ঢাকা: ত্রিপুরার আদিবাসী ও অ-আদিবাসী মিলিয়ে শত শত মানুষ আজ দক্ষিণ ত্রিপুরার নতুন বাজারে এক বিশাল প্রতিবাদে অংশ নেয়।
তারা মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহার কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন, যাতে বাংলাদেশি সশস্ত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS)-এর গ্রেফতার ও বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।
জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস (সন্তু)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা মাদক পাচারের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের যুবসমাজকে ধ্বংস করছে, বাংলাদেশে খুন করে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে এবং ‘ত্রিপুরা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (TUNF) গঠন করে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ পরিচালনা করছে।
প্রতিবেশী দেশের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভারতে এটাই প্রথম সংগঠিত প্রতিবাদ।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই সন্তু লারমাকে তার ব্যক্তিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
তারা আরও অভিযোগ করেন যে, পিসিজেএসএস (সন্তু)-এর সদস্যরা রূপক চাকমা, মিঠুন চাকমা, সুদীর্ঘ চাকমা, চন্দ্র শেখর চাকমা, অনিমেষ চাকমা, বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরাসহ অনেক উপজাতি নেতাকে হত্যা করেছে এবং সেনাবাহিনীর সহায়তায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও বেআইনি হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতে পিসিজেএসএস (সন্তু)-এর ক্যাডাররা অস্ত্র, ইয়াবা, বার্মিজ সিগারেট ও গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে:
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪: ত্রিপুরার ধলাই জেলার রায়শ্যাবাড়ি থেকে ২,৭২০টি বার্মিজ সিগারেট (মূল্য ৯ লক্ষ টাকা) উদ্ধার করে পুলিশ।
১৯ জুন ২০২৫: আসাম রাইফেলস মিজোরামের লুংলেই থেকে ১০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করে।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: মিজোরাম পুলিশ ২টি একে-৪৭ রাইফেল, ৫টি মার্কিন M4 কার্বাইন, ২০টি ম্যাগাজিন ও ৪,৬৭৫ রাউন্ড গুলি জব্দ করে।
৪ জুন ২০২৫: ত্রিপুরা পুলিশ ১৩ জন ক্যাডারকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, PCJSS (সন্তু) এখন একটি আন্তর্জাতিক পাচার চক্রে পরিণত হয়েছে এবং এর কার্যক্রম ত্রিপুরা ও মিজোরাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন: ফিল্ড কমান্ডার প্রণতি বিকাশ চাকমা, ডেপুটি ফিল্ড কমান্ডার আয়ুষ্মান চাকমা বুলবুল, রাজনৈতিক সম্পাদক সত্যবীর দেওয়ান, সাংগঠনিক সম্পাদক কুমার চাকমা, ভবদুত্ত চাকমা, আবকাশ লারমা, উষা বিন্দু খীসা, আশাপূর্ণা চাকমা, ও সমাজ প্রিয়া চাকমা।
তারা আরও অভিযোগ করেন, ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসের শাসনকালে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য DGFI ও পাকিস্তানের ISI-এর নির্দেশে সন্তু লারমা ‘ত্রিপুরা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (TUNF) নামের ভারতবিরোধী একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
রিয়াং সম্প্রদায়ভুক্ত যুবকদের টিইউএনএফ-এ নিয়োগ করা হয়, কারণ তারা মিজোরাম ও ত্রিপুরায় বসবাস করে এবং তাদের মাধ্যমে ISI সহজে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশ করতে পারে।
জেএসএস (সন্তু)-এর ক্যাডাররা অপহরণ, নির্যাতন, বেআইনি মৃত্যুদণ্ড, চাঁদাবাজি ও চোরাচালানের অর্থে ত্রিপুরার স্থানীয় আদিবাসীদের মাঝে ভয় সৃষ্টি করে।
বিক্ষোভকারীরা পিসিজেএসএস (সন্তু গ্রুপ)-এর নেতাদের গ্রেপ্তার, তাদের বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন এবং ভারতে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে।