মানবিক করিডোর বাংলাদেশের অভিশাপ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ ইউনূস সরকার।
যে সীমান্তে এই করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত চলমান রয়েছে। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে ভারত এবং চীনেরও সীমান্ত রয়েছে। এ রকম জায়গায় করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।
করিডোর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ বলছে – Stand against the corridor conspiracy…
বাংলাদেশসহ ৪০টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, প্রযুক্তিবিদ, কৃষিবিদ, আইনবিদ, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক, এবং মানবাধিকার ও সমাজকর্মীদের নিয়ে গঠিত Global Center for Democratic Governance একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান।
তারা বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশের অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যুদ্ধ প্রস্তুতির আহবান জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষণা করেছেন যে, বাংলাদেশ নীতিগতভাবে মায়ানমার রাখাইন সীমান্তে করিডোর প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রেস সচিব পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘোষিত সিদ্ধান্ত অস্বীকার করলেও করিডোর প্রদানের যৌক্তিকতা ও সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এই ধরনের করিডোর প্রদান ও যুদ্ধ প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আইনত অনির্বাচিত এবং ক্ষণস্থায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার বহির্ভূত।
করিডোর প্রদান এবং যুদ্ধ প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত একমাত্র বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সংসদে বিস্তারিত আলোচনা, তর্ক বিতর্ক এবং চুলচেরা বিশ্লেষণের পর গ্রহণ করতে পারেন।
জনগণের ম্যান্ডেট বিহীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের সমূহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। মিয়ানমারের সরকার ইতিমধ্যেই এই ধরনের করিডোর ব্যবস্থার ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন। মিয়ানমার সরকারকে বাইপাস করে রাখাইনের বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে এই ধরনের করিডোর প্রদানের চুক্তি অবৈধ, যা মিয়ানমার সরকারের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি করবে। তাছাড়া মিয়ানমার ও মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে ভারত, চীন ও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ও স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক রয়েছে। করিডোর চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা ওই অঞ্চলে বৃহৎ পরাশক্তির জড়িয়ে পড়া এবং যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথা বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক, সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষকগণ ইতিমধ্যেই তুলে ধরেছেন। ফলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এই অঞ্চলে যুদ্ধের গোলাগুলি, বোমা বর্ষণ, মারামারি, কাটাকাটি ছড়িয়ে পড়বে, যা গাজার মত ধ্বংসলীলার সৃষ্টি করবে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়” হচ্ছে ৫৪ বছর যাবত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র। প্রলোভনে পড়ে, অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই নীতির বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহৃত হতে দিলে বাংলাদেশ তার ঐতিহ্য হারাবে, হয়ে পড়বে অনির্দিষ্টকালের জন্য বৃহৎ শক্তির যুদ্ধের খেলার মাঠ। ফলে ইতিমধ্যে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি, শিল্প কাঠামো, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অসহনীয় মূল্য বৃদ্ধি, ভঙ্গুর আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, জনজীবনের নিরাপত্তা এবং শান্তি চরম হুমকির মুখে পড়বে।
প্রসঙ্গত আমরা স্মরণ করতে পারি বাংলাদেশ, ভারতের মিজোরাম, মিয়ানমার, যুদ্ধরত রাখাইন রাজ্য, কুকি-চিন অধ্যুষিত চিন রাজ্য, সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপজ্জনক অবস্থানের কথা। এই করিডোর চুক্তি হলে নানামুখী স্বার্থের কারণে এই অঞ্চলগুলোর জনগোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হবে বৈরিতা, হানাহানি, জঙ্গি তৎপরতা, মাদকের ব্যবসা, অস্ত্র চোরা চালান ও ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা। এই চরম বিশৃঙ্খলতার সুযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই চাউর হওয়া একটি বৃহৎ শক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ভূখণ্ড নিয়ে নতুন কোন রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বিপন্ন হবে, একথা বলাই বাহুল্য।
মোহাম্মাদ ইউনুসের অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে, অর্থ উপার্জনের পথ ও অবৈধ রাষ্ট্র ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার বিনিময়ে করিডোর প্রদান করলে উপরে উল্লেখিত ঘটনাবলীর ফলে দ্রুত বাংলাদেশ দুর্বল হবে, তার ভূমি হারাবে, নানা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ দেশের ভিতরে চরম অস্থিরতা তৈরি করবে, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে, কৃষি উৎপাদন বিপন্ন হবে, মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে, এমনকি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিবে। ফলে বাংলাদেশকে পরাশক্তির অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের অস্ত্র কেনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে বাধ্য করা হবে সাহায্যের নামে, বিনিময়ে দেশের তেল গ্যাসসহ যাবতীয় খনিজ সম্পদ চুক্তি করে সেইসব সামরিক শক্তিধর দেশকে দিয়ে দিতে হবে।