ঢাকা: গান হচ্ছে মনের রোগের ওষুধ। যারা মানসিক অবসাদে ভুগেন, তাঁদের জন্য গান হচ্ছে থেরাপি। এগুলো বুঝতে হলে লোকজনকে মনের দিক থেকে শিক্ষিত হতে হবে।

মৌলবাদী, জঙ্গী গোষ্ঠীর গানের মর্ম বোঝার কথা নয়।

এই গান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জুগিয়েছে। শুধু তাই নয়, আরো বহু উপকার করেছে এই গান।

সমর দাস বাংলা গানের জগতে একজন কিংবদন্তী সংগীত পরিচালক, সুরস্রষ্টা এবং ঢাকা বেতার কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকার লক্ষীবাজারে জন্ম নেয়া এই শিল্পী মুজিবনগর সরকারের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে লড়াইরত যোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে কালজয়ী সব সংগীত প্রচার করতেন।

সেসময় সমর দাস “পূর্ব ‍দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল”, নোওর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো, নোঙর তোলো তোলো” বিখ্যাত দুটি সংগীতের সুর করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে আব্দুল জব্বার কন্ঠশিল্পী হিসেবে অগ্রগণ্য অবদান রেখেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় “জয় বাংলা বাংলার জয়, সালাম সালাম হাজার সালাম এর মতো জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয় কণ্ঠ দিয়ে লড়াই করেছেন।

তার গানে অনপ্রেরণায় অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলেন।

প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আব্দুল জব্বার বাংলাদেশের ‍মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য নিরলশ পরিশ্রম করেছেন।

ভারতের শহরে শহরে গান গেয়ে তাঁর উপার্জিত প্রায় ১২ লক্ষ টাকা স্বাধীন বাংলা সরকারের তহবিলে জমা দেন।

এগুলো সবই জানে মৌলবাদী, চরমপন্থীরা কিন্তু আসল সত্য স্বীকার করে না।

তাই তো সম্প্রতি একটা ছবি দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে, যেখানে দাঁড়ি টুপিওয়ালা এক মুসলমান আরেক ব্যক্তির গলা টিপে ধরেছে গান গাওয়ার জন্যে।

গান গাওয়া অপরাধ? গান গেয়ে দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগান দেওয়াটাই কি তাঁর অপরাধ?

সিলেট – ঢাকা রুটের রেলযাত্রীদের কাছে ছবির লোকটি খুবই পরিচিত মুখ। তিনি একজন অন্ধ শিল্পী।

বেহালা সাথে নিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত তিনি যাত্রীদের গান শুনিয়ে থাকেন। যাত্রীরাও গান শুনে সাধ্যমতো লোকটিকে সহায়তা করেন।

অল্প অর্থকড়ি যা পান তা দিয়ে সংসার চলে এই অন্ধ শিল্পীর। এই গান শোনানোর অপরাধে ভরাযাত্রীদের সামনেই গলা টিপে ধরলো এক ধর্মান্ধ।

প্রকাশ্যে নি’ষর্যাতন শুরু করে মানুষটিকে।

কারণ বাংলাদেশ এখন শরিয়া পথে চলেছে। গান গাওয়াকে হারাম বরা হয়। তাই তবলা, হারমোনিয়াম দেখলেই ভেঙে ফেলছে মৌলবাদীরা।

যেমনটা আমরা দেখেছি তালিবানদের করতে। ঠিক সেইরকম তালিবানি শাসন।

অথচ সংগীত যে মানুষের মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে তার জ্বলন্ত উদাহরণ ১৯৭১।

এরা গান কেড়ে নেবে, সুর কেড়ে নেবে, আনন্দ কেড়ে নেবে, কন্ঠস্বর কড়ে নেবে ফুলে ফলে ভরা, সাত রঙে ভরা দেশে কেবল থাকবে অন্ধকার।

যে দেশে’ মৃত মানুষের রক্ষা নেই, সে দেশে জীবিত মানুষ কতটা আর‌ নিরাপদ?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের হাফ প্যান্টে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে, মেয়েদের হিজাব পরানো হচ্ছে, আর কত? শরিয়া আইন দেখা দিচ্ছে দেশে! অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *