শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের বুকে লুকিয়ে থাকা এক ইতিহাস — রুদ্রকর মঠ। স্মৃতির গাথা, স্থাপত্যের গর্ব, আর এক হারিয়ে যাওয়া সময়ের সাক্ষী।

কিন্তু এই সাক্ষীগুলো এভাবে ধুঁকে ধুঁকে আর কতদিন দাঁড়িয়ে থাকবে একপায়ে? সময়ের স্রোতে বিলীন হয়ে যাবে অথবা বিলীন করে দেয়া হবে।

বিলীন করে দেয়া হবে কারণ, মঠ, মন্দির, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, কলা- সংস্কৃতি এসব এখন অচল পয়সার মতো বাংলাদেশে। এসব রাখা হারাম হয়ে গেছে।

সব স্মৃতি, ইতিহাস মুছে ফেলে এখন রাজাকারের ইতিহাস তৈরি হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্থাপত্য ভেঙে জুলাইয়ের জঙ্গী আন্দোলনের স্থাপত্য তৈরি হচ্ছে!

এটাই জঙ্গী, দখলদার ইউনূসের শাসনব্যবস্থা। শুধু ইউনূস নয়, বাংলাদেশটার ভেতরে ঘুণ ধরেছে। ইসলামী মৌলবাদীরা সব ভালো ধ্বংস করে সব খারাপ, কালোর দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশ।

এই যে রুদ্রকর মঠ? প্রশ্ন হলো এই জঙ্গী ইউনুস শাসনামলে এসব মঠ থাকবেতো? নাকি অচিরেই মাটির সাথে মিলিয়ে দেয়া হবে!

রুদ্রকর মঠ শরিয়তপুর জেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত। এই জেলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কিন্তু, নেই কোন রক্ষণাবেক্ষণ। এমনকি মূল সড়ক থেকে মঠ পর্যন্ত যাওয়ার ভালো কোন রাস্তা নেই।

এই মঠটি সংরক্ষণ না করলে এটির অস্তিত্ব স্বল্প সময়ে হারিয়ে যাবে। এমনকি ভূমি দস্যুরাও গ্রাস করতে পারে।

শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে ১৫০ ফুট উঁচু এক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই রুদ্রকর মঠ।

নামেই আছে অন্যরকম এক তেজ। ৩৫৪ বছরের পুরোনো স্থাপত্যশৈলীর এই মঠ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

এমন বহু কালের সাক্ষী গুঁড়ো হয়েছে ইউনূস আসার পর।

তিনি তো চার্বাকের ভোগবাদে বিশ্বাসী। তাই ঋণ করে হলেও ঘি পান করিয়ে দেশকে গ্রাস করতে চান।

তাঁর কাছে বা তাঁর চারপাশের জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছে এইসব ইতিহাসের দাম নেই। দাম আছে জামাত শিবিরের, দাম আছে আইসিস এর।

পর্যটকরা মঠটি দেখতে আসেন। কিন্তু শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের পাশে শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায় অবস্থিত মঠটির কাছে যাওয়ার আসলে কোনো রাস্তা নেই।

সংস্কারের অভাবে মঠের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী মঠে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ এবং মঠটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায় নবাব আলীবর্দী খানের আমলে বাস করতেন নীলমনি চক্রবর্তী নামের একজন জমিদার।

তাঁর মৃত্যুর পর ১৬৭০ সালের দিকে তাঁর তিন সন্তান বাণীলাল চক্রবর্তী, ক্ষিতিলাল চক্রবর্তী ও বসন্তলাল চক্রবর্তী বাবার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সমাধির ওপর একটি মঠ নির্মাণ করেন।

মঠটি ইট ও পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়। সে সময়ে পালং এলাকার রাজমিস্ত্রি তিলক ভূঁইয়া ও গুরুচরণ ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে এটি নির্মাণ করেছিলেন।

প্রাচীন মঠের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেলে ১৮৮৯ সালে চক্রবর্তী পরিবারের সন্তান গুরুচরণ চক্রবর্তী, চন্দ্রচরণ চক্রবর্তী এটি পুনর্নির্মাণ করেন।

পরে মঠটিতে কালীমন্দির স্থাপন করে সাড়ম্বরে পূজা হতো, এবং হতো কীর্তনসহ পূজা-অর্চনা করা হতো। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মঠটির কালীমন্দিরে কালীপূজা হতো।

মঠের পাশের ৩ একর ৭৩ শতাংশ জমির ওপর চক্রবর্তী পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯১৫ সালে জমিদার নীলমনির নামে একটি উচ্চবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।

এই মঠটিতেও আঘাত এসেছিলো১৯৭১ সালে । মুক্তিযুদ্ধের সময় মঠটি ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। এতে এর কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

১৯৭৫ সালে নীলমনি চক্রবর্তীর বংশের বাংলাদেশে বসবাসকারী সর্বশেষ সদস্য প্রমথ লাল চক্রবর্তী ভারতে চলে যান। এরপর থেকে সেখানে আর পূজার্চনা হয় না। তাছাড়া সংরক্ষণের অভাবে মঠটি এখন ধ্বংস হতে চলেছে।

সময়কে ধরে রাখা মঠটি এখন কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার কী আদৌ এতে হাত লাগিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে?

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *