নিউইয়র্কে খুব বেশি কিছু কি হয়েছে জঙ্গী-প্রতারক ইউনুস বহরের সফর নিয়ে? কয়েকটি ডিম নিক্ষেপ আর কিছু শ্লোগান ছাড়া? আর তাতেই ভাবমূর্তি-সম্মান গেল গেল রব তুলছেন কেউ কেউ।
সেই কেউ কেউ মানে গত চব্বিশের জুলাই-আগষ্টে‘ জঙ্গী-সামরিক ক্যু’ এর চরম সুবিধাভোগী কিছু মানুষ। সেই সাথে কিছু কথিত সুশীলও রয়েছেন। আরে ইউনুসকে তো পায়নি বিক্ষুব্ধ প্রবাসী বাংলাদেশীরা। তিনি ও তাঁর সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাতো মার্কিন নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে অন্য গেইট দিয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন।
আমরা হয়তো দেখবো নিউইয়র্কে অজ্ঞাত-অখ্যাত-অপ্রয়োজনীয় কোন ব্যক্তির সাথে ফটোনসশন করে তা বাংলাদেশের মিডিয়াতে প্রচারের জন্য নির্দেশ দেবে তার অন্যতম বংশবদ ডাষ্টবিন শফিক।
কিন্তু যাদেরকে ড. ইউনুসের সফরসঙ্গী করা হয়েছিল সরকারিভাবে মানে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি নেতৃবৃন্দকে কেন নিরাপত্তা দেয়নি মার্কিন পুলিশ সে নিয়ে সরকারের মধ্যেই নানা সমালোচনার ঝড় বইছে।
যতদূর জানি, জেএফকে কর্তৃপক্ষ নাকি বাংলাদেশ সরকারকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের এই বিশাল লটবহরকে ভিআইপি নিরাপত্তা দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, অর্থাৎ মার্কিন নিয়ম নীতির মধ্যে পড়েনা তা।
এসব জেনেও ইউনুস সরকার ও তার মুখপাত্র নানা গান রচনা করছেন এই সফর ও সফরকালীন নানা অপমানজনক ঘটনা নিয়ে।
তার মানে ধুরন্ধরে বা চিটিংয়ে ডক্টরেট করা ইউনুস স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিলেন তোমাদের যখন দরকার হবে তখন আমি শুধু ব্যবহার করবো মাত্র। আমার কথার বাইরে কেউ যেতে পারবেনা। বিষয়টি কি তা নয়?
বিএনপির মত একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে এভাবে চরম অপমান করার পরও বিএনপি চুপ থাকাকে ইউনুসের প্রতি – সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এখন। নাকি তাদের পলাতক নেতা তারেক রহমানের হুকুমের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই দলের নেতাদের, তা যত অপমানই হোকনা কেন !
একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, গত চব্বিশের জুলাই-আগষ্টে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর অন্তবর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনুস ও তার উপদেষ্টারা যখনই আমেরিকা, লন্ডন, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে (পাকিস্তান ও ইসলামী দেশগুলো ছাড়া) চরম অপমানের শিকার হচ্ছেন।
কিন্তু তাতে তাদের কিছু আসে য়ায় না যেন ! তারা চায় যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় থাকা ! তা সে মার্কিনীদের পদলেহন করে হোক , আর ইসলামী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তান ও তুরস্ক, আফগানিস্তান, ইউএই সহ অন্য ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর মৌলবাদী সরকার ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুরলোর মদদে হোক।
পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তো তাদের দ্বিতীয় প্রধান শাখা খুলে বসেছে রীতিমতো বাংলাদেশে। মার্কিনীরা যেমন তাদের সেনাবাহিনী, আধুনিক মারণাস্ত্র, বিমান, যুদ্ধজাহাজ ইত্যাদি নিয়ে বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ার নামে ঘাঁটি গেড়েছে। ঠিক তেমনি আমেরিকান মদদেই পাকিস্তানীরা তাদের সামরিক ঘাঁটি (তা সেনানিবাসের ভেতরে ও বাইরে) করে বসেছে।
অনেকেই বলছেন পাক আইএসআই যেভাবে ডিকটেশন দিচ্ছে সেভাবেই এখন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহনী তাদের কাজ করছে বা চলতে বাধ্য হচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী অন্যতম মূল কালপ্রিট গোলাম আযমের পুত্র আবদুল্লাহহিল আমান আযমী অত্যন্ত সক্রিয় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে।
এই আযমী বাংলাদেশে একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্তা ছিলেন তিনি এবং সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্তাদের সংগঠন রাওয়া’র কিছু কর্তাব্যক্তি মিলে বাংলাদেশকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আবারো পাকিস্তান বানানোর কাজে লিপ্ত রয়েছেন।
আবার আমাদেরকে ফিরতে হবে মার্কিন মূল্লুকে যেখানে রয়েছেন আমাদের মেটিকুলাস ডিজাইনার নোবেল লরিয়েট সামাজিকভাবে উচ্চ সুদখোর ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তার চেলাচামুন্ডারা।
প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয়, বিএনপি’র ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বাংলাদেশে রাজনীতিতে সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে গণ্য করেন অনেকে। যদিও তিনি একাত্তরের বাংলাদেশ বিরোধী প্রচন্ড পাকিপ্রেমী এক রাজাকারের সন্তান।
যিনি এখন বিএনপি’র মত একটি দলের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এখন অবধি বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিএনপি ।
সেই দলের সাধারণ সম্পাদককে চরমভাবে অপমান করতে ছাড়েননি ড. ইউনুস। কিন্তু এ নিয়ে অনুশোচনা আছে বলে মনে হয়না। অবশ্য বিএনপি-জামায়াত নেতাদেরকে নিউইয়র্কে বিক্ষুব্ধ প্রবাসী বাংলাদেশীরা ডিম বা জুতা নিক্ষেপ করেনি। নাকি বাগে পায়নি তা অবশ্য জানা যায়নি।
এর মধ্যে শুধু সন্ত্রাসী জঙ্গী নেতা এনসিপি’র আখতারের ওপর কয়েকটি ডিম পড়েছে। কিন্তু মার্কিনীদের খাস লোক এনসিপি’র নেত্রী ডা. তাসনীম জারাকে ডিম নিক্ষেপ না করেই সম্মান দেখিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
তারা আর যাই করুন না কেন একজন নারীকে অপমান করেননি। বিক্ষোভকারিরা মূলত আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা অন্তত অতটা অসম্মান করেননি।
যদিও চব্বিশের ‘জঙ্গী-সামরিক ক্যু’ এর পর বাংলাদেশের নারীদেরকে চরমভাবে অপমান করতে ছাড়েনি জঙ্গী জামায়াত-শিবির, হেফাজত, হিযবুত এমনকি বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।
মার্কিন মুল্লুকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েও কিন্তু একজন নারীকে অপদস্ত করেনি। এটি নিশ্চয়ই একটি ভালো লক্ষণ রাজনীতিতে।
কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন মার্কিন পুলিশ বা সরকার কেন ইউনুসীয় সরকারের কর্তাদের ছাড়া অন্যদেরকে ভিভিআইপি মর্যাদা দেয়নি ? এ নিয়ে নিউইয়র্কের কনস্যুলেট অফিসের সবাইকে বরখাস্ত করারও দাবি তুলেছেন।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নাকি মার্কিন সরকারের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দাবি করা হবে! হাস্যকর শোনাচ্ছে সরকারের এসব কথা। ইউনুস সরকারের পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্তাদের বরখাস্তও দাবি করেছেন এনসিপি’র কোন কোন নেতা।
আরে বাপু যাদের জোরে টিকে আছো হে এনসিপি টোকাইরা তাদের বিরুদ্ধেই এমন সব মন্তব্য করছো হে ছোকরারা? এর পরিণতি সম্পর্কে একটু ধারণা থাকা প্রয়োজন।
এদিকে আখতারের ওপর ডিম ছোড়ার ঘটনায় মঙ্গলবার এনসিপি ডায়াসপোরা অ্যালায়েন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ঘটনা শুধু রাজনৈতিক সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মর্যাদা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার উদাহরণ।
যদি সরকারি সফরের অংশগ্রহণকারীরা ন্যূনতম নিরাপত্তা না পান, তবে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কনস্যুলেট ও দূতাবাসগুলোর অস্তিত্বের যৌক্তিকতা কোথায়—সে প্রশ্নও তোলা হয় ওই বিবৃতিতে।
অ্যালায়েন্স বলছে, “জুলাই বিপ্লবের সময় যারা জীবন বাজি রেখে লড়েছিলেন, তাদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হামলাকারীদের ক্ষোভ থামেনি। আখতার হোসেনকে এখনো তাঁর সংগ্রামের মূল্য দিতে হচ্ছে, এটা অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতা।”
এ ঘটনার জেরে ঢাকায় মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এদিন বিকাল ৫টায় শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম।
এইতো মাত্র কিছুদিন আগেও সরকারের অপদেষ্টা ছিলেন নাহিদ। সেখান থেকে পদত্যাগ করে কিংস পার্টির মূল নেতা বনে যান। অবশ্য টাকা-পয়সা যা দরকার তা সরকারের চেয়ারে বসেও ইনকাম করেছেন, এখন বাইরে থেকেও করছেন।
তাদের এসব অবৈধ আয়ের কোন কমতি নেই। নানা সরকারি বদলি-পদোন্নতিতে কোটি কোটি টাকার যে বাণিজ্য করছেন তা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বের হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গিয়ে এই যে বিনে পয়সায় ডিম উপহার পেলেন ‘কিংস পার্টি’র আখতার এখান থেকে তাদের শিক্ষা কী? একটাই শিক্ষা—বাড়াবাড়ি করিও না। দেশে নিজেদের বাঘ ভাবলেও, বিদেশে স্রেফ ইঁদুর। সীমান্ত পাড়ি দিলে শক্তি আর ক্ষমতার হাতবদল হয়ে যায় আপনা থেকেই। এই ঘটনায় বিদেশে কি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলো না?
হ্যাঁ, অবশ্যই হয়েছে। দেশে ইউনুসের ইন্টেরিম সরকার মবের রাজত্ব কায়েম করেছে, বিদেশে গিয়ে মবের শিকার হয়েছে। এটা প্রতিহিংসার জবাবে একটু হালকা পাতলা জবাব মাত্র।
এনসিপি কী শিক্ষা নেবে এখান থেকে? কী বার্তা পেল তারা? এখান থেকে এনসিপির বার্তা ও শিক্ষা হচ্ছে— ইন্টেরিম ইউনুস ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দেশে আইনবহির্ভূত যা কিছুই করুক, তারা সেইফ এক্সিট পেয়ে যাবে (যেমনটা ইউনুসসহ অন্য উপদেষ্টারা পেলেন নিউ ইয়র্কে অদ্য); কিন্তু এনসিপির সেইফ এক্সিট কঠিন। তারা ভিসা ছাড়া পাকিস্তান গেলেও ওখানেও মব তাদের পিছু ছাড়বে না।
ইউনুসের এই তোষামোদির সফর সম্পর্কে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী লিখেছেন, “বিলাতের পর এখন আমেরিকায় শক্তি দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ! বিদেশে আওয়ামী লীগের তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এত মানুষ! এতদিন তারা কোথায় ছিলেন ? আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে এরাও দলের কড়া সমালোচক ছিলেন। যার যার কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, দলের দিকে ভিড়তেননা !
আজ সবাই দেখছেন শুধু দল নয়, দেশ বিপদে পড়েছে। তাই আমেরিকার সব অঙ্গ রাজ্য থেকে তারা আসতে শুরু করেছেন নিউইয়র্কে। এর কারণে নিউইয়র্ক হয়ে উঠেছে অভূতপূর্ব বিশাল এক বাংলাদেশ !
লন্ডনের পর নিউইয়র্কের এই জনসমুদ্র শুধু বাঙালিদের নয়, বিশ্ববাসীকে, সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোকে ভাবাবে। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের যা বলা হয়েছে ঘটনা অন্যখানে। যে নোবেলজয়ীকে তারা দেবতা মনে করতেন তার ব্যাপারে তাদেরও মোহমুক্তি ঘটছে।
অতএব জেগে উঠেছে ধর্ষিত বাংলাদেশ। অভিনন্দন বিশ্ব বাঙালি। ইউনুস তোমার সব সাঙ্গোপাঙ্গোসহ ধ্বংস অনিবার্য। সবগুলোই ভাইসা যাইবো বঙ্গোপসাগরে! জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”
জঙ্গী-উচ্চমাত্রায় সুদখোর ইউনুসের চরম বিরোধিতাকারি এনায়েত কবির তার ফেইসবুকে লিখেছেন- নিউইয়র্কে পুলিশের অনুমোদন নিয়ে রেখেছিলো আওয়ামী লীগের কর্মীরা । তারা এয়ারপোর্টে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। মি: ইউনুসের নাগাল তারা পায়নি।
কিন্ত তার সফরসঙ্গী সরকারী জোটের জামায়াত নেতা তাহের, বিএনপি নেতা মির্জা ফকরুল বিক্ষোভ এড়াতে পারেন নি। তবে তাদেরকে কেউ অপমান করেনি। এনসিপি নেতা আখতারকে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ ডিম ছুঁড়েছে।
এনসিপির তাসনীম জারাকে গালিগালাজ করেছে। এই ক্ষোভ বিক্ষোভকে কেউ কেউ দঙ্গল বলতে চেস্টা করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে আাইন মেনেই রাজনৈতিক ক্ষোভ বিক্ষোভ করতে হয়। ডায়াস্পোরা কর্মীদের পক্ষে আইন অমান্য করে কিছু করা সম্ভব নয়।
সরকারী জোট জামায়াত -বিএনপি- এনসিপি সুদী ইউনুসের সমস্ত কুকীর্তি কাঁধে নিয়ে তাদের “আওয়ামী বিরোধী” মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সহায়তাপুষ্ট “ক্ষমতা” দখলে রাখার দেউলিয়া রাজনীতি করে যাবে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ -তুর্কী আধিপত্যবাদ- পাকিস্তান ফ্যাসিবাদের কাছে সার্বভৌমত্ব হারাবে।
শফিক পি আর বাহিনী ঢোল বাজাবেন জাতিসংঘে ইউনুস ফটোসেশানে ” বিরল সম্মান” পেলেন। তবে এবার মাথা খুঁড়লেও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ফটোসেশান খুব মধুর হবে না। মার্কিন দূতাবাসের কেরানীরা যে দেশটা চালায়, সকাল বিকাল যেদেশে মার্কিন সৈন্যরা আসে যায় সেই দেশের ব্যাপারে শীর্ষ ব্যক্তিরা মাথা ঘামায় না। ”
তবে একথা ঠিক যে, আওয়ামী বিরোধীদের গত একবছরের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও কুকীর্তির কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বাড়ছে। নানা ঝুঁকি নিয়ে দেশব্যাপী আওয়ামী সমর্থকরা তৎপরতা বাড়াচ্ছে। মুদ্রার একপিঠ জনগণ ১৫ বছর দেখেছে।
আরেকপিঠ গত দেড় বছরে দেখতে গিয়ে” ভারতজুজু” আর “আওয়ামী জুজু” ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা পায়নি। গণ বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক নেতৃত্ব যে ডিমে তা দিক ফলাফল অশ্বডিম্বই।
(আমার দেশের ও টাইমসের ফটো কার্ডে দেখা যাচ্ছে মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগ -জাতীয় পার্টি সহ অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। জামাতের তাহের এম্বেসীর দিকে আঙুল তুলেছেন। শিবির -জামায়াতের ডায়াস্পোরা কর্মীরা মির্জা ফখরুলকে অভয় দিচ্ছেন।
এদিকে জেএফকে বিমানবন্দরে জঙ্গী-প্রতারক ইউনুস সরকারের পক্ষ ত্যাগকারি সাবেক রাষ্ট্রদূত হুরুন-আল রশীদ লিখেছেন- “ ইউনুসকে টেররিস্ট বলে শ্লোগান দিতে আহ্বান জানানোর পর দুই চারটা জঙ্গি কমেন্টে হেসে গেছে। যেন এটা ওদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সত্য হল বাংলাদেশের মতো এই মুহূর্তে পৃথিবীর আর কোনও দেশ এতটা জঙ্গি সন্ত্রাসী দ্বারা আক্রান্ত নয়। আত্মঘাতী জঙ্গি আকতারকে আন্ডা মারার সময় দুই এক জন টেররিস্ট বলে শ্লোগান দিয়েছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ।
আমার অনুরোধ কিলার, টেররিস্ট এই সব শব্দ ছাড়া ইউনসু ও তার জঙ্গিবাহিনীকে অন্য কোনও শব্দ দিয়ে আপ্যায়ন করে আপনার কষ্টটাকে অকার্যকর করবেন না। এরা সন্ত্রাসী, এরা জঙ্গি, এরা টেরোরিস্ট। লন্ডনের কিলার, টেররিস্ট এই শ্লোগানগুলি খুব কার্যকর ছিল।
আত্মঘাতী জঙ্গি আক্তার বাংলাদেশের সাথে যেই অপরাধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা শুধু চিন্তা করলেই কোনও কোর্টে না তুলেই ওকে ইঁদুরের মতো মেরে ফেলা হত। মার্কিন সরকার বাংলাদেশে টেররিস্ট পালে, তাদের দেশে টেররিস্ট পেলে রাস্তায় মেরে ফেলে? তাদের এই দ্বিচারিতার জবাব দিন। শুধু আমরা কেন টেররিস্টদের কুফল ভোগ করব ? ”
মার্কিন মুল্লুকে জেএফকে’তে যে ঘটনা ঘটেছে ইউনুসীয় টীমের ওপর তাতে ফখরুলের ক্ষেত্রে ‘শিষ্টাচার’ দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ যেন বৈধ হয়ে যায়—এটাই কি রাজনৈতিক সংস্কৃতি? জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে তাদের নেতার বাড়িতে আক্রমণ বা পার্টি অফিসে আগুন দেওয়াও যেন গ্রহণযোগ্য ? ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের পেটানোও যেন স্বাভাবিক?
এনসিপি’র কোনো নারী নেত্রী হলে তাঁকে ডিম ছুঁড়ে মারা যাবে না—এই মানসিকতা দেখা যায়। অথচ আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীদের গলায় জুতোর মালা পরানো হয়েছে, চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে মারধর করা হয়েছে। তখন ইউনূসের অনুগত দালালগোষ্ঠী সেটি দেখেনি বা দেখতে চায়নি।
তবুও আওয়ামী লীগের কর্মীরা রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলেছেন। অবকাক হয়ে দেখলাম- মির্জা ফখরুলের গায়ে হাত তোলা হয়নি, এনসিপি’র নারী নেত্রীকে ডিম ছুঁড়ে মারা হয়নি। ফখরুলের জায়গায় যদিআওয়ামীলীগের সেই পর্যায়ের কোন নেতা থাকতেন, তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হতো নিশ্চিতভাবেই।
এনসিপি’র নারী নেত্রীর জায়গায় যদি আওয়ামী লীগের কোনো নারী নেত্রী থাকতেন, তাকেও নিশ্চয় ডিম নিক্ষেপের শিকার হতে হতো। কারন আমরা গত এক বছরে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি তথা ইউনূসের সন্ত্রাসী বাহিনী বারবার সেই সংস্কৃতিই দেখিয়েছে। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা পরিয়ে অপমান করেছে, আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীদের দিকে জুতা ছুঁড়তে দ্বিধা করেনি।
এমনকি ছাত্রলীগের এক কর্মীর বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে তাকে না পেয়ে তাঁর নামাজরত মাকে কুপিয়ে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক সহিংসতাকে অসভ্যতার চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ যতই রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন, কোনো প্রতিহিংসা দেখায়নি—শুধু প্রতীকী প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কোনো নির্দেশনা বা চেইন অব কমান্ড ছাড়াই আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রদর্শন করেছে, তা অন্য দলের নেতাদের মধ্যেও দেখা যায় না—আজ সেটি আবার প্রমাণ হলো।
মাথায় রাখা জরুরি, দেশে যদি বিচারের নামে অবিচার হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলতে থাকে, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়িতে হামলা হয়, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হয়, ছাত্রলীগের ছেলেকে না পেয়ে বাবাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়, কিংবা ছেলেকে না পেয়ে মাকে হত্যা করা হয়—তাহলে তার প্রতিক্রিয়াও অবশ্যই আসবে। এটাই বাস্তবতা।
**বাংলাদেশে পুলিশকে নির্বিচারে হত্যার কোন সমবেদনা নেই, অথচ নিউইয়র্কে সমবেদনা জানায় প্রতারক ইউনুস !
গত দুই মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অবৈধ প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস।
স্থানীয় সময় সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কের একটি হোটেলে তাদের সাক্ষাৎ হয়। বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা দিদারুলের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি এ পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি সম্মাননা হিসেবে একটি ক্রেস্ট তুলে দেন।
এসময় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,
“পত্রিকায় ঘটনাটি পড়েছি। পড়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে হলো। টিভিতে দেখেছি, নিউ ইয়র্কে তার শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল। “বহু মানুষের শোক-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। নিউ ইয়র্কে আসার পরিকল্পনার মধ্যেই আমাদের মনে হয়েছে, অবশ্যই আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে।”
আচ্ছা এই যে প্রতারক-খুনী ইউনুস নিউইয়র্কে গিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশী ও মার্কিন পুলিশ সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রচন্ড রকমের দুঃখপ্রকাশ করলেন , তা নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবিদার।
কিন্তু গত জুলাই-আগষ্টে বাংলাদেশে যে এত পুলিশ সদস্যকে পৈশাচিকভাবে খুন করা হরেঅ, এর মদ্যে অন্তসত্বা এক পুলিশ সদস্যও ছিলেন। যতদুর জেনেছি তার হত্যাকারিদের প্রতি সেই অসহায় মা পুলিশ সদস্য বার কার আকুতি করে বলেছিলেন- তার গর্ভে সন্তান রয়েছে, অন্তত তার জন্য হলেও যাতে তার প্রাণভিক্ষা দেয়া হয়।
কিন্তু জঙ্গী হায়েনার দল এই মেটিকুলাস ডিজাইনেসর ড্রাকুলা ইউনুসের পৈশাচিক বাহিনী। সেই অন্তসত্বা মাকে’ও হত্যা করতে তাদের হৃদয় একটুও কাঁপেনি।
অথচ সেই হার্মাদ বাহিনীকে নিয়েই শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইউনুস গত দেড় বছর যাবৎ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে আছে!
এই ইউনুস আবার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী দেশে গিয়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক মার্কিন পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুর জন্য মায়াকান্না করতে গেছে!! এ যে কুম্ভীরাশ্রু ! সেসব ছবিও আবার তার কেনা গোলাম প্রেসসচিব শফিকুল আরম ওরফে ডাস্টবিন শফিক বেশ সাড়ম্বরে প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যও তা প্রকাশ করেছে বেশ উৎসাহ নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশকে মেরে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখলো, কতগুলো থানায়, পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ হলো, অমানবিকভাবে হত্যা করা হলো পুলিশ সদস্যদেরকে। পুড়িয়ে মারা হলো মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়ে।
কিন্তু তাদের জন্য এই কথিত শান্তির নোবেল লরিয়েট ইউনুসের কোন দুঃখ নেই। বরং এসব পুলিশ হত্যা-নির্যাতনের যাতে কোন বিচার না হয় সেজন্য ‘ইনডেমনিটি’ দেয়া হলো। কতটুকু অমানুষ হরৈ-পৈশাচিক মনমানসিকতার মানুষ হলে এমন কাজ করতে পারে। হত্যা করা হলো, কিন্তু তার কোন বিচার চাওয়া যাবেনা, কোন আদালতে মামরঅ করতে পারবেন না স্বজন হারানো পুলিশ সদস্যের পরিবারের লোকজন!!
এমনটাই ন্যায়ের সমাজ গড়তে চায় ইউনুস! এমন বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার মহান ব্রতে নেমেছেন ইউনুস! এমন মানবিক সমাজ বিনির্মানে শপথ নিয়েছেন ইউনুস! বাংলাদেশের সব মানুষের সমান অধিকার বলে লোকভুলানো কথা বলা ইউনুস! তবে ইউনুসীয় অধ্যায়ের অবসান যখন হবে তখন হয়তো আরো বড় কোন কিছু অপেক্ষা করছে তার ও তার বশংবদদের জন্য।
# রাকীব হুসেইন, লেখক, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।