ঢাকা: ‘জামাকাপড়ের রং বদলায়, কিন্তু দিন বদলায় না’। ইউনুস সরকারের আমলে সেইরকম শোচনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই দেশে বাক স্বাধীনতা নেই, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, সর্বত্র চলে লুঠতরাজ। কিন্তু প্রশ্ন করা যাবে না।

এর আগে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি, আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিডিয়া যাতে কোনো রকম বাধা বিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে সেজন্য একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন। আরও যেসব কমিশন সরকারসহ অন্য সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারে, আমরা তাদের পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি যাতে তারা আরও শক্তিশালী হয়, জনকল্যাণে কাজ করে।

কিন্তু কথায় এক, কাজে আরেক। বাংলাদেশে মন্দ ভালো হয় না, বরং আরো মন্দ হয়। দেশে সাংবাদিকদের ওপর সমানে চলছে হামলা আর মামলা।

উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের সময়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত কয়েক মাস ধরে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোতে বহু সাংবাদিককে জড়ানো হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য যে, গত কয়েকমাসে সাংবাদিকদের ওপর মামলার একটি তালিকা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। তাছাড়াও গত বছরের জুলাই ও আগস্টের ঘটনা-সম্পর্কিত বিভিন্ন মামলায় অন্ততপক্ষে ২৬৬ জন সাংবাদিককে জড়ানো হয়েছে।

জানা যাচ্ছে, রাজধানী ঢাকায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে  মোট – ৮৮টি। এদিকে, সিলেট এবং চট্টগ্রামে যথাক্রমে ৩৯ এবং ৩৬ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাভার, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া তো আছেই। ঐদিকেও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনায় কিছু কিছু প্রতিশোধমূলক আছে।

আজ ৩ মে, মুক্ত সংবাদমাধ্যম দিবস। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)  দিনটিতে মুক্ত সাংবাদিকতায় বিভিন্ন দেশের অবস্থানের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এবার বাংলাদেশের সূচক হচ্ছে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৯। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। ১৬ ধাপ অগ্রগতি। তারপরেও আরএসএফের বিশ্লেষণে আমরা ‘বেশ গুরুতর’ অবস্থায় অবস্থান করছি।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক ভয়ে খুলছেন না। এমনটাই জানা গিয়েছে। জানা যাচ্ছে, জিটিভির কুয়াকাটা সংবাদদাতা মনিরুল ইসলাম বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলায় ১৬ দিন জেলে ছিলেন। তিনি জানান, ৪ আগস্টের একটি ঘটনার মামলায় তাঁকে জড়ানো হয় তবে তিনি ঢাকায় ছিলেন আর তাঁর কাছে প্রমাণও ছিল। কিন্তু প্রমাণ থাকলেও আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও তার প্রমাণ আমলে না নিয়ে তাকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখন তিনি এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলতেই ভয় পাচ্ছেন।

অভিযোগ উঠছে, এই মামলাগুলো সাজানো এবং শত্রুতা, রাজনৈতিক রেষারেষিতে করা হয়েছে। সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে যেতেই ভয় পাচ্ছেন। যে কোনো সময় মবের শিকার হতে পারেন। এমন অনেকে হয়েছেন। কিন্তু এগুলোর বিচার নেই।

উল্লেখযোগ্য যে, গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছে। সাংবাদিকরা তো হয়েছেনই। হত্যা করা হয়েছে অনেককে। শুধু তাই না, বহু সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রোজেন করে দেয়া হয়েছে!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *