যতবারই শুনি ততবারই চোখ দিয়ে নিজের অজান্তে পানি বেয়ে পড়ে। কিন্তু আমিতো কখনো আওয়ামীলীগ করিনি। ছাত্রলীগ করিনি। যুবলীগ করিনি। এমনকি আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্ট কোন সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলাম না কখনো।

নিতান্তই একজন সাধারণ বাঙ্গালী আমি। ছাপোষা মানুষ। এমন অসংখ্য মানুষ আছে এই বাংলায় যারা আওয়ামীলীগ করেনা কিন্তু এই দেশটির জন্মদাতা-বাংলাদেশ নামে দেশটির স্রষ্টা- এই দেশটির স্থপতি শেখ মুজিবকে ভালোবাসেন।

তাঁকে জাতির পিতা হিসেবে আজীবন সম্মান করেন। হৃদয়ের মণিকোঠায় যে অকুতোভয় মানুষটির ঠাঁই তাঁকে কি করে সরাবে ওই হায়েনার দল ?

কোথাকার কোন ইউনুস, কোন জামায়াতে ইসলামী, কোন ডাস্টবিন শফিক আর জঙ্গী টোকাইয়ের দল কি আউল-ফাউল বললো তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, তবে তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সুদৃঢ় ঐক্য চাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মত।

তবে এবার সব রক্ষচক্ষুকে উপেক্ষা করে নানাভাবেই দেশে ও বিদেশে জাতীয় শোক দিবস পালন হবে এমনটাই খবর পাওয়া গেছে।

এই আগষ্ট মাস এলেই একধরনের বিষন্নতা পেয়ে বসে আমায়। আমার দৃঢ বিশ্বাস শুধু আমার মত নগন্য মানুষ নয় লক্ষ কোটি বাঙ্গালীর মনেই এই বিষন্নতা কাজ করে।

কিন্তু সেই বিষন্নতা-শোককে শক্তিতে পরিনত করেই এ বাঙ্গালী আবার জেগে উঠছে। জেগে উঠবে সেই একাত্তরের রণহুংকার জয় বাংলা.. জয় বঙ্গবন্ধু বলে।

ওই পরাজিত পাক-মার্কিন জঙ্গী বিশ্ব আর এ দেশের কিছু কুলাঙ্গার হায়নার বাইরে কোটি কোটি বাঙ্গালী বাঙ্গালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী বাঙ্গালী জাতির মুক্তিদাতাকে হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়ে রেখেছে। তা ওই পাকি জারজ কুলাঙ্গাররা কে কি বললো তাতে কি আসে যায় হিমালয়সম মানুষটির ?

একটু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করি পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটলে। সেটি সম্ভবত: ১৯৯৩ কি ১৯৯৪ সাল হবে। কলকাতা গিয়েছিলাম একটি কাজে। হঠাৎ কেন জানি মনে হলো যে আকাশবাণী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এত সাহায্য করেছে সেটি একটু দেখতে পারলে মন্দ হতোনা।

আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে ভরাট কন্ঠে খবর পড়তেন শ্রদ্ধেয় দেব দুলাল বন্দোপাধ্যায় তাঁর সাথে একটু দেখা করে আসি। এক বন্ধুর সাহায্যে আগে থেকে যোগাযোগ করে দিন ক্ষন ঠিক হলো। গেলাম যথাসময়ে। আকাশবাণীর গেইটে আগেই বলা ছিল। তাও ঠিকভাবে তারা চেক করে ঢোকালেন ভেতরে।

এরপর সেই কাঁচের মোটা লেনসের চশমা চোখে দেয়া ও খদ্দরের পাঞ্জাবি পড়া লোকটির ( দেব দুলাল বন্দোপাধ্যায়) কাছে গিয়ে প্রনাম জানিয়ে নিজেদের পরিচয় দিলাম। বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনেই তিনি সেদিন দেখা করতে রাজী হয়েছিলেন।

তবে দেখার প্রথমেই যেটি বললেন- “আপনারা কেমন মানুষ হে বলুনতো ! যে মানুষটি বাঙ্গালীর জন্য একটি দেশ স্বাধীন করলেন, বিশ্বেও দরবাওে বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দিলেন, তাকেই আপনারা মেরে ফেললেন ?

তাকে মেরে ফেলতে আপনাদের বিবেকে একটুও বিঁধলো না ? এতটা অকৃতজ্ঞ আর অকৃতঘ্ন মানুষ আপনারা ..!? ” আরও কি কি যেন বলছিলেন। আমরা অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করছিলা এসব বলতে বলতে তিনি তাঁর চোখ থেকে চশমাটি খুলে চোখের জল মুছলেন।

প্রথমে প্রচন্ড অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও বুঝতে পারলাম কি অপরিসীম শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর দুঃখ-বেদনা-ক্ষোভ থেকে তিনি এ কথাগুলো একনাগারে বলে গেলেন। কিন্তু পরক্ষণেই সেসব সামলে নিয়ে সাদরে বসালেন।

এরপর অনেকক্ষণই কথা হলো তাঁর সাথে, যদিও সময় ছিল মাত্র এক ঘন্টার। কারণ শ্রী বন্দোপাধ্যায় সে সময়টিতে আকাশবাণী থেকে অবসরে যাচ্ছিলেন বা যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু আকাশবাণীতে ওনার অবস্থানটি ছিল বেশ সম্মানের।

একজন পরদেশি মানুষ কি করে এত শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, এত ভালোবাসতে পারেন আর একটি দেশের এক দেশনেতাকে তা দেখলামনা বুকের মধ্যে অনুভব করলাম সশ্রদ্ধভাবে। একদিকে কৃতজ্ঞতায় বুকটি ভরে উঠলো। কিন্তু অপরদিকে বেদনায় ভারাক্রান্ত হলো মন- এই ভেবে যে সত্যিইতো আমরা কি পরিমাণ অকৃতজ্ঞ-অকৃতঘ্ন জাতি যা মনে করিয়ে দিলেন শ্রী দেব দুলাল বন্দোপাধ্যায়।

**শেখ মুজিবকে এত ভয় কেন একাত্তরে পরাজিত অপশক্তির ?

যে মানুষটিকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের রাতে সপরিবারে হত্যা করলো একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাক-মার্কিন ষড়যন্ত্রে তাঁকে এত ভয় কেন তাদের ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অনেক কিছুই এসে যাবে।

সংক্ষেপে যদি এর বিশ্লেষণ করতে যাই তা হলো- পাকিস্তান, চিন ও আমেরিকা কখনোই চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। আর স্বাধীন যখন হয়েই গেলো তখন সেই দেশটিকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়া যাবেনা। এ ষড়যন্ত্র তারা করেই যাচ্ছিল।

এজন্যই তারা বেছে নিয়েছিল আওয়ামীলীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু মীরজাফরের মত লোককে। খন্দকার মোশতাক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার মানুষ কিন্তু সাক্ষাত মীরজাফর। আর তার দোসর তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মাহবুব আলম চাষীর মত লোককে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ তখন। সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ঠিকমতো হয়নি।

খাদ্য নেই, ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যবসা বাণিজ্য নেই। কিন্তু এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বন্ধুপ্রতীম দেশের সহায়তায় দেশ গঠনের কাজে লেগেছেন।

কিন্তু ওদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকে পড়া সেনাসদস্যদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাদেরকে সশস্ত্র বাহিনীতে নেয়া হলো। এদের অনেককেই আবার মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের ওপরের ধাপে বসানো হলো। এদের অনেকেই কিন্তু বাংলাদেশ চায়নি। মননে এরা ছিল পাকিস্তানী। খুব কম সংখ্যকই বাংলাদেশপন্থী ছিলেন।

মার্কিনীরা বাংলাদেশের সেই দুরাবস্থার সুযোগ নিয়ে ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের সহায়তায় ও আওয়ামীলীগের মধ্যে ও প্রশাসনের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে থাকা লোকদের দিয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করালো।

ব্যাংক লুট, খাদ্য গুদাম লুট, আগুন ধরিয়ে দেয়া ইত্যাদি। আর দেশে খাদ্যের তীব্র সংকট সৃষ্টি করা হলো। দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। এরই মধ্যে আমেরিকা থেকে খাদ্য শষ্য বোঝাই যেসব জাহাজ আসার কথা ছিল তা আর মার্কিন সরকার পাঠায়নি। ফলে বাংলাদেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিলো।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু এর মধ্যেও এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে পুনর্গঠনের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। বিমে।বর বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে একটি সত্যিকার আত্মনির্ভরশীল দেশ ও শোষণমুক্ত জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি।

এরই মধ্যে ছাত্র-তরুণদের বিভ্রান্ত করে সৃষ্টি করা হলো জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল তথা জাসদ এর। তখন বিশ্বে পুঁজিবাদ তথা ধনবাদী শোষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একধরনের জোয়ার উঠেছিল। সেটাকেই কাজে লাগিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সেই যে কথা আছে না – ‘ লাল দিয়ে লাল ঠেকাও- মানে বিপ্লবকে প্রতিবিপ্লব দিয়ে ঠেকাতে হবে’। সেটাই করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। এজন্য তারা বেছে নিয়েছিলেন জাসদেও সিরাজুল আলম খানকে। যিনি একসময়ে ছাত্রলীগের জাঁদরেল ও বুদ্ধিতান্ত্রিক নেতা ছিলেন। তাঁকে টার্গেট করে পাক-মার্কিন ষড়যন্ত্র এগোতে থাকে।

নেপথ্যে সিরাজুল আলম খান। যিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ কাপালিক’ নামেও পরিচিত। অথচ তিনি মুলত: মার্কিনীদের মদদপুষ্ট এক রাজনীতিবিদ। মুখে সমাজতন্ত্রে কথা, কিন্তু কাজ ভিন্ন। বিভ্রান্ত হলো তরুণ-ছাত্র সমাজ।

মুক্তিযোদ্ধাদেরও একটি অংশ সেই ফাঁদে পা দিলো। এরা নানাভাবে বঙ্গবন্ধুর চরম বিরোধিতা শুরু করলো। অপরদিকে কথিত মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী একসময়ে আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হলেও তিনি তা থেকে বের হয়ে এসে ন্যাপ ( ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) নামে রাজনৈতিক দল করলেন যা ভাসানী ন্যাপ নামে পরিচিত ছিল।

তিনি একটি পত্রিকাও বের করতেন ‘ হককথা’ নামে। এর মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল তখন বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, চরমভাবে ভারত বিরোধীতা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বিরোধীতা চলছিল তাত্ত্বিকভাবে।

আর আওয়ামীলীগের মধ্যে প্রগতিশীল অংশটিকে বঙ্গবন্ধু থেকে বিচ্ছিনান করার নানা ষড়যন্ত্রের কাজ করছিলেন মোশতাক-তাহের উদ্দিন ঠাকুর চক্র। প্রশাসনের ভেতরেও মাহবুবুল আলম চাষীর গ্রুপটি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে তখন। সেনাবাহিনীর একটি অংশকে খেপিয়ে তোলা হলো।

সেই বিভ্রান্ত সেনাসদস্যদের হাতেই ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জনক তাঁর বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে সপরিবারে শহীদ হলেন।

** একই ধরনের ষড়যন্ত্র ১৯৭৫ ও ২০২৪ সালে।

পঁচাত্তরে যেমন ষড়যন্ত্র হয়েছিল পাক-মার্কিন ও এদেশীয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির সমন্বয়ে ঠিক তেমনি ২০২৪ সালেও একই ধরনের ষড়যন্ত্র। তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। পঁচাত্তরে যেমন সমাজতন্ত্রের নামে বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক- শোষণমুক্ত-আত্মনির্ভরশীল দেশ গঠন ঠেকানো হয়েছিল তেমনি করা হয়েছে ২০২৪ সালে। তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারিদের ধরন একই।

বৈষম্যের কথা বলে, সাম্যের কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দেশাত্ববোধক গান- স্লোগান ও জাতীয় পতাকা নিয়ে পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে নকল করে সেই ভাষাতেই তরুন-ছাত্র সমাজকে আকৃষ্ট করে চরমভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।

পচাত্তরেও প্রচন্ড ভারত বিরোধীতা- হিন্দু বিরোধীতা করা হয়েছে। এবারও সেই প্রচন্ড ভারত বিরোধীতা করা হয়েছে কথিত ছাত্র-গণ আন্দোলনে। অবশ্য এটি ছিল মূলত একটি ‘জঙ্গী ক্যু’। পচাত্তরেও দেশ বিক্রির অভিযোগ তোলা হয়েছিল এবার একই অভিযোগ। কিন্তু দেশবাসী এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আসলে কে কার কাছে নতজানু হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন হুমকি ধামকির ভয়ে ভীত না হয়ে বরং হুংকার দিয়ে বলেছিলেন- “ চিলির আলেন্দের মত রক্তে লাল হয়ে যাব, তবু সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করবোনা” । সত্যিই তিনি করেননি।

নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ অপবিত্র দেশটিকে পবিত্র করে দিয়েছিলেন। কিন্তু গুটিকয়েক মোশতাক-তাহের উদ্দিন ঠাকুর-চাষীদের কারনে সে দেশটি আর পবিত্র রইলোনা। দেশ আর সঠিক ধারায় এগোতে পারলোনা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নানা ত্যাগ স্বীকার করে দেশটিকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে যেই বিশ্ব রাজনীতিতে উঠে দাঁড়াচ্ছিলেন ঠিক তখনই আবারো সেই পচাত্তরের পরাজিত আন্তর্জাতিক অপশক্তি নতুন কায়দায় জনগণকে চরমভাবে প্রতারিত করে শেখ হাসিনাকেই দেশছাড়া করলো।

** জীবিত মুজিবের চেয়ে মৃত মুজিব অনেক শক্তিশালী।

পঁচাত্তরেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁকে স্মরণ করতে অনেক বাঁধা দেয়া হয়েছে। এবারও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুসহ বাঙ্গালীর স্বাধীকার অন্দোলনের সবকিছু উৎপাটনে নেমেছে নব্য অপশক্তি। যেই অপশক্তি নোবেল লরিয়েট শান্তির দূত (!) ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তার জঙ্গী সাঙ্গীরা। তাদের চব্বিশের সেই কথিত ছাত্র-গণ আন্দোলনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে মার্কিনীদের।

মার্কিন ‘ডিপষ্টেট’ এর অধীনে ইউনুসের আত্মস্বীকৃত ‘ মেটিকুলাস ডিজাইন’ এর কুখ্যাত বাস্তবায়ন চলছে মাত্র। আমরা দেখলাম এই অপশক্তির যত ক্ষোভ-প্রতিশোধস্পৃহা মুক্তিযুদ্ধের ওপর, বঙ্গবন্ধুর ওপর, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর, বঙ্গবন্ধুর অনুসারিদের ওপর, মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্কর্যের ওপর,মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারিদের ওপর।

** কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশের পরিচয় কী !?

জঙ্গী ইউনুস সরকার গতবছর অর্থাৎ ২০২৪ সালেই ১৫ আগষ্ট পালন করতে দিলোনা। যারা ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে গিয়েছিলেন জাতীয় শোক দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে তাদেরকে চরমভাবে অপমানিত করেছে। নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ নির্বিশেষে। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ও মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বেসামরিক ব্যাক্তি যিনি বীর উত্তমে ভূষিত সেই কাদের সিদ্দিকীর ওপরও হামলা করেছে।

তারপর ২০২৫ এর ৭ মার্চেও সেই ঐতিহাসিব ভাষণের দিনটিকে পর্যন্ত পালন করতে দেয়নি। কারণ সেই ভাষণ এই বাঙ্গালী জাতির মুক্তির ভাষন। এই বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ। বাঙ্গালীর সংগ্রামে উজ্জীবিত হওয়ার ভাষণ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিকনির্দেশনা।

এমন আরো অনেক জাতীয় দিবসে যেদিন বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার দিন তা নিষিদ্ধ করেছে। আওয়ামীলীগসহ তার অঙ্গ ও সহযোগী সব সংগঠন নিষিদ্ধ বাংলাদেশে। আওয়ামীলীগের অফিস বেদখল করে নিয়েছে ইউনুসীয় জঙ্গী ক্যাডাররা। যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনের সবটুকু বিসর্জন দিয়ে একটি দেশের জন্ম দিয়েছেন। একটি লাল সবুজের পতাকা দিয়েছেন। বাঙ্গালিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়েছেন তাকেই অস্বীকার !

পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেই শেখ মুজিবকে ছাড়া এই দেশটিকে কি বহিঃবিশ্বে চিনেছে কেউ কখনো ? বিশ্ব ইতিহাস থেকে কি এই নাম মুছে ফেলতে পারবে কেউ ?

এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষনা দিয়ে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হলো চরম পৈশাচিকতায়। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হলো। আর তা করা হলো পুলিশ-সেনা প্রহরায়।

অথচ সেনাবাহিনী দেশের জনগণকে রক্ষা-সংবিধানকে রক্ষার শপথ নিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁয়ে। তারা সেই শপথ রক্ষা করেনি। এতো রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সংবিধান অবমাননা। পবিত্র কোরআনের অবমাননা। কিন্তু কে চাইবে এর বিচার ? কোথায় চাইবে ? বাংলাদেশের আদালতে ? বাংলাদেশে কি এখন আদালত আছে ? যা আছে তা হলো আজ্ঞাবহ মব আদালত।

এদিকে গত ১০ জুলাই জঙ্গী-প্রতারক ইউনুসের প্রেস উপদেষ্টা ডাষ্টবিন শফিক ( শফিকুল আলম) ঘোষণা দিলেন- ‘ ১৫ আগস্ট কেউ কর্মসূচি পালন করলে ব্যবস্থা ’। চব্বিশের ‘ জঙ্গী ক্যু’ এর একনিষ্ঠ সমর্থক টিভি এনটিভি তাদের অনলাইন ভার্সনে যা প্রকাশ করেছে তা থেকে দেখি একটু কি বলেছেন এই শফিক। এতে প্রচার করা হয়েছে-“ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে।

১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড হয়েছে, এটি দুঃখজনক। তবে এ দিনটি আগস্টের অন্য ৩১ দিনের মতোই। কেউ ধানমন্ডিতে বা কোথাও কর্মসূচি করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কয়েকজন সাংবাদিকদের একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রেস সচিব এ কথা বলেন। শফিকুল আলম বলেন, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চালাতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটি দেখবে।”

আরো কিছু কথা বলেছেন তিনি। তা আর আলোচনার বিষয় নয়।

এই ডাষ্টবিন শফিকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট সাংবাদিক,লেখক সৈয়দ বোরহান কবির বলেছেন, “ ১৫ আগস্ট নিয়ে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।” “১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান তাই বলে। ইউনুস সরকার মুখে যাই বলুক, এই সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়েছে। সংবিধান রক্ষার অংগীকার করে ক্ষমতা দখল করেছে।

সংবিধান বদল কিংবা বাতিল করার ক্ষমতা এই সরকারের নেই। সংবিধান বাতিল করতে হলে বৈধ সংসদ লাগবে। লাগবে দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সেটাও সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সংবিধানের ৭খ অনুযায়ী “সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে”।

বর্তমান সংবিধানের ৪ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-“জাতির পিতার প্রতিকৃতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারী ও আধা-সরকারী অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।”

তাহলে কোন আইনের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বললেন, ১৫ আগস্ট পালন করতে দেয়া হবে না?

সরকারি অফিস থেকে জাতির পিতার ছবি নামানো হলো কোন আইনে?

গায়ের জোরে?

এটাও কি একটা মব না?”

সৈয়দ বোরহান কবিরের বক্তব্যে সূত্র ধরে একটি কথা বলি-‘ এই জঙ্গী সরকার কি সংবিধান মানে ? কোন যুক্তি মানে ?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক গাবেরী গায়েন প্রেস সচিব শফিকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন- “ প্রথমে ভাবলাম ইয়ার্কি। পরে দেখলাম, না, এই জাতীয় কথা উপদেষ্টা সরকারের জনাব শফিক নামের মিডিয়া কর্মকর্তা সত্যি সত্যি বলেছেন।

অনেক মিডিয়া হাউসই এই খবর একই শিরোনামে প্রকাশ করেছে। তারমানে এটা সরকারী প্রেসনোট জাতীয় কিছু একটা। এই ব্যক্তি সম্ভবত বোঝেন না যে সরকারী আবর্জনা ধরণের যাবতীয় ঘোষণা-কাজ তাকে দিয়ে করানো হয়। পিটি অন হিম। কেউ একজন ওনাকে বলুক যে সরকারী পদে থেকে এই হুমকিই ফ্যাসিবাদ।

সভা-সমিতি-জনসমাবেশের অধিকার সংবিধান দিয়ে সংরক্ষিত এই ভূখন্ডের মানুষের মৌলিক অধিকার।

কেনো যেনো মনে হচ্ছে এবার মানুষ অনেক বেশি অংশ নিতে চাইবেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। লীগ আমলের শেষ বছরগুলোতে কর্মসূচী চাপিয়ে দেবার জন্য অনেকেই দূরত্বে থেকেছেন। জনাব শফিক আর তার নিয়োগদাতা মহাগুণী বিদেশী উপদেষ্টা পরিষদ কী ব্যবস্থা নেন, সেটা দেখারও একটা উৎসাহ থাকতে পারে।

আমি নাজাত দিবস হিসেবে ১৫ই আগস্ট পালিত হতে দেখেছি ছোটবেলায়। আবার লীগ আমলে শুরুর এক-আধ বছর, দীর্ঘ ২১ বছর নিষিদ্ধের পর, এই দিনকে ঘিরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে খুশি হয়েছি, শেষের বছরগুলোতে শোকহীন মানহীন উদযাপনে, অতি ব্যবহারে, মাইকের লাগাতার ক্যাচোর-ক্যাচোর শব্দের অত্যাচারে কান চেপে থেকেছি ঘরের দরজা-জানালা আটকে।

তবে মেধাবীদের আমল সেরা। গত বছর মেধাবীদের লুঙ্গি ডান্স দিতে দেখেছি। এবার মেধাবীদের নিয়োগকৃতরা কর্মসূচী নিলে ব্যবস্থা নেবার ঘোষণা করলেন।

৫০ বছর আগে মেরা ফেলা নেতাকে এই সরকারের এত ভয়! এটাই বঙ্গবন্ধুর শক্তি। এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করে দেখে না। এনাদের ভয়টাও সেখানেই। যারা বঙ্গবন্ধুর গলায়, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নকল করে চব্বিশের আন্দোলনে প্রেরণা জাগালেন, তাদের কাছে এই ঘোষণা ফ্যাসিবাদী মনে হল কি না সেটা বোধহয় জানা সম্ভব হবে না।”

আওয়ামীলীগ-শেখ হাসিনা’র চরম বিরোধী হিসেবে পরিচিত বর্তমান ইউনুসীয় সরকারের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘ একটা জিনিস এই প্রেস সচিবকে বুঝতে হবে একটা রাষ্ট্র আইন দিয়ে চলে।’

তিনি বলেন, “ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার আগে যখন লিফলেট বিলি করছিল তখন প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন-লিফলেট বিলি করলেই করলেই গ্রেপ্তার হবে। আমার প্রশ্ন ছিল কেন গ্রেপ্তার হবে?

এখন যেমন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে আইন হয়েছে সন্ত্রাস দমন আইনে, এখন আপনি সেটা বলতে পারেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ যদি অন্য কোথাও ১৫ আগস্ট পালন করে, সেটা করা যাবে না বলাটা অত্যন্ত স্বৈরতান্ত্রিক মন্তব্য হবে। তিনি বলেন, আমি পছন্দ করি না এমন কিছুও যদি কেউ আইন না ভেঙ্গে করে, তার সঙ্গে আমার সহনশীল থাকতে হবে। এটাই তো শিক্ষা ছিল।”

** মঞ্চ ৭১ সহ দেশে বিদেশে সবখানেই জাতির জনককে স্মরণ করা হবে পরম শ্রদ্ধায়।

জঙ্গী-প্রতারক ইউনুস সরকার ও তার দোসররা মুখে যাই বলুক না কেন তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক ও নৈতিক শক্তিকে যে প্রচন্ড ভয় পায় তা তাদের সবধরনের কর্মকান্ডেই প্রমাণ করেছে। এই যে জঙ্গী টোকাই দল এনসিপির কথিত নেতারা মুজিবাদর্শে বিশ্বাসকে ‘ মুজিববাদ’ বলে আখ্যা দিয়ে তাকে মুর্দাবাদ বলছে বা তা কবর দেয়ার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে তারও মূল কারণ তারা এদেশের স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রচন্ড রকমের ভয় পায়।

আতংকের মধ্যে আছে তারা। কারণ এদেশের লক্ষ কোটি মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্য প্রাণ দিতে রাজী , শুধু সঠিক নির্দেশের অপেক্ষা। সেই সাথে বত্রিশ নম্বরের বাড়িটিকেও তাদের প্রচন্ড রকমের ভায়। ভয় সেই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গাঁয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলকেও।

এরই মধ্যে তারা ষড়যন্ত্র করেছিল গত ১৬ জুলাই সেই সমাধি গুঁড়িয়ে দেয়ার। কিন্তু গোপালগঞ্জের নিরস্ত্র বীর জনগণ তাদেরকে শুধু প্রত্যাখ্যানই করেনি। তীব্র জনরোষের মুখে এনসিপি’র জঙ্গীরা সেনাবাহিনীর সশস্ত্র ও সুরক্ষিত সেনা কনভয়ে করে পালিয়ে কোনভাবে প্রাণ রক্ষা করেছে।

কিন্তু সেদিন ও তারপর গোপালগঞ্জে অন্তত ১৫ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহতসহ নিখোঁজ হয়েছেন। চরম নির্যাতন-হামলা-মামলা চলছে এখনো সেখানে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের প্রধান ব্যক্তি খ্যাতনামা আইনজীবী বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান নিয়ে নানা কটুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। অপর সিনিয়র-প্রতিবাদী আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠক জেড আই খান পান্নাসহ কয়েকজন আইনজীবী ও প্রতিবাদী নাগরিক মিলে গঠন করেছেন ‘ মঞ্চ ৭১ ’ নামে একটি সংগঠন।

জেড আই খান পান্না বলেছেন “ ১৫ আগষ্ট জাতির জন্য একটি গভীর শোকাবহ দিন। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে যাবেন। নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই তারা তা পালন করবেন।

পথে যদি কোন বাধা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে তারা তাদেরকে বুঝিয়ে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। যদি একান্তই যেতে দেয়া না হয় তাহলে তারা সেখান থেকে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি ১৫ আগষ্ট শোক ও প্রতিবাদের জন্য সবাইকে কালো ব্যজ ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন এই ‘ মঞ্চ ৭১’ এর পক্ষ থেকে।

তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার ও মুক্তিযদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অন্যদের পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। বাহাত্তরের সংবিধানকে রক্ষা করা। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো একাত্তরের চেতনাকে রক্ষা করার।”

সবশেষে বলি- ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে যেতে দেবেননা। কিন্তু মনে রাখবেন এটি বাঙ্গালীর আত্মপরিচয়ের সূতিকাগার। এটি বাংলাদেশ জন্ম আঁতুরঘর। এটি বাঙ্গালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। এটি বাংলার মানুষকে সংগ্রামে দীক্ষা দিয়েছে।

পাকিস্তানী শাষণ-শোষণ থেকে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই বাড়ি থেকেই বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তার স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠিয়েছিলেন।

যার ফলে আজকের এই বাংলাদেশ। যে লালসবুজের পতাকা আমাদের গর্ব সেটি এনে দিয়েছিলেন এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার শহীদ হওয়ার দিনটিকে এ বাঙ্গালী যতদিন আছে ততদিন স্মরণে রাখবে শ্রদ্ধাভরে।

শ্রদ্ধেয় গৌরী প্রসন্ন মজুমদার রচিত, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী -সুরকার অংশুমান রায়ের

সেই বিখ্যাত গানটি দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালীকে-

শোনো, একটি মুজিবরের থেকে

লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি

আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।

বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।

সেই সবুজের বুক চেরা মেঠো পথে,

আবার এসে ফিরে যাবো আমার

হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো।

শিল্পে কাব্যে কোথায় আছে হায়রে

এমন সোনার দেশ।

শোনো, একটি মুজিবরের থেকে

লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি

আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।

বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।

বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ,

জীবনানন্দের রূপসী বাংলা

রূপের যে তার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ।

‘জয় বাংলা’ বলতে মনরে আমার এখনো কেন ভাবো,

আমার হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো,

অন্ধকারে পুবাকাশে উঠবে আবার দিনমণি।।

# নুরুল ইসলাম আনসারি, লেখক, প্রাবন্ধিক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *