গত বেশ কিছুদিন ধরে রাজনীতির মাঠে নানা কিছু ঘটে যাচ্ছে। তবে এই যে এতসব কিছু ঘটছে তা কি স্বাভাবিকভাবে ঘটছে নাকি সেই বিশ্বমোড়লের ইঙ্গিতে ‘ মেটিকুলাস ডিজাইন’ বাস্তবায়নে নিয়োগকৃত ইউনুসশাহী করাচ্ছেন?
এমন সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ গত এক বছর যাবৎ এ দেশ আর দেশের মানুষকে নিয়ে একের পর এক পাতানো খেলা খেলানো হয়েছে ও হচ্ছে। এসব বুঝে যাওয়ায় বিক্ষুব্ধ মানুষের রুদ্ররোষ থেকে বাঁচার জন্য ‘ সেইফ এক্সিট’ খুঁজছেন ইউনুসগং? এমন সন্দেহই দেখা দিয়েছে জনমনে।
মেটিকুলাস ডিজাইনে কথিত ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের নামে যে ” জঙ্গী ক্যু” ঘটানো হলো তাতো আর কারোরই বুঝতে বাকী নেই। তবে এই ইউনুসীয় অপশাসন থেকে জনগণ যে মুক্তি চায় সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
যারা গতবছর জুলাই- অগাষ্টে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন, সমর্থন জুগিয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন আত্মগ্লানিতে ভুগছেন। আগে মানে গতবছর তারা বুক ফুলিয়ে অহংকার করে বলেছিলেন যে তারা যদি সেসময় এসব ধ্বংসযজ্ঞে অংশ না নিতেন তাহলে কি আর চব্বিশের পাঁচ অগাষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটতো? কিন্তু তাদেরই অনেক এখন প্রচন্ড আফসোস আর আত্মগ্লানিতে ভুগছেন।
বাম- ডান- স্বাধীনতা- মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি সব মিলেমিশে গিয়েছিন। আর এই ‘ মিলমিশ’ হয়েছিল ডলারের জোরে। সব বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল বা তাদের সমর্থকরা একাত্তরের ‘ আলবদর’ দেরকে পর্যন্ত ‘পেয়ারকা দোস্ত’ মনে করেছিল মুক্তিযুদ্ধ- স্বাধীনতা যুদ্ধ ভুলে গিয়ে। তাদের কাছে মনে হয়েছিল ‘ ফ্যাসিস্ট’ আওয়ামীলীগ ও তাদের নেত্রী- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলতে পারলেই বুঝি দেশে গণতন্ত্রের দুধের নহর বয়ে যাবে। যেমনটি তারা বাংলাদেশের মানুষকে তৈরী না করেই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন বা দিবাস্বপ্ন দেখতেন।
বাংলাদেশের এসব তৎকালীন সোভিয়েতপন্থী বা চৈনিকপন্থীদের “দোরগোড়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব” যে এ দেশের কত তরুণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করেছে তার হিসেব এসব রাজনৈতিক দল বা নেতারা নেয়নি। যেখানে সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল একটি মাল্টিক্লাস পার্টি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি দল আওয়ামীলীগের অতি দক্ষিণপন্থার দিকে ঝোঁকার প্রবণতা থেকে রক্ষা করা।
ইসলামীলাইজেশন বা ইসলামী জঙ্গী উৎপাদনকারি দলগুলো থেকে আওয়ামীলীগকে রক্ষা করা, তা না করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এসব রাজনৈতিক দলগুলো নেমেছিল চরম আওয়ামী বিরোধীতায়। আর এটিই চেয়েছিল বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের আন্তর্জাতিক ও এদেশীয় দোসররা। এই চক্রটির মূল কাজ ছিল আওয়ামীলীগকে একাত্তরের চেতনার মূল জায়গাটি থেকে সরিয়ে আনা। আর একাত্তরে আওয়ামীলীগের যেসব ঘনিষ্ট মিত্র বা বন্ধু ছিল তাদের মধ্যে তীব্র ফাটল ধরানো।
সে জন্য মার্কিনী ও তাদের দোসররা প্রচুর ডলার ঢেলেছিল। অত্যন্ত সফলতার সাথেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এদেশের চরম দক্ষিণপন্থী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে একটি গোপন আন্তঃসম্পর্ক তৈরী করে দিতে সক্ষম হয়। এই ফাঁদে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাম শক্তিও যেমন পা দিয়েছে কেমনি টোপ গিলেছে চরম বাম সংগঠনগুলোও।
আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম গত চব্বিশের কথিত বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের সময় এসব সাধারন- বাম ডান, চরম বাম ডান, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামাত- শিবির- হিযবুত তাহরিরসহ সব এক কাতারে জড়ো হয়েছিল। বাম সংগঠনগুলো তাদের এতদিনকার লালিত আদর্শ- নীতি- নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত শিবির ও চরম সাম্প্রদায়িক দল ও সংগঠনগুলোর কাছে নৈতিকভাবে বিক্রি হয়ে গেছে।
একাত্তর পরবর্তী কয়েকটি বছরে যে বাম প্রগতিশীল শক্তিকে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ- বিএনপি- জাতীয় পার্টির বিকল্প দেশপ্রমিক শক্তি হিসেবে চিন্তা করতো ও বিবেচনায় রাখতো তারাই চরম দেউলিয়া হয়ে গেছে আদর্শ ও নীতি নৈতিকতার ক্ষেত্রে। ফলে মার্কিন সিআইএ- পাকিস্তানী আইএসআই ও তুরস্কের জঙ্গী অস্ত্র ব্যবসায়ী ( মূলত সে তাই) এরদোগানের ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত হতে সময় লাগেনি।
এইতো মাত্র কয়েকবছর আগেও বিশ্ব ইসলামী উম্মাহর নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার নামটি উচ্চারিত হয়ে আসছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীও মনে মনে আশা পুষেছিলেন তাঁর প্রয়াত পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মত। বঙ্গবন্ধু অনেক কিছু পাওয়ার আশায় মুসলিম দেশগুলো থেকে নানা সুযোগ সুবিধা পেতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওআইসি ( অর্গানাইজেশন অব ইসলামি কনফারেন্স) সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
তেমনি আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনাও দেশে হেফাজতে ইসলামী, চরমোনাইয়ের পীর ( মূলত: রাজনৈতিক দল) সহ নানা ইসলামী দলগুলোকে চরম সুবিধে দিয়েছেন। যে কওমী মাদ্রাসা জঙ্গী উৎপাদনের অন্যতম কারখানা হিসেবে তিনি সেই কওমী মাদ্রাসাগুলোকে সরকারি স্বীকৃতি দিলেন।
ফলস্বরূপ ” কওমী মাতা” হিসেবে উপাধি পেলেন। দেশে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ ( অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুবিধাসহ) করে দিয়েছেন। অথচ কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামী এই ” কওমী মাতা” কে সরানোর জন্য যা যা করা দরকার তার সবটাতেই চরম ভাবে করতো এবং করছে।
এসব মাদ্রাসা- মসজিদ থেকে প্রতিনিয়ত ‘ ফ্যাসিবাদী’ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের তীব্র সমালোচনাই করা হয়ে থাকে। এভাবেই অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন তিনি ও তার দল আওয়ামীলীগ। এই যে ইসলামী বিশ্বের সম্ভাব্য নেতৃত্ব দানকারি নেতা শেখ হাসিনা, ইসলামের খেদমতকারি ” কওমি মাতা” কে কিন্তু কোন মুসলিম রাষ্ট্র আশ্রয় দেয়নি। আশ্রয় দিয়েছে, নিরাপত্তা দিচ্ছে কিন্তু ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ( আরএসএস) মদদপুষ্ট বিজেপির মোদি সরকার।
শুধু তাঁকেই নয়, অনেক আওয়ামী ও আওয়ামী অংগসংঠনের নেতাকর্মীরাও ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন প্রাণ বাঁচাতে।
ওই যে বলছিলাম, আওয়ামীলীগের সঙ্গে বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর চরম দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেজন্য আওয়ামীলীগের দায়ও কম নয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো– গত চব্বিশের জুলাই- অগাষ্টের কথিত ছাত্র জনতার আন্দোলনে অধিকাংশ শ্লোগান তৈরি করেছিল বাম দলগুলো।
তারা মনে করেছিল তারাও পরবর্তীতে এই সরকারের অংশ হবে। কিন্তু সে আশা অনেক আগেই ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে ইউনুসশাহী। তারা এখন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত লাফায় ( থুঁড়ি লাফানোর শক্তিও নাই, কাঁদে এখন)। এখন তারা বলার চেষ্টা করছে ইউনুস সরকার ব্যর্থ, সাধারণ জনগণ প্রতারিত হয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে এর মধ্যে কথিত জুলাই / অগাষ্ট বা ৩৬ জুলাই উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের টিআইসিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় ইসলামী ছাত্র শিবির একাত্তরের কুখ্যাত ঘাতক- রাজাকার- আলবদর গোলাম আযম, নিজামি, কাদের মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মীর কাশেম আলী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সহ আরো কয়েকজনের ছবি টাঙিয়েছিল।
তবে বাম- প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তা নামিয়ে ফেলাতে সক্ষম হয়েছে। অথচ এতদিন এরাই জামাত- শিবিরের সাথে একসাথে আন্দোলন করেছে ” ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা’ র বিরুদ্ধে। এখন হয়তো প্রতারিত হয়ে কিছুটা বোধোদয় হচ্ছে।
শুধু বামদলগুলো নয়, জঙ্গী টোকাইদের সংগঠন এনসিপির মধ্যেও কয়েকটি ধারা ক্রমশ বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে প্রকাশ্যেই। এদের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা মূলত: নানাভাবে( যত অবৈধ পন্থা আছে তা খাটিয়ে) অর্থ হাতানোর কাজে লিপ্ত রয়েছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে আরো ছ্যাঁচড়ামি চলে।
এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি’ র কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দেশবাসির কাছে হাসি- উপহাসের পাত্র হয়েছেন। তারওপর নানা কেলেঙ্কারিতেও জড়িয়ে গেছে এরা।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী এর মধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে তাদের নেতাকর্মী- সশস্ত্র ক্যাডারদের ঢুকিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। আরো শক্তি অর্জন করে দেশি- বিদেশি জঙ্গীবাদ ও মার্কিন মোড়লদের সমর্থনে পুরো প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে।
কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘ স্বাধীনতার ঘোষক ‘ জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি। বিএনপি’ র সাথে ইতিমধ্যেই জামাতের ও এনসিপির নানামুখী সংঘাত দ্বন্দ্ব লেগে গেছে। ফলে কিছুটা বেকায়দায়তো রয়েছেই তারা। বিএনপি’ র সাথে জামাতের নির্বাচনী সমঝোতা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বিএনপি চাইছে ফেব্রয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাদের বক্তব্য সংস্কার করবে জাতীয় সংসদ। কিন্ত এনসিপি ‘কিংস পার্টি’ এবং জামাত প্রশাসনিকভাবে ক্যু করে নির্বাচনে জিততে চায় যদি নির্বাচন হয়।
তবে দেশের সাধারণ বিক্ষুব্ধ জনতা ও বিএনপির বড় সমর্থকরা দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। আবার দেশে একাত্তর- মুক্তিযুদ্ধ- বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জনমত তৈরী হতে শুরু করে দিয়েছে যদিও আওয়ামীলীগ দৃশ্যত: নেই দেশে। তবে বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে। ফলে বেশি কচলালে তেতো হয়ে যেতে পারে রাজনীতির লেবু।
তাই চতুর ইউনুস তার ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপি’ র শীর্ষ নেতা তারেক রহমান ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নানা ধরনের টোপ দিয়ে যাচ্ছে। যাতে করে যদি নির্বাচন দিতেই হয় তাহলে যাতে জনরোষের কবলে পড়তে না হয় ইউনুস ও তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজনদেরকে।
নির্বাচনের আগে মার্কিন প্রভুর সম্মতি পেলে তবেই লন্ডন থেকে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। সেনাবাহিনীর সাহায্যও চাইবেন তিনি নিশ্চয়ই। কারণ তার পিতা জিয়াউর রহমানের একটি সমর্থক গোষ্ঠীতো রয়েছেই সেনাবাহিনীতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে নির্বাচন যদি হয়, আবারো বলছি ‘যদি হয়’ এবং বিএনপি যদি সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে সংসদের মাধ্যমে তাহলে তার প্রধান লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা।
এমনও একটি সমঝোতা বিএনপি- ইউনুসের মধ্যে নাকি অঘোষিতভাবে হয়েছে যে, তারেক প্রধানমন্ত্রী হলে ইউনুস প্রেসিডেন্ট পদে বসবেন রাষ্ট্রের। এতে করে মার্কিনীদের চাহিদামতো যা যা দেয়া দরকার তার সবটাই বিনাবাক্যে দিতে বাধ্য থাকিবে এমন একটি সমঝোতার দিকে এগুচ্ছে রাজনীতি। আর কোন কারনে যদি ইউনুসকে রাষ্টপতির পদ দেয়া না যায় তাহলে অন্তত: ‘ সেইফ এক্সিট’ যাতে ইউনুস ও তার পারিষদবর্গের সেটি নিশ্চিত করার প্ল্যানও রয়েছে।
তবে নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
গত চব্বিশের পাঁচ আগষ্ট পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর ধ্বংসাবশেষের দিকে আগামী ১৫ আগষ্ট দেশের দুই প্রবীণতম আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও জেড আই খান পান্নার নেতৃত্বে ” মঞ্চ ৭১” নামে সংগঠনের নামে একটি পদযাত্রার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এটি একটি সাধু উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। তবে এ ব্যাপারেও কিছু কথা থেকে যায়। সে আরেকদিন বলা যাবে।
এদিকে কিছুটা ক্ষীণস্বরে হলেও আশার দিক হলো — জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন ৩২ বিশিষ্ট নাগরিক। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল ছিল জামায়াতে ইসলামী। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্বিচার গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, উচ্ছেদের মুখে যখন স্বাধীনতাকামী মানুষ নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন; তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীরা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় ছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দলীয়ভাবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের অনেক নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, লুটপাটে সহযোগী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জামায়াতে ইসলামী অখণ্ড পাকিস্তানের দাবিতে সভা-সমাবেশ করেছে, প্রচার চালিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিদাতারা বলেছেন, ‘এমনকি ২৫ মার্চ বর্বর গণহত্যার পর পাকিস্তান জান্তার সঙ্গে বৈঠকও করেছে দলটির নেতারা।
তাদের দলের নেতা-কর্মীরা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে রাজাকার, আলবদরসহ বিভিন্ন বাহিনীতে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণ, লুণ্ঠন, গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে বলে পরিষ্কার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।’
বিবৃতিদাতারা হলেন অধ্যাপক আজফার হোসেন, রায়হান রাইন, জি এইচ হাবীব, আ-আল মামুন, সায়মা আলম, আর রাজী, সায়েমা খাতুন, কাজল শাহনেওয়াজ, মারুফ মল্লিক, রাখাল রাহা, সৌভিক রেজা, গোলাম সরওয়ার, দেবাশীষ চক্রবর্তী, আশফাক নিপুন, মোস্তফা কামাল পলাশ, মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন, গাজী তানজিয়া, এস কে তাসনিম আফরোজ, তুহিন খান, পারভেজ আলম, চিনু কবির, ফেরদৌস আরা রুমী, বিথী ঘোষ, মোহাম্মদ রোমেল, সাঈদ বারী, মাহাবুব রাহমান, সালাহ উদ্দিন শুভ্র, অর্বাক আদিত্য, আরিফ রহমান, সোয়েব মাহমুদ, অস্ট্রিক আর্যু ও সাদিক মাহবুব ইসলাম। — তবে এই বিবৃতি শুধুমাত্র আহ্বান জামায়াতে ইসলামীর প্রতি এসব বিশিষ্ট (!) জনদের। তারা কোন দাবি জানাননি।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সোচ্চার অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ্। তবে তাঁকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউনূস সরকারের পক্ষ ত্যাগকারি কূটনীতিবিদ হারুন আল রশিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, কলিমুল্লাহর জন্য যারা চেঁচামেচি করছে তাদের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
কলিমুল্লাহ ২২ সাল থেকে গুজব রটিয়েছে। শেখ হাসিনা তাঁকে গ্রেফতার করার সব কারণ থাকা সত্ত্বেও করেননি। জঙ্গি জেহাদের মতো বিষাক্ত সাপ ঢাকা শহরে বসে প্রতিদিন শেখ হাসিনাকে গালি দিয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার তাকে স্পর্শ করেনি।
জঙ্গি জেহাদদের গালগালি আর বিষ ছড়ানো ব্যাখ্যা করে সারা বিশ্বের সামনে প্রমাণ করা সম্ভব শেখ হাসিনা এই বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাক স্বাধীনতা প্রদানকারী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন।
কলিমুল্লাহ সব জঙ্গিকে ছাত্র ঘোষণা দিয়ে ইউনুসের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে। আমার ছাত্র আবু সাইদ… আমার ছাত্র মীর মুগ্ধ… সব জঙ্গি তার ছাত্র… এই সূত্র সে তুলে ধরত।
ইউনুসের ডাকাতি যত মানুষের সামনে উঠে আসবে তত জুলাই আগস্ট অনাচারের সহযোগিরা ইউনুসের দুর্নাম করতে থাকবে। এরপর দেখবেন ধীরে ধীরে জ ই মামুন, আনিস আলমগীর এবং এক দিন এমনকি ইউনুসও বলা শুরু করবে সে বুঝে নাই… ইত্যাদি ইত্যাদি…
মনে রাখতে হবে যে কোনও ষড়যন্ত্রের পর ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ষড়যন্ত্রকারিরা নিজেরা ঝগড়াঝাঁটি এমনকি প্রাণঘাতী সংঘাতে লিপ্ত হয়। দেখেন না, ৫ তারিখে এক জঙ্গিকে ঢাকায় রেখে পাঁচ জঙ্গি কক্সবাজার চলে যায়। দেখতে থাকুন কী হয়। আর সবার জন্য কাঁদবেন না।
কলিমুল্লাহর গ্রেফতারকে নিন্দা জানাতে সমস্যা নাই। কিন্তু সেতো এক জন লাল বদর। জঙ্গি উত্থানে তার ভূমিকার স্বীকৃতি দাবি করেছে বারবার। তার গ্রেফতারকে ষড়যন্ত্রকারিদের ভাগবাটোয়ারার বিষয় হিসাবেই দেখতে হবে। এর ব্যতিক্রম করলে ভুল করবেন।
# রাকীব হুসেইন, লেখক, প্রাবন্ধিক।