সিরাজগঞ্জ: বাংলাদেশে ব্রাত্য রবীন্দ্রনাথ! এই দেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জাতীয় সঙ্গীত গাইতে চায় না মৌলবাদী গোষ্ঠী। মাদ্রাসাগুলোতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না।
রবীন্দ্রনাথকে মুছে ফেলার কু প্রচেষ্টা বহু আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এবার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এটি মূলত: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি ধ্বংসের জন্য পরিকল্পিত হামলা বলেই ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে কাছারি বাড়ির অডিটোরিয়াম ও কাস্টোডিয়ানের অফিস কক্ষে দরজা-জানালায় ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এই জনতা স্বীকার করে না কবিগুরুকে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের রুপপুর মহল্লার প্রবাসী শাহনেওয়াজ হোসেন ও তার স্ত্রী সুইটি খাতুন কাছারিবাড়িতে প্রবেশ করেন।
মোটরসাইকেল পার্কিং-এর টিকিট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের সঙ্গে শাহনেওয়াজের নাকি তর্কবিতর্ক হয়।
বলা হচ্ছে, কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্টাফরা শাহনেওয়াজকে নাকি আটক করে মারধর করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শাহনেওয়াজ কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান, কর্মচারী শরিফুজ্জামান সরকার, সিরাজুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান ও আব্দুল মমিনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এরপর মঙ্গলবার সকালে শাহনেওয়াজের নেতৃত্বে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন জনতা।
ভাঙচুর করা হয়। তবে টিকিট নিয়ে হওয়া বাকবিতণ্ডা এইসব শুধু অজুহাত। মূল কথা, বিশ্বকবির স্মৃতি দেশ থেকে মুছে ফেলা।
রবীন্দ্র বিদ্বেষের প্রমাণ এর আগেও বহুবার পাওয়া গেছে। ফলে এই ঘটনা যে রবীন্দ্র বিদ্বেষ নয় তা বলা যাবে না।
জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ নিয়ে দেশের মানুষের বহু সমস্যা। অপমান, অবমাননা তো চলছেই।
সবচেয়ে বড় কথা হলো,এই গানকে অনেকেই হিন্দুয়ানী গান মনে করেন। ফলে তারা বয়কট করতে চায়।
মৌলবাদী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী মনে করে,
“জাতীয় সঙ্গীতে যে সকল শব্দ চয়ন করা হয়েছে,সেগুলো হিন্দুদের দেবীকে উদ্দেশ্যে করে!
এগুলো ধর্মীয় উস্কানি—জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা!
এমনকি সাংবাদিক ইলিয়াস এর আগে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, যা ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে দেওয়া হয়েছে:
“যদি হিন্দুদের দেব-দেবী পূজা করতে না চান, তাহলে যেসব জায়গায় এখনও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হচ্ছে সেটা বন্ধ করুন!”
কবিগুরুকে মুছে ফেলার এক অপচেষ্টা চলছে বাংলাদেশে। বলা হয়, জাতীয় সঙ্গীত স্বাধীনতা বিরোধী শিরকী সঙ্গীত।
মাটিকে ‘মা’ বলতে তাদের আপত্তি । সেই জায়গায় সিরাজগঞ্জের ঘটনাকে আলাদাভাবে দেখা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ১৮৪০ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর শাহজাদপুরের জমিদারি কিনে নিলে কাছারিবাড়িটি তাদের মালিকানায় আসে।
জমিদারি তদারকিতে মাঝেমধ্যে এই বাড়িতে অবস্থান করতেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
এই বাড়িতেই লেখা হয়েছে ‘বিসর্জন’, ‘ছিন্নপত্রে’র চিঠি, ‘নৌকাডুবি’র মতো রচনা।