ঢাকা: আজ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে জমা দেওয়া এক স্মারকলিপিতে চাকমা নেতা সুহাস চাকমা বর্তমানে বাংলাদেশের অধীনে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামকে (সিএইচটি) জাতিসংঘ সনদের অধ্যায় ১১ অনুযায়ী “অ-স্বশাসিত অঞ্চল” হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
সুহাস চাকমা, যিনি গ্লোবাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ইন্ডিজেনাস পিপলস অব দ্য সিএইচটির (GAIPCHT) আহ্বায়ক, বলেন- “ভারত স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনও পূর্ণ স্বশাসন অর্জন করতে পারেনি।
বাংলাদেশ সরকার দখলদার শক্তি হিসেবে নিজ দেশের বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে দখলীকৃত অঞ্চলে অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করছে, যা জেনেভা কনভেনশনের ৪৯ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্রিটিশ ভারতের সময় থেকে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়মাবলি অনুযায়ী শাসিত হতো।
পুরো ব্রিটিশ ভারতে এটিই ছিল একমাত্র জেলা/অঞ্চল যার জন্য বিশেষ শাসন আইন ছিল।
১৯৪৭ সালে ভারতের বিভাজনের সময়, স্যার সিরিল জন র্যাডক্লিফের নেতৃত্বে গঠিত বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থান নির্ধারণ করে।
বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন কাজ ছিল মুসলিম ও অমুসলিম অধ্যুষিত সংলগ্ন অঞ্চল চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণ করা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, কিন্তু কমিশন কোনো আলোচনা না করেই ১৭ আগস্ট ১৯৪৭-এ একতরফাভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানে যুক্ত করে দেয়ার সুপারিশ করেন।
১৯ আগস্ট ১৯৪৭-এ ভারতের তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার ব্রিটিশ ফরেন অফিসকে পাঠানো এক বার্তায় জানান যে, “পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত র্যাডক্লিফের সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য, কারণ তিনি তাঁর নির্ধারিত এখতিয়ার ছাড়িয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।”
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ধারাবাহিক সরকারগুলো দখলদার শক্তি হিসেবে আচরণ করেছে।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ বাঙালি মুসলিমকে সমতল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করেছে ।
এটি জেনেভা কনভেনশনের ৪৯ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে, যেখানে বলা হয়েছে যে দখলদার রাষ্ট্র নিজ দেশের বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে দখলীকৃত ভূখণ্ডে স্থানান্তর করতে পারবে না।
বর্তমানেও বাংলাদেশ সরকার খাগড়াছড়িতে ২৪,৫১১ এবং রাঙামাটিতে ১,৪৮৬ অবৈধ সেটলার পরিবারকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে।
এর পাশাপাশি অবৈধ মুসলিম সেটেলার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর একাধিক গণহত্যা চালিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও অবনত হয়। প্রতি সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ সেনা ও অবৈধ সেটলারদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে প্রায় নিয়মিত রূপ দেওয়া হয়েছে।
১৯-২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ প্রথম হত্যাযজ্ঞে অন্তত ৪ জন আদিবাসী নিহত ও ৭৫ জন আহত হন।
এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ দ্বিতীয় হত্যাযজ্ঞে বিনা উসকানিতে বাংলাদেশ সেনা তিনজন মারমা যুবককে গুলি করে হত্যা করে এবং আরও ১০ জনকে আহত করে।
ওই যুবকেরা এক ১২ বছর বয়সী মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনার আসামিদের গ্রেপ্তার না করার প্রতিবাদ করছিলেন।
গ্লোবাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ইন্ডিজেনাস পিপলস অব দ্য সিএইচটির (GAIPCHT) পক্ষে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে সুহাস চাকমা যুক্তরাজ্য ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সাথে হস্তক্ষেপ করে বেসামরিক জনগণকে দখলীকৃত পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করছে তা বন্ধ করে অবৈধ সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার আহবান জানান।
