইরে অন্য যেসব ধর্মের নাগরিক রয়েছেন তারা পোষালে থাকবেন, না পোষালে চলে যাবেন অন্য কোথাও—রাষ্ট্র ও রাজনীতিবিদদের মনোভাব তেমনটিই।
#ইশরাত জাহান, লেখিকা, প্রাবন্ধিক ও নারী অধিকার সংগঠক।