ঢাকা: বাংলাদেশে বেকার সমস্যা তীব্রগতিতে বেড়ে চলেছে। গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে এমনিতেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের হাল খারাপ। ইউনূস সরকার আসার পর বিদেশি কোম্পানিকে সুযোগ দেওয়ায় দেশীয় শিল্পগুলি ঝুঁকির মুখে।
ধীরগতির প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ খরাসহ নানা কারণে দেশে কর্মসংস্থান সংকট মহামারী আকার ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিশিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশে কর্মসংস্থান সংকটের পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষার অভাব এখন প্রকট। আমরা শিক্ষা ও শিখন- উভয় ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েছি। মানসম্মত শিক্ষার অভাবেও তরুণরা চাকরি পাচ্ছে না।’
শনিবার রাতে পিপিআরসি আয়োজিত ‘হোয়াট ইজ ড্রাইভিং দ্যা প্রোর্ভাটি রিভার্সেল ইন বাংলাদেশ?’ শীর্ষক এক অনলাইন সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইকোনমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেভেল ইন মিড–২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের ওপর ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসাবে এ অনলাইন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে পিপিআরসির করা গবেষণার অর্থনৈতিক নানা দিক তুলে ধরেন হোসেন জিল্লুর রহমান। গবেষণায় দেখা যায়, দেশে দারিদ্র্যতার হার ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে ১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালে দারিদ্র্যসীমার উপরে থাকা ১৮ শতাংশ মানুষ এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এর অন্যতম কারণ কোভিড-১৯, মুল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে দারিদ্র বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ পরিবারে কমপক্ষে একজন দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ রোগী। ৪০ শতাংশ মানুষের ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। ১২ শতাংশ দরিদ্র্য পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। গবেষণায় আরো দাবি করা হয়, দেশের ৩৬ শতাংশ মানুষ এখনো স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে না।
কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩৮ শতাংশ লোক কর্মহীন। ৪৫ শতাংশ মানুষ আত্মকর্মসংস্থানে রয়েছে।
এছাড়াও দেশে এখনও স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ৩ জনের একজন বেকার। সবচেয়ে বেশি বেকার ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে বেকার আছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার জন।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে উঠে এসেছে এই ভয়াবহ চিত্র।
বলা হয়েছে, দেশে এক বছরের ব্যবধানে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৬০ হাজার।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ২০ হাজারে, যা ২০২৩ সালে ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার। অন্য যে কোনো বিভাগের তুলনায় চাকরির খোঁজে ঢাকাতেই বাস করেন বেশিরভাগ বেকার। বেশিরভাগই আবার উচ্চশিক্ষিত।