একই সাথে বিশ্বের তিনটি প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচার করলো।
গত ২৯ অক্টোবর একযোগে অ্যামেরিকার রয়টার্স, ফ্রান্সের এএফপি এবং ব্রিটেনের দ্য ইনডিপেনডেন্টে শেখ হাসিনার তিনটি ইন্টারভিউ প্রকাশ হওয়া নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে।
আর এর মাত্র ৬ দিন আগে আমেরিকা প্রবাসী শেখ হাসিনার পুত্র ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছিল আমেরিকার আরেকটি আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম এ্যসোসিয়েট প্রেস, এপিতে। আর এতেই কাঁপাকাপির শুরু হয়ে গেছে ইউনুস গং-জামায়াত-এনসিপিতে।
হঠাৎ এমন কি হলো যে মাত্র ৬ দিনের মাথায় শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের সাক্ষাৎকার প্রচারের পর বাংলাদেশের আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলো। তাহলে কি পশ্চিমা বিশ্বের শীতের হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে ?
আমেরিকার ডিপষ্টেট, পাক-তুরস্কসহ আরো কয়েকটি পশ্চিমা দেশের ষড়যন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামরিক-জঙ্গী ক্যু এর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত এমনকি দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল গত চব্বিশের ৫ আগষ্ট। এতদিন তিনি আন্তর্জাতিক কোন সংবাদ মাধ্যমে কোন সাক্ষাৎকার দেননি।

তবে গত ৭ জুন ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক যুগশঙ্খে’র সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন,‘ ইউনুস জঙ্গীদের সাহায্য নিয়েই ক্ষমতা দখল করেছে।’ এটিই ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী এ কারণে, যেহেতু তিনি কোন পদত্যাগপত্র দিয়েছেন রাষ্ট্রপতির কাছে এমন কোন প্রমাণ এখনো কেউ দেখাতে পারেনি ) শেখ হাসিনার প্রথম কোন সাক্ষাৎকার।
তবে এই তিনটি আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারটি শুধুমাত্র সাক্ষাৎকার হিসেবে দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। এটিকে বাংলাদেশের অবৈধ-অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক ইউনুস সরকারের প্রতি একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারগুলোতে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তবে কয়েকটি বিষয় বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন।
প্রথমত, আগামী ১৩ ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় ঘোষণার তারিখ জানাবেন। এমন অবস্থায় তাঁর আসন্ন বিচারিক রায়কে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন শেখ হাসিনা।

দ্বিতীয়ত, গত চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত নানা বিতর্কিত হত্যাকান্ড তাঁর নির্দেশে হয়েছে বলে যে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে নানা মহল থেকে তা সরাসরি অস্বীকার করেছেন তিনি।
তৃতীয়ত ইউনুসীয় সরকার যে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনসহ সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তার তীব্র সমালোচনা করে এর জন্য তাদেরকে ( সরকারকে) চরম রাজনৈতিক পরিণতির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
শুধু তাই নয়, আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামীলীগকে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়া না হয় তাহলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী-অনুসারিদেরকে ভোট না দেয়ার এবং চরমভাবে বয়কট করারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা।
এককথায় বলতে গেলে তিনটি আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমে একইসাথে প্রকাশিত এই সাক্ষাতকারগুলো কেবল ব্যক্তিগত বক্তব্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী জঙ্গী ইউনুস সরকারের প্রতি ছুড়ে দেওয়া রাজনৈতিক এবং আইনি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।
তিনি এবং তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যখন মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা-প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তার কিছুদিন আগেই আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়েছে।
তারা এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে। এসব বিষয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক-মানবাধিকার সংস্থা ও আদালতেও উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এসব নিয়ে ইউনুস সরকারকে একটি অবৈধ-অত্যাচারী-অগণতান্ত্রিক জঙ্গী সরকার হিসেবে পরিচিত করার প্রয়াসও দেখা গেছে। ফলে এই অবৈধ সরকারের কথিত জুলাই সনদ, সংষ্কার বাস্তবায়ন ও নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিও ঘোলাটে হয়ে উঠছে বেশ দ্রুত।

শেখ হাসিনার এই সাক্ষাতকারগুলো বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নেতিবাচক দিকগুলোই শুধু তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছে বা বাধ্য করা হয়েছে। তবে আমেরিকা, ফ্রান্স, ইউকেসহ বিশ্বের অনেক দেশের সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে ও হচ্ছে।
তবে একই দিনে একই সাথে তিনটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার ছাপা হওয়াটা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে যেমন বিস্ময়কর তেমনি কাকতালীয়ও মনে হচ্ছে।
তিনটি সাক্ষাৎকার পড়লে যে ধারণাটি জন্মায় যে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই রাষ্ট্রনায়কোচিত জবাব দিয়েছেন বাঘা বাঘা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে।
আর এসব প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমে তা প্রচার হওয়া মানে বিশ্বের অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম তা লুফে নিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানসহ নানা রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথেই দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ নিশ্চয়ই বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে দেখতে পাবো।
তবে এ বিষযটি নিশ্চিত যে, শেখ হাসিনার আমেরিকা প্রবাসী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকান আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এপিতে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন সেটিতে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মধ্য দিয়ে।
এর পরই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের রুপকার হিসেবে বলা হয়ে থাকে অন্যসব সমালোচনার পরেও তাঁর এই সাক্ষাৎকার বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও অনুসারিদেরকে আবার নতুন করে অন্যায়-অত্যাচারে বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে নিঃসন্দেহে নতুন করে সাহস যোগাবে।
তারা স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত এবং অনুপ্রাণিত হবেন। পাশাপাশি অবৈধ ক্ষমতা দখলকারি জঙ্গী ইউনুস সরকার ও তার সহযোগী রাজাকার, তাবেদার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে- এটি নিশ্চিত।
আন্দোলন করে কীভাবে স্বৈরাচার-ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতা দখলকারিদের নামাতে হয় তা আওয়ামীলীগের চেয়ে ভালো আর কেউ জানেনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
এদিকে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনুসের প্রেস সচিব যিনি ডাস্টবিন শফিক নামেই সমধিক পরিচিত তিনি অনেকটা তোতলাতে তোতলাতে কিছু কথা বলেছেন।
তা হলো, “ চীফ এ্যডভাইজার বলেছেন যে,ইউ হ্যাভ টু হোপ ফর দ্যা বেষ্ট বাট প্রিপায়ার পল দ্যা ওয়ার্ষ্ট, সবাই যেন প্রিপায়ার্ড থকি যে কোন পরিস্থিতির জন্য সেটা উনি বলেছেন।’ তার মানে কি ?
অবৈধ সরকার প্রধান ইউনুস তার জঙ্গী-ধান্ধাবাজ উপদেষ্টা ও টোকাই গংদের মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে অভয় দেয়ার চেষ্ট করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত শংকিত চিত্তে সবাইকে যে কোন খারাপ পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তার মানে পালানোর জন্য তৈরী বা সেফ এক্সিট খুঁজতে বলেছেন।
হঠাৎ এই ভয় ঢুকে গেছে এরই মধ্যে ? আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগসহ তাদের অনুসারিরা গত কয়েকমাস ধরে শুধু দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে গগনবিদারি জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে। আর তাদের নেত্রী শেখ হাসিনার জন্য অভয় দিয়ে শ্লোগান ধরেছে– নেত্রী তোমার ভয় নাই, আমরা আছি লক্ষ ভাই।
শেখ হাসিনা আসবে , বাংলাদেশ হাসবে। এজন্য অনেক নেতাকর্মী-সাধারণ অনুসারিরা পুলিশের হাতে, সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বেদম প্রহার-অত্যাচার সহ্যও যেমন করেছে তেমনি কারাপ্রকোষ্টে অত্যাচারিত হচ্ছে, কিন্তু বুকে অদম্য সাহস নিয়ে।
কারণ তাদের কাছে জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু-জয় শেখ হাসিনা মানেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। যে দেশটির জন্য তাদের জন্মদাতা পিতা বা তারও পিতা অসীম সাহসে পাক হানাদারবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে একটি স্বাধীন ভূখন্ড আর লালসবুজের পতাকা তুলে দিয়েছিল। সুতরাং স্বাধীনতার এসব রক্তবীজের ক্ষয় নাই শত প্রকিূলতার মাঝেও।
যতটুকু জানা গেছে মার্কিন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরী করে পাঠিয়েছিলেন শেখ হাসিনার কাছে, সে সব প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন। হয়তো প্রসঙ্গতক্রমে আরো কিছু বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন তার বক্তব্যে।
রয়টার্স সেই মেইল থেকে তথ্য নিয়ে তাদের মতো করে সাক্ষাৎকারটি তৈরী করেছেন। তবে সেটির সারসংক্ষেপ যা বোঝা গেলো তা হলো-
১. আওয়ামী লীগের কোটি কোটি সমর্থক ও সাধারণ জনগণ নির্বাচন বর্জন করবে।
২. আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থক ও দেশের সাধারণ জনগণ এমন যে কোনো সরকারকে প্রত্যাখ্যান করবে,যা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া গঠিত হবে।
৩.আমি ( শেখ হাসিনা) বা আমার পরিবারের কেউ দেশে সক্রিয় থাকুক বা না থাকুক আওয়ামী লীগ আবারও খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে রাজনীতিতে ফিরে আসবে।
এখানে তিনি বুঝিয়েছেন যে শেখ হাসিনা যেখানেই থাকুক আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে জয়ী হবেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ভবিষ্যতে ভূমিকা রাখবে — সরকারে হোক বা বিরোধী দলে — এবং তার পরিবারকে নেতৃত্ব দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
তাঁর ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, যিনি ওয়াশিংটনে থাকেন, গত বছর রয়টার্সকে বলেছিলেন, প্রয়োজনে তিনি দলের নেতৃত্ব বিবেচনা করতে পারেন।
শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসনে থেকে বলেছেন- এটা আসলে আমার বা আমার পরিবারের ব্যাপার নয়।
“বাংলাদেশকে সেই ভবিষ্যতে পৌঁছাতে হলে, যা আমরা সবাই চাই, সংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ফিরে যাওয়া জরুরি। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ কোনো এক ব্যক্তি বা পরিবারের দ্বারা নির্ধারিত নয়।”
তিনি কিন্তু স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন, আওয়ামীলীগ জনগণের দল, জনগণের দ্বারা, জনগণের মঙ্গলের জন্য সঠিক নেতৃত্ব বেছে নেবে, তৈরী করে নেবে।
এতে বোঝা যায়, ব্যর্থতাকে ঢেকে রাখা নয়,তার মুখোমুখি হওয়াই পুনর্জাগরণের প্রথম ধাপ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- আওয়ামী লীগকে এখন প্রয়োজন আত্মসমালোচনার সাহস। কেন ব্যর্থতা এসেছে,কোথায় বিচ্যুতি ঘটেছে,কারা সংগঠনের ভেতর থেকে দুর্বলতা তৈরি করেছে তা জরুরীভাবে খুঁজে বের করা।
ষড়যন্ত্র অবশ্যই ছিল,কিন্তু ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার পেছনে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও বড় কারণ। তাই কেবল ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নয়, নিজেদের ভুলের বিশ্লেষণেই মুক্তির পথ লুকিয়ে আছে।
ইতিহাস বলে,আওয়ামী লীগ কখনো ধ্বংস হয়নি বরং প্রতিবার পতনের ভেতর থেকেই নবজাগরণ ঘটিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন আবার সেই সুযোগ এসেছে।
গত চব্বিশের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের সামনে নতুন এক কঠিন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে,যেখানে আত্মতৃপ্তি নয়, আত্মসংযম, আত্মবিশ্লেষণই হতে হবে দিকনির্দেশক শক্তি।

তৃণমূলের কর্মীরা এখনো দলকে প্রাণ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই অগ্নিপরীক্ষিত আত্মত্যাগী নেতা-কর্মীদের দলের প্রতি, নেত্রীর প্রতি ভালোবাসা এবং দেশপ্রেমই আওয়ামী লীগের প্রকৃত শক্তি।
তাই স্থবির ও ব্যর্থ নেতৃত্বের বৃত্ত ভেঙে প্রাণশক্তিসম্পন্ন নতুন নেতৃত্বকে সামনে আনতে হবে,যারা আদর্শে অটল,ত্যাগে দৃঢ় এবং সংগঠনে গতিশীল।
তাদের মতে আওয়ামী লীগ কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয় এটি জাতির চেতনা,ইতিহাস ও প্রতিশ্রুতির প্রতীক।এই দল দুর্বল হলে দেশ দুর্বল হয়,এই দল শক্তিশালী হলে জাতি এগিয়ে যায়। তাই দেশের ভবিষ্যৎ,স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগের আদর্শে,চেতনায় ও মূলনীতিতে ফিরে আসাই সময়ের দাবি।
সুদখোর ইউনুস বোঝে শুধু মানুষের পকেট কেটে টাকা ইনকাম করা। মনে করছিল ‘আমেরিকার ডিপষ্টেট’ আর ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সে ই হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাংলাদেশী খেলোয়ার বা চালবাজ।
কিন্তু বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণ সেই বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে পাকিস্তানীদের কূটচালকে ছিন্ন করে বারবার বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। অবশ্য বার বার হোঁচট খেতে হয়েছে।
কিন্তু আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। এটি ঠিক যে, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট সারা বিশ্বের অন্যতম মাথাব্যথার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তবে সুদী-আমেরিকার পাপেট ইউনুস বুঝে গেছে আসলে উনার পাতানো খেলার দিন শেষ হয়ে আসছে।

শেখ হাসিনা ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-কে বলেছেন, তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির সময় যে রক্তপাত ঘটেছে, তার জন্য তিনি দায়ী নন এবং অনুপস্থিত অবস্থায় তাঁর বিচারকে তিনি “প্রহসন” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা জাতি হিসেবে যেসব শিশু, ভাই-বোন, আত্মীয় ও বন্ধুদের হারিয়েছি, আমি তাঁদের প্রত্যেকের জন্য শোক প্রকাশ করছি” এবং “আমি আমার সমবেদনা জানাতে থাকব।”
হাসিনা আরও দাবি করেছেন, তাঁর সরকার প্রথম দিকের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি স্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল, যা পরে তাঁর উত্তরসূরি অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ করে দেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৈয়দ মজুমদার নামে একজন মুজিবভক্ত মন্তব্য করেছেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আজকে প্রেস কনফারেন্স ডাকেন, দেখবেন বিশ্বের নামকরা মিডিয়াগুলো সব হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
গত ১৪ মাসে বিবিসি সিএনএন আল জাজীরা রয়টার্স এবং বিভিন্ন এনজিও ও দেশিয়া মিডিয়া একাধিক জনমত জরিপ করেছেন। অধিকাংশ জরিপের ফলাফল এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পক্ষে। কোন জরিপে ৫৭% আবার কোন জরিপে ৫৩ পার্সেন্ট। এখন ঐক্যমত কমিশনের কাছে প্রশ্ন: বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৫৭% মানে ১০ কোটি মানুষ। এই দশ কোটি মানুষের প্রতিনিধি বাদ দিয়ে আপনারা কিভাবে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের মিটিং ডাকেন ?
তাহলে কি ধরে নিব ১০ কোটি মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল হয়েছে ? তারা আর ভোট দিতে পারবেনা ? না এটা সম্ভব নয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বাদ দিয়ে এ দেশে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেনা। সুতরাং আপনারা যার যার আচরণ ঠিক করেন, অন্যথায় পরিণতি শুভ হবেনা। এককভাবে বাংলাদেশের মালিকানা শুধু আওয়ামী লীগ দাবি করতে পারে।
কারণ ২৩ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম এবং রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। বিএনপি জামাত হেফাজত চরমোনাইয়ের সেদিন জন্মও হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সাবির মুস্তাফার কিছু মন্তব্য এখানে তুলে ধরছি পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য।
শুধু বাংলাদেশ নয় এশিয়াসহ বিশ্বের রাজনীতিতেও তার একটি বড় ভূমিকা আছে তা বোঝা যায় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো তাঁকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে সেটা দেখে। দুটো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা – রয়টার্স আর এএফপি- এবং ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে।
শেখ হাসিনার সাক্ষাতকারে সব অংশ বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ না করার জন্য একধরনের অলিখিত ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি রয়েছে। অথচ আজকাল তথ্য প্রযুক্তির যুগে সেই খবর কিন্তু এই বাংলাদেশীরা সবার আগে পড়ছে।
কারণ, এইসব খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিউজ ফিডে দ্রুত চলে আসে। যখন অভিযুক্ত কোন ব্যক্তির ‘আত্মপক্ষ’ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়না , বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয় সঙ্গত কারণেই , তখন গণমাধ্যমের ভূমিকা সেই ব্যক্তির কণ্ঠকে জনগণের সামনে তুলে আনা।
আর সেই কাজটি আন্তজার্তিক গণমাধ্যমগুলো করে আসছে।বিশ্বখ্যাত সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সের দেওয়া শিরোনাম, ছবি এবং শেখ হাসিনাকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত শব্দগুলো খেয়াল করলে দেখবেন, রয়টার্স লিখেছে- ‘Bangladesh’s Sheikh Hasina’!
গার্ড অব অনার নেওয়ার একটি পুরনো ছবি ব্যবহার করেছে তারিখ উল্লেখ করে, কারণ শেখ হাসিনার নামের আগে ‘প্রধানমন্ত্রী’ শব্দটি ব্যবহার করতে চেয়েছে। জুলাইয়ের ছবি ব্যবহার করেনি; শুধু একটি পাসপোর্ট ছবিও ব্যবহার করতে পারত, কিন্তু করেনি। ব্যবহার করেছে শেখ হাসিনা সম্মানিত হচ্ছেন—সেরকম একটা ছবি।
সর্বোপরি, হেডলাইনের বক্তব্য—আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচন হলে গণবয়কট হবে। সংবাদে ভাষা ও শব্দের ব্যবহারে রাজনীতি থাকে! এই সাক্ষাৎকারেও তা আছে—শেখ হাসিনাকে ইতিবাচক আলোয় দেখা হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে একটু বলে রাখি- গত ২৩ অক্টোবর মার্কিন দেশের আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে শেখ হাসিনার পুত্র ও আইটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় এর একটি সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছিল। সেখানে জয় বাংলাদেশের সমসাময়িক ও পূর্বাপর পরিস্থিতি তুলে ধরে নানা বিষয়ে তার সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন।
জয় তাঁর সাক্ষাৎকারে, গত বছরের জুলাই-আগষ্টে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন।ফালকার টুকের দেয়া ১৪০০ নিহতের সংখ্যা সঠিক নয় বলে তিনি প্রমাণ দিয়েছেন।
সামরিক-জঙ্গী ক্যু এর মধ্য দিয়ে অভেধভাবে ক্ষমতা দখলকারি ড. ইউনুসের সরকার গতবছর আগস্টে পুলিশ হত্যাসহ সংগঠিত অপরাধের যে দায় মুক্তি দিয়েছে, তার কঠোর সমালোচনা করেছেন।
দেশের সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, এই সতর্কবার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জয়।
পাশাপাশি তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কেবল অংশ নিতে দিলেই হবে না, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণের সময় দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। তিনি খুব সরাসরি এবং অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে, ড. ইউনুস সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
বিশেষ করে গত চব্বিশের ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে সীমাহীন জুলুম চলছে তার চিত্র তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সব মামলা মিথ্যা এবং বানোয়াট তা এই সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে যে ৫ আগস্টের পর উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হয়েছে তা জয়ের সাক্ষাৎকারে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। যা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
বাংলাদেশ যে এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য এক বধ্যভূমি তা জয়ের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিসহ গতবছরের জুলাই -আগস্ট সংগঠিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন জয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারি দল আওয়ামীলীগের অবস্থানটিও তুলে ধরেছেন তিনি।

বিশ্বের প্রথম সারির তিনটি সংবাদ মাধমে গত ২৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার ও গত ২৩ অক্টোবর বিঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের এপি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকার সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের রাজনীতি-মানবাধিবকার সম্পর্কে অনেক তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও শেখ হাসিনা বিভিণ্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ও তার অংগসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নানা অভয়বাণী দিয়েছেন। সান্ত্বনা দিয়েছেন স্বজন হারানোদের। আবার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার আপ্রাণ চেষ্টাও করে যাচ্ছেন।
এই প্রচার প্রচারণার ফলে আওয়ামীলীগের মনোভাব যেমন সারাবিশ্ব জানতে পারছে তেমনি দলীয় নেতা-কর্মী-অনুসারিরাও নতুন করে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নিঃসন্দেহে।
আওয়ামীলীগ ঐতিহাসিকভাবেই আন্দোলনের দল। একই সাথে নির্বাচনমুখী দল। তা অতীতই প্রমাণ দেয়। আন্তর্জাতিক তিনটি সংবাদ মাধ্যমে তাঁর দেয়া সাক্ষাৎকারে এটিও বোঝা গেল আওয়ামীলীগ নির্বাচনে যাবে তখনই যখন নির্বাচনী পরিবেশ তৈরী হবে। তিনি দেশেও ফিরতে উদগ্রীব।
তবে তা হতে হবে একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের সময় যখন দেশে আইন-সংবিধান বহাল থাকবে।
যদি কোন কারণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়েই যায় তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এমনটাইতো ধারণা করছেন অধিকাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।

আর তখন যদি শেখ হাসিনা সদলবলে দেশে ফিরে আসেন তখন জামায়াত-এনসিপির’র অবস্থা যে কি দাঁড়াবে সে আতংকে এরা এখন আবার উল্টো সুরে নির্বাচনের বিপক্ষে গান গাইতে শুরু করে দিয়েছে। নতুন ঘোল পাকাচ্ছে তারা।
আর ইউনুসতো ‘দোয়া ইউনুস’ পড়া শুরু করেছে শুধুমাত্র শেখ হাসিনার তিনটি সাক্ষাৎকার দেখেই । আর সেজন্য ইউনুস বলা শুরু করে দিয়েছে দেশে নির্বাচন বানচালের জন্য বড় কোন শক্তি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
এক্ষেত্রে তিনি আওয়ামীলীগকে ফাঁদে ফেলতে নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে দিয়েছেন। তবে সে সুযোগ এদেশের জনগণ তাদেরকে দেবে বলে মনে হয়না।
# ইশরাত জাহান। লেখিকা, প্রাবন্ধিক ও নারী সংগঠক।
